bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia














উত্তাল ৬৯ এবং চন্দ্র বিজয়!
নজরুল ইসলাম


২০ জুলাই ১৯৬৯ সালে মানুষ তার চির পরিচিত আবাসস্থল- পৃথিবী ছেড়ে অন্য উপগ্রহে প্রথম পা দিয়েছিল। এটা ছিল মানবজাতির জ্ঞান ও প্রজ্ঞার যাবতীয় অর্জনকে ছাপিয়ে এক নতুন দিগন্তের আভাস। এই সাফল্যের পিছনে যা কাজ করেছিল, তা ছিল মানুষের চিরন্তন জিজ্ঞাসা ও তার অজানাকে জানার আগ্রহ। এর পিছনে কিছু মানুষের স্বপ্ন ও কল্পনাকে বাস্তবে রূপদান করার প্রচেষ্টায় যে দৃঢ় মনোভাব ও অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল তা আজ সর্বজন স্বীকৃত। পৃথিবীতে ভূতত্ত্ববিদদের কাজ আর চাঁদের পাথর ও অন্যান্য পদার্থের গঠন পদ্ধতি নিরূপণ করার ভিতর যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে। তাই চাঁদের প্রতি আগ্রহ আমার একটু বেশী থাকাই স্বাভাবিক।

আমার খুব ভালভাবে মনে আছে চন্দ্র বিজয়ের ঐ বিশেষ মুহূর্তের জন্য কি আগ্রহেই না অপেক্ষা করেছিলাম। তার জন্য National Panasonic এর একটা ভাল ট্রানজিস্টার রেডিও অনেক দাম দিয়ে কিনেছিলাম। তখনকার দিনে খুব কম লোকই বিশ্বাস করত যে মানুষ চাঁদে যেতে পারবে। আমি ছিলাম এই ধারণার ব্যতিক্রম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মানুষ চাঁদে একদিন যাবেই।

সে সময় আমাকে ভূতত্ত্ব জরিপের কাজে সিলেটের পাহাড়ি টিলায় তাঁবুতে কয়েক সপ্তাহ বাস করতে হয়েছিল বলে ঐ যুগান্তকারী ঘটনা টিভিতে দেখার সুযোগ হয়নি। পরে অবশ্য অনেকবার দেখেছি, চমৎকৃত হয়েছি এবং এখনো সেই স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে একই রকম অনুভূতি ও আবেগ নিয়ে।

ষাটের দশক বিভিন্ন কারণে আমাদের তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং রাজনৈতিক কারণে বাঙালী জাতীর অস্তিত্ব বিলীনের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। আইয়ুব খানের মিলিটারি শাসনে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক ঝড় তুঙ্গে উঠেছিল। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির গ্রেফতার, লেবাননে তাঁর মৃত্যু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ঘোষণা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে শত শত রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের জেল-জুলুমের শিকার হওয়ার মতো নৈরাজ্য-জনক পরিস্থিতির ভিতরেও আমাদেরকে দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল মুন মিশন। বাঙালীরা যে দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করেছিল Moon Mission এর সাফল্য তার উপর প্রভাব ফেলেছিল কিনা তা জানি না তবে আমার ব্যক্তিগত জীবনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বেড়েছিল তা বলতে পারি। এই চন্দ্র বিজয় সেই রাজনৈতিক টালমাটাল সময়ে আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল যে বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবেই। তবে এটা ভাবিনি যে মাত্র দু’বছরের ভিতর তা ঘটে যাবে। আমার অস্ট্রেলিয়াতে আসার পেছনে পরোক্ষ ভাবে এই ঘটনা প্রভাব ফেলেছিলো। আমি কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া দু’দেশেই ভূতত্ত্ববিদ হিসাবে চাকুরী ও তার সঙ্গে স্থায়ীভাবে বাস করার ভিসা পেয়েছিলাম। তখনকার দিনে বাঙালীদের কাছে অস্ট্রেলিয়া একটা নিছক অজানা দেশ। অস্ট্রেলিয়া সম্বন্ধে স্কুলের ভূগোল বইয়ে পড়া আশ্চর্য সব জীবজন্তুর দেশ আর তারা ভাল ক্রিকেট খেলে – এইটুকুই ছিল জানা। সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীতত্ত্ব বিভাগের ড. ভূঁইয়া ব্যতীত আর কাউকেই খুঁজে পাইনি যে কিনা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় অস্ট্রেলিয়া সম্বন্ধে খোঁজখবর দিতে পেরেছিলেন। উনি এখানে পিএইচ ডি করেছিলেন এবং এখানকার মানুষ এবং অন্য সবকিছুরই প্রশংসা করেছিলেন। ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানী হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার পাথরের গঠন পদ্ধতি ও বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য খোঁজার আগ্রহ আর তার সঙ্গে আমার কিছুটা সহজাত দুঃসাহসিক মনোভাব অস্ট্রেলিয়ার ব্যাপারে আগ্রহ জাগিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াতে পৃথিবীর পুরাতন পাথর ও আদি এককোষী প্রাণের উপস্থিতি রয়েছে। আমার সব বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন দু’টো দুধের শিশু সহ অজানা অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া নিয়ে অমত করছিলো। চাঁদে মানুষ যেতে পারলে আমরা পৃথিবীর অজানা একটা দেশে যেতে বাঁধা হবে কেন? এই বিশ্বাস নিয়েই কানাডা না গিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে এসেছিলাম। আমার সেই অনুপ্রাণিত সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে।

ভাবতে অবাক লাগে সেই যুগান্তকারী মুহূর্তের ৫০ বছর পূর্তি হলো আজ ২০ জুলাই ২০১৯ সালে। আমরা সবাই গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি ঐ মিশনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে; বিশেষভাবে Neil Armstrong এবং Buzz Aldrin কে। মানবজাতি তাঁদের কাছে চির ঋণী কারণ আজকে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাবার যে পদক্ষেপ তা তাঁদের সাফল্যের কারণেই এখনো এগিয়ে চলেছে। এখন শুধু মঙ্গল গ্রহে যাবার কথা নয় সেখানে বসবাস করার চিন্তাভাবনা ও চলছে। আর সৌরজগতের বাহিরে অন্যান্য গ্রহের খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। আমাদের কল্পনা শক্তি সীমাহীনভাবে বেড়ে চলেছে। নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে যোগাযোগে মানবজাতির অপরিসীম সম্ভাবনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করছে এবং জ্ঞানের পরিধি এখন আর ধাপে ধাপে নয় জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। এর জন্যে এপোলো মিশন অনেকখানি কৃতিত্বের দাবিদার। ভবিষ্যতের সেই সম্ভাবনাময় পৃথিবী দেখার ইচ্ছা আমার এখনো বর্তমান।




নজরুল ইসলাম, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 18-Jul-2019

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot