করোনা ডাইরি (২) ফারুক কাদের
২৪/০৩/২০২০
সকালে ও সন্ধ্যাবেলা ছাদে যেয়ে গাছ গাছালির মাঝে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া ও খোলা আকাশ দেখা মিস করিনা। এটা আমার গৃহবন্দী জীবনে লাইফ লাইনের মত। বিল্ডিং এর ছাদের বাসিন্দারা ছাদে নিসর্গ রচনা করেছে। ছাদের স্থাপনাগুলির বিভিন্ন লেভেলে ও ভাজে ফুল, ফল ও সবজীর বাগান। বিভিন্ন লেভেলে যাবার জন্য ষ্টীলের সাইড সিঁড়ী আছে। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের মতই কনসেপ্ট।
ব্যাবিলন (বর্তমান ইরাক) এর রাজা নেবুকেনেজার-২য় ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান গড়েছিলেন তার স্ত্রীর সন্তোষটির জন্য। তার স্ত্রী জন্মেছিল ইরানের এক সবুজ পাহাড়ি উপত্যকায়, যার অভাব রানীর মনোবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন ব্যাবিলনের রাজা এই উদ্যান গড়ার কাজে হাত দেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় কিছু পাথরের স্তূপ ছাড়া এই ঝুলন্ত উদ্যানের কোন অবশিষ্ট নেই। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানকে প্রাচীন যুগের সপ্তাশ্চর্যের একটি বলে গণ্য করা হোতো।
আজ আকাশ আগের চেয়ে পরিষ্কার ও নির্মল লাগছে। সবাই বলছে প্রকৃতির মাঝে বিশুদ্ধ-করণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। আমরা প্রকৃতির উপর অনেক অত্যাচার অবিচার করেছি, তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করিনি। উন্নয়নের স্বার্থে প্রকৃতি ও পরিবেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছি। এখন প্রকৃতি তার মত করে মনুষ্য সৃষ্ট জঞ্জাল সাফ করছে। আদিবাসী, বনের জীবজন্তু সবাই প্রকৃতির সন্তান। বাকী আমরা সবাই বখে যাওয়া সন্তান।
আমাদের ছাদের ঝুলন্ত বাগানের গাছগুলো পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেনা, সতেজ ভাব নেই। আমার মা বলছিল একটা ভাল বৃষ্টি হোলে করোনার প্রকোপ কমে যাবে। তাই যেন হয়।
২৯/০৩/২০২০
গৃহবন্দী জীবনের সাত দিন অতিক্রান্ত হোল। ডেস্ক ক্যালেন্ডারে এই সাত দিন গোল দাগ দিয়ে রেখে দিলাম।
আজ স্কুল বন্ধু ডঃ গওস নওয়াজকে আমার গল্পের বই “আমার সুন্দরী ইয়োগা ট্রেনার” এর স্বাক্ষরিত কপি উপহার দিলাম। দেয়া নেয়ার প্রক্রিয়া রাজপথেই সম্পন্ন হোল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয় অনেকে খেয়াল রাখেনা। গওস কথা বলার সময় আমার কাছে চলে আসছিল বারে বারে, আর আমি উৎকণ্ঠিত হচ্ছিলাম। যাহোক গওস কথা শেষ করে বিদায় নিলে, আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচি। রাস্তায় ভ্যানে সবজির সরবরাহ বিক্রেতারা চালু রেখেছে। এখন সবজি কেনার সময় দরাদরি করিনা বরং মূল্যে খুচরো পাঁচ/দশ ছাড় দিচ্ছে। রাজপথ ফাঁকা, দোকানপাট বন্ধ। তবে বড় গ্রোসারি শপ খোলা আছে, সেখান মানুষ দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। গুটিকয়েক রিকশা চলছে। সব রিকশাওয়ালার মুখে মাস্ক।
আমার প্রজেক্টের টীম লিডার মনোয়ার ভাইকে কল দিলাম। মনোয়ার ভাই তখন সুচিত্রা উত্তমের সাগরিকা দেখছিলেন। এই জুটির গোটা বিশেক ডিভিডি নিয়ে বসেছেন উনি। বেশ মজার মানুষ মনোয়ার ভাই। আমি ওনাকে সুচিত্রার হিন্দি ছবিগুলি দেখতে বললাম। সুচিত্রার বোম্বাইকা বাবু, দেবদাস, চম্পাকলি, মুসাফির দেখে আমার যে ঘোর লেগেছে, তা এখনও কাটেনি।
আজ WHO র মহা পরিচালকের ভাষণ শুনলাম। আমরা গৃহবন্দী মানুষেরা কিভাবে এই সংকটের সময় মনোবল ও সুস্বাস্থ্য কিভাবে ধরে রাখতে পারি তা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। খুবই উদ্দীপনামূলক। এরকম ভাষণই রাষ্ট্রনায়কদের কাছ থেকে আশা করি যার কথায় মনে হবে, তিনি আমাদেরই একজন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও প্রিন্স চার্লসের করোনা পজিটিভ হওয়া ভাবনার বিষয়। এটার একটা ব্যাখ্যা আশা করা কি অন্যায় হবে? তাহলে কে নিরাপদ? করোনা কি বাঘ মহিষ সবাইকে এক ঘাটে পানি খাইয়ে ছাড়বে!
ফারুক কাদের, ঢাকা থেকে, মোবাইল: 01756 454871
|