bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বুনোফুল (১)
ড. নজরুল ইসলাম



পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের মোট ভূখণ্ডের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে এই অঙ্গরাজ্যটি। ভারত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলোর চেয়ে আলাদা। এখানে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় ও নাটকীয় ল্যান্ডস্কেপ। প্রতি বছর এখানকার বুনোফুলগুলো এই ল্যান্ডস্কেপকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। ১২ হাজারেরও বেশি প্রজাতির বুনোফুল রয়েছে এখানে যা কিনা বিশ্বের বৃহত্তম সংগ্রহ। এখানকার ৬০ শতাংশ বুনোফুল পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার টুরিস্টর আসে এই ফুল দেখতে। তবে পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মাঝে এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ লক্ষ্য করিনি। আমার এই লেখা তাদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে তোলার জন্য।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থকে বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন শহর বলা হয়। পার্থের সবচেয়ে কাছের বড় শহর হলো অ্যাডিলেড, দূরত্ব ২,১৩১ কিলোমিটার। বিমানে আসতে লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। আর সিডনি থেকে আসতে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। কাজেই একান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ এ দিকে আসে না। আমিও একই পথের পথিক। ১৫ বছর নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে ছিলাম, কখনো এদিকটা ঘুরে দেখার কথা ভাবিনি। ২০০৫ সালে চাকরি সূত্রে এখানে আসার পর আমার ধারণা বদলাতে থাকে। তখন বুঝতে পারলাম আমি কতটা এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিস করেছি। আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম যে অস্ট্রেলিয়া একটা মহাদেশ। এর প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা তো হবেই। বাসায় আমরা দুজন “এম্পটি নেস্টার”। দুজনেই প্রকৃতি প্রেমী। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি। আমাদের পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বুনোফুল দেখার কিছু অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরলাম।


বুনোফুলের হটস্পটগুলোকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা যায় - পার্থ অঞ্চল, পার্থের উত্তর অঞ্চল এবং পার্থের দক্ষিণ অঞ্চল। উত্তর অঞ্চলের বুনোফুলগুলো জুন মাস থেকে ফুটতে শুরু করে। এই অঞ্চলে আমাদের দেখা চারটি উল্লেখযোগ্য স্থান হলো - এক্সমাউথ, সার্ভেন্টেস, কালবারি এবং মানকি মায়া। এক্সমাউথ পার্থ থেকে প্রায় ১,২৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটা ছোট রিসোর্ট শহর। ড্রাইভ করে গেলে, যেতে আসতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। আমরা গিয়েছিলাম বিমানযোগে। দুই ঘণ্টার ফ্লাইট। সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত লেয়ামনথ (Learmonth) এয়ারপোর্ট। এক্সমোউথে বুনোফুল দেখার সবচেয়ে বড় যায়গা হলো কেপ রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্ক, শহর থেকে ৫০ মিনিটের ড্রাইভ। এই পার্কে অনেক বুনোফুলের দেখা পেলাম। তার মধ্যে দুটো ফুল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। একটা হলো মালা মালা (mulla mulla)। বেগুনি রঙের মোলায়েম ফুলগুলো দেখতে খুব সুন্দর। পরে জেনেছি এই এলাকাটা মালা মালা বুনোফুলের জন্য বিখ্যাত। আমাদের মোটেলে অবস্থানরত এক দম্পতি আলবানী শহর থেকে ষোলো শো কিলোমিটার ড্রাইভ করে এসেছেন এই মালা মালা দেখতে। এখানে দেখা আরেকটা বিশেষ জনপ্রিয় বুনোফুল হলো উজ্জ্বল লাল রঙের স্টার্টস ডেসার্ট পি (Sturt's desert pea)। অদ্ভুত দেখতে এই ফুলটার ছবি ক্যালেন্ডারে আগেই দেখেছি। এখানে প্রথম স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হলো। এক্সমাউথের আরেকটা বড় পর্যটন আকর্ষণ হলো নিঙ্গালু রীফ। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল পার্ক এবং বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্রিন্জিং রীফগুলোর মধ্যে একটা। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রীফটা এক্সমাউথ থেকে কোরাল বে অবধি বিস্তৃত।


(১) মালা মালা এবং (২) স্টার্টস ডেজার্ট পি, এক্সমাউথ

কালবারি পার্থ থেকে ৫৭০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত একটা রিসোর্ট শহর। পার্থ-বাসীদের ছুটি কাটানোর জনপ্রিয় জায়গা। পার্থ থেকে উত্তরে যাওয়ার প্রধান রাস্তা হলো ন্যাশনাল রুট ওয়ান। এছাড়া আরও একটা সিনিক রুট আছে, ভারত মহাসাগরের উপকূল ঘেঁসে গ্রেট ইন্ডিয়ান ওশান ড্রাইভ। আমরা সেই রাস্তা ধরে গিয়েছিলাম। ২০০ কিলোমিটার পর নামবাং ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্কে অনেক বুনোফুলের মধ্যে ছিল কমলা, লাল এবং সোনালী রঙের ক্যাটসপ এবং নীল রঙের টিনসেল লিলি। এই পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম অনন্য ল্যান্ডস্কেপ, “পিনাকেলস”। নীল আকাশের নীচে বালির উপর দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার চুনাপাথরের স্তম্ভ। ২৫ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে যায়গাটা সমুদ্রের নীচে ছিল। আস্তে আস্তে পানি যখন নেমে যায় তখন সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকে অনেক ঝিনুক। আর সেই ঝিনুকের উপর গড়ে উঠেছে চুনাপাথরের এই কাঠামোগুলো। সময়ের সাথে সাথে উপকূলীয় বাতাসে চারপাশের বালু ক্ষয়ে গেছে। রয়ে গেছে এই স্তম্ভগুলো। নামবাং ন্যাশনাল পার্কের ৩০ কিলোমিটার উত্তরে সার্ভেন্টেস শহর। এই শহরের অদূরে অবস্থিত লেসিয়র ন্যাশনাল পার্ক। এই পার্কে আছে ১৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ লেসিয়র সিনিক ড্রাইভ ট্রেল যা পার্কের সবচেয়ে মনোরম অংশকে অনুসরণ করে। এখানে গাড়ি চালিয়ে বুনোফুল দেখার সুন্দর সুবিধা রয়েছে। এই পার্কে দেখা বুনোফুলের মধ্যে ছিল – বিভিন্ন ধরণের অর্কিড, ষ্টারফ্লাওয়ার এবং স্কারলেট ফেদারফ্লাওয়ার।


স্কারলেট ফেদারফ্লাওয়ার, সার্ভেন্টেস

সার্ভেন্টেস থেকে কালবারি ৩৮০ কিলোমিটার। কালবারি পৌঁছনোর প্রায় ৫০ কিলোমিটার আগে রাস্তার পাশে ছিল হুট লেগুন (Hutt Lagoon) নামে একটা অদ্ভুত সুন্দর গোলাপি সল্ট লেক। কালবারির সবচেয়ে বড় পর্যটন আকর্ষণ হলো কালবারি ন্যাশনাল পার্ক। এখানে বালুচর সমভূমির পাশে দাঁড়িয়ে আছে লাল এবং সাদা ডোরাকাটা স্যান্ডস্টোনের পাহাড়। এর ভিতর দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে গাছে মুর্চিসন নদী। পাহাড় এবং নদীর সংমিশ্রণ তৈরি করেছে একটা অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই পার্কে দেখা বুনোফুলের মধ্যে ছিল – ক্যাঙ্গারু প, কপার কাপ, ক্ল ফ্লাওয়ার এবং স্পাইডার অর্কিড। ক্যাঙ্গারু প ফুলগুলো নানান রঙের হয়ে থাকে – লাল, হলুদ, কালো এবং সবুজ। এর মধ্যে রয়েছে লাল এবং সবুজ রঙে মেশানো এক ধরণের ক্যাঙ্গারু প। এটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত বুনোফুল। রাজ্য সরকার এই ফুলটাকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ফ্লোরাল এমব্লেম হিসাবে বেছে নিয়েছে। এই পার্কে আরো আছে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম আইকনিক প্রাকৃতিক আকর্ষণ, “নেচার্স উইন্ডো” - স্যান্ডস্টোনের দেয়ালের মাঝে বাতাসে ক্ষয়ে যাওয়া একটা প্রাকৃতিক জানালা।


লাল এবং সবুজ ক্যাঙ্গারু প, কালবারি

মানকি মায়া, শার্ক বে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকাভুক্ত অঞ্চলে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। কালবারি থেকে ৪০০ কিলোমিটার। সিনিক রুট কালবারিতেই শেষ। কাজেই ন্যাশনাল রুট ওয়ান ধরতে হলো। মানকি মায়ার প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পূর্বে হ্যামেলিন পুল। এখন থেকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকায় যাওয়ার জন্য ন্যাশনাল রুট ওয়ান ছেড়ে ছোট রাস্তা সার্ক বে রোড ধরলাম। এই ড্রাইভটা খুব উপভোগ্য ছিল। রাস্তাটা সমুদ্রের কাছ ঘেঁষে গেছে। হামেলিন পুলে দেখার মতন ছিল স্ট্রোমাটোলাইটস (stromatolites)। এই জীবন্ত ফসিলগুলোতে সাড়ে তিন বিলিয়ন বছরের পুরানো জীবাণু রয়েছে যা পৃথিবীতে জীবনের প্রথম রেকর্ড। বিশ্বের মাত্র দুটি জায়গায় জীবিত সামুদ্রিক স্ট্রোমাটোলাইটের অস্তিত্ব রয়েছে যার মধ্যে শার্ক বে একটি। মানকি মায়ার প্রধান আকর্ষণ হলো বটলনোস ডলফিন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ডলফিনগুলো উপকূলে চলে আসে। তখন তাদের কাছ থেকে দেখা এবং খাওয়ানো যায়। বুনোফুল দেখার সবচেয়ে বড় যায়গা হলো ফ্রাঁসোয়া পেরন ন্যাশনাল পার্ক, মানকি মায়া থেকে ২৪ মিনিটের ড্রাইভ। এখানে দেখা বুনোফুলের মধ্যে ছিল – শার্ক বে ডেইজি, বুনো গোলাপ, ডাম্পিয়েরা, এভারল্যাস্টিংস এবং ক্যাঙ্গারু প।

এবার পার্থ ফেরার পালা। ন্যাশনাল হাইওয়ে ওয়ান ধরে মানকি মায়া থেকে পার্থ ৮৫০ কিলোমিটার। হাইওয়ের দুই পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক বুনোফুল ফুটে ছিল। তার ভিতর হলুদ রঙের বুনোফুল ছিল বেশি। হঠাৎ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়লো। দিগন্তব্যাপী বুনোফুল। হাইওয়ের পাশে অযত্নে ফুটে আছে অসংখ্য হলুদ রঙের বুনোফুল। জায়গাটা পার্থ শহর থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। সবচেয়ে কাছের শহর হলো নর্থহ্যাম্পটন। কিছুদূর পর দেখলাম হাইওয়ের পাশে অনেক কমলা রঙের ব্যাঙ্কসিয়া ফুটে আছে। যাওয়ার সময়ে সিনিক রুট ধরে যাওয়াতে এসব দৃশ্য চোখে পড়েনি। (চলবে)


দিগন্তব্যাপী বুনোফুল, নর্থহ্যাম্পটন





ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া






Share on Facebook               Home Page             Published on: 12-Aug-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far