bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



স্মৃতির পাতা থেকে -
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন
ড. ফেরদৌসী জাহান



আমাদের সবার জীবনে নানান ঘটনা, হাসি-কান্না দুঃখ সবকিছু আসে যায়। আমরা স্মৃতিচারণ করতে ভালবাসি, তা সে খুশির হোক বা দুঃখের হোক। আজ যেটা বর্তমান, কাল সেটা অতীত। আর অতীত যেহেতু ফিরে পাওয়া যায় না – তাই সেটা সবসময় মধুর। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি সবচেয়ে একটা উল্লেখ যোগ্য মধুর স্মৃতি বেশির ভাগ মানুষের জীবনে; তবে হয়তোবা কারো জীবনে এটা বিষাদেরও স্মৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন একটা মূল্যবান সময় একটা মানুষের জীবনে। বয়সের দিক দিয়ে একজন মানুষ পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে । কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ, তখন সবকিছু কেমন যেন ভাল লাগে, মনে রঙ লাগায়। সেশন জটের কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীজীবন স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দীর্ঘ সময়গুলো অনেক অনেক মধুর আর স্মৃতিময় ছিল। ।

আমি ফলিত পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। এই বিভাগের জন্ম ১৯৬৭ সালে। তবে প্রথমে অনার্স কোর্স ছিল না। অনার্স কোর্স প্রথম খোলে ১৯৭২ এ। তখন প্রতিটি বর্ষে ৭ থেকে ২০ জনের মত ছাত্র-ছাত্রী। আমাদের বর্ষে আমরা দুজন মেয়ে এবং প্রথম মেয়ে আমাদের বিভাগে। যেহেতু অল্প সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী, বিভাগের সবার মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল, সবাই খুব আন্তরিক ছিল, একটা পরিবারের মত ছিলাম আমরা। অনেক স্নেহ-ভালোবাসা-শ্রদ্ধায় ভরা ছিল সবার মন। বিভাগের প্রায় প্রতিটি শিক্ষকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বিভিন্ন সময়ে ক্লাস ছাড়াও তাদের কাছে যেতাম আলোচনা করতে,পড়া বুঝতে, তাঁরা সবসময় উৎসাহ দিতেন এবং সময় দিতে কার্পণ্য করতেন না। একটা বিষয় ভাবলে বেশ গর্বিত লাগে যে আমাদের বিভাগ থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছিলেন ৭ জন শিক্ষক।

আমাদের সময়ে, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগের বিল্ডিং এ ছেলে-মেয়েদেরকে একটু রিজার্ভ থাকতে হত। একটা ছেলে একটা মেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিরিবিলিতে গল্প করছে - ভাবাই যেতো না। তাই বলে দুষ্টামি, দস্যিপনা থেমে থাকতো না, বরং অনেক ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেও সেটা দেখা যেত। মনে পড়ে আমরা তখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী, বসে আছি আমাদের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের বাগানের পাশের সিঁড়িতে। হঠাৎ এক টুকরা ভাজ করা কাগজ এসে পড়ল কোলের উপর। ওটা তুলে নিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখি আমাদের বিভাগের কয়জন সিনিয়র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন, মিটিমিটি হাসছেন। কাগজে কি লেখা ছিল, এখন সেটা বলতে চাইনা, তবে ওনাদের সবাই সাফল্যের সাথে ডিগ্রি শেষ করে উঁচু পদে অধিষ্ঠিত। এখন সেই কথা মনে হলে ওনারাও হয়ত লজ্জা পাবেন।

শীতের সকালের সোনা ঝরা রোদে দাড়িয়ে থাকতাম প্রথম বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় ক্লাসের অপেক্ষায়। আমাদের বাগানটা ছিল ফুলে ফুলে ভরা। বিকেলে ক্লাস শেষে বাগান থেকে চুপ করে মালীর অগোচরে কিছু ফুল তুলে নিয়ে যেতাম। পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সামনে ছিল বিরাট একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ। অলস দুপুরে সেই গাছের মন মাতানো লাল ফুলগুলো যখন বাতাসে দোল খেত, ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে ছেয়ে যেত গাছের নীচের ঘাসগুলো। আমরা ক্লাসের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকতাম, আর ফাল্গুনী হাওয়ায় অলস দুপুরে মনটা এক ধরনের রোমান্টিকতায় ভরে যেত। একদিনের কথা – দাঁড়িয়ে ছিলাম একা বিভাগের বারান্দায়। আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে এসে একটা কাগজে ভাজ করা কিছু এনে বললো “দেখেন এটা কি”। আমিও সরল মনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে গেলাম, বললাম “দেখি কি”। আমি এগিয়ে যেতেই ছেলেটি কাগজে ফু দিল, অমনি কাগজের গুড়া পাউডার আমার সারা অঙ্গে, শাড়ীতে ছড়িয়ে পড়লো। লালে লাল হয়ে গেলো আমার শাড়ী, আমার হাত মুখ। ভুলেও ভাবিনি যে অমন টি হবে। রাগে দুঃখে বাকহারা হয়ে গিয়েছিলাম। পর মুহূর্তে কাউকে কিছু না বলে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। হয়তবা ছেলেটিও ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গিয়েছিল, বুঝতে পারেনি এমনটি হবে। সেদিন ছিল আমাদের আগের বর্ষের আর্টস ফ্যাকাল্টির র‍্যাগ ডে। কোনো এক ভাইয়ের কার কাছ থেকে পাউডারটা নিয়েছিলো। ভেবেছিলাম এই ঘটনার জন্য বিভাগের সভাপতির কাছে নালিশ করব, কিন্তু কেন যেন করা হয়ে উঠেনি।

মনে পড়ে বিভাগের বনভোজনের দিনগুলির কথা । প্রতি বছর বিভাগের সবাই মিলে শীতের সকালে বাসে করে গান গাইতে গাইতে যাত্রা শুরু হতো। কি মজা কি আনন্দই না করেছি সেই দিনগুলিতে। আমাদের শেষ বর্ষের বনভোজন ছিল ঈশ্বরদীতে। সারাদিন ঘুরে ঘুরে অনেক মজা করলাম, অনেক ফটো তোলা হয়েছিলো। আমাদের ক্লাসের একজন ছাত্রকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ফটো তোলার। পরে যখন ফটো দেখতে চাইলাম, জানতে পারলাম ডেভেলপ করার পর দেখা গেছে পুরা ফিল্মটাই সাদা, কারণ রিলটা ঘোরে নাই, শুধু শাটার ক্লিক করা হয়েছে। তখনতো এখনকার মতো মোবাইলও ছিল না, ডিজিটাল ক্যামেরাও ছিল না। আমরা যখন থার্ড ইয়ারে পড়ি তখন বিজ্ঞান ফ্যাকাল্টিতে একটা একজিবিশন হয়েছিল। কি যে উদ্দীপনা ছিল সবার মাঝে। আমাদের বিভাগে সবচেয়ে বেশী দর্শক হয়েছিল। তার কারণ ছিল আমার মতে দুটো জিনিস; একটা ছিল মাইক্রোওয়েভ ওভেন, সেখানে কাগজের কাপে এক মিনিটে কেক বানিয়ে মাত্র এক টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল, আর একটা আকর্ষণ ছিল ক্লোজ-সার্কিট টেলিভিশন এবং সেটার দায়িত্বে ছিলাম আমি। নিজেকে টেলিভিশনে দেখার যে কি আনন্দ সবার মাঝে। সময়টা হয়তোবা ১৯৭৮ এর শেষের দিকে। সেইসময় অন্তত রাজশাহীতে ক্লোজ-সার্কিট টেলিভিশন কিংবা মাইক্রোওয়েভ এর প্রচলন ছিল না।

আর একটি দিনের কথা মনে খুবই দাগ কেটে আছে। তখন ১৯৭৬ সাল, জানুয়ারি মাস। রাজশাহীর অনেকে হয়তো জানেন চাঞ্চল্যকর নীহার বানুর হত্যা মামলার কথা। তখন আমরা প্রথম বর্ষের ছাত্রী। নীহার আপাকে চিনতাম ফ্যামিলির মাধ্যমে। ওনার বড় বোন তখন মেডিকেল কলেজে পড়ত আমার বড় বোনের সাথে। একদিন ক্লাস শেষে লাস্ট বাসে ক্যাম্পাস থেকে ফিরছি। দেখলাম নীহার আপা একটা ছেলের সাথে এডমিন বিল্ডিং র সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। সব বাস চলে গেল, উনি বাস ধরতে আসলেন না। ভাবলাম নীহার আপা বাসায় যাবেন কিভাবে, ওনারা থাকতেন শহরের আর এক পার্শে। তার ২-১ দিন পরেই শুনলাম নীহার আপাকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে এও জেনেছি যে নীহার আপার সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ব্যক্তিটি ছিল তার ঘাতক, আর সেই দিনটিই ছিল নীহার আপার জীবনের শেষ দিন। তার দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় নীহার আপাকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল। পড়ন্ত গোধূলি বেলায় সোনালী আলোয় নীহার আপার সেই সুন্দর মুখখানি আজও মনে দাগ কেটে আছে।

আমরা যখন শেষ বর্ষের শেষের দিকে, খুব মনে হত – ঈশ আর মাত্র কয়টা দিন, তারপরেই শেষ হয়ে যাবে এই মধুর দিনগুলো। আমার সাথে আমার এক খালা পড়তেন বাংলা বিভাগে । তাই খালার সৌজন্যে বাংলা বিভাগে যাতায়াত ছিল। একদিন আমরা খালাসহ কয়েকজন মেয়ে মিলে একটা ক্যামেরাম্যান ঠিক করেছিলাম আর সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর মনোরম বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ফটো তুলেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর স্মৃতিগুলোর কিছু ক্যামেরায় ধরে রাখার প্রচেষ্টায়।

ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে আমরা ক'জন


ছাত্রী জীবন শেষ করে আবার একই বিভাগে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেছিলাম, খুব আনন্দ লেগেছিল, কারণ প্রথম থেকেই আমার এবং আমার পরিবারের সেই স্বপ্নই ছিল। আবারো সেই মধুর স্মৃতি বিজড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পথ চলা। আমি ছিলাম বিভাগের প্রথম এবং একমাত্র মহিলা শিক্ষক সেই সময়। তবে একই বছরে উচ্চশিক্ষার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যাই। ফিরে এসে আবার বিভাগে যোগদান করলেও অল্প কিছুদিন পরেই আবার অস্ট্রেলিয়াতে চলে আসি। শিক্ষিকা হিসেবে বেশি দিন ছিলাম না। তাই ছাত্রী জীবনের স্মৃতিগুলোই মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। আমার সৌভাগ্য আজও স্মৃতিচারণ করতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিনগুলির কারণ আমার জীবনসঙ্গীও একই বিভাগের ছাত্র এবং শিক্ষক ছিল।




ড. ফেরদৌসী জাহান, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 7-Jan-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far