bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













নদী নিয়ে কাহন বা কথন
ফারুক কাদের



বাংলার নদ-নদীর বড়ই বিচিত্র ও কাব্যিক নাম: চিত্রা, পদ্মা, যমুনা, বংশী। নামের উৎস কি জানা যায়না। কেউ আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় নদীর নামকরণ করেছে তা নয়। নদীর নামে ইংগিত, লোকজ ভাবনা, পৌরানিক গাঁথা বা মিথের আবহ জড়িয়ে থাকা এমন নদীমাতৃক দেশে বিচিত্র নয়। একই নামে একাধিক নদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিরাজ করে। নদী সহজে মরে না, মানুষের কথনে নদীর নাম বেঁচে থাকে হাজার বছর ধরে।


মুন্শীগঞ্জে ইছামতী নদী
আমার জানামতে বাংলাদেশে চারটা ইছামতী নদী আছে: পাবনা, সাতক্ষীরা, মুন্শীগঞ্জ ও চট্টগ্রামে। ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই কৌতূহলোদ্দীপক মনে হয়।
পাবনা শহরের কাছে ইছামতী নদীর প্রতি কবিগুরুর মুগ্ধতা ও ভালবাসা আমরা জেনেছি তার পত্র সাহিত্য রচনা “ছিন্নপত্র” এ। দক্ষিণ বঙ্গের ইছামতী নদী সাতক্ষীরা আর পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার সীমানা নির্দেশ করে। এ নদীর নামে ও পটভূমিকায় সাহিত্যিক বিভূতিভূষণের একটি উপন্যাস আছে। মুন্শীগঞ্জে ইছামতী নদী ধলেশ্বরী আর পদ্মা নদীর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতো অতীতে। এখন ধলেশ্বরীর উৎস স্থল থেকে নদী বিচ্ছিন্ন। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দুটি শাখা নদী: একটি হালদা, আরেকটি ইছামতী। সুদূর অতীতে এই চার, বিশেষ করে মুন্শীগঞ্জ ও পাবনার ইছামতী নদীর মধ্যে সংযোগ থাকা বিচিত্র কিছু নয়। পশ্চিম বঙ্গের দঃ দিনাজপুর জেলায় এক ইছামতী নদী আছে।


ধানসিঁড়ি নদী
ঝালকাঠিতে ধানসিঁড়ি নদী জীবনানন্দের কবিতায় অমর হয়ে আছে। একই নামে আসামে ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি শাখা নদী আছে যার উৎস নাগাল্যান্ড পাহাড়ি এলাকা। এই শাখা দুই নদীর স্বভাব চরিত্রে অনেক ফারাক। আমাদের ধানসিঁড়ি ভাটির এক ঝিমিয়ে পড়া শ্লথ গতির নদী, সেখানে আসামের নদীটি আন্দাজ করি উচ্ছলতায় ভরপুর এক পাহাড়ি কন্যা। কিন্তু ভৌগলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন ও আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দুটো নদীর একই নাম! খুবই কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় নয় কি।

বগুড়া-গাইবান্ধায় করতোয়া নদীর নামকরণের একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। করতোয়া একসময় খরস্রোতা নদী ছিল। তখন মানুষ নদীকে খর-তোয়া ডাকত, যার অর্থ খর-স্রোতা। খর-তোয়া থেকে করতোয়ায় পর্যবসিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। করতোয়া গোবিন্দগঞ্জের কাছে দুই ভাগ হয়েছে: এক শাখা করতোয়া নামে বগুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, খুবই করুন অবস্থা; আর একটি শাখা শুরুতে কাটাখাল, তারপর বাঙ্গালী নদী নামে বাঘাবাড়ীর কাছে গুমানী নদীতে মিশেছে। আমার ধারনা করতোয়ার সাথে আদি বাঙ্গালী নদীর কোন সংযোগ ছিলনা, তখন করতোয়াই ছিল মূল নদী। হয়তো বাঙ্গালীর সাথে করতোয়ার সংযোগ স্থাপনে খাল কাটা হয়েছিল। এই সংযোগ স্থাপনই করতোয়ার জন্য কাল হয়েছে। এখন করতোয়ায় খুবই কম পানি প্রবাহিত হয়। এই বাঙ্গালী নদীর নাম কিভাবে হোল, সেটাও তো বড় প্রশ্ন।


কপোতাক্ষ নদ
বুড়িগঙ্গার সাথে গঙ্গার সম্পর্ক কি? এটাই কি আদি গঙ্গা বা পদ্মা নদী। একসময় গড়াই ছিল মূল পদ্মা নদী। গড়াই এর উৎসমুখে চর পড়ার কারণে ধীরে ধীরে মূল নদী দূরে সরে যেয়ে মেঘনায় পড়েছে। এখন মনে হয় পদ্মা নদী গড়াইকে ত্যাজ্য করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

কপোতাক্ষ নদের অর্থ কপোত-অক্ষির নদ। নদীর সাথে কপোত অক্ষির তুলনা, কি চমৎকার কাব্যিক উপমা! কোন বিরহীর কপোত অক্ষের অশ্রুজলে নদীর উৎপত্তি - এ ধরনের ভাবনা কি ব্যক্তি বিশেষের স্বপ্নে পাওয়া, তারপর মিথ হয়ে দুইপাড়ের জনগোষ্ঠীর যৌথ স্বত্বায় ঠাঁই করে নেয়া!





ফারুক কাদের, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 7-Nov-2020

Coming Events: