bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













ধ্রুব শিকড় - ১০
ফিরোজ আলী


আগের পর্ব

আগরতলা মামলা থেকে মুক্তি পাবার পর ‘৬৯ সালের জুন মাসে আর সব সামরিক সদস্যদের সাথে ক্যাপ্টেন শওকতকেও সেনাবাহিনী থেকে অকাল অবসর দেয়া হয়। কার্পেটিং জুট মিল - যশোর জেলার নওয়াপাড়া শওকতের নুতন কর্মস্থল। যশোহর খুলনা শহরের মাঝামাঝি একটা শহর নওয়াপাড়া। মিলের পিছেই ভৈরব নদী। ৬৯ এর জুন মাসে সপরিবারে চলে যায় ওখানে হেনা, বাবু আর অপুকে নিয়ে। কার্পেটিং জুট মিলে প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব তাঁর। ওখানে যাওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য শাহ্ হাদিউজ্জামান শওকতের নিত্য দিনের সাথী।

কার্পেটিং জুট মিলে থাকতে শওকত চেষ্টা করে অনেক আত্মীয় স্বজন এবং নিজ এলাকা নড়িয়ার অনেককে চাকরি যুগিয়ে দিতে। এর মধ্যে একটা চিঠি পান - খুলে দেখেন ছোট একটা নোট তাতে লিখা ‘দুজন লোক পাঠালাম, চাকরির ব্যবস্থা করে দিও - ইতি শেখ মুজিব'।

ফিরোজ (বাবুর) স্কুল শুরু নওয়াপাড়া থাকতেই – লায়ন স্কুল খুলনা। লাল একটা মাইক্রোবাস করে মিলের সব ছাত্র ছাত্রীরা যায় আসে স্কুলে।। নওয়াপাড়া থাকতেই শওকত তাঁর বাবা মুনশি মোবারক আলী আর মা মালেকা বেগমকে হারান।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ চায় শওকত। বঙ্গবন্ধু বললেন কর্নেল ওসমানীর সাথে দেখা করতে। ওসমানী বললেন রাজনৈতিক সমাধান হয়ে যাবে, যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই, প্রয়োজনে খবর দেয়া হবে - শওকত ফিরে গেলো নওয়াপাড়া। ফিরে এসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মীদের সাথে মিলে প্রতিরোধের পরিকল্পনা করলো।

২৫ শে মার্চের খবর ঢাকা থেকে নওয়াপাড়া আসতে দেরি হয়। ২৫ মার্চের তাণ্ডব রাতের পর
২৬ মার্চ হত্যা করা হয় আগরতলা মামলার ২ নম্বর অভিযুক্ত লে : কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে তাঁর এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়, তাঁর পরিবার এবং শিশু সন্তানের সামনে।

২৭ শে মার্চ ৭১ - শওকতের বাসা জুট মিলের ভিতর। শওকত বাইরে থেকে এসে হেনাকে বললো তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার দিতে, শওকতকে খাবার দিয়ে হেনা গেলো গোসলে, এ সময় খবর এলো পাকিস্তান আর্মি মিল ঘিরে ফেলেছে। দেরি না করে গোপনে বেরিয়ে গেলো সে। নদীর পাড়ে বাঁধা নৌকাতে উঠতেই আর্মি চলে আসে। পাকিস্তান আর্মি বুঝতে পারে না শওকত নৌকায়, নৌকা নদীর মাঝা মাঝি আসতেই, আর্মি এলোপাথাড়ি প্রচণ্ড গুলি ছোড়া শুরু করে। মাঝিদের ভিতরে চলে আসতে বলে শওকত, কয়েকটা গুলি নৌকায় এসে লাগে, কোন মতে বেঁচে যায় সবাই।বাতাসের টানে নৌকা ওপারে এসে লাগে, দ্রুত নেমে গাছের আড়ালে দাড়িয়ে শওকত দেখে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করেই চলছে। শওকত তখন ওদের গুলির নাগালের বাইরে। মিলের জেটিতে বাঁধা ছিল স্পীডবোট কিন্তু ওরা সেটা ব্যবহার করলো না, শওকত নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিলো।

কিন্তু ততক্ষণে বাসা ঘিরে ফেললো আর্মি, বাসার সব দরজা জানালা বন্ধ করে ওরা বাসার ভিতরে বসে ছিল। আর্মি দরজা ধাক্কাচ্ছে আর জোরে বুটের বাড়ি। দরজা না খুলতে পেরে জানালা ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে পরে ওরা। ঢুকেই ছাদ থেকে নামাতে বলে মানচিত্র খচিত লাল সবুজ পতাকা - যেটা বাবু আর অপু মিলে উড়িয়ে ছিল কিছুদিন আগে। গোসল সেরে হেনার ভেজা চুলে তখনও তাওয়েল বাঁধা, আর্মির মেজর হেনার বুকে পিস্তল ধরা আর সমর সাজে সজ্জিত পাকিস্তান আর্মির অসংখ্য
সৈনিক মেশিন গান তাক করে আছে বাবু আর অপুকে লক্ষ্য করে। শওকতের কথা জিজ্ঞাস করছিল বারবার অফিসার। আর হেনা বলছিল শওকত ঢাকায়। কিন্তু মেজর বলতে লাগলো তুমি মিথ্যে বলছো, একটু আগেও তো ছিল।

হেনার বুঝতে অসুবিধা হয় না মিলের কর্মরত বিহারীরা এই খবর দিয়েছে। অনেক কথা-বার্তার পর ওরা চলে গেল কিন্তু বলে গেল যদি শওকতকে পাওয়া যায় ওরা আবার ফিরে আসবে আর তখন কেউকে আর ছাড়বে না। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে, পাশের বাসার ইঞ্জিনিয়ার লতিফের স্ত্রী এসে হেনাকে সান্ত্বনা দেয়, বলে আপনারা তাড়াতাড়ি কোথাও চলে যান।

এ সময় শওকত গোপনে লোক পাঠায় ওদের নিয়ে যেতে। হেনা দুই বাচ্চা নিয়ে এক কাপড়ে চলে আসে নদীর পাড়ে, দেখে শওকত ফিরে এসেছে ওদের নিয়ে যেতে। ওরা নদীর ওপারে গ্রামের এক অপরিচিত বাড়িতে যেয়ে উঠে। সেদিন রাতেই একটা বড় মালবাহী নৌকা করে রওনা হয় ওদের গ্রামের বাড়ি নড়িয়া‘ র উদ্দেশ্যে। সকালে নৌকা ভিড়তো কোনো ঘাটে, জঙ্গলে এদিক সেদিক বাথরুম করে আবার রওনা খুব সাবধানে। চিরা আর মুড়ি খেয়ে তিন দিন তিন রাত পর নৌকা এসে পৌঁছায় নড়িয়া। আর্মিরা ফিরে এসে শওকত আর তাঁর পরিবারকে না পেয়ে হত্যা করে ইঞ্জিনিয়ার লতিফকে আর মিলের গার্ড মশিউরকে।

নড়িয়ায় শ্বশুর বাড়ীতে পরিবারকে রেখে শওকত চলে যায় মহকুমা সদর মাদারীপুর। সেখানে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপ করে শওকতকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য মাদারীপুর মহকুমা কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। মাদারীপুর কলেজে মুক্তি বাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করে নিয়মিত প্রশিক্ষণ শুরু হলো। মাদারীপুর মহকুমার এস ডি ও, পুলিশ বাহিনী সর্বাত্মক সাহায্য করলো। পুলিশের কাছে ছিল ৩০৩ রাইফেল আর সাধারণ জনগণের মধ্যে কারও কারও এক নালা দুই নালা বন্দুক ছিল - সমস্যা হলো আধুনিক অস্ত্রের অভাব।

গেরিলাযুদ্ধ স্থানীয়ভাবে পরিচালনা করা আর মুক্ত এলাকা গড়ে তুলাই ছিল তখন মূল কাজ। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র আর গ্রেনেডের প্রয়োজন - আর এই উদ্দেশেই শওকত নৌপথে প্রথমে চাঁদপুর, চাঁদপুর থেকে বাসে, রিক্সা, জীপে চড়ে ফেনী পৌঁছায়। শওকতের সাথে ছিল মাদারীপুরের স্টুয়ার্ড মুজিব - সেই আগরতলা মামলার তিন নম্বর আসামি। তারপর ফেনী থেকে পরশুরাম পার হয়ে জীপে করে সীমান্ত - পাকিস্তান আর্মি তখনও ওই এলাকায় আসে নাই। এরপর পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করে বেলোনিয়া শহর - স্থানীয়রা জয় বাংলার লোক বলে তাঁদের সম্বোধন করে, আদর আপ্যায়ন করে।

বেলোনিয়া থেকে জীপে আগরতলা পৌঁছে শওকত দেখা করে কর্নেল ওসমানীর সাথে। ওসমানী বললেন ২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সাথে দেখা করতে, খালেদ সিনিয়র হলেও শওকতের বন্ধু তুমি তুমি সম্পর্ক। খালেদ মোশররফ মাদারীপুর মহকুমাকে ২ নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত করেন - প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ জন করে এক একটা গ্রুপ তাঁর সদর দপ্তরে পাঠাতে বললেন। একটা এল এম জি, একটা ৯ এম এম স্টেনগান আর কয়েক শ রাউন্ড গুলি নিয়ে বস্তায় করে শওকত আর স্টুয়ার্ড মুজিব ফিরে এলো মাদারীপুর। মাদারীপুর এসে পরদিনই ৫০ জনের একটা ব্যাচ পাঠিয়ে দেয় ওপারে প্রশিক্ষণের জন্য।

এর মধ্যে পাকিস্তান আর্মি ফরিদপুর শহরে চলে এসেছে, মাদারীপুর আক্রমণ খুব শীঘ্রই হবে, সিদ্ধান্ত হয় মাদারীপুর শহর রক্ষার চেষ্টা না করে গ্রামাঞ্চলে ঘাঁটি করা। আরও সিদ্ধান্ত হয় শওকত ২ নম্বর সেক্টরে ফিরে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ত্বরান্বিত করবে। শওকত চেষ্টা করে তাঁর পরিবার সহ সীমান্ত অতিক্রম করতে কিন্তু খুব ঝুঁকি পূর্ণ হওয়ায় ফিরে আসতে হয়, আর্মি তখন অনেক এলাকায় ঢুকে পড়েছে। আবার পরিবারের সবাইকে শ্বশুর বাড়ি রেখে, শওকত অন্য পথে সীমান্ত অতিক্রম করে মে মাসের মাঝামাঝি মতিনগরে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেয়। এর কিছুদিন পর মতিনগর থেকে ২ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর মেলাঘরে স্থানান্তরিত হয়। শওকতকে ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়।

দলে দলে মাদারীপুর সহ অন্যান্য জেলা, মহকুমা থেকে ছেলেরা মেলাঘরে আসা শুরু করে। মেলাঘরে একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, তারপর বাঘমারা নামক আরেকটা জায়গায় ২ নম্বর সেক্টরের আওতায় প্রশিক্ষণের দায়িত্বও দেয়া হয় শওকতকে।

এদিকে একদিন শোনা যায় নড়িয়ায় আর্মি আসবে, সেই রাতে বেপারী বাড়ির ছোট বড় সকলে আশ্রয় নেয় কীর্তিনাশা নদীর পাড়ে কুত ঘরে, কালো অন্ধকার রাতে এত মানুষের নিশ্বাসে ভীতি আর আশঙ্কায় সে রাতের প্রতিটা মুহূর্ত কাটে। শওকত পরিবার তো আছেই, তার উপর মোমিন আলী বেপারী নিজে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তখন আর তাঁর ছেলে বিয়ে করেছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ মিজান চৌধুরীর বোনকে - সেই পরিবারও তখন ওই বাড়িতে - স্বভাবতই পাকিস্তান আর্মির লক্ষ্য বেপারী বাড়ি। যাক সে রাত কোন বিপদ ছাড়া পার করে, খুব ভোরে হেনার দুর সম্পর্কের আত্মীয় আবুল বাশার দেওয়ান শওকত পরিবারকে নিয়ে যায় ভূমখারায় এক বাড়িতে - নিরাপদ আশ্রয়ের খোজে। ওখানে কিছুদিন কাটাবার পর হেনা খবর পায় শওকত মুক্তিযোদ্ধা স্টুয়ার্ড মুজিব এবং দিদার কে পাঠিয়েছে তাঁর পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দুই ছেলেকে নিয়ে হেনা কখনও নৌকায়, কখনও মাইলের পর মাইল হেঁটে, রিকশায় চড়ে, সাধারণ মানুষের আশ্রয়ে থেকে দাউদকান্দি, গৌরীপুর হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে।

সীমান্ত এলাকা সোনামুড়ায় মেজর হায়দার আর ক্যাপ্টেন আক্তার শওকতের পরিবারকে রিসিভ করে। এরপর শওকত আসে ওদের নিয়ে যেতে। বড় বড় দাড়িতে শওকতকে প্রথমে চিনতে পারে না বাবু। অনেকদিন পর বাবাকে দেখে খুব ভালো লাগে বাবুর।

যুদ্ধের সময় শওকত পরিবারের অবস্থান ছিল মেলাঘর ২ নম্বর সেক্টরের কাছেই একটা স্কুল চত্বরে। স্কুল টিচারদের কোয়ার্টারের পাশেই পড়ে থাকা একটা খালি জায়গায় একটা কুড়ে ঘর ছিল হেনা আর দুই ছেলের বাসস্থান। বাঁশের তৈরি মাচা ছিল বিছানা। সেই কুড়ে ঘরের মাটিতে লেপা মেঝ থেকে কেঁচো বেরিয়ে আসতো মাঝে মাঝে। বাবুর
বাবা প্রশিক্ষণে ব্যস্ত ছিলো ২ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের। বাবার সাথে কদাচিৎ দেখা হত ওদের। দুই ভাই মাঝে মাঝেই যেতো ক্যাম্পে। ক্যাম্পের ভিতর ঢুকতে একটা কোড বলতে হতো, একেকদিন একেকটা কোড থাকতো।

ক্যাম্পের ভিতর প্রশিক্ষণ-রত মুক্তিযোদ্ধাদের তাঁবুর ভিতর কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে কিংবা অস্ত্র পরিষ্কার করছে কিংবা কঠোর প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। মনে পড়ে রুটি আর মাষ কলাইয়ের ডাল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার। বাবু আর অপুও খেতো মাঝে মাঝে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই শওকত এবং তাঁর পরিবারের এত ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়, তাঁরা এখনও এই পরিবারেরই একজন সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁদের মধ্যে একজন কুমিল্লার কামালুদদীন মজুমদার (২ নম্বর সেক্টরের এডজুটেন্ট), ক্যাপ্টেন শওকত তাঁকে ফরিদপুরের কমান্ডে নিয়ে আসে - পালং, গোসাইরহাট, নড়িয়া, মাদারীপুর, সখিপুর, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, কার্তিকপুর এসব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত এবং প্রশিক্ষণ দিতে থাকে তাঁরা। এরকম আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা চির আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে সেই থেকে এই পরিবারের সাথে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মতি খবর নিয়ে আসে হেনার কাছে - তাঁদের বেপারী বাড়ি পাকিস্তান আর্মিরা পুড়িয়ে...

...ছাই করে দিয়েছে, পুড়িয়ে মাটির সাথে মিলিয়ে দিয়েছে চকধ মুনশি বাড়ি। মেলাঘর ক্যাম্পের কাছেই স্থাপিত হয়েছিল বাংলাদেশ হাসপাতাল, ক্যাপ্টেন আখতার আহমেদের তত্ত্বাবধানে, তাঁকে সহায়তা করে ক্যাপ্টেন ডাক্তার সিতারা, সুফিয়া কামালের দুই মেয়ে সাঈদা কামাল, সুলতানা কামাল, ডালিয়া আহমেদ, লিনু বিল্লাহ আরও অনেকে। সুলতানা কামাল স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বলেন, শওকত ভাই আর ভাবি বাঁশের তৈরি ঘরে তাঁদের থাকার আয়োজন করে নিয়েছেন। শওকত ভাই যুদ্ধ ক্ষেত্রেই থাকেন বেশিরভাগ সময়, ভাবির কাছেই যত আবদার। যেদিন আলু ভর্তা হয় ভাবী অনেক আদর করে অ্যাপায়ন করেন, মনে হয় মার হাতে বানানো খাবার খাচ্ছি।

ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাক্তার মবিন যোগ দেন সেই হাসপাতালে জুন মাসের শেষে। বাবুর মনে আছে হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে তাঁর খুব কষ্ট হতো।
মনে আছে ওই বাঁশের ঘরে বসে প্রতিদিন সকালে রেডিওতে শুনতো ওরা বজ্রকন্ঠ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ যা সবাইকে স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্বেলিত করতো। শুনতো এম আর আখতার মুকুলের কণ্ঠে চরম পত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের যে কোন বিজয়ের খবর যার পর নাই আনন্দিত করতো সবাইকে আর কোন দুঃসংবাদ করতো মর্মাহত।

১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শওকত, হেনা, বাবু আর অপু ফিরে আসে প্রিয় মাতৃভূমিতে।

যুদ্ধ শেষে বীরের বেশে শওকত ফিরেছিল জন্মভূমি নড়িয়াতে - লঞ্চ ভর্তি সহযোদ্ধাদের নিয়ে। সদরঘাট থেকে ওয়াপদা ফাঁকা গুলি করতে করতে শওকতকে তাঁরা বীরের সম্মান দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল - বীরের মৃত্যু নেই - কিংবদন্তি তুমি।


তথ্য সূত্রঃ
- Armed Quest for Independence: Colonel Shawkat Ali
- বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম এবং আমার কিছু কথা - কর্নেল শওকত আলী
- আগরতলা মামলার অনুচ্চারিত ইতিহাস ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক : নাজনীন হক মিমি এবং ড: মো: দেলওয়ার হোসেন।
- মাজেদা শওকত আলী
- আলাউদ্দিন আহমেদ
- স্মৃতচারণমূলক


-: শেষ :-


আগের পর্ব





Share on Facebook               Home Page             Published on: 16-Nov-2021

Coming Events: