bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













প্রবাসে পঞ্চাশ বছর (৭)
ড. নজরুল ইসলাম



আগের পর্ব

আমি যখন বুলগেরিয়া যাই তখন আম্মা কিছুতেই আমাকে ছাড়বেন না। আব্বা অনেক বোঝানোর পর তিনি রাজি হয়েছিলেন। তবে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন – বুলগেরিয়ায় অবস্থান কালে আমাকে একবার দেশে আনতে হবে। টানা ৬ বছর তিনি তার ছেলেকে না দেখে থাকতে পারবেন না। আব্বা তার কথা রেখেছিলেন। দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ হওয়ার আগেই ডাকযোগে টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এরোফ্লট এয়ারলাইনের ওপেন টিকেট। ভ্রমণ-সূচী হলো মস্কো-ঢাকা-মস্কো। অর্থাৎ ভার্না থেকে মস্কো ট্রেনে যেতে হবে। ইউরোপে ট্রেন ভাড়া ছিল কম। এতে কিছুটা সাশ্রয় হবে। তা ছাড়া মস্কো যাওয়ার পথে রোমানিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু অংশ দেখা হয়ে যাবে। ভ্রমণ-সূচীতে যাওয়া এবং আসার পথে মস্কোতে তিন দিনের স্টপ ওভার জুড়ে দিলাম। তখনকার দিনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিসা পাওয়া ছিল কঠিন। একজন বিদেশী ছাত্র ছুটি কাটাতে দেশে যাচ্ছে এবং রিটার্ন টিকেট থাকায় ভিসা পেতে খুব একটা অসুবিধা হলো না। সেই সঙ্গে রোমানিয়ার ট্রানজিট ভিসা নিতে হলো।

একদিন বিকেলে মস্কো-গামী ট্রেনে চেপে বসলাম। ভার্না-মস্কো প্রায় আড়াই দিনের ট্রেন জার্নি। এতটা পথ চেয়ার কোচে যাওয়া যাবেনা। তাই স্লিপার কোচ বুক করেছিলাম। প্রতিটা কোচ ছোট ছোট কেবিনে বিভক্ত; আর প্রতিটা কেবিনে ৪ জন করে বাঙ্কে ঘুমানোর ব্যবস্থা। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ছিল একটা বালিশ এবং কম্বল। আমার তিন সহযাত্রী ছিল রুশ ভাষাভাষী। রুশ ভাষা তখনও শেখা হয়নি; আমাদের রুশ ভাষা শিখতে হয়েছিল দ্বিতীয় বর্ষ থেকে। তবে বুলগেরিয়ান ভাষার সাথে রুশ ভাষার মিল থাকায় কাজ চালিয়ে নিতে পারছিলাম। উনারা তিন সহকর্মী। ভার্না এসেছিলেন কোম্পানির কাজে। উনারা গল্পে ব্যস্ত আর আমি একা বসে বাইরের দৃশ্য দেখছি। আমাদের রুট ছিল ভার্না-রুসে-বুখারেস্ট-কিয়েভ-মস্কো। ‘রুসে’ হল বুলগেরিয়া-রোমানিয়া সীমান্তের আগে শেষ বুলগেরিয়ান শহর। সীমান্তের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে দানিউব নদী। সে নদীর উপর ছিল একটা স্টিলের ট্রাস ব্রিজ যার নাম ‘ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ’। ব্রিজ পার হওয়ার ৩/৪ ঘণ্টা পর পৌঁছে গেলাম বুখারেস্টের প্রধান রেলওয়ে স্টেশন – বুখারেস্ট নর্থ, রোমানিয়ান ভাষায় যার সংক্ষিপ্ত নাম 'গারা দে নর্ড'। এটি রোমানিয়ার বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন এবং রোমানিয়ান রেল সিস্টেমের কেন্দ্র। ইতিমধ্যে রাত নেমে এসেছে। দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ট্রেন একটা ওয়ার্কশপে থেমে আছে। এখানে ট্রেন থামার কারণ বুঝতে পারলাম না। কোনো যান্ত্রিক গোলযোগ হলো নাতো? সহযাত্রীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এটা রোমানিয়া-সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে মলদোভা) বর্ডার। এখানে চাকা বদলানোর জন্য ট্রেন থেমে আছে। রুমানিয়া এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ ১.৪৩৫ মিটারের স্ট্যান্ডার্ড গেজ ব্যবহার করে। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের রেলগেজ ১.৫২৪ মিটার। তাই ইউরোপের কোনো দেশ থেকে যখন ট্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশ করে, তখন ট্রেনের চাকা বদলাতে হয়। জ্যাক ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নের টেকনিশিয়ানরা এই কাজটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতেন। আমাদের ১২/১৪ কোচের ট্রেনের চাকা বদলাতে লেগেছিল ঘণ্টা দেড়েক। আমার সহযাত্রীরা জানালেন – সোভিয়েত ইউনিয়ন ভিন্ন রেলগেজ ব্যবহার করার কারণ যাতে হানাদার সেনারা ট্রেনে করে তাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে। কি চতুর এবং গভীর চিন্তা ধারা! কিয়েভ পৌঁছাতে রাত হয়ে গেলো। মস্কো পৌঁছুলাম পর দিন দুপুরে।

আমার স্কুলের বন্ধু শাহীন রেলস্টেশনে আমার জন্য অপেক্ষে করছিলো। শাহীন এবং আমি তৃতীয় শ্রেণী থেকে (১৯৬১) ঢাকা গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। স্কুল শেষ করার পর আমরা একসঙ্গে ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করেছি। ১৯৭২ সালে আমরা দুজনেই সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে এসেছি, শাহীন সোভিয়েত ইউনিয়নে আর আমি বুলগেরিয়ায়। দু'বছর পর দুই বাল্যবন্ধু মিলিত হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। শাহীন প্যাট্রিস লুমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিল। ও ওদের হোস্টেলে আমার থাকার পূর্বানুমতি নিয়ে রেখেছিলো। আমরা সোজা চলে গেলাম ওদের হোস্টেলে। ওদের হোস্টেলটা ছিল আমাদের ভার্নার হোস্টেলের মতোই তবে দারভেনিৎসা স্টুডেন্টস সিটির মতো আধুনিক ছিলোনা। মস্কো শহরের যেই স্মৃতিটা আমার মনে গেঁথে আছে সেটা হলে – সেখানকার প্রশস্ত বুলেভার্ডগুলো যার দুই পাশ ধরে ছিল বড় বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডিং। একেকটা বিল্ডিঙে আনুমানিক ১০০ পরিবারের বসবাস। এইভাবে কমিউনিস্ট সরকার মস্কো শহরে তার নাগরিকদের আবাসন সমস্যার সমাধান করেছিল। শাহীনকে নিয়ে শহরটা ঘুরে দেখলাম। মস্কোতে প্রথম মেট্রোরেলে চড়ার অভিজ্ঞতা হোল। ‘রেড স্কয়ার’ চত্বরটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। সেই সময় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞান লেখক ড. আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের এডুকেশন কাউন্সিলর ছিলেন। এই পদে যোগদানের আগে তিনি শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের (বর্তমানে ন্যাশনাল একাডেমী ফর এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট) পরিচালক ছিলেন। আমার বাবা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। আমরা থাকতাম শিক্ষা সম্প্রসারণ কেন্দ্রের স্টাফ কোয়ার্টারে। সেই সূত্রে তার পুরো পরিবার ছিল আমার পূর্ব পরিচিত। উনাদের বাসায় চলে গেলাম দেখা করতে। অনেক কথা হোল, খাওয়াদাওয়া হোল। অনেকদিন পর মজাদার দেশি রান্না খুব ভালো লাগল। চলে আসার আগে খালাম্মা জানালেন – ফেরার পথে উনাদের বাসায় উঠতে হবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম।

মস্কোতে তিন দিন কাটানোর পর শাহীনকে নিয়ে শেরেমেতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওনা হলাম। সেখান থেকে এরোফ্লট এয়ারলাইনের ঢাকা-গামী বিমান ধরতে হবে। এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে শাহীন একটা অদ্ভুত স্মৃতিস্তম্ভ দেখিয়ে বলল হিটলারের বাহিনী এতদূর পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছিল। তিনটি ধাতব ট্যাঙ্ক ফাঁদ দিয়ে তৈরি এই স্মৃতিস্তম্ভটা ‘মনুমেন্ট টু দা ডিফেন্ডারস অফ মস্কো' নামে পরিচিত। ইতিহাসে পড়েছি, মস্কোর প্রচণ্ড শীত এবং সোভিয়েত বাহিনীর পাল্টা আক্রমণের কারণে হিটলারের বাহিনী মস্কোয় পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু তারা যে মস্কো শহরের এত কাছে (ক্রেমলিন থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার) পোঁছে গিয়েছিলো তা জানা ছিল না।

যথারীতি চেক ইন করার পর বিমানে উঠে পড়লাম। তিবিলিসি এবং বোম্বেতে এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি সহ, মস্কো-ঢাকা ১৬ ঘণ্টার ফ্লাইট। এই পথ ধরেই আমি বুলগেরিয়া গিয়েছিলাম। তখন সঙ্গে ছিল তিনজন বাংলাদেশী সহযাত্রী; আর ছিল প্রথম বিদেশ যাত্রার রোমাঞ্চ। তাই সময়টা ভালোই কেটেছিল। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমি ভ্রমণ করছি একা। বিদেশ যাত্রার রোমাঞ্চ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। ফ্লাইটে কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। পত্র-পত্রিকা পড়ে কতটা সময় কাটানো যায়? ইতিমধ্যে হাসুকে মিস করতে শুরু করেছে।

ঢাকায় যখন নামলাম তখন আমার চেনা শহরটাকে অচেনা মনে হচ্ছিলো। দুই বছর ইউরোপে থাকার পর সম্ভবত আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। বিমান বন্দরে অনেকে এসেছে, কিন্তু আব্বা আম্মাকে না দেখে খটকা লাগলো। আমরা সবাই চলে গেলাম লালমাটিয়ায় আমার খালার বাসায়। সেখানে আব্বা আম্মা আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে আম্মা কেঁদে ফেললেন। আব্বার মুখটা মলিন দেখাচ্ছিল। আস্তে আস্তে আব্বার অসুখের কথা জানতে পারলাম। কয়েক মাস আগে তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ছিলেন। আব্বা তখন ছিলেন কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রিন্সিপাল। সেদিন কলেজের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসছিল ছাত্র ভর্তির জন্য। কলেজে চলছিল নানা ধরণের পলিটিক্স। তিনি তার সহকর্মীদের বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাই ভর্তি পরীক্ষার সব কিছু তিনি নিজেই করেছিলেন: প্রশ্ন পত্র তৈরি করা, সাইক্লোস্টাইল মেশিনে সেগুলো ছাপানো এবং খাতা দেখা। এত চাপ তিনি সামলাতে পারেননি। সেদিন রাতে হঠাৎ তার শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে ট্রেনিং কলেজের ডাক্তার কাছাকাছি ছিলেন, এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি সর্বক্ষণ আব্বার কাছে থেকে চিকিৎসা করেছিলেন। রাতে ঘুমাতেন আমাদের ড্রয়িং রুমে। ডাক্তার আঙ্কেলের এই সেবার জন্য আমাদের পরিবার তার কাছে চির ঋণী।

কয়েকদিন পর ঢাকা থেকে প্রফেসর বদরুদ্দোজাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি আব্বাকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে স্থানান্তরে পরামর্শ দেন। প্লেনে অনেকগুলো সিট ভাড়া করে আব্বাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় সে যাত্রায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আমি বুলগেরিয়ায় থাকাকালীন এর কিছুই জানতাম না। ঢাকায় কয়েকদিন থাকার পর আমরা সপরিবারে কুমিল্লা চলে গেলাম।

সপ্তাহ তিনেক কুমিল্লায় ছুটি কাটানোর পর ফিরে এলাম ঢাকায়। বন্ধুবান্ধদের সঙ্গে দেখা করা দরকার। আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগে আমরা ৪৩ জন ছাত্র ছিলাম। তার মধ্যে ১৩ ভর্তি হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজে। বাকিরা ভর্তি হয়েছিল বুয়েট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ ঢাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। হাতে গোনা কয়েকজন ভর্তি হয়েছিল ঢাকার বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। যার মধ্যে ছিল: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, সিলেট মেডিকেল কলেজ এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বন্ধুর দেখা মিলবে তাই সেখানে চলে গেলাম। আমাকে কাছে পেয়ে বন্ধুরা বেজায় খুশি। সেখানকার ক্যান্টিনে জমিয়ে আড্ডা হলো। বন্ধুদের কৌতূহল বুলগেরিয়ায় আমার দিন কেমন কাটছে? আমাদের ক্লাসে ছাত্রীর সংখ্যা কত? সেই সব সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো কিনা? তারা জানতো না ইতিমধ্যে আমি হাসুর প্রেমে পড়ে গেছি।

কয়েকদিন পর চলে গেলাম গুলশানে অবস্থিত বুলগেরিয়ান এমবাসিতে। তখন সেখানে মিস্টার সটিরভ নামে একজন তরুণ ডিপ্লোম্যাট কাজ করতেন। তিনি ছিলেন স্টুডেন্ট লিয়াজোঁ অফিসার। উনার সঙ্গে দেখা করলাম। আমি বুলগেরিয়ায় অধ্যয়নরত একজন ছাত্র জানতে পেরে খুব আদরযত্ন করলেন তিনি। আমার লেখাপড়া কেমন চলছে জানতে চাইলেন। আমি আমার স্টুডেন্ট লগবুকটা উনার হাতে তুলে দিলাম। লগবুকে আমার প্রথম বর্ষের রেজাল্ট দেখে তিনি খুব আনন্দিত হলেন। প্রথম বর্ষে আমাদের ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি ছিল ব্যবহারিক বিষয় (ফাউন্ডরী প্রসেস এবং মেশিনিং প্রসেস)। এই দুটি বিষয়ে গ্রেডিং ছিল পাশ অথবা ফেল। বাকি ৮টি বিষয়ে আমি পেয়েছিলাম: ৩টি হাই ডিস্টিংশন, ৪টি ডিস্টিংশন এবং একটি ক্রেডিট। তার মুখের অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছিলো আমার সাফল্য যেন উনারও সাফল্য। অবশ্য একজন স্টুডেন্ট লিয়াজোঁ অফিসার হিসাবে তার এমন গর্ববোধ হতেই পারে। তিনি আমার লগবুকটা নিয়ে অন্যান্য বুলগেরিয়ান সহকর্মীদের দেখিয়ে বললেন – দেখো বাংলাদেশী ছাত্ররা কত ভালো রেজাল্ট করছে। সেই মিটিঙে তিনি জানালেন, ৯ সেপ্টেম্বর বুলগেরিয়ার জাতীয় দিবস উপলক্ষে বুলগেরিয়ান এম্বাসি মধুমিতা সিনেমা হলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেই অনুষ্ঠানে তিনি আমার বুলগেরিয়ার ছাত্র জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে একটা বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কমরেড মণি সিংহ। প্রবীণ নেতা মণি সিংহের সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম। এরপর যতদিন ঢাকায় ছিলাম ততদিন বুলগেরিয়ান এম্বাসির সাথে আমার যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। বুলগেরিয়ান এম্বাসি আমাকে যে ধরণের সম্মান দেখিয়েছে তাকে 'ভিআইপি ট্রিটমেন্ট' বলা যায়। এমনকি আমি যখন বুলগেরিয়া ফিরে যাই তখন দুজন বুলগেরিয়ান ডিপ্লোম্যাট আমাকে বিদায় জানাতে তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসেছিলেন।

প্রায় চার মাস বাংলাদেশে ছুটি কাটানোর পর এবার বুলগেরিয়া ফিরে যাওয়ার পালা। পরিবারের অনেকে এসেছিল বিমান বন্দরে আমাকে বিদায় জানাতে। তাদের মধ্যে ছিলেন আমার নানা যার বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশি। তিনি কলকাতা পুলিশ বিভাগে কাজ করেন; স্বাধীনতার পর পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। এটা ছিল তার সাথে আমার শেষ দেখা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ আমলে বিএ পাশ। ইংরেজি ভাষায় তার প্রবল জ্ঞান ছিল। আমরা সব খালাতো ভাইবোনরা তার কাছ থেকে ইংরেজি শিখেছি। এছাড়া তিনি তার পুলিশ জীবনের অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা আমাদের শোনাতেন। ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে তিনি পরলোক গমন করেন। মহান আল্লাহতালা তাকে বেহেশত নসিব করুন। তার মৃত্যু সংবাদটা পেয়েছিলাম বেশ কয়েকদিন পর। প্রবাসে বসবাসের একটা বড় নেতিবাচক দিক হল প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারের পাশে থাকতে না পারা। (চলবে)



দুই বুলগেরিয়ান ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে তেজগাঁও বিমানবন্দরে



আগের পর্ব



ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 12-Apr-2024

Coming Events:





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far