দেখতে আমি পাইনি ফিরোজ আলী
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেটরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। Mirzapur Ex Cadets Association (MECA) Australia এর আয়োজনে এই প্রাক্তন ক্যাডেটদের এক মহা মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরে এবং নিকটবর্তী গসফোর্ড শহরের Umina Beach রিসোর্টে।
বড় ভাই , ছোট ভাই , সহপাঠীদের সাথে বহুদিন পর দেখা হওয়ার আনন্দ, ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন আর বুকে জড়িয়ে ধরে বলা – “বন্ধু কেমন আছিস বল্” এই বহু প্রতিক্ষীত সময়টা ঝড়ের মত এলো আবার চলেও গেলো।
আমেরিকা, নিউজিলান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ক্যাডেটরা একে একে এসে জড়ো হয়েছিল সেদিন সিডনী শহরে। আগেই নির্ধারিত করা ছিল ২২ নভেম্বর সকালে, ফার্স্ট মিটিং পয়েন্ট, সিডনীর Campbell's Cove wharf এ সবাই মিলিত হবো আমরা।
দারুন সুন্দর সেই সকালে, দশটা নাগাদ যখন একে একে সবাই জড়ো হতো শুরু করলো - ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নক্ষত্রের এই মহামিলনে আকাশের তারকারাজিও যেন সেদিন লজ্জা পেয়েছিল। প্রাক্তন ক্যাডেট আর তাঁদের পরিবারদের কোলাহলে, হাসাহাসি আর বহুদিন পর দেখা হওয়া আলিঙ্গনে একটা উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন।
পাঁচ ঘণ্টার হারবার ক্রুজ, অপেরা হাউসের সামনে মিলিত ছবির পর আমরা সবাই চলে গিয়েছিলাম সিডনীর অদূরে সমুদ্র ঘেঁষা Gosford শহরের Umina beach সংলগ্ন একটা রিসোর্টে। এরপর তিনদিন দুই রাত ধরে চললো আনন্দ আর হাসি গান, স্মৃতিচারণ, খেলাধুলা আর বিরামহীন আড্ডা ।
ক্যাডেটদের সাংস্কৃতিক পরিবশনা মোহিত করে রেখেছিল সকলকে, অজান্তেই নেচে উঠেছে মন, একাত্ম হয়ে গিয়েছিলাম আমরা সুরের মূর্ছনায়।
পুনর্মিলনী উপলক্ষে প্রকাশিত সাময়িকী পড়তে পড়তে আমরা হারিয়ে গিয়েছি স্মৃতির অতলে, তার উপর একেক বেলায় ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের অফুরান খাবার পরিবেশনা সকলকে দিয়েছে তৃপ্তি।
পুনর্মিলীতে অংশ নেওয়া শতাধিক ক্যাডেট আর তাদের পরিবার সহ ২৫০ জন যখন Umina রিসোর্ট ছেড়ে চলে আসছিলো সবার মনে একটাই কথা উকি দিচ্ছিল “আবার দেখা হবে”। United We stand.
এইচ এস সি শেষ করে ক্যাডেট কলেজের পাট চুকিয়ে যেদিন একেবারে চলে এলাম, সহপাঠীদের থেকে বিচ্ছেদ কিংবা ছয় বছরে তৈরি হওয়া মায়া কোনোটাই আমাকে বিচলিত করেনি সেদিন- একটুও কাঁদিনি। এই পুনর্মিলনীর পর বন্ধুদের এয়ারপোর্টে বিদায় দিয়ে যখন ফিরে এলাম বাসায় তখন শুনশান নীরবতা, চারদিকে শুধু শুন্যতা , খালি খালি সব কিছু , অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছিল অনবরত- এই প্রথম উপলব্ধি করলাম ওরা শুধু সহপাঠী ছিল না - ছিল আমার বন্ধু - অতি কাছের মানুষ… হায় “দেখতে আমি পাইনি, দেখতে আমি পাইনি” ।
হয়তো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কিংবা একই সময়ে আমরা একই মাঠে খেলেছি, একই ডাইনিং হলে খেয়েছি, একই হাউসে থেকেছি - এই সম্পর্কের শুরু যখন,আমাদের বয়স তখন এগারো কিংবা বারো। অদ্ভুত এই সম্পর্ক, এই টান এই ভালোবাসা বোঝানো কঠিন।
ফিরোজ আলী, সিডনি
|