আমার চন্দ্র ভ্রমণ! কাজী সুলতানা শিমি
চেয়ার লিফট থেকে মাটিতে পা রাখতেই মনে হল আমি যেন চাঁদে নামছি। অথচ মানুষ যখন প্রথম চাঁদে পদার্পণ করে আমার তখন জন্মই হয়নি। তবুও বহুবার বহুভাবে ভেবেছি সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির কথা। সেকারণেই হয়তো অবচেতন মনে একটা স্কেচ গেঁথে গেছে অজান্তেই। এবড়ো-থেবড়ো মাটি, পাথর, কিছুটা ধোঁয়াটে এ কোথায় এলাম! এমন সময় একটা ফোন এলো। আমেরিকা থেকে ছোট ভাই ফোন করেছে। জানতে চাইলো আমি কোথায়। মজা করে বললাম আমি চাঁদের বুকে হেটে বেড়াচ্ছি। ও বললো, আমি নিল আর্মস্ট্রং এর অফিসে! চন্দ্র অভিযানের পর নিল আর্মস্ট্রং সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।
বিজ্ঞানের প্রতি অসম্ভব আগ্রহী আমার এই ভাইটির সাথে ছোটবেলায় চাঁদ নিয়ে কতোনা গল্প করেছি। ছবি দেখে অজান্তেই মনে মনে চাঁদের মাঠে হেঁটেছি। ভাবতে অবাকই লাগে আমার সেই ভাইটি এখন সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। ঠিক নিল আর্মস্ট্রং এর অফিস বিল্ডিংয়েই তার রুম।
ফোন রেখে মনে হলো কে জানে একদিন হয়তো পৃথিবীর মানুষ বার্তা পাঠাবে চাঁদে থাকা মানুষের কাছে খুব অনায়াসেই। অস্ট্রেলিয়া’র সব’চে উঁচুতে তৈরি রেস্টুরেন্ট “ঈগল নেস্ট” এ বসে সুদূর সিনসিনাটি ক্যাম্পাস থেকে পাওয়া এই বার্তা আমাকে কল্পনার জগতে নিয়ে গেলো। মনে পড়লো যে চন্দ্র-যানে করে নিল আর্মস্ট্রং চাঁদে নেমেছিলেন তার নামও ছিল ঈগল! কি অদ্ভুত যোগাযোগ!
গত সামারে যে জায়গায় গিয়ে চন্দ্র ভ্রমণের অনুভূতি পেয়েছিলাম সেটা এই অস্ট্রেলিয়াতেই - সামারের স্নোয়ি মাউন্টেন। চেয়ার লিফটে করে পাহাড়ের চুড়ায় উঠার সময় উপরে-নীচে, ডানে-বায়ে যেদিকেই তাকিয়েছি কি এক আশ্চর্য অনুভূতি হয়েছিল! লোকালয়ের কোন চিহ্নই নেই। দুর-দিগন্তে সুনসান নীরবতা। এটা কি আমার পরিচিত পৃথিবী না পৃথিবীর বাইরে অন্য এক জগত!
কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি
|