শত হাজারের মাইলফলক অতিক্রম করলো GOOD MORNING BANGLADESH
গত ২৫ শে মে ছিল “গুড মর্নিং বাংলাদেশ - বিগেস্ট মর্নিং টি” ক্যান্সার কাউন্সিল ফান্ড রেইজিং আয়োজকদের জন্য একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন। ইস্টার্ন সিডনির ম্যাসকট পাবলিক স্কুলের প্রাঙ্গণে “গুড মর্নিং বাংলাদেশ” ১০০,০০০ ডলার সংগ্রহের মাইলফলক অতিক্রম করল। ২০০১ সালে যে প্রোগ্রামটি ব্লাকটাউনে মাত্র ৮০০ ডলারের নিচে সংগ্রহ করে সেই একই প্রোগ্রাম আজ ২০১৪ সালে শত হাজার সংগ্রহের মুখ দেখল। দশে মিলে কাজ করার এ একটি জ্বলজ্বলে সাফল্য।
সকাল নয়টা থেকেই আসতে শুরু করে আশে পাশের লোকজনেরা। চা এবং পেঁয়াজু / পুরি ততক্ষণে রেডি প্রায়। সকাল ৯ টা থেকেই অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ অংশগ্রহণকারী আর ক্রেতা দর্শকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে। স্টলগুলোতে নানা ধরনের মুখরোচক আর সুস্বাদু পিঠাসহ পরাটা,মাংস, ভাজি লাবরা, কাবাব ও বিভিন্ন পদের মিষ্টির ছিল বিশাল সমাহার। সদ্য ভাজা পরোটা, সদ্য হারি থেকে নামানো ভাজি, মাংস আর গরম গরম ভাপা পিঠা আর বিফ পেস্ট্রির গন্ধে ভরপুর ছিল রৌদ্র ঝলমলে ইস্টার্ন সিডনিতে অবস্থিত ম্যাসকট পাবলিক স্কুলের বিশাল আঙ্গিনা।
সকাল দশটায়” গুড মর্নিং বাংলাদেশ” ম্যাসকট প্রোগ্রামের প্রধান আয়োজক আজাদ আলম সবাইকে স্বাগত জানান। এরপর অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা-কারি আমাদের নতুন প্রজন্মের মুখ লুতফুন হোসেন অত্যন্ত সাবলীল ভাবে প্রাতঃকালীন এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে। শুরুতেই ক্যান্সার কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার কিভাবে পদযাত্রা আরম্ভ হয় এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়। অনুষ্ঠানের প্রথম বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটির বর্ষীয়ান এবং সবার শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার সালাহ উদ্দিন আহমেদ । বাংলাদেশি কমিউনিটি কিভাবে এদেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে চ্যারিটেবল কাজে জড়িত আছে তার জরিপ তুলে ধরেন।
এর পরে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি এ এলাকার ফেডারেল এম পি ম্যাট থিসেলথওয়েট। তিনি তাঁর বক্তব্যে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এরূপ মানবিক কাজে তার ব্যক্তিগত আগ্রহের কথা প্রকাশ করে। স্টেট এম পি রন হনিগ এবং মাইকেল ডেলী তাদের স্ব স্ব ভাষণে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে জড়াতে পারেন বলে সৌভাগ্যবান মনে করেন এবং যে কোন গঠনমূলক ব্যাপারে সাথে থাকার আশ্বাস দেন। এই প্রোগ্রামের বিশেষ সারপ্রাইজ ছিল প্রাক্তন প্রেমিয়ার অফ নিউ সাউথ ওয়েলস ক্রিস্টিনা কেনেলি। যিনি বর্তমানে বোটানি কাউন্সিলের বেন কেনেলির স্ত্রী। বেন কেনেলি নিজেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত সেবা মূলক কাজের প্রশংসা করেন।
পরবর্তীতে বক্তব্য রাখেন ড শহিদুর রহমান। তিনি তুলে ধরেন ইস্টার্ন সিডনি ইসলামিক ওয়েলফেয়ারের কিছু কর্মকাণ্ড। ম্যাট্রাভিলের ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারের রিফার্বিসমেন্ট অতি সিগ গির সমাপ্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং স্টেট সরকারের ফান্ড এলোকেশনের ব্যাপারে এম পি মাইকেল ডেলির ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
ডা আয়াজ চৌধুরী যিনি বলতে গেলে এই প্রজেক্টের গোড়া থেকেই সক্রিয়ভাবে ভাবে জড়িত, তিনি তুলে ধরেন গুড মর্নিং বাংলাদেশ আয়োজকদের আর একটি বড় প্রজেক্টের কথা। আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই গ্রুপের ওতপ্রোতভাবে অংশগ্রহণের কথা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের শিকরের প্রতি নিঃস্বার্থ মায়া মমতার কথা। এ বছরের গোড়ার দিকে হাসপাতালের উদ্বোধন করেন মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা । হাসপাতালটি নির্মাণের বেশিরভাগ অনুদান আসছে চ্যারিটেবল ফান্ড থেকে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্রাঞ্চে যেমন রেডিও থেরাপি এবং কেমোথেরাপি সেবা প্রদানের কার্যক্রম চালু হয়েছ। গরিব মানুষদের স্বল্পমূল্যে সেবা প্রদানই এই হাসপাতালটির মুল লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে জনাব আয়াজ অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের প্রতিশ্রুতি হিসেবে আহসানিয়া মিশনের পরিচালনা বোর্ডকে ২৫০০০০ ডলার প্রদানের কথা ব্যক্ত করেন ।এর কিয়দংশ ৭৫০০০ ডলার ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে বাকি অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা স্বরূপ আগামী ২২ জুন লিডকমের সাবার্বের ওস্টেলা হলে ফান্ড রেইজিং ডিনারের ব্যবস্থা করেছেন। উপস্থিত সবাইকে এ প্রোগ্রাম আসার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।।
ড আব্দুল হক যিনি এই মুভমেন্টের সফল বাহক, সবাইকে মুক্ত হস্তে দান করার জন্য আহবান জানান। তিনি বাংলাদেশিদের এই নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা বিভিন্ন কমিউনিটি থেকে শুরু করে ফেডারেল পার্লামেন্টে সেশনেও যে আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়েছে সে খুশির খবর সবাইকে জানান। “গুড মর্নিং বাংলাদেশ” ৬ষ্ঠ বৃহত্তম(based on community effort) অর্থ সংগ্রহকারী হিসেবে ক্যান্সার কাউন্সিল নিউ সাউথ ওয়েলস পরিসংখ্যানে স্থান দখল করেছে।
সংক্ষিপ্ত ভাবে বক্তব্য রাখেন রকডেল এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ড মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহ রকডেল বাংলা / আরবি স্কুলের পক্ষ থেকে। তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন সেবামুলক কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন এবং আজকের এই আয়োজনে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান।
ড মাকসুদুল বারী অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ ডিজাস্টার রিলিফ কমিটির সাথে জড়িত। তিনি তাঁর বক্তব্যে আগামীতে আজকের এই ধরনের সঙ্ঘবদ্ধ স্পিরিট কিভাবে কাজে লাগানো যায় তার রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি প্রস্তাব করেন, সামারের কোন এক রবিবারের দুপুরে ওপেন এয়ার লাঞ্চের ব্যবস্থা করে সংগৃহীত অর্থ বাংলাদেশের কোন নির্দিষ্ট প্রজেক্টে দান করা যেতে পারে।
এই প্রস্তাবের সমর্থনে পরবর্তী বক্তা জাকির হোসেন তার সদ্য দেশ থেকে আসা ছোট্ট একটা ঘটনার কথা তুলে ধরেন। অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে তাদের আশাময় হাসি কার না দেখতে ভাল লাগে। এক রাজমিস্ত্রি কর্মঠ যুবক , যে ৬ তলা থেকে পরে গিয়ে পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছিল তার জন্য একটা হুইল চেয়ার যে কি অভাবনীয় পাওয়া তা শুধু তার খুশি মুখ দেখলেই বোঝা যায়। জাকির হোসেন সিডনির নতুন সেবা সংগঠন “মা কেয়ার বাংলাদেশ” এর ফান্ড থেকে হুইল চেয়ার কেনা এবং চিকিৎসা বাবদ কিছু অর্থ প্রদান করেন।
ড বারি এবং জাকির হোসেন ভবিষ্যতের এই ওপেন এয়ার লাঞ্চ প্রোগ্রাম সফল করার ব্যাপারে গুড মর্নিং বাংলাদেশে এর মুল উদ্যোক্তাদের নিকট থেকে গঠন মূলক পরামর্শ পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন এবং একটি ওপেন এয়ার লাঞ্চ প্রোগ্রাম যার সুফল শুধুমাত্র বাংলাদেশি জন কল্যানমুলক প্রজেক্ট ই প্রাপ্ত হবে এই আশ্বাস দিয়ে উপস্থিত সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
বক্তৃতা পর্বের পর সারপ্রাইজ ছিল লাইভ মিউজিক উপস্থিত সবার জন্য। নাঈম হালিম আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল ভায়োলিন বাদক। স্কুলের গণ্ডি পেরুতে তার এখনও তিন চার বছর বাকি। অথচ এরই মধ্যে নাঈম অপেরা হাউস, টাউন হলের মত বিখ্যাত স্টেজে ভায়োলিন বাজিয়ে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে এক নাগারে বাজিয়ে বেশ মুনশিয়ানার পরিচয় দিল সে। অস্ট্রেলিয়ার ভাব মূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য আমাদের নতুন জেনারেশন যে নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে নাঈম তার প্রমাণ।
সবার শেষে, “গুড মর্নিং বাংলাদেশ” ক্যান্সার কাউন্সিল এর বিগেস্ট মর্নিং টি এর ব্রেকফাস্ট প্রোগ্রামের ইস্টার্ন সিডনির সমন্বয়কারী আজাদ আলম উপস্থিত সবাইকে প্রাণবন্ত অংশগ্রহণের জন্য এবং ক্যান্সার কাউন্সিলে অর্থ দানের জন্য ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ এই অনুষ্ঠান সফলতার সিংহভাগ দাবিদার বলে উল্লেখ করেন এবং উপস্থিত সবাই বিশেষ ভাবে করতালি দিয়ে তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানান। আগামীতে সবাইকে সাথে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে জনাব আজাদ আলম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন।
এই মেলা থেকে বিক্রিত সমুদয় অর্থ ক্যান্সার কাউন্সিলে প্রদান করা হয়। এ দিনের সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০০০ ডলার যা গত বছরের অঙ্ককে ছাড়িয়ে গেছে।
|