প্রবাসে পঞ্চাশ বছর (১১) ড. নজরুল ইসলাম
আগের পর্ব পরের পর্ব
দীর্ঘ ফেরি যাত্রার পর আমরা স্টকহোম পৌঁছলাম পরদিন সকালে। ফেরি টার্মিনাল থেকে চলে গেলাম সেন্ট্রাল স্টেশনে। তারপর লকারে মালপত্র রেখে, আমরা গেলাম আমাদের পূর্ব পরিচিত রিয়েল এস্টেট এজেন্ট 'অল রুম'-এ। সেখান থেকে একটা ঘর ভাড়া পাওয়া গেলো। ঘরটা স্টকহোম সিটি সেন্টার থেকে একটু দূরে, এলাকাটার নাম ‘নাক্কা’। ভাড়া কম ছিল কিন্তু বাসে যাতায়াত করতে হবে, তাতে সময় বেশি লেগে যাবে। আমাদের গ্র্যান্ড হোটেলে কাজ করার কথা। গ্র্যান্ড হোটেলের সঙ্গে এলাকাটার বাস যোগাযোগ ভালো ছিল। তাই ঘরটা ভাড়া নিয়ে নিলাম। এটা ছিল দোতালায় একটা দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট। মালিক দীর্ঘ ছুটিতে বিদেশ গেছেন। মাস্টার বেডরুম ছাড়া আমরা পুরো অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবহার করতে পারতাম। বসার ঘরে অনেকগুলো চিত্রকর্ম লাগানো ছিল। সম্ভবত মালিক ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী।
পরদিন আমরা গ্র্যান্ড হোটেলের হিউমান রিসোর্স ম্যানেজার মিস্টার মেলসনের সঙ্গে দেখা করলাম। তার কাছ থেকে একটা দুঃসংবাদ পেলাম। তিনি জানালেন, সুইডিশ সরকার এ বছর থেকে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য শিথিল গ্রীষ্মকালীন ওয়ার্ক পারমিটের নির্দেশনা বাতিল করেছে। এখন থেকে সুইডেনে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট সুইডেনে ঢোকার আগেই নিতে হবে। যেহেতু আমরা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসিনি, তাই তিনি আমাদের গ্র্যান্ড হোটেলে চাকরি দিতে পারবেন না। আমরা বিপদে পড়ে গেলাম। আমরা উনাকে বললাম, আমরা গ্র্যান্ড হোটেলে কাজ করার উচ্চ আশা নিয়ে এসেছি। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। এখন ফিরে গেলে সারা বছর বুলগেরিয়ায় কষ্ট করে কাটাতে হবে। তখন তিনি একটা কাগজে একজনের নাম, ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার লিখে আমাদের দিয়ে বললেন, তোমরা এনার সঙ্গে দেখা করো। তিনি যদি কিছু করতে পারেন। পরে কাগজটা পড়ে দেখলাম, সেই ভদ্রলোকের ঠিকানা পুলিশের হেড-কোয়াটার। নিশ্চয়ই কোনো বড় পুলিশ অফিসার হবেন। আমরা ভয়ে তার সঙ্গে দেখা করলাম না, যদি আমাদের কাজ করার অভিপ্রায়ের কথা জেনে ডিপোর্ট করে দেন। ৭/৮ দিন অনেক ঘোরাঘুরি করেও কোনো চাকরি হলো না। কেউই বেআইনি ভাবে চাকরি দিতে চাইলো না। অগত্যা সিদ্ধান্ত নিলাম মিস্টার মেলসনের সেই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে দেখা করার। ফোন করে এপয়েন্টমেন্ট নিলাম। যথা সময়ে পোঁছে গেলাম তার অফিসে। হাসুই কথা বলছিল কারণ কাউকে বোঝানোর ব্যাপারে সে আমার চেয়ে বেশি পারদর্শী। আমি চুপচাপ বসে ওদের কথা শুনছিলাম। পুলিশ অফিসারের অভিব্যক্তি থেকে বুঝলাম, মিস্টার মেলসন ইতিমধ্যে আমাদের কথা বলে রেখেছেন। সব শোনার পর তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি মিস্টার মেলসনকে বলে দিচ্ছি, তোমরা উনার ওখানে কাজ করতে পারো। তখন আমি বোকার মতন একটা প্রশ্ন করে বসলাম, আমরা গ্র্যান্ড হোটেলে কাজ করার পর দেশে ফিরে যাওয়ার সময় যদি বর্ডারে আমাদের আটকে দেয় তখন কি করবো? তার উত্তরটা এতো বছর পরও মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, তুমি কি মনে করো তুমি সুইডেন ছেড়ে চলে যাচ্ছ আর আমরা তোমাকে আটকে রাখবো? দুদিন পর আমরা গ্র্যান্ড হোটেলে কাজ শুরু করলাম।
এটা ছিল স্টকহোমে আমাদের তৃতীয় সফর। ইতিমধ্যে স্টকহোমের অনেক কিছু দেখা হয়ে গেছে: ভাসা মেরিটাইম মিউজিয়াম, রয়্যাল প্যালেস, কিংস গার্ডেন, পার্লামেন্ট হাউস, গামলা স্ট্যান (ওল্ড টাউন), সিটি হল এবং আরও অনেক কিছু। স্টকহোমের মেট্রো স্টেশনগুলোও দেখার মতো। ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ স্টকহোম পাতাল রেল ব্যবস্থাকে ‘বিশ্বের দীর্ঘতম আর্ট গ্যালারি’ বলা হয়। ভাস্কর্য, দেয়ালচিত্র, চিত্রকর্ম এবং মোজাইক টাইল দিয়ে সাজানো, প্রতিটা স্টেশনের নিজস্ব চরিত্র রয়েছে যা স্টেশনে প্রবেশ করার সাথে সাথে একটা ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করে। দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন ছাড়াও কেনাকাটা করার জন্য অনেক দোকানে যেতাম। 'অলেন্স সিটি' ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কথা আগেই উল্লেখ করেছি। সিটি সেন্টারে আরো কয়েকটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে (নাম ভুলে গেছি) যেতাম। এছাড়া যে এলাকায় থাকতাম সেখানকার স্থানীয় সুপার মার্কেট তো ছিলই। কিছু দোকান ছিল যেখানে আমরা প্রতি বছর যেতাম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভারতীয় মুদির দোকান এবং পুরনো রেকর্ডের দোকান। বুলগেরিয়ায় দেশি মশলা পাওয়া যেতো না। ভারতীয় মুদির দোকান থেকে সারা বছরের মশলা কিনে নিয়ে যেতাম। গান শোনা আমার হবি। নতুন রেকর্ড কেনার সামর্থ্য ছিল না। তাই পুরনো রেকর্ডের দোকানে যেতাম রেকর্ড কিনতে। আমার প্রিয় শিল্পী/গ্রুপের মধ্যে ছিল: আবা, বনি এম, স্মোকি, ডোনা সামার এবং সুজি কোয়াট্রো। কেন জানি না, স্মোকি গ্ৰুপের গাওয়া 'লিভিং নেক্সট ডোর টু এলিস' গানটা শুনলে এখনো চোখে পানি চলে আসে। শুধুমাত্র একটা রেকর্ড নতুন কিনেছিলাম ‘অলেন্স’ থেকে। সেটা হলো ‘আবা’ গ্রুপের ‘অ্যারাইভাল' এলবাম। ১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে যখন এলবামটা প্রকাশিত হয় তখন আমরা স্টকহোমে ছিলাম। সেটা পুরানো রেকর্ডের দোকানে আসতে কয়েক মাস লাগার কথা। তার আগেই আমরা স্টকহোম ছেড়ে ছিলাম।
ইতিমধ্যে আমরা সুইডেনের নাগরিকদের সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা করতে পেরেছি। প্রথম প্রথম আমরা রাতে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে ভয় পেতাম। সেখানে অনেক মাতাল সুইডিশ যাত্রী থাকতো। তবে তারা কখনই আক্রমণাত্মক ছিল না। সুইডিশরা সাধারণত ভদ্র, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ভাল আচরণ করতো। সাহায্য চাইলে সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো। তখন মোবাইল ফোন ছিল না তাই তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন ছিল। এমনও হয়েছে, আমরা একজন পথচারীর কাছ থেকে কিছু তথ্য জানতে চেয়েছি। তিনি পাবলিক ফোনে গিয়ে সেই তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানিয়েছেন। সুইডিশরা উদার মনের মানুষ। সুইডিশ উদারতার একটা উদাহরণ। আমরা বাসে কাজে যাওয়া-আসা করতাম। যাত্রীসংখ্যা কম থাকায় রাত ১২টার পর বাস রুট সংক্ষিপ্ত করা হতো। আমাদের বাস নাক্কা সিটি সেন্টারে গিয়ে থেমে যেত। সেখান থেকে আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট একটু দূরে ছিল। সেই পথ পায়ে হেঁটে যেতে হতো। কাজ শেষ করার পর এত রাতে হাঁটতে কার ভালো লাগে? বেশীরভাগ সময় একই বাসের ড্রাইভার থাকতেন। তিনি জানতেন কাজে যাওয়ার সময় আমরা কোন বাস স্টপ থেকে উঠি। তিনি সদয় হয়ে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের কাছের বাস স্টপে নামিয়ে দিতেন। আমরা তাকে আমাদের সীমিত সুইডিশ ভাষায় ধন্যবাদ জানতাম, 'তাক সু মিকেত' (আপনাকে অনেক ধন্যবাদ)।
‘গ্রোনা লুন্ড’ (গ্রিন গ্রোভ) সুইডেনের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় বিনোদন পার্ক। স্টকহোমে আসার পরপরই এই বিনোদন পার্কের কথা শুনেছিলাম। আমরা এর আগে কখনও বিনোদন পার্ক দেখিনি। তাই ইচ্ছা ছিল একদিন গ্রোনা লুন্ড ঘুরে আসব। পার্কটা সিটি সেন্টার থেকে খুব একটা দূরে না। ট্রাম, বাস বা ফেরিতে সহজেই পৌঁছানো যায়। তবে দেখার জন্য সময় নিয়ে যেতে হবে। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে এই পার্কে বিভিন্ন মিউজিক কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় যেখানে জিমি হেন্ডরিক্স, বব মার্লে, কিস এবং আবা সহ অনেক বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী পরিবেশন করেছেন। আমরা ‘আবা’ গ্রুপের কনসার্টের অপেক্ষায় ছিলাম। সুইডেনের পার্কে বসে আমাদের প্রিয় সুইডিশ মিউজিক গ্রুপের লাইভ পারফরমেন্স দেখা খুবই রোমাঞ্চকর হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে, তা হলো না। আমরা যখন স্টকহোমে ছিলাম তখন 'আবা' বা অন্য কোনো বিখ্যাত মিউজিক গ্রুপের কনসার্ট ছিল না। কনসার্টের আশা বাদ দিয়ে একদিন আমরা গ্রোনা লুন্ড দেখতে চলে গেলাম। এটা ছিল আমাদের প্রথম বিনোদন পার্ক পরিদর্শন, তাই কি দেখতে পাবো সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল না। আমার কাছে এটাকে একটা বড় মেলার মতো মনে হয়েছিল যেখানে ছিল – বাচ্চাদের জন্য নানান ধরণের খেলার ব্যবস্থা (মেরি গো রাউন্ড, বাম্পার কার খেলা এবং আরো অনেক কিছু); প্রাপ্তবয়স্ক জন্য রোমাঞ্চকর রাইড; চিত্তাকর্ষক লাইভ পারফরম্যান্স এবং সুস্বাদু খাবারের দোকান। সঙ্গে ছিল ছোটো ছোট পুরস্কার জিতে নেয়ার মতন 'মিনি-গেমস’। ছোটবেলায়, হাসু নাগরদোলায় চড়ে খুব ভয় পেয়েছিল তাই ও রাইডে উঠতে চাইলো না। আমরা কয়েকটা খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলাম তবে কোনো পুরস্কার জিততে পারিনি। তাতে আফসোস নেই, অংশগ্রহণ করাটাই ছিল দারুণ মজার।
আমাদের ট্রেনের টিকিট ছিল ভার্না-গ্দানস্ক-ভার্না। আসার সময় গ্দানস্ক থেকে আমরা ফেরিতে স্টকহোম এসেছিলাম। ভাবলাম অন্য পথে গ্দানস্ক ফেরা যায় কিনা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, স্টকহোম থেকে হেলসিঙ্কি এবং হেলসিঙ্কি থেকে গ্দানস্ক পর্যন্ত ফেরি পরিষেবা রয়েছে। যদিও এই পথে সময় লাগবে দ্বিগুণ, আমরা এই পথটা বেছে নিলাম কারণ এটা ছিল ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি দেখার একটা চমৎকার সুযোগ। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে, গ্র্যান্ড হোটেলে কাজ শেষ করে, আমরা হেলসিঙ্কি-গামী ফেরি ধরলাম। এটা ছিল ফিনল্যান্ডের শিপিং কোম্পানি ‘ভাইকিং লাইন’ দ্বারা পরিচালিত একটা বিশাল ফেরি। ভিতরে যাত্রীদের জন্য ছিল – রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ওয়াইন বার, ডিস্কো, স্লট মেশিন, ডিউটি ফ্রি শপিং এবং আরো অনেক কিছু। তবে সবকিছুর দাম ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিখরচায় ছিল, ফেরির ডেকে বসে আরাম করে সময় কাটানো আর সেই সঙ্গে অপরূপ সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করা। স্টকহোম ছাড়ার পর দেখা সুন্দর দ্বীপ, হ্রদ এবং ঘরবাড়ির দৃশ্য ছিল হৃদয় ছোঁয়া। ৭ ঘণ্টা পর আমাদের ফেরি থামলো 'মারিয়াহ্যামন' বন্দরে। মারিয়াহ্যামন হলো মধ্য বাল্টিক সাগরে অবস্থিত ফিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ 'অল্যান্ড'-এর রাজধানী। অনেক স্টকহোম-বাসী এখানে ছুটি কাটাতে আসে। রাতভর ফেরি যাত্রার পর আমরা হেলসিঙ্কি পৌঁছলাম পরদিন সকাল ১০টা নাগাদ।
আমরা সিটি সেন্টারে একটা হোটেল বুক করে রেখেছিলাম। হোটেল চেক-ইন করার সময় তখনো হয়নি। কয়েক ঘণ্টা ফেরি টার্মিনালের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করার পর আমরা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ধরে হোটেলে চলে গেলাম। স্টকহোম থেকে আসার পর, হেলসিঙ্কি সিটি সেন্টারটা ছোট মনে হয়েছিল। আমরা পায়ে হেঁটে অনেক পর্যটন আকর্ষণ দেখতে পেরেছিলাম। হেলসিঙ্কির পর্যটন আকর্ষণগুলোর মধ্যে মিউজিয়াম এবং ক্যাথেড্রালগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো লেগেছিল, বিশেষ করে ভবনগুলোর নর্ডিক স্থাপত্য শৈলী। ভবনগুলোর উঁচু খাড়া টালির ছাদ অনেক দূর থেকে দেখা যায়। জাদুঘরগুলোর মধ্যে ‘ফিনিশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম’ হচ্ছে সবচেয়ে স্মরণীয়। এখানে প্রস্তর যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। জাদুঘরের ঢুকতেই বিশাল 'এন্ট্রান্স হল'। হলের উঁচু সিলিং-এ পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের জনগণের যাত্রার মহা-কাব্যিক কাহিনী চিত্রিত করা হয়েছে। ভিতরে কালানুক্রমিক ক্রমে কাঁচের ক্যাবিনেটে নিদর্শনগুলো সাজানো ছিল। প্রস্তর যুগের নিদর্শনগুলো দেখতে ছিল রোমাঞ্চকর।
হেলসিংকি শহরের একটা স্মৃতি... তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমরা হাঁটছিলাম সমুদ্রের ধার দিয়ে। সেখানে জেলেরা মাছ ধরছিল; আর সদ্য ধরা সেই মাছ (সার্ডিন) ভাজি করে বিক্রি করছিলো। আমার কেনার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু হাসু সেই ভাজা মাছ খাবেই। ওর পীড়াপীড়িতে মাছ কিনতে হলো। একটা কাগজের ঠোঙায় অনেকগুলো মাছ ছিল। আমরা সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সেগুলো শেষ করে ফেললাম। স্বীকার করতেই হবে, এটা ছিল আমার খাওয়া সবচেয়ে সুস্বাদু ভাজা সার্ডিন। প্রসঙ্গত, আমরা দুজন যখন স্মৃতিচারণ করি, তখন এই সব ছোটোখাটো ঘটনার কোথায়ই বেশি উঠে আসে। আমাদের কাছে এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো নতুন নতুন জায়গা দেখার চেয়ে বেশি উপভোগ্য ছিল।
আমরা তিনদিন হেলসিঙ্কিতে কাটানোর পর গ্দানস্ক-গামী ফেরিতে উঠলাম। এটা ছিল পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিপিং কোম্পানি ‘পোলফেরিস’ দ্বারা পরিচালিত একটা বড় ফেরি। ফেরিতে থাকা সুবিধাগুলো ছিল ভাইকিং লাইনের মতো। তবে, সবকিছুর দাম ছিল তুলনামূলক ভাবে কম। গ্র্যান্ড হোটেলে আড়াই মাস কাজ করার পর আমরা খুব ক্লান্ত বোধ করছিলাম। পুরো ফেরি জার্নিটা আমরা রিল্যাক্স করে কাটিয়ে দিলাম। গ্দানস্ক ফেরি টার্মিনালে পৌঁছানোর পর আমরা সরাসরি চলে গেলাম সেন্ট্রাল স্টেশনে। সেখান থেকে আমরা ওয়ারশ-গামী ট্রেন ধরলাম। গ্দানস্ক-ওয়ারশ ঘন ঘন ট্রেন থাকায় ট্রেনের জন্য বিশেষ অপেক্ষা করতে হলো না। ওয়ারশ সেন্ট্রাল স্টেশনে আমাদের ওয়ারশ-ভার্না আন্তর্জাতিক ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সেই সময়টা স্টেশনের ওয়েটিং রুমে বসে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। একটা কম্যুনিস্ট দেশের স্টেশন হিসাবে স্টেশনটা বেশ আধুনিক মনে হয়েছিল। যাত্রীদের ওঠানামার জন্য ছিল এস্কেলেটর এবং লিফট। প্রতিটা প্লাটফর্মে ছিল পাবলিক টেলিফোন। আর ওয়েটিং রুমে ছিল টেলিভিশন সেট এবং সেন্ট্রাল হিটিং-এর ব্যবস্থা। ওয়ারশ-ভার্না দীর্ঘ ট্রেন জার্নি। ভার্না যাওয়ার ট্রেনে উঠার পর আমরা স্বস্তি বোধ করছিলাম। তখন মনে হচ্ছিলো এখন আমরা “বাড়ি” ফিরছি। (চলবে)
ফেরিতে হেলসিংকি যাওয়ার পথে
আগের পর্ব পরের পর্ব
ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া
|