একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত সেমিনার
লরেন্স ব্যারেলঃ বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় গত ২৬শে অক্টোবর ২০১৪ বেলমোর কমিউনিটি সেন্টার হলে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া আয়োজন করেছিলো সমসাময়িক বিষয়ভিত্তিক এক সেমিনার। ‘প্রবাসে(সিডনী) বাংলা ভাষা ও সঙ্গীত চর্চার ক্রম:বিকাশ এবং একুশে একাডেমীর ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত হয়েছিলো সিডনীস্থ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, মিডিয়া ও সুধী-জন। একুশে একাডেমীর সহ সভাপতি ডঃ স্বপন পাল সমাগত সুধী-জনকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। সর্বজন নন্দিত সুলেখক ও বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক ড: কাইউম পারভেজ মূল প্রবন্ধ পাঠের পূর্বে সম্প্রতি প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধান মন্ত্রী গফ উইটলাম এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সবাইকে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান। তিনি সাবলীল ভাষায় সিডনীর সুদীর্ঘ একশ’সাতত্রিশ বছরের গর্বিত ইতিহাস প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন । তিনি সিডনীতে বাঙালী তথা বাংলাদেশীদের প্রথম আগমন, সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজন ও প্রক্রিয়া- অত:পর বাংলা ভাষা এবং সঙ্গীত লালনের ধারাবাহিক বিকাশ নিপুণভাবে বর্ণনা করেন। তিনি আলমগীর চৌধুরী, বাংলাদেশী ‘ক্যাপটেন কুক’ নজরুল ইসলাম সহ অনেক ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন সংগঠনের অবদানের কথা প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ভিনসেন্ট গোমেজ। তিনি বলেন, ভাষা ও সঙ্গীতের সাথে মানুষের সম্পর্ক হলো আত্মার। উপন্যাসিক, লেখক ও আলোচক ডা: শাফিন রাশেদ বলেন, আহার বা খাদ্যাভ্যাস ও পোশাক পরিচ্ছদ আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে রয়েছে। সুকন্ঠী অমিয়া মতিন একুশে একাডেমীর দীর্ঘ দিনের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে বেঁড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের কাছে বাংলা সঙ্গীত প্রিয়তা বৃদ্ধি করা অতি দুরূহ কাজ। তিনি একুশে একাডেমীর সকল সদস্যদের সাথে নিরন্তর কাজ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। সঙ্গীত-প্রেমী উদয় শংকর বড়ুয়া প্রাবন্ধিক ও অয়োজকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন এবং বিনয়ী ভাষায় বলেন, পারিবারিক ভাবেই তিনি সঙ্গীতের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। ফলে বাংলা সঙ্গীতের লালন ও প্রসার তিনি আন্তরিকভাবে কামনা করেন। সেমিনারের প্রধান অতিথি দেশ খ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ও অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী বলেন, এমন একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। প্রবাসে লোকসঙ্গীত চর্চারও ভীষণ প্রয়োজন এবং এ প্রবন্ধটি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল সনদ হয়ে থাকবে। আগামী প্রজন্মের কাছে যা অনেক অর্থবহ। প্রবন্ধের উপর আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন ফজলুল হক শফিক, নজরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান রিতু, ড: ওয়ালিউল ইসলাম, নেহাল নেয়ামুল বারী, অভিজিৎ বড়ুয়া, গামা আব্দুল কাদের, ড: সুলতান মাহমুদ, গোলাম মোস্তাফা। উপস্থিত সকলেই প্রবন্ধকার ড:কাইউম পারভেজ’র ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং সিডনীকে প্রাধান্য দিয়ে এমন একটি বিষয়কে নির্বাচন করায় একুশে একাডেমীকে সাধুবাদ জানান। অনেকে কিছু বিষয় সংযোজন ও পরিমার্জনের অনুরোধ করেন। ড:স্বপন পাল ও সাখাওয়াৎ নয়ন সমগ্র আলোচনার ভিত্তিতে একটি রির্পোট পেশ করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি ডাঃ আব্দুল ওহায়াব একুশে একাডেমীর সকল সদস্য, প্রবন্ধকার, আলোচক এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একাডেমীর বিগত দিনের কিছু কার্যক্রম তুলে ধরেন। নিরলস ভাবে জাতীয় পর্যায়ে সঙ্গীত ও ভাষাতে বিশেষ অবদানের জন্য প্রধান অতিথি অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশীরকে একুশে একাডেমীর পক্ষে সভাপতি আব্দুল ওয়াহাব একুশের শুভেচ্ছা ক্রেস্ট প্রদান করেন। খোদেজা জাহান শ্যামলী’র উপস্থাপনা এবং তবলায় জন্মেজয় রয়-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে অতিথি শিল্পী ইন্দ্রমোহন রাজবংশী কিছু ভিন্ন মাত্রার গান পরিবেশনা ছিলো সত্যিই চমৎকার। আমাদের বিশ্বাস, একুশে একাডেমী আয়োজিত এ সেমিনার নি:সন্দেহে সিডনী প্রবাসী বাঙালীর আলোকিত অতীত সন্ধানে সহায়তা করবে। অংকন করবে আগামী দিনের দিক নির্দেশনা। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনের দায়িত্বে ছিলেন একুশে একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক লরেন্স ব্যারেল।
|