চরকা বুড়ি আশীষ বাবলু
এই ঐতিহাসিক দিনটি নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর লেখা এখানে প্রকাশিত হয়েছে। আমারও খুব ইচ্ছে হলো আমার ঠাকুরমার গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। গরীব বড়লোক জাত ধর্ম নির্বিশেষে আমরা পৃথিবীর সবাই একই আকাশের নিচে একই চাঁদ দেখে বড় হয়েছি। এই সমাজতান্ত্রিক চাঁদ দেখেই পাড়ার মুদির মেয়ে টুনিকে সেই কবে বলেছিলাম যতদিন আকাশে চাঁদ থাকবে ততদিন আমাদের ভালবাসা থাকবে। আজ জীবনের এই প্রান্তে এসে বুঝেছি, চাঁদ মানুষকে দিয়ে বড় মিথ্যে বলায়। তবে চাঁদ যতদিন থাকবে ততদিন নীল আর্মস্ট্রং থাকবেন (ভদ্রলোক চাঁদে গিয়ে চাঁদের ছবি তুলেছেন )। থাকবে এ্যাপলো ১১। এবং আমার মস্তিষ্কে ঠাকুমার এই ছোট্ট গল্পটা।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে বিকেলবেলা এক ডজন চাষাভুষার ছেলেপেলে ঠাকুমার কাছে পড়তে আসতো অ আ ক খ আর নামতা। পড়ার শেষ হতো ঠাকুরমার ঝুলি থেকে বের করা গল্প দিয়ে। শহরের ছেলে আমি মোড়া পেতে বসে ঐ সব গ্রাম্য ছেলেপেলেদের গা-বাঁচিয়ে ইংরেজি গ্রামার বই হাতে নিয়ে এককানে সেই গল্প শুনতাম। চাঁদে মানুষ নেমে যাবার মাস-খানেক পর সম্ভবত এই গল্পটা বলেছিলেন। বলেছিলেন ওরা চাঁদে নেমে হেঁটে হেঁটে খুঁজেছে চাঁদের চরকা বুড়িকে। বুড়ি-কি এতই বোকা যে ওনাদের দেখে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ছুটে এসে ধরা দেবে! ওদের মতলব ছিল চাদের বুড়িকে ধরে ওদের মত একটা কিম্ভুত কিমাকার ড্রেস পরিয়ে পৃথিবীতে নিয়ে আসা। এতই সহজ? ফুল যেমন মৌমাছির পেখমের তির তির শব্দ শুনলে বুঝতে পারে কী ঘটতে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি চাঁদে কিছু ঘটার আগেই বুড়ি টের পেয়ে যায়। সে আগে থেকেই একটা গর্তে লুকিয়ে ছিল। চাঁদে-তো আর গর্তের অভাব নেই! আর্মস্ট্রং আর ওর বন্ধু অলড্রিন তন্ন তন্ন করে খুঁজছিল চরকা বুড়িকে। চরকা বুড়ি এমন একটা গর্তে লুকিয়েছিল যে দূর থেকে সেটাকে গর্ত বলেই মনে হয়না। চাঁদের রাস্তা ঘাট পাহাড় মাটি বুড়ির চাইতে বেশি কে চেনেন! ওরা বুড়িকে খুঁজে পায়নি। তবে পেয়েছিল এতদিন চরকায় কাটা বস্তা বস্তা ভর্তি সুতা। এমন মিহি সুতা পৃথিবীর মানুষেরা কোন দিন দেখেনি। ওরা দুই বস্তা সুতা কাঁধে করে নিয়ে রওয়ানা হলো রকেটের দিকে। বুড়ি গর্তে বসে সব দেখছিলেন। এ দেখছি মহা সমস্যা! সুতা চোরদের এভাবে ছেড়ে দেয়া যায়না! বুড়ি বেড়িয়ে এলো গর্ত থেকে হাতে একটা লাঠি নিয়ে। চালালো এলো পাথারি লাঠি। কি মার সে কি মার! মারখেয়ে দুজনে বাঁচাও বাঁচাও বলে চেঁচাতে চেঁচাতে উঠে বসলো রকেটে এবং সোজা ছুটলো পৃথিবীর দিকে। ওরা ঐ বুড়ির হাতে লাঠির বারি খাবার ঘটনাটা লজ্জায় একদম চেপে গেল। কক্ষনো এ নিয়ে মুখ খোলেনি।
এই গল্পটা শুনে আপনাদের নিশ্চয় মনে হচ্ছে কি গাঁজাখুরি গল্পরে বাবা। সে সময় আমারও তাই মনে হয়েছিল, তবে সেই গল্প শুনে সেদিন গ্রামের ধুলোবালি মাখা বাচ্চা ছেলেপেলেদের সে কি হাসি। নিশ্চিন্ত হয়েছিল তাদের চাঁদের বুড়ি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। মাথার উপর ছাদ বলতে যাদের আকাশ তাদের কাছে চাঁদে চরকা বুড়ি বলে কিছু নেই এমন একটা কথা বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। ভেবে দেখুন আমাদের এখানকার বাচ্চাদের যদি বলা হয় স্যান্টাক্লস বলে কিছু নেই তাদের সেটা কেমন লাগবে!
আমার ঠাকুরমা জানতেন মানুষের মত চাদেরও একটা ডার্ক সাইড আছে!
আশীষ বাবলু, সিডনি
|