সিডনিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং বই মেলা উদযাপন করল একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়া
রওনক হাসানঃ মাতৃভাষা বাংলা চর্চা ও তার রক্তাক্ত ইতিহাস অস্ট্রেলিয়াতে আগামী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে সিডনির অ্যাশফিল্ড পার্কের আন্তর্জাতিক মনুমেন্টের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হল ২৩তম একুশের বইমেলা।
তিন সপ্তাহ অতি বৃষ্টির পর এই মেলার সম্ভাব্যতাই হুমকির মুখে পড়ে। কাউন্সিল এর বিধিনিষেধের মধ্যে আয়োজকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মেলা সম্ভব হয়ে উঠে। এবারের মেলায় লোকসমাগম অন্য যে কোন বছরকে ছাড়িয়ে যায়।
২০শে মার্চ, সকাল ১০টায় প্রভাত ফেরীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণ করেন খন্দকার মাসুদুল আলম কনসাল জেনারেল, Tony Burke ফেডারেল এমপি, Jessica D'Arienzo ডেপুটি মেয়র ইনার ওয়েস্ট কাউন্সিল, Karl Saleh কাউন্সিলর ক্যান্টারবেরি সিটি কাউন্সিল, Ronny Maroun রেডক্রস অস্ট্রেলিয়া, কবিতা চাকমা স্থপতি এবং মানবাধিকার কর্মী এবং আশিক আহমেদ সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা Deputy.com. সভায় বক্তারা সব পৃথিবীর সব ভাষা সংরক্ষণ এর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারা উল্লেখ করেন, ভাষাভাষীর সংখ্যা যত কমই হোক, প্রতিটি ভাষাই একেকটি সংস্কৃতির ধারক এবং কালের সাক্ষী।
সভায় একুশে একাডেমীর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরা হয় যেমন রক্তদান কর্মসূচী, ‘Clean Up Australia day’ তে অংশগ্রহণ, ‘Organ and Tissue donation’ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, প্রখ্যাত শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ইত্যাদি। একুশে একাডেমীর আর্ট স্কুল ‘Canvas Kids’ এর বাচ্চাদের চিত্রকর্ম সুধী জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এবারের একুশে বই মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল সিডনি থেকে প্রকাশিত স্বনামধন্য পত্রিকা ‘প্রভাত ফেরী’। সভাপতি আব্দুল মতিন এবং সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান তাদের পৃথক বক্তব্যে প্রভাত ফেরীর প্রধান সম্পাদক শ্রাবন্তী কাজী আশরাফী কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
দিনভর মেলায় ছিল মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে নানান আয়োজন। প্রতিবারের মতো এবারও মেলার মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন বইয়ের স্টলে দেশি-প্রবাসী প্রথিতযশা কবি সাহিত্যিকদের বইয়ের সমাহার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার পরপর শুরু হয় ছোট্ট সোনামণিদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া সারাদিন ব্যাপী চলে গান, কবিতা, নাচ, দলীয়-সঙ্গীত এবং নাটক। একুশে একাডেমীর শিল্পীরা ছাড়াও বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। এদের মধ্যে কবিতা বিকেল, জুম্মা সাংস্কৃতিক দল, পেন্সিল অস্ট্রেলিয়া এবং শখের থিয়েটার নাম উল্লেখযোগ্য। একুশের পত্রিকা ‘মাতৃভাষা’র লেখা এবং অঙ্গসজ্জা বিশেষ ভাবে পাঠক সমাদৃত হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানমালায় আরও ছিল নতুন প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন, চিত্র প্রদর্শনী, ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী এবং বাচ্চাদের জন্য রাইডস। মেলায় নানান জাতের মুখরোচক দেশীয় খাবারের সমাহার ছিল খাবারের স্টলগুলোতে।
২০২৩ সালের মেলার আগাম তারিখ ঘোষণা করে (১৯শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন একুশে একাডেমী অস্ট্রেলিয়ার সহ-সভাপতি ডঃ সুলতান মাহমুদ।
|