বই পরিচিতিঃ আমার সুন্দরী ইয়োগা ট্রেনার জুনাইদুল হক
এবার একুশে বইমেলায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ফারুক কাদেরের প্রথম লেখা বই ছোট গল্প সংকলন “আমার সুন্দরী ইয়োগা ট্রেনার” বের হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে মাছরাঙা প্রকাশনী।
ফারুক কাদের পরিণত বয়সে তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ আমাদের উপহার দিয়েছেন। চমৎকার গদ্যে লেখা অত্যন্ত পাঠযোগ্য দশটি গল্প রয়েছে বইটিতে। বহুদিনের প্রস্তুতির ছাপ লক্ষ্য করা যায় গল্পগুলিতে। আকর্ষণীয় মনো-বিশ্লেষণ, মানুষের প্রতি ভালবাসা ও জীবনের অর্থ খোঁজার আন্তরিক চেষ্টা দেখি। দেরীতে লেখা শুরু করলেও ফারুক কাদের গুণী লেখক।
নাম গল্প “আমার সুন্দরী ইয়োগা ট্রেনার” কসমোপলিটান জীবনের চিত্র তুলে ধরেছে। গল্পটিতে লেখকের সূক্ষ্ম রসবোধ ধরা দেয়। সুন্দরী ইয়োগা ট্রেনার রাধা তার আমেরিকা প্রবাসী গুরুজীর প্রেমে অন্তঃপ্রাণ, কিন্তু গুরুজী ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে। বিপর্যস্ত রাধার জন্য তার ইয়োগার ছাত্র জামিল বয়ে নিয়ে আসে অনুকম্পা আর সান্ত্বনা। এখন প্রেমের কাঙ্গালি রাধা কাকে বেছে নেবে? গুরুজী নাকি জামিল? পাঠকের কাছে একই প্রশ্ন রেখে গল্পের সমাপ্তি। নিয়ন্ত্রিত রসবোধ গল্পকারের সম্পদ।
অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাপটে রচিত তিনটি গল্প, “পালাবদল”, “পাতা ঝরার দিন” ও “ক্যাসুয়াল টিচার” - হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রথম গল্পে প্রকৃতি প্রেমিক অজি বৃদ্ধা সিঙ্গেল ক্যারলের চারিদিকে প্রকৃতি, মানুষ সবকিছু বদলে যায়। অন্যদিকে ক্যারল তার মায়ের স্মৃতি বিজড়িত “রুবী কটেজ” আঁকড়ে ধরে জীবনের শেষ কটা দিন পার করতে ব্যস্ত। দ্বিতীয় গল্পে একজন ক্যানসার রুগী পত্র-পতনশীল গাছের পাতা-ঝরার মাঝে জীবনের অর্থ খুঁজে পায়। “ক্যাসুয়াল টিচার” সিডনীতে বাংলাদেশী কর্মজীবী এক মহিলার পরিবার ও সামাজিক দায়িত্বের প্রতি ত্যাগ ও নিষ্ঠার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে।
“রশীদের আজ ও আগামীকাল” নামক গল্পটি বাংলাদেশের সমাজের তলানিতে পড়ে থাকা প্রান্তিক মানুষের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। পদ্মা পাড়ের নদী ভাঙ্গনের শিকার রশীদ স্বপ্ন দেখে পদ্মা ব্রিজ হলে অন্য সবার মত তারও ভাগ্য পরিবর্তন হবে: পেট পুরে খেতে পারবে; ব্রিজের কারণে জাগা চরে মাথা গোঁজার ঠাই হবে। কিন্তু রশীদের স্বপ্ন কি আদৌ সফল হবে! “অন্তহীন যাত্রা” একাত্তরের ২৫শে মার্চে পাক সেনার নৃশংসতার পরিপ্রেক্ষিতে বাঙ্গালীদের চেতনায় মুক্তির কামনা বিধৃত হয়েছে। ২৫শে মার্চের রাতে পুরনো ঢাকা শহরের শাঁখারিবাজারে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যা অসহায় মানুষকে শুধু স্তম্ভিত করেনা, বাঙ্গালীর মুক্তি ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বীজও বপন করে। বাংলাদেশের গ্রামও লেখক ভাল চেনেন। শিকড়ে ফিরে যাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন “বৌ কথা কও” গল্পে।
ফারুক কাদের অপার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছেন পাঠকের কাছে। তাকে বরণ করে নিতেই হবে। কিছু গল্প আরও বড় হতে পারত, দু একটি শব্দ বদলে দেয়া যেত। “আমার সুন্দরী ইয়োগা ট্রেনার” তবু আকর্ষণীয় প্রথম গল্পগ্রন্থ।
সংকলনের গল্প গুলি ৩-৪ পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গল্পের ভাষা খুবই সাবলীল। সুতরাং পাঠকদের ধৈর্য-চ্যূতির সম্ভাবনা কম। আমার বিশ্বাস, বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য ও মানবিক আবেদনের জন্য সব ধরনের পাঠক গল্পগুলি পড়ে উপভোগ করবেন।
অনলাইনে বইটি অর্ডার দেওয়া যাবেঃ
Rokomari.com 2/2 E, Arambag, Motijheel Dhaka 1000 M: +8801708166262
|