চন্দ্র বিজয়ের সালতামামি ফারুক কাদের
আজ ২০১৯ সালের ২০ই জুলাই চন্দ্র বিজয়ের পঞ্চাশ বছরপূর্তী উদযাপিত হচ্ছে। ১৯৬৯ সালের ২০ই জুলাই এপোলো ১১ নভোযানের লুনার মডিউল চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করে। চন্দ্র পৃষ্ঠে প্রথম পা রেখে নভোচারী আর্মস্ট্রং উচ্চারণ করেন "That's one small step for man, one giant leap for mankind!" মহাশূন্য অভিযান ও গবেষণায় চন্দ্র বিজয় মানব সভ্যতার এক বিরাট মাইলস্টোন। এরকম একটা রোমাঞ্চকর ও মানব জাতির জন্য গৌরবময় দিনের কথা মানুষ তেমন মনে রাখেনি। পঞ্চাশ বছর পূর্তী মানুষের চন্দ্র বিজয়ের ঘটনা আবার স্মরণ করার সুযোগ এনে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষের নির্মিত মহাশূন্যযান মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করেছে। চন্দ্র বিজয় হঠাৎ করে হয়নি, ধাপে ধাপে হয়েছে। রাশান ইউরি গ্যাগারিন, ভেলেন্টিনা তেরেস্কোভা ও কুকুর লাইকার কথা আমাদের ভোলা উচিত নয়।
চন্দ্র বিজয়ের বছর খানেক পরের কথা; আমি তখন পুরনো ঢাকা শহরের সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলের বাংলা মিডিয়াম নবম শ্রেণী বিজ্ঞানের ছাত্র। স্কুলে প্রতি বছর বিজ্ঞান ও চারুকলার মেলা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা ৬/৭ জন ছাত্রের এক গ্রুপ এপোলো ১১ ও চন্দ্র বিজয় এর প্রজেক্ট হাতে নেই।
তোপখানা রোডে অবস্থিত USIS এ সে সময় চন্দ্র বিজয়ের উপর প্রদর্শনী হচ্ছিল। USIS থেকে আমরা চন্দ্র বিজয়ের ছবি, বৈজ্ঞানিক তথ্য, এপোলো ১১ ও লুনার মডিউলের মডেল রেপ্লিকা সংগ্রহ করি। লুনার মডিউলের চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণের প্রক্রিয়া আমাদের আত্মস্থ করতে হয়। এর উপর ভিত্তি করে প্রজেক্ট দাঁড় করাই। আমাদের প্রজেক্ট বিজ্ঞান মেলার সিনিয়রদের প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়। আমরা অনেক উৎসাহ ও প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলাম।
চন্দ্র পৃষ্ঠে মানুষের এই পদচিহ্ন থেকেই যাবে যদি না অন্য কেউ এসে তা পদদলিত করে। কারণ, চাঁদে বাতাস নেই। এজন্য, হাওয়া মে উড়তা যায়ে মেরে লাল দোপাট্টা মলমল, এ জাতীয় ঘটনার সুযোগ নেই চন্দ্র পৃষ্ঠে। আরেকটা বিষয়, চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের ছয় ভাগের এক ভাগ। সুতরাং আপনি চন্দ্র পৃষ্ঠে অবতরণ করে যদি আনন্দে লম্ফ ঝম্প করতে থাকেন, তাহলে এক লাফে আমাদের দেশের তালগাছের মাথার মত উচ্চতায় উঠে যাবেন। অবশ্য মহাশূন্যে হারিয়ে যাবার ভয় নেই, চন্দ্র পৃষ্ঠেই আপনাকে ফিরে আসতে হবে।
চন্দ্র পৃষ্ঠে ভ্রমণরত আর্মস্ট্রং এর সামনা সামনি কোন ছবি নেই, যদিও চন্দ্র পৃষ্ঠে আর্মস্ট্রং তার হাতের ক্যামেরা দিয়ে অনেক ছবি তুলেছেন। এর কারণ সে সময় সেলফি বলে কিছু ছিলনা।
চন্দ্র-বিজয়ের বাস্তবতা নিয়ে মৌলবাদী এক গোষ্ঠী উন্নাসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। গুজব ছড়ান হয় যে আর্মস্ট্রং চন্দ্র পৃষ্ঠে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হবার চিহ্ন আবিষ্কার করেন। এ কারণে পরবর্তী কালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এ সবই ছিল অপপ্রচার।
আর্মস্ট্রং ভদ্র, সজ্জন ও প্রচার বিমুখ ছিলেন। ২০১২ সালে মৃত্যু বরণ করেন। অন্য দুই সহযাত্রী অলড্রিন ও কলিন্স বেঁচে আছেন; তারা চন্দ্র বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শোনা যাচ্ছে।
ফারুক কাদের, ঢাকা
|