bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













জীবনের গল্প - (১)
রাত্রি
ফরিদা আক্তার



বিয়ের পর প্রথম ঈদ। শাওন গত রাতে একটা শাড়ী কিনে দিয়েছে, ইচ্ছাকৃত ভাবে নয়। রাত্রি আফসোস করছিলো তার বিয়ের পর প্রথম ঈদে পড়ার জন্য নতুন কোনো কাপড় নাই। এ কথা শুনার পর শাওন রাগ করে একটা সুতি শাড়ী কিনে এনেছিলো।

সকালে উঠে রান্না শুরু করলো রাত্রি। বাপের বাড়ি থাকতে সে ছিলো কাজে ফাঁকি দেবার ওস্তাদ। তাই রান্না টা শেখা হয়নি। যতোটুকু পারে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছিলো। এর জন্য শাওন এর বকা খেতে হয়েছে অনেক। কিছু আইটেম রান্না করে রাখলো রাত্রি। রাতে মেহমান আসবে, তাই সকালে শাওন নামাজ পড়ে ফিরলে দুজনে বের হবে বেড়াতে। বিকেলে এসে বাকি রান্না টুকু সেরে ফেলবে।

লোকজনের সাথে মিশতে অতোটা পছন্দ করে না শাওন তাই দুপুরের পর বাসায় ফিরে এলো ওরা। রাত্রির একটু মন খারাপ হলো। রান্না বাকি আছে তাই মন খারাপের দিকে মনোযোগ না দিয়ে সে রান্না করতে বসলো। সন্ধ্যার মধ্যে রান্না, ঘর গোছানো সব শেষ। নিজে তৈরি হয়ে নিলো আর শাওন কেউ বললো তৈরি হতে। মেহমান চলে আসবে। এক এক করে অনেকে আসলো। আড্ডা গল্প করে অনেক ভালো সময় কাটালো তারা দুজনেই।

পরের দিন সকালে উঠে রাত্রি মুখ ধুয়ে রান্না ঘরে গেলো। গত রাতের কিছু কাজ পড়ে আছে। তারপর শ্বশুর-বাড়ি নাস্তা করতে যেতে হবে, যদিও ওটা পাঁচ মিনিটের হাঁটার রাস্তা। রান্নাঘরে ঢুকতেই কাচা মাংসের একটা গন্ধ আসলো নাকে। মনে পড়লো গত রাতে বড়ো ননাসের বাসা থেকে কোরবানির মাংস দিয়ে গিয়েছিল। নিজের ফ্রিজে নেই বলে ওইটা ওভাবেই পড়ে আছে। মেহমানদের সাথে কথা বলতে বলতে শাওন কে দিয়ে ওটা শ্বশুর বাড়ি পাঠাতেও ভুলে গেছে। শাওন রাগ করতে পারে ভেবে সে তাকে এই ব্যাপারে কিছু বলবে না বলে ঠিক করলো।

রান্না ঘরের কাজ শেষ করে দুজনে চলে এলো শ্বশুর-বাড়ি, রাত্রি লুকিয়ে তার জা এর কাছে মাংসের ব্যাগটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলো দেখতে ওটা ঠিক আছে কিনা। ঠিক না থাকলে ও ওটা বিন এ ফেলে দিবে। আর শাওন কে জানাতে না করলো। রাত্রিকে অবাক করে দিয়ে তার জা মাংসের ব্যাগটা খুলে চিৎকার করে বলতে লাগলো, মাংস তো নষ্ট হয়ে গেছে। ও শাওন রাত্রি তো মাংস নষ্ট করে ফেলেছে। মাত্র এক/দেড় কিলো মাংসের জন্য এতো চিৎকার? অবাক হয়ে রাত্রি একবার শাওন এর দিকে একবার ওর জা এর দিকে তাকাতে লাগলো। শাওন ও শুরু করলো চিৎকার। অপমান সহ্য করতে না পেরে সে নিজের বাসায় ফিরে আসলো।

একটু পর দরজায় কে জানি কড়া নাড়লো, বুঝলো শাওন এসেছে। খুব অভিমান হলো রাত্রির। কেন শাওন সবার সামনে এভাবে ওকে অপমান করলো! আর এখন এসেছে অভিমান ভাঙ্গাতে। তাই দরজা খুলে শাওন এর দিকে না তাকিয়ে সে রুমের দিকে পা বাড়ালো। কয়েক পা যেতেই পিছন থেকে কে যেন চুলের মুঠো ধরে তাকে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। রাত্রি পিছন ফিরে দেখলো সে আর কেউ নয় তার শাওন। তার ভালোবাসার শাওন। চেষ্টা করলো শাওনকে থামাতে। বিনিময়ে পেলো আরো কিছু আঘাত। কিন্তু ওর চোখে পানি কোথায়? ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শাওন এর দিকে। শাওন তার গায়ে হাত তুলতে পারে বা তাকে মারতে পারে এ কথা সে চিন্তাও করেনি কখনো। আর সেই শাওন, নাহ , অনেক কষ্টে কাঁদতে ভুলে গেছে রাত্রি। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে তার ভালোবাসার মানুষটিকে। খুব বেশী অপরিচিত লাগছে তাকে। অনেক বেশী।



ফরিদা আক্তার, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 23-May-2019

Coming Events: