bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













প্রবাসে পঞ্চাশ বছর (৫)
ড. নজরুল ইসলাম



আগের পর্ব পরের পর্ব

১৯৭৩ সালের জুলাই মাস। আমাদের ভাষা শিক্ষা কোর্স শেষ হতে আর কয়েক সপ্তাহ বাকি। ক্লাস শেষ হওয়ার পর দু’সপ্তাহ ছুটি, তারপর পরীক্ষা। ছুটিতে ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিটিউটের সবাইকে নিয়ে আমাদের বুলগারিয়াব্যাপী একটা শিক্ষা সফরে যাওয়ার কথা। সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। ইতিমধ্যে পড়াশুনার ভীষণ চাপ। চারটা বিষয় (বুলগেরিয়ান ভাষা, বুলগেরিয়ার ইতিহাস, গণিত এবং পদার্থবিদ্যা) সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। একটা নতুন ভাষা শিখে সেই ভাষায় পরীক্ষা দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। তাছাড়া এখানকার পরীক্ষার পদ্ধতিও আলাদা; মুখস্থ বিদ্যায় কাজ হবে না। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। এখানকার গণিত ও পদার্থবিদ্যার সিলেবাস বাংলাদেশের মতোই। পরন্তু এই দুটো বিষয়ে ভাষার দক্ষতা কম হলেও চলে, তাই বিশেষ অসুবিধা হচ্ছিলো না। সবচেয়ে কঠিন লাগছিলো ‘বুলগেরিয়ার ইতিহাস' বিষয়টা। মজার ব্যাপার হল এই বিষয়টা আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করছিলাম। বিষয়টা পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম বিশ্ব ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কতটা সীমিত। আমাদের এইচএসসি পাঠ্যক্রমে ‘ইতিহাস’ ছিল না; এসএসসি পাঠ্যক্রমে 'ইতিহাস' বলতে ছিল 'সমাজবিজ্ঞান' – ইতিহাস, পৌরনীতি এবং ভূগোলের সংমিশ্রণ। তাতে কতটুকুই বা জানা যায়! একটা তথ্য জানতে পেরে অবাক হয়েছিলাম – ৬৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত, বুলগেরিয়া ইউরোপের প্রাচীনতম দেশ।

পরীক্ষার পর লম্বা ছুটি। ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে আমাদের ইউনিভার্সিটি জীবন। আমাদের চারজন পড়বে ‘মেডিসিন’, বাকিরা ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’। পরবর্তীতে অবশ্য দুজন ইঞ্জিনিয়ারিং বদল করে ‘অর্থনীতি’ বেছে নিয়েছিল। যারা মেডিসিন পড়বে তারা থাকবে সোফিয়ায়। আমার বিষয় 'শিপবিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং'। আমাকে চলে যেতে হবে বন্দর নগর ভার্না। তার মানে হাসু থাকবে সোফিয়াতে আর আমি থাকবো ভার্নায়। লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ বজায় রাখা সহজ হবে না। এই নিয়ে আমরা দুজনে বেশ চিন্তিত। কঠিন সিদ্ধান্ত! পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সিদ্ধান্তটা আপাতত স্থগিত রাখলাম।

ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নকালে আমাদের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা হলো সপ্তাহব্যাপী শিক্ষা সফর। সেই সময় আমরা বুলগেরিয়ার প্রধান পর্যটন আকর্ষণগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। গন্তব্যস্থানগুলো এমনভাবে বেছে নেয়া হয়েছিল যাতে আমরা বুলগেরিয়ার ভূগোল, ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটা মোটামুটি ছবি পেতে পারি। এই শিক্ষা-সফরের আরেকটা উল্লেখযোগ্য দিক ছিলো – এই সফর ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নরত অন্যান্য গ্রুপের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের মেলামেশা করার এবং তাদের জানার সুযোগ করে দিয়েছিলো, ক্লাস চলা কালে যা হয়ে ওঠেনি। এই সফরের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে গেলে অনেক কিছু লিখতে হয় যা এই লেখার স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব হবে না। তাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলো অন্তর্ভুক্ত করলাম।

আমাদের প্রথম গন্তব্যস্থল ছিল ‘জ্লাতনি পিয়াসাতসি’ (গোল্ডেন স্যান্ডস), কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটা জনপ্রিয় রিসোর্ট শহর। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ, যুক্তরাজ্য, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে অনেক পর্যটক এখানে আসে ছুটি কাটাতে। সোফিয়া থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টার বাস জার্নি। ভাড়া করা বাসে আমরা সরাসরি চলে গেলাম জ্লাতনি পিয়াসাতসি। একটা বহুতল হোটেলে আমাদের থাকার জায়গা হলো। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিলো সাগরের উথালপাতাল ঢেউ আর শোনা যাচ্ছিলো গুরু গুরু গর্জন। এটা ছিল আমার দ্বিতীয় সমুদ্র দর্শন। সাত বছর আগে (১৯৬৬) পারিবারিক ছুটিতে কক্সবাজার গিয়ে ছিলাম। তখন সেখানে একটা রেস্ট হাউস (কক্সবাজার সী বীচ রেস্ট হাউস) ছাড়া আর কিছুই ছিলোনা; এখন অবশ্য অনেক সুন্দর সুন্দর হোটেল হয়েছে। তাই সমুদ্রের ধার ঘেঁষে সারিবদ্ধ এত হোটেল দেখে অবাক হয়েছিলাম। তিন দিন আমরা খুব মজা করেছিলাম; অনেক ছবি তুলেছিলাম। প্রসঙ্গত, এতদিনে আমি একটা ক্যামেরা কিনতে পেরেছি। এটা ছিল আমার প্রথম ক্যামেরা, সোভিয়েত উনিয়নে নির্মিত 'জেনিথ' ৩৫ মিমি এসএলআর ক্যামেরা। প্রথম ক্যামেরা হাতে পেয়ে সে কি আনন্দ!

আমরা সোফিয়া ফিরেছিলাম অন্য পথ ধরে। পথে কয়েকটা জায়গায় রাত কাটিয়ে ছিলাম, ফলে সময় নিয়ে জায়গাগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। মনোরম এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণের পাশাপাশি চলছিল আমাদের 'বুলগেরিয়ার ইতিহাস' বিষয়ের পাঠ। পরিদর্শন করা স্থানগুলোর মধ্যে ‘ভেলিকো তারনোভো' হলো সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। ভেলিকো তারনোভো ১১৮৫ সাল থেকে ১৩৯৩ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বুলগেরিয়ান সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। ঐতিহাসিক এই শহরে দেখার মতো অসংখ্য গির্জা, জাদুঘর, সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ, প্রাচীন ফোয়ারা এবং উপাসনা ঘর রয়েছে। আরেকটা উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান ছিল ‘লিবার্টি মেমোরিয়াল’, যা ‘শিপকা মনুমেন্ট’ নামেও পরিচিত। আধুনিক বুলগেরিয়া এবং বুলগেরিয়ার মুক্তির প্রতীক এই স্মৃতিসৌধটি বলকান পর্বতমালার শিপকা চূড়ায় অবস্থিত। এটা দেখতে একটা মধ্যযুগীয় বুলগেরিয়ান দুর্গের মতো যা অনেক দূর থেকে দেখা যায়। এই স্মৃতিসৌধটার কথা বিশেষ ভাবে মনে থাকার কারণ এটা দেখার জন্য ৮৯০টা সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে উঠতে হয়েছিল।

কোনো ঝামেলা ছাড়াই পরীক্ষা হয়ে গেলো। পরীক্ষা যতটা কঠিন হবে ভেবে ছিলাম ততটা কঠিন ছিল না। তার কারণ এখানকার পরীক্ষা পদ্ধতি লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার সংমিশ্রণ। তাই লিখিত অংশে কিছু ঘাটতি থাকলে পরীক্ষক মৌখিক প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করে নিতে পারেন। পরীক্ষা শেষ, ভাবছি কিভাবে ছুটি কাটাবো। এখানকার শিক্ষার্থীরা ছুটিতে দল বেঁধে কাজ করে। এটা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। বিদেশী শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে কাজ করে কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করতে পারে। আমার দেশ দেখার শখ। পূর্ব ইউরোপ তো দেখলাম, এবার পশ্চিম ইউরোপ দেখার ইচ্ছা। পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ উপায় ছিল ট্রেনে করে পশ্চিম বার্লিন যাওয়া। আমি ছুটিতে বার্লিন ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। স্টুডেন্টস কনসেশনের সুবাদে ট্রেন ভাড়া ছিল খুব সস্তা। বাকি রইলো থাকা খাওয়ার খরচ; জমানো টাকায় সেটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো ভিসা নিয়ে। পশ্চিম বার্লিনের জন্য ভিসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যে দেশগুলোর উপর দিয়ে যাবো (যুগোস্লাভিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া এবং পূর্ব জার্মানি) সেই সব দেশের ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন। আমাদের পাসপোর্টগুলো ছিল বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রথম ব্যাচের পাসপোর্ট; সিরিজ ‘A', পাসপোর্ট নম্বর এক হাজারের কাছাকাছি। তাতে ভ্রমণের জন্য বৈধ ২৫টা দেশের নাম রাবার-স্ট্যাম্প দিয়ে প্রিন্ট করা ছিল। তবে বুলগেরিয়া ছিল না; বুলগেরিয়া এবং আরও তিনটি দেশ হাতে লিখে এন্ডোর্স করা হয়েছিল। যারা পাসপোর্ট দিয়েছেন তাদের মাথায় আসেনি, বুলগেরিয়া থেকে ট্রেনে বা বাসে করে কোথাও যেতে হলে আশেপাশের দেশগুলোর উপর দিয়ে যেতে হবে। এখন সেসব দেশ এন্ডোর্স করার জন্য মস্কোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট পাঠাতে হবে। সে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। হাতে অত সময় নেই। অগত্যা কি আর করা, একটা বেআইনি কাজ করতে হলো। চারটা দেশের নাম হাতে লিখে নিলাম: হাঙ্গেরি, যুগোস্লাভিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া এবং রোমানিয়া। যুগোস্লাভ দূতাবাস জানালো, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার প্রয়োজন নেই। বাকি তিন দেশের ভিসা পেতে অসুবিধা হলো না।
একদিন সকালে বার্লিন গামী ট্রেনে চেপে বসলাম। ১২/১৪ টা কোচের লম্বা ট্রেন। প্রতিটা কোচ ছোট ছোট কেবিনে বিভক্ত; প্রতিটা কেবিনে ৮ জন করে বসার ব্যবস্থা। কোচের ভিতরে, এক পাশে একটা করিডোর; করিডোরের উভয় প্রান্তে কোচে উঠা নাম করার জন্য দরজা। সেই আমলে এই ধরণের কোচ (করিডোর কোচ) বাংলাদেশে দেখিনি। আমার সিট বুকিং ছিল না। তবে আমি অনেক আগেই ট্রেনে উঠেছিলাম বলে জানালার পাশে একটা সিট পেয়ে গেলাম। ট্রেন ছাড়ার পর জানালা দিয়ে অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখছি। এভাবে বুলগেরিয়ান গ্রাম দেখার সুযোগ আগে হয়নি। চার ঘণ্টার পর আমরা পৌঁছে গেলাম যুগোস্লাভ (বর্তমানে সার্বিয়া) সীমান্তে। ট্রেনে বর্ডার পার হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিল না, তাই একটু উদ্বিগ্ন ছিলাম। ট্রেন থেকে নামতে হবে নাতো? না, ট্রেন থেকে নামতে হলো না। বুলগেরিয়ান সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে তাদের কাজ সম্পন্ন করে চলে গেলো। সীমান্ত অতিক্রম করার পর, ট্রেনে উঠলো যুগোস্লাভিয়ান সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কর্মী দল। সেই দলের একজন আমাদের কেবিনে ঢুকে সবার পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন। একে একে চেক করার পর, আমি ছাড়া কেবিনের অন্যান্য যাত্রীদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিলেন। কিছু না বলে আমার পাসপোর্ট নিয়ে তিনি কেবিন ছেড়ে চলে গেলেন। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর পুরো দল নিয়ে ফিরে এলেন তিনি। আমার দিকে ইশারা করে সার্বিয়ান ভাষায় তিনি যা বললেন তা আমার আজও মনে আছে। সৌভাগ্যবশত, বুলগেরিয়ান ভাষার সাথে সার্বিয়ান ভাষার মিল থাকায় আমি বুঝতে পারছিলাম তিনি কী বলছেন। তিনি তার সহকর্মীদের বলছিলেন – দেখো এই লোকটা শেখ মুজিবুর রহমানের দেশের লোক আর এটা তার দেশের পাসপোর্ট। তখন সবাই একবার আমার দিকে আর একবার আমার পাসপোর্টের দিকে তাকাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুগোস্লাভিয়াতেও একটা পরিচিত নাম জেনে সেদিন গর্বে আমার বুক ভোরে গিয়েছিলো।

প্রায় ২৮ ঘণ্টা পর আমাদের ট্রেন এসে থামলো বার্লিনের ‘অস্ট বানহফ’ স্টেশনে। সেখানে লাঞ্চ সেরে, বার্লিন রেপিড ট্রানজিট রেলওয়ে ধরে পৌঁছে গেলাম ‘চেকপয়েন্ট চার্লি’। এই চেক্পইণ্ট দিয়ে বিদেশীরা পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনে যাতায়াত করতে পারে। তবে পায়ে হেঁটে ‘চেকপয়েন্ট পার হতে হবে। দেখলাম পূর্ব জার্মান সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা বড় বড় কুকর নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। সে এক ভীতিকর অভিজ্ঞতা! এতো কড়াকড়ি সত্ত্বেও, পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক নানা রকমের চতুর চোরাচালান পদ্ধতি অবলম্বন করে পূর্ব জার্মানি থেকে পশ্চিম জার্মানি পালাতে সক্ষম হয়েছিল। ক্রসিং পার হতেই পূর্ব এবং পশ্চিম ইউরোপের পার্থক্য বুঝতে পারলাম – পশ্চিম ইউরোপ গ্ল্যামারে পূর্ণ, সেই তুলনায় পূর্ব ইউরোপ বেশ নিষ্প্রভ। বিদেশী ছাত্ররা যারা আগে বার্লিন ঘুরে গেছে তাদের কাছ থেকে সস্তা থাকার জায়গার তথ্য আগেই সংগ্রহ করেছিলাম। সরাসরি সেখানে চলে গেলাম। সেটা ছিল চার্চ পরিচালিত একটা জায়গা, যেখানে শুধু রাতে ঘুমানো যায়। সেখানে রাত কাটানোর ব্যবস্থা হলো। বিকালটা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় সেখানে ফিরে গেলাম। একটা রুমে ২০/২৫টা বাংক বেড পাতা ছিল, তবে সবকিছু ছিল খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তিন রাত সেখানেই ছিলাম। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাতে এসে ঘুমিয়ে পড়তাম। ঘোরাঘুরি মানে পার্ক এবং শপিং সেন্টার ঘুরে বেড়ানো। কিছু কেনাকাটা করলাম। আমার একটা ম্যাগনেটিক ফটো এলবামের শখ ছিল। সেলোফেন দিয়ে ঢাকা মোটা কার্ডবোর্ডের উপর সাজানো ছবিগুলো দেখতে

খুব আকর্ষণীয় লাগতো। তখন বাংলাদেশে বা বুলগেরিয়াতে এ ধরনের অ্যালবাম পাওয়া যেত না। আজ সেই শখ পূরণ হলো। জন্ম থেকেই বাড়িতে গ্রামোফোন দেখেছি। ১৯৬৫ সালে বাবা বিদেশ থেকে রেকর্ড প্লেয়ার এবং টেপ রেকর্ডার নিয়ে এসেছিলেন। আক্ষরিক অর্থে আমি গান শুনে বড় হয়েছি। দেশ ছাড়ার পর থেকে একটা মিউজিক প্লেয়ারের অনুপস্থিতি অনুভব করছিলাম। আজ সেই শখও পূরণ হলো। একটা ক্যাসেট প্লেয়ার কিনে ফেললাম। এটাই প্রবাস জীবনের বাড়তি পাওয়া – নিজের শখ পূরণের সুযোগ। তিনদিন পর ফিরতি ট্রেনে সোফিয়া ফিরলাম।

বার্লিন থেকে ফেরার পর হাসুর কাছ থেকে একটা সুখবর পেলাম, সে পড়াশুনা করার জন্য ভার্না যাচ্ছে। আমার অবর্তমানে, হাসু বুলগেরিয়ান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। উনাকে সে তার ভার্নাতে পড়তে যাওয়ার অভিপ্রায়ের কথা জানায়। শুনে তো তিনি অবাক। কেননা, সোফিয়া মেডিকেল একাডেমী (এখন যাকে সোফিয়া মেডিকেল ইউনিভার্সিটি বলা হয়) হলো বুলগেরিয়ার চিকিৎসা শিক্ষার জন্য প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবাই মেডিসিন সোফিয়া মেডিকেল একাডেমীতে পড়তে চায়। হাসুর সমস্যার কথা শুনে তিনি বললেন – ঠিক আছে তুমি মেডিসিন পড়তে ভার্না যাচ্ছ, আমরা প্রেমিক প্রেমিকাকে আলাদা করতে চাইনা। এই সিদ্ধান্তে আমরা দুজনেই খুব খুশি হয়েছিলাম। এটা ছিল আমাদের জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট। (চলবে)



তারনোভো শহরের অদূরে ভিয়েতনামী সহপাঠীদের সঙ্গে



আগের পর্ব পরের পর্ব



ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 8-Jan-2024

Coming Events:





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far