চাঁদের চান্দরা রিয়াজ হক
“জ্যোতিষ শাস্ত্র” নামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) একটি কবিতা আছে। কবিতার অংশ বিশেষ এরকমঃ
আমি শুধু বলেছিলেম - কদম গাছের ডালে পূর্ণিমা-চাঁদ আটকা পড়ে যখন সন্ধেকালে তখন কি কেউ তারে ধরে আনতে পারে। শুনে দাদা হেসে কেন বললে আমায়, খোকা, তোর মতো আর দেখি নাইকো বোকা। চাঁদ যে থাকে অনেক দূরে কেমন করে ছুঁই; আমি বলি, দাদা, তুমি জান না কিচ্ছুই।
১৯৬৯ সালে যখন চাঁদে প্রথম পা রাখল মানুষ, জানিনা রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে, কি ভাবতেন, কি বলতেন বা কি লিখতেন।
এখন ২০১৯ এ এসে চাঁদ সম্পর্কে আমরা জানি অনেক কিছুই। যেখানে রবীন্দ্রনাথ বলছেনঃ
“চির-পুরানো চাঁদ, চিরদিবস এমনি থেকো আমার এই সাধ”। (চিরকুমার সভা গ্রন্থে)
কিন্তু চির-পুরানো চাঁদ কি একইরকম আছে ?
বয়স হিসেবে চাঁদ অনেক বৃদ্ধ হলেও অবয়ব ও রূপে সে চির যৌবনা এতে কোন সন্দেহ নেই। চাঁদের বয়স নাকি প্রায় সাড়ে চার কোটি বছর। সে হিসেবে পৃথিবী চাঁদের সিনিওর। বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবী থেকে সে এক কোটি বছরের ছোট।
আবার চাঁদ পৃথিবীর মাটি পাথর দিয়েই নাকি তৈরি। প্রায় চার কোটি বছর আগে পৃথিবীর সাথে মঙ্গল গ্রহের সমান আকৃতির আরেকটি গ্রহের সংঘর্ষের ফলে পৃথিবী থেকে কিছু মাটি পাথর ছিটকে যায় ! সেগুলই পরে জমে গিয়ে চাঁদ তৈরি করে; এরকমই তো আমরা জানি !
রবীন্দ্রনাথের চির পুরনো চাঁদ অবশ্য পৃথিবী থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে !! তবে আস্তে আস্তে! মাত্র ৪ সেন্টিমিটার প্রতি বছরে।
চাঁদে এযাবৎ কাল পর্যন্ত পা পড়েছে ১২ জন মানুষের। চাঁদ যে রাজকীয়, চাঁদ যে বিত্ত বৈভবে অতুলনীয় এটা তো চাদে পৌঁছানোর আয়োজন দেখেই ঠাহর করা যায়। এক হিসেবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক নাসার মুন-মিশন এর খরচই পৌঁছেছে ১৫৩ বিলিয়ন ডলারে। টাকার অঙ্কে আর হিসেবের সাহস হচ্ছে না !
এজন্য আমি বিজ্ঞানের চাঁদ জয়ের চেয়ে কবির কাব্যের চাঁদ এ বেশী আরাম বোধ করি। এমন কি সেই রবীন্দ্র সঙ্গীতেঃ ও চাঁদ, তোমায় দোলা দেবে কে! ও চাঁদ, তোমায় দোলা - কে দেবে কে দেবে তোমায় দোলা - আপন আলোর স্বপন-মাঝে বিভল ভোলা॥
অথবা
তুমি গেলে যখন একলা চলে চাঁদ উঠেছে রাতের কোলে। তখন দেখি, পথের কাছে মালা তোমার পড়ে আছে - বুঝেছিলেম অনুমানে এ কণ্ঠহার দিলে কারে॥
আমার সৌভাগ্য যে আমি মানুষের চাঁদ জয় দেখেছি। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশ দেখেছি। দু’দুটি শতাব্দীকে দেখেছি। এ মুহুর্তে কম্পুটারের অভাবনীয় কাণ্ড কারখানা দেখছি।
হয়ত মঙ্গলে মানুষের পদার্পনকেও দেখব (আমার জীবিত কালেই দেখব বলে সত্যি পণ করে বসে আছি!)।
কিন্তু সবচেয়ে ভাল লাগবে যদি দেখতে পাই, পৃথিবী ব্যাপী দারিদ্র্যের বিমোচন। সবার শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও মাথা গোজার ঠাই।
রিয়াজ হক, সিডনি
|