বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস এর বার্ষিক নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
হ্যাপি রহমানঃ চিকিৎসা শুধু পেশা নয় জীবনের মহৎ কর্তব্য। রোগীর সেবা কাজটি আনন্দের আত্মতৃপ্তির। আর্ত-মানবতার সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করার জন্যই চিকিৎসা একটি মহৎ, পবিত্র ও মানবীয় পেশা।
উচ্চতর বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একাংশ প্রতিবছরই বিদেশে পাড়ি জমান তা কখনো দীর্ঘমেয়াদি কখনোবা স্থায়ীভাবে। অভিবাসন মানেই দেশ থেকে দূরে বা দোষের তা কিন্তু নয়। বরং নিজের জায়গা থেকে দেশের জন্য সেরা কাজ করাটাই দেশ প্রেম।
এই দূর প্রবাসেও প্রায়শই আমাদেরকে শুনতে হয় ফেলে আসা আপনজনদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার, রোগ শোকে আক্রান্ত হওয়ার দুঃসংবাদ। তখন এক অসহায় অপরাধ বোধে আহত হই আমরা। দেশ ও দেশের মানুষ, যারা প্রত্যেকেই কোন না কোন ভাবে সকল প্রবাসীদের আপনজন, তাদের জন্য কিছু করার আকুতি নিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস সংগঠন। নিউ সাউথ ওয়েলসে সকল প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের সম্মিলিত সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশে প্রায় ৪০০ জন বাংলাদেশি চিকিৎসক আছেন। তাদের মধ্যে ২৫০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি চিকিৎসক এই সংগঠনটির সদস্য। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ডাঃ রফিকুর রহমান বাবুল বলেন দুর্যোগ-প্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, নদী ভাঙ্গন, অগ্নিকান্ড ও ভূমিধ্বসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে এ দেশের মানুষকে বেঁচে থাকার লড়াই করতে হয়। বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে আমাদের এই সংঘটন। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উদ্যোগে নির্মীয়মাণ ক্যান্সার হাসপাতাল (আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হা্সপাতাল), ৫ বছর আগে আইলা বিধ্বস্ত জনপদে সাহায্যের জন্য ত্রাণ তহবিল গঠন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পঙ্গু মানুষের সাহায্যার্থে সিআরপি, সাভার বাংলাদেশকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস সংগঠনটি। অনুদানের অর্থ সকল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষ থেকে একটি সম্মিলিত উপহার হয়ে যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ত্রাণ তহবিলে। সর্বশেষ সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া নেপালে এক শক্তিশালী ভুমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হয়েছে। নেপালে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস এবারও ত্রাণ সংগ্রহ করেছে। জেনেরাল সেক্রেটারি ডাঃ রশিদ আহমেদ বলেন প্রবাসে পেশাগত অবস্থান থাকলেও দেশের জন্য কিছু করার মানসিক তাগিদ থেকে আমরা প্রতি বছর আয়োজন করে থাকি বার্ষিক নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়াও বার্ষিক সাধারণ সভা, সায়েন্টিফিক মিটিং ও বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, বার্ষিক সাধারণ সভাতে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা আমরা পরস্পরের সাথে আলাপ আলোচনা করে থাকি। এতে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ এবং তথ্য বিনিময়ে সহায়ক হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার্থে ও অভিবাসন ভিসা নিয়ে অনেক চিকিৎসক অস্ট্রেলিয়া আসছেন। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরামর্শ সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি আমরা একে অপরকে। বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকগন অস্ট্রেলিয়া সরকার অনুমোদিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) হিসেবে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারেন। আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে এসে প্রবাসের ব্যয়বহুল জীবিকা নির্বাহের জন্য চাকুরী পাশাপাশি উচ্চহারের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফি সংগ্রহের জন্য অনেকে দিশেহারা হয়ে যান। তাদের জন্য এ প্রতিষ্ঠান থেকে সুদহীন ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এখানে বসবাসকারী সকল প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক, তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সংগঠনটির পরিচালনা কার্যকরী কমিটির সদস্যগনের পদবী ও নাম: প্রেসিডেন্ট ডাঃ রফিকুর রহমান বাবুল, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাঃ মতিউর রহমান, ডাঃ শফিকুর রহমান ও ডাঃ শাইলা ইসলাম। জেনারেল সেক্রেটারি ডাঃ রশিদ আহমেদ,জয়েন্ট সেক্রেটারি ডাঃ মইনুল ইসলাম, ডাঃ কাজী শাহরিয়ার রানা, কোষাধক্ষ ডাঃ জেসমিন শফিক, অরগানাইজিং সেক্রেটারি ডাঃ শামসুল আলম বাবু, পাবলিকেশন সেক্রেটারি ডাঃ খালেদুর রহমান,সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার ও কালচারাল সেক্রেটারি ডাঃ সাব্বির সিদ্দিক, এডুকেশন সেক্রেটারি ডাঃ নাজমুন নাহার। সদস্যগনের নাম: ডাঃ জেসি চৌধুরী, ডাঃ আয়াজ চৌধুরী, ডাঃ শরীফউদদৌলা, ডাঃ রেজা আলী,ডাঃ আমীন মুতাসিম, ডাঃ ফাইজুর রেজা ইমন, ডাঃ কামাল আহমেদ, ডাঃ জান্নাতুল নাইম, ডাঃ মামুন চৌধুরী, ডাঃ মিরজাহান মিয়া,ডাঃ মেহেদী ফারহান, ডাঃ জাকির হুসাইন পারভেজ, সহযোগী সদস্য ডাঃ নুরুল ইসলাম,ডাঃ ইফতেকার জুহা ও ডাঃ শফিকুল বারী চৌধুরী। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস আয়োজিত বার্ষিক নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৯ই মে ২০১৫, শনিবার সন্ধ্যে ৬টায় সিডনি শহরের ওয়েন্টঅওয়ার্থভিল সাবারবের রেডগাম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান। অডিটোরিয়ামের প্রবেশদ্বারে ছিল নেপালে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের জন্য অনুদান বক্স। নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। প্রথমে সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার ও কালচারাল সেক্রেটারি ডাঃ সাব্বির সিদ্দিক শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। নৈশভোজের পর শুরু হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জয়ন্তীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সামিয়া আরেফিন গেয়েছেন বিভাবরী আঁখি হতে ঘুম নিলো হরি মরি মরি॥ পর্যায়ক্রমে গান গেয়ে শোনান ফারজানা লিটা, তামান্না পারভিন, সাব্বির সিদ্দিক, ফাহিমা সাত্তার, নাজমুন নাহার, শাহানাজ পারভিন এবং ফাবিহা সিদ্দিকি। সুন্দর সাবলীল বাংলা ভাষায় যৌথভাবে উপস্থাপনা করেন সুমাইয়া হুমাইরা সামিয়া ও কারিশামা যুবাইর। সবশেষে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি গায়ক চিকিৎসক হিউবারট ডি ক্রুজ। সঙ্গীতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তাঁর অনুকরণীয় সুরশৈলী ও হৃদ্য গায়কী প্রবাসী শ্রোতাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ফেলে আসা চিরচেনা বাংলায়। একের পর এক তিনি গেয়ে শোনান আমি বাংলার গান গাই আমি বাংলায় গান গাই,মানুষ মানুষের জন্য, দোলা ও দোলা, শোন শোন কথাটি শোন, তুমি যে আমার কবিতা, অলিরও কথা শুনলে বকুল হাসে, এক যে ছিল সোনার কন্যা, আছেন আমার মুক্তার-আছেন আমার ব্যরিস্টার, কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই সহ আরো কিছু গান। শিল্পীর সুরের মাধুর্যে দর্শক শ্রোতা হারিয়েছিল কোন এক যাদুর বাঁশিওয়ালার সুরের বাঁশিতে। টানা দুই ঘণ্টা শ্রোতা হৃদয়ে তুফান বইয়ে দেন শিল্পী। মানুষকে ভালবাসার প্রেরণার উৎস হচ্ছে গান। কিছু কিছু গান কিছু কিছু স্মৃতি বুকের মাঝে শূন্যতার সৃষ্টি করে,হাহাকারের সঙ্গে গর্ব আর অর্জনের শব্দগুলো মায়াময় বাঁধনে জড়িয়ে রাখে মানুষকে।
হ্যাপি রহমান, সিডনি
|