ঢাকায় নীল আর্মস্ট্রং শহিদুল ইসলাম
ঐ দিনটি আমার জীবনের এক স্মরণীয় দিন। আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক। বড় ছুটিতে সচরাচর আমি ঢাকাতে আমার বন্ধুদের বাড়িতে কাটাতাম আড্ডার লোভে। আড্ডা আমার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছে।
চাঁদে ভ্রমণ শেষে, আপনি নিশ্চয় জানেন যে নীল আর্মস্ট্রং বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে সেই ভ্রমণের এক পর্যায়ে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। সঠিক তারিখটা আমি জানাতে পারবো না। নীল আর্মস্ট্রং একটি খোলা জীপে করে তখনকার জিন্নাহ এভিনিউ, এখন বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, দিয়ে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে রাস্তার দু’পাশের দাঁড়ানো হাজার হাজার মানুষের প্রতি তার শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন। আমরা ক’জন বন্ধু, ওয়ারী ফুটবল ক্লাবের আমার স্কুলের সহপাঠী আব্দুল আজিজ, ফিরোজ, হাসমত, দারাশিকো (সিনেমায় এই নামে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতো), তার আসল নাম লুৎফুল আজম সহ বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম তাঁকে এক ঝলক দেখার জন্য। মানুষের ঠেলাঠেলিতে একস্থানে স্থির দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর ব্যাপার। জীপটি গুলিস্তান সিনেমা হলের দিক থেকে খুব আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছিল। পিছনের মানুষগুলি সামনে আসার জন্য সংগ্রাম লিপ্ত। আমরা ক’বন্ধু পরস্পরের হাত ধরে নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাড়ী এগিয়ে আসছে। নীল আর্মস্ট্রং হাত নেড়ে চলেছেন। মানুষের শ্লোগান ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার অভিব্যক্তি তাঁকে অভিভূত করে। এক সময় তিনি আমাদের পার হয়ে বাঁয়ে মোড় নিলেন।
এমন সময় কে বা কারা আমার হাতে একটি কাগজ গুঁজে দিল। আমরা সরে এসে কাগজটার দিকে তাকাই। আরো দুই বন্ধুর হাতেও কাগজটি দিয়েছিল। দেখলাম ছাপানো লিফলেট। লেখা আছে এসব বাজে কথা। কেউ কখনও পবিত্র চাঁদে যেতে পারে না। যেদিন মানুষের নোংরা পা চাঁদ স্পর্শ করবে, সেদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। যেহেতু পৃথিবী এখনও টিকে আছে, অতএব তারা চাঁদে যায় নি। এসব মিথ্যা প্রচারণা। আপনারা এ প্রচারণা বিশ্বাস করবেন না।
আমরা সবাই হাসলাম বটে কিন্তু কারো কারো মনে সন্দেহ ঢুকেছিল, সন্দেহ নেই।
শহিদুল ইসলাম, ঢাকা থেকে
|