কবিতা তোমায় দেবোনা কখনো ছুটি .... ফারিনা মাহমুদ
সেই এক ক্ষুধার ধাক্কায়, কি অনায়াসেই না সুকান্ত কবিতাকে ছুটি দিয়েছিলেন ! তাই বলে সবাই কি সুকান্ত নাকি ? ভাগ্যিস নয় ! আর নয় বলেই তো একদল কবিতা-মাতাল মানুষ বিদেশ বিভূঁইয়ে কাজের চাপ, নিজের পড়াশোনা, বাচ্চার পড়াশোনা, লাইফ পার্টনারের চোখ রাঙানী, রান্না, বাজার, সংসার সব সামলেও নিশিধরা রাতদুপুরে উঠে "প্রেম অপ্রেমের পদ্য" সাজায় .. সাজায় বসন্ত উত্সব । ৮ ই মার্চ শনিবার । ঋতুর বিচারে দক্ষিণ গোলার্ধে অটাম চলছে । তো কি যায় আসে ? খাস বাঙালীর মনের ক্যালেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই এই গোলার্ধের ঋতুচক্রের উপর নির্ভর করেনা । আর তাইতো গায়ে শাল চাপিয়ে দলে দলে মানুষ সিডনী অলিম্পিক পার্কে বৈশাখী মেলায় যায় ! খাস বাঙালীর কাছে অটাম-ই বসন্ত, অটাম-ই বৈশাখ । বীর দর্পে ভাবখানা এমন, মনে জ্বলে দেশের আগুন চেতনার এই জ্বালা ..... আয় দেখি সামনে আয় ঠ্যাকাবি কোন শালা ! সে যাক, বলছিলাম প্রেম অপ্রেমের পদ্যের কথা । ৮ ই মার্চ সিডনীর ব্যাংকসটাউন ইউনাইটিং চার্চ হলে নিজের খেয়ে জঙ্গলের মহিষ ঘরে আশ্রয় দেয়া একদল মানুষ আয়োজন করলেন একটি অনুষ্ঠানের । চলেন এক নজরে দেখে নেই কি ছিলো সেই আয়োজনে –
শুরু: বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান সূচীতে তিনটি পর্ব । প্রথম পর্ব: "কবিতা বিকেল" পরিবারের চারজন সদস্যের একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে । আমরা তাদের সাফল্যের এই আনন্দ এই গৌরব আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে উপভোগ করতে চাই । এই পর্ব তাদেরই জন্য । সঙ্গে থাকছেন আয়ায চৌধুরী, শাহরিয়ার পাভেল, মমতা চৌধুরী ও জন প্রভুদান । সম্মানিত লেখকদের নাম: ডঃ আব্দুর রাযযাক, শাখাওয়াত নয়ন, মাহমুদা রুনু, রাজন নন্দী দ্বিতীয় পর্ব: আবৃত্তি প্রযোজনা "প্রেম অপ্রেমের পদ্য" প্রযোজনা ভাবনা: শীর্ষেন্দু নন্দী পরিবেশনায়: ডঃ মমতা চৌধুরী, শাকিল চৌধুরী, শীর্ষেন্দু নন্দী, আফসানা রুচী, রাজন নন্দী, শাহরিয়ার পাভেল, সেরয়ার কবির সঞ্চয়, ফাহাদ, তামিমা শাহরিন, লাভলী ইয়াসমিন, ফারাহ কান্তা, অনীলা পারভীন, সাবিরা রিমা, শান্তনু কর, জন প্রভুদান । বিরতি: ২০ মিনিট (রাতের খাবার) এই সময় আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন কবিতা বিকেল পরিবারের লেখকদের লেখা বই । তৃতীয় পর্ব: গান গাইবেন তামিমা শাহরিন ও ফাহিমা নাসরিন লিপি অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার । বাক্স খুঁজে হলুদ শাড়ি পাই তো ব্লাউজ গায়ে লাগে না, লাল শাড়ি পাই তো লাল চুড়ি হাতে ঢুকেনা ... মহা মুশকিল । কান্তা সাহস দিলো - লাল নীল হলুদ সবুজ যা খুশি পরে আসো, শ্রদ্ধেয় রুনু আপা আমার মতো অভাজনের সাথে কথা বলে কনফার্ম করলেন - আসছো তো? এরপর আর কথা থাকে না ! শেষ পর্যন্ত সবুজ শাড়ীই সই । তা পরেই রওয়ানা দিলাম । ততক্ষণে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে । হলরুম ভর্তি দর্শক তন্ময় হয়ে শুনছে পাঁচমিশালী কবিতা আর ফাঁকে ফাঁকে গান এবং গিটারের টুংটাং । এই কবিতার তালিকায় আছে প্রচলিত অপ্রচলিত আধুনিক উত্তরাধুনিক নানা বয়সের নানা ঘটনার সব আলেখ্য, আমি তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে কখনো হয়ে গেলাম বিকেলে রুটিন করে বাড়ীর ছাদে গিয়ে পাশের বাড়ীর ছেলেটির সাথে ইশারা বিনিময় করা কিশোরী, কখনো বা নিজেকে সামলে নিয়ে মনে মনে বললাম - আমি বলছিনা ভালবাসতেই হবে ! আবার কখন যেনো মনে হতে লাগলো কষ্ট ফেরী করে চলছি নিজের অজান্তেই - কষ্ট নেবে ? কষ্ট ? এই আধো আলো আধো ছায়া থেকে বেরুলাম - জলে না যাইও কন্যা জলে না যাইও ... এই গানের টানে ! কি বিপদ ! দ্বীপদেশে থেকে বুঝি জলে যাবো না ? খাবারের বিরতিতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো নার্গিস খান লতা এর রান্না করা চিকেন বিরিয়ানি আর সোনিয়া চৌধুরী এর বানানো পিঠা । ভাবছেন এখানেই শেষ ? এত্তো সহজ ? লোহায় লোহা কাটে, হীরায় হীরা .... কবিতার নেশা অবশ্য কাটার জিনিস না তবে গান হচ্ছে এই নেশাকে নিউট্রালাইজ করার একটা ভালো দাওয়াই । আমরা ঢুকে পড়লাম সুরের মূর্ছনায় । তামিমা আপার কণ্ঠ শুনে মনের আক্ষেপটাই বাড়লো, ক্যানো যে ছোটবেলায় গানের মাষ্টার এলে এমন ফাঁকিবাজি করতাম ! কেমন কেমন করে যেনো নেমে এলো গভীর রাত । মিলনায়তন থেকে যখন বের হলাম, তখন মনে মনে শুধু কবিতা বিকেলের কবি, আয়োজক, কলাকুশলী সবার উদ্দেশ্যে শুধু বলতে ইচ্ছে করছিলো - তোমরা না থাকলে বিকেলটা এতো মিষ্টি হতোনা .. তোমরা না থাকলে মেঘ করে যেতো বৃষ্টি হতোনা । ভালো থেকো কবিতা বিকেল, আমাদের মাতিয়ে রেখো তোমাদের পাগলামিতে !
|