bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













সিটি কাউন্সিলের মেয়র ও তার পোষা কালো বেড়াল
ফারুক কাদের




(Photo: DrL en.wikipedia)
আমাদের ক্যাম্পবেল টাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র আয়ান কারিন্ডা স্ট্রীটে অনেক বছর ধরে আছে। জেনেছি অনেক পরে, ততদিনে আয়ানের মেয়র টার্ম শেষ। আমার বাড়ীর ঠিক উল্টো দিকে স্ট্রীটের ঐ পারে এক ফুলেল হাউজে সত্তোর্ধ অজি সিঙ্গল মহিলা কারিনা থাকে। কারিনার বাড়ী ঘেঁষেই মেয়র আয়ানের ডুপ্লেক্স বাড়ী। এদেশে অবশ্য বাড়ীর আশেপাশে মেয়র, এমপি, মন্ত্রী কে থাকল, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়না। সিটি কাউন্সিলের মেয়র আমার প্রতিবেশী, এটা বাইরের লোকদের কখনও জানিয়েছি, ঠিক গর্ব বলতে যা বোঝায় তা করিনি।

আয়ান যখন মেয়র ছিল আর এখন প্রাক্তন মেয়র, এই দুই আয়ানের মধ্যে কোন তফাৎ দেখিনি – সাধারণ মানুষের মতই জীবনাচার। মেয়র হিসাবে তাকে সিটি কাউন্সিল থেকে আলীশান বাড়ী, গাড়ী, ড্রাইভার, পাইক-পেয়াদা দেয়া হয়নি।

মেয়র যখন ছিল তখন ইঙ্গেলবার্নে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশীদের কয়েক ঈদের জামাতে আয়ান কে দেখেছি, কম্যূনিটি থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়েছিল; এখন এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। জামাত শেষে মেয়র হিসেবে আয়ান বাংলাদেশীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটা ছোট ভাষণ দিত। এখন বর্তমান মেয়রের কাঁধে এই দায়িত্ব পড়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে এলাকার লেবার স্টেট এমপি আনালাক। বাংলাদেশীদের অনুষ্ঠানে লেবার বা লিবারেল পার্টির এমপি বা মন্ত্রী হাজির করতে পারা কম্যূনিটিতে শো-অফের মত ধরে নেয়া হয়। আয়ান এখন আনালাকের চ্যাম্বারে সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করে।

আয়ান সিঙ্গল, বয়স ৪৫/৫০ হবে। বাড়ীতে তেমন থাকেনা, হেঁটেই কাজে যায়, আসে। গাড়ী আছে অবশ্য। রাস্তায় আয়ানের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়েছে, তখন দাঁড়িয়ে গল্প করেছি। কখনও আমার বাড়ীতে তৈরি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার ওকে বাসায় দিয়ে এসেছি। একবার এক রমজানে বাসায় করা এক বাক্স ইফতারি নিয়ে আয়ানের বাড়ী যাই।

সারা দিন রোজা রাখার পর আমরা মুসলমানেরা এই ইফতারি খাই, আমি বলি। আয়ান কিছুক্ষণ ভেবে বলে, ফারুক, আমি ফাস্টিং করছিনা, আমার ইফতারি খাওয়া কি ঠিক হবে? তুমি রোজা না রাখলেও ইফতারি খাওয়ার জন্য ঈশ্বর তোমাকে পুরস্কৃত করবেন, আমি আশ্বস্ত করি।
তুমি আমাকে বাঁচালে, ফারুক। আজ আমার ডিনার তৈরি করতে হবেনা, তোমার ইফতারি দিয়েই আমার ডিনার হয়ে যাবে।
এভাবেই আয়ানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।

আয়ানের বাসার সামনে একটা আম গাছ। সিডনীতে কোয়ালিটি আমের ফলন খুব একটা ভাল হয়না। তবে আয়ানের গাছে বড় সাইজের আকর্ষণীয় আম ধরে। হাতের কাছে গাছে ঝুলে থাকা একটা দুটো কাঁচা আম এক আধ বার দুপুরে পেড়ে নিয়ে এসেছি টক আম-ডাল রান্না করতে। টক আম-ডাল নিয়ে যাই ওর কাছে একদিন। আয়ান জিজ্ঞেস করে, ফারুক এটা কি?
এটা লিন্টেল সুপ উইদ গ্রিন ম্যাঙ্গো, তোমার গাছের ম্যাঙ্গো। খেয়ে আমাকে জানিয়ো, কেমন লাগল।
ওয়াও, বল কি।

আয়ান বুঝতে পেরেছিল এই আম গাছের প্রতি আমার নজর পড়েছে। আম পাকা শুরু হোলে একদিন সে বলল, ফারুক তুমি তোমার পছন্দ মত পাকা আম নিয়ে যেও। সব নিও না, আমার মায়ের জন্য কিছু রেখে দিও। মা গাছের পাকা আম খেতে চেয়েছে।

আয়ানের মা আছে, এই প্রথম জানলাম। আসলে আয়ানের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কোন ধারনা নেই আমার। দেখেছি সে সিঙ্গল; ওর বাড়ীতে লোকজন ও আসেও কম; কোনদিন দেখেছি বলে মনে পড়েনা। আয়ানের মা হয়তো একা কোথায় থাকে। এখানে মানুষ যে যার মত আলাদা স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে।

আয়ানের প্রতিবেশী কারিনার কাছে শুনেছিলাম আয়ানের একটা পোষা কালো বেড়াল আছে। তবে আয়ানের বাড়ীতে কোনদিন বেড়াল দেখিনি। শুনেছি বেড়ালটা মাঝে মাঝে বাড়ী থেকে পালায়। কিছু দিন পাড়া বেড়িয়ে আবার চলে ও এসেছে। রাস্তায় কখনও এক কালো বেড়াল দেখেছি, আমি নিশ্চিত নই এটা আয়ানের কিনা! বেড়ালটা একবার আমাকে দেখে ভয় পেয়ে ছুটে যেয়ে স্ট্রীট কার্বের স্টর্মওয়াটার পিটে ঢুকে পড়ে।

আয়ানকে বিড়ালের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। তুমি আমার বাসার দরজায় নক করলে, ও কিভাবে যেন টের পেয়ে আড়ালে চলে যায়। তোমাকে এড়াতে চায়, হতে পারে বেড়ালটা লাজুক বা বিষণ্ণতায় পেয়েছে। আমার মনে হোল পোষা বেড়াল নিয়ে আয়ান দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ।
কালো বেড়াল পেট নিলে কেন? আমি আয়ানকে বলি।
বুঝতে পেরেছি, আয়ান বলে। দেখ, কালো বেড়ালটা ছিল আমার মায়ের পেট বেড়ালের চারটি ছানার একটি। শুধু এ ছানাটাই বেঁচে ছিল। মা বেড়াল ছানাটা অলক্ষুণে মনে করে ফেলে দিতে চেয়েছে। আমি ছানাটা এনে ভেটের সাহায্যে বাঁচিয়ে তুলি। এখন এর জন্য অনেক মায়া পড়ে গেছে। মাকে বলেছি বেড়ালটা ওরফান্যাজে দিয়েছি।

এক দিন আয়ানের পোষা কালো বেড়ালটা হারিয়ে গেল, সত্যি হারিয়ে গেল। বাড়ী থেকে পালিয়ে আর ফিরে এলনা। এক রাতে আমি কারিন্ডা স্ট্রীটে হাঁটছিলাম, এমন সময় আয়ানের সাথে দেখা। কাছে এসে বলল, ফারুক আমার বেড়ালটা মিসিং, তুমি কি দেখেছ কোথাও?
আমি আমার দেখা কালো বেড়ালটার কথা বলি। ইদানীং বেড়ালটাকে দেখিনি, এটাও নিশ্চিত করি।

আয়ান জানাল সে বাস স্ট্যান্ডে একটি নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এ ব্যাপারে। জানলাম, বেড়ালের সন্ধান দিলে $১০০ পুরষ্কার মিলবে।

বাস স্ট্যান্ডে একদিন কালো বেড়ালের ছবি দেয়া নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিটি দেখি। কারা যেন ফাজলামো করে ১০০ এর সাথে আর একটি শূন্য বসিয়ে দিয়েছে, বোঝা যাচ্ছিল। এর মধ্যে দু এক জন কোথা থেকে কালো বিড়াল নিয়ে এসে আয়ানের সাথে দেখা করেছে। কিন্তু কোনটাই অথেনটিক ছিলনা।

আর এক রাতে আয়ানের সাথে রাস্তায় দেখা। আয়ান ড্রিঙ্ক করেছিল। আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে বলল, হাই ফারুক, তুমি কি আমার বেড়ালটার খোঁজ পেলে? বেড়ালটা কোথায় যেতে পারে বলতে পার? আয়ানকে বিষণ্ণ ও শোকে মুহ্যমান মনে হোল।

আয়ান শেষ পর্যন্ত ওর ডুপ্লেক্স বাড়ী বিক্রি করে আমাদের পাড়া ছেড়ে চলেই গেল। আয়ানের ডুপ্লেক্স বাড়ীর নতুন বাসিন্দা এক সিঙ্গল মহিলা, দুই শিশু মেয়ে নিয়ে থাকে। আয়ান যাবার আগে বলে গেল: ফারুক, আমার বেড়ালটার খোঁজ পেলে জানিও। প্রতিবেশী কারিনাকে একই কথা বলে গেছে।

আয়ান পাশের সাবার্বে নতুন এক বাড়ীতে মুভ করেছে। যাবার পর আমাকে কয়েক বার ফোন ও টেক্সট ম্যাসেজও করেছে বেড়ালের খোঁজ পেতে। এক বার বিড়ালের সাথে তোলা সেলফি ও পাঠিয়েছে। আয়ান এখন মাকে নিয়ে থাকে। বেড়ালের জন্য শোকাভিভূত আয়ানের জন্য মায়ের উপস্থিতি ভালই হবে মনে হোল ।

আয়ানের কালো বেড়াল আর ফিরে আসেনি। বাস স্ট্যান্ডে একদিন কালো বেড়ালের ছবি দেয়া নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিটিতে দেখি কারা যেন বেড়ালের মাথায় দুটো শিং বসিয়ে দিয়েছে। তারপর এক দিন বিজ্ঞপ্তি বৃষ্টিতে গলে খসে পড়ে গেছে।

একদিন কারিন্ডা স্ট্রীটের কার্ব লাগোয়া স্টর্ম-ওয়াটার পিটের সাথে সংযুক্ত পাইপ থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছিল। আমরা প্লাম্বার ডেকে এনে দুর্গন্ধের কারণ খুঁজতে বলি। প্লাম্বার পাইপ থেকে একটা কালো বেড়ালের মৃতদেহ বের করে আনল। আমি আর কারিনা বুঝতে পারলাম এটা আয়ানের সেই কালো বেড়াল।

কারিনা আমাকে কানে কানে বলল, ভুলেও আয়ান কে জানিয়ো না, ও শুনলে হার্ট ফেল করবে। আমরা আয়ানের ডুপ্লেক্স বাড়ীর সিঙ্গল মহিলাকে বুঝিয়ে বলি, আয়ানের সাথে যদি কোনভাবে দেখা হয়, বিড়ালের কথা কিছু বলবেনা।

আয়ানের সাথে অনেক দিন বাদে ইঙ্গেলবার্ন সিবিডিতে দেখা, তখন করোনার প্রকোপ কমে গেছে। স্টেট এমপির চ্যাম্বারের বাইরে খোলা জাগায় বসে লাঞ্চ করছিল। আয়ানের সাথে সামান্য কথা হোল। আমি চলে যাবার সময় বলল, তোমার গ্রিন ম্যাঙ্গো লিন্টেল সূপ মিস করছি, ফারুক। বেড়াল নিয়ে কোন কথা বলেনি আয়ান; বেড়াল নিয়ে প্রশ্ন করলে কি জবাব দিতাম তাই ভাবছিলাম। মনে হয় আয়ান তার পোষা কালো বিড়াল হারানোর কষ্ট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।





ফারুক কাদের, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 6-Aug-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far