bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা (১)
ড. নজরুল ইসলাম


আমাদের হেডমাস্টার খান মুহাম্মদ সালেক স্যারের সাথে আমার শেষ দেখা ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। উনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন আমার বাবার মৃত্যু-পরবর্তী মিলাদে। তখন উনি বলেছিলেন তুমি ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রথম ছাত্র। ২০১১ সালে ল্যাবরেটরি স্কুল সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে। তুমি অবশ্যই আসবে। কথা দিয়ে ছিলাম আসবো। কিন্তু কথা রাখিত পারিনি। ২০১১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আমার সহধর্মিণীর কেমোথেরাপি চলছিল। সেই সাক্ষাতের সময়ে সালেক স্যার তাঁর বইয়ের কথা বলেছিলেন। বইটার নাম ‘মানুষ গড়ার মোহন মায়ায়’। এই বইতে তিনি তাঁর শিক্ষক জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। বইটাতে ঢাকা ল্যাবরেটরি স্কুল নিয়ে একটা অধ্যায় আছে। শিরোনাম ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’।

একটা স্কুলের “প্রথম ছাত্র” হয় কি করে? সালেক স্যার তাঁর বইতে এ ভাবে লিখেছেন: “উদ্বোধনের পর দুমাস কেটে গেল। নভেম্বর এসে পড়েছে। দেখা গেলো, যে ছেলেটির নাম ভর্তির খাতায় এক নম্বরে সেই নজরুল ইসলাম একটা সোয়েটার পরে এসেছে। সে সোয়েটারের নিচের অংশে ঘুরিয়ে লেখা হয়েছে আলো, আরও আলো। সেদিন কি আনন্দ আর উত্তেজনা আমাদের।“ প্রসঙ্গত, আলো আরও আলো হচ্ছে ল্যাবরেটরি স্কুলের নীতিবাক্য।

সোয়েটারের কৃতিত্বটা আমার আম্মার। তাঁর সোয়েটার বুনানোর হাত ছিল। যেকোনো ডিজাইন উনি সহজে উঠিয়ে নিতে পারতেন। গ্রাফ পেপারের উপর আলো আরও আলো ডিজাইনটা করেছিলেন আব্বা। এখানে একটা কথা উল্লেখ না করে পারছিনা। ঢাকা ল্যাবরেটরি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অধ্যক্ষ ওসমান গনি সাহেবের অবদানের কথা সবারই জানা। কিন্তু পর্দার আড়ালে তাঁর যোগ্য সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন আমার বাবা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। ওসমান গনি সাহেবের সাথে আব্বার পরিচয় অনেক দিনের। আব্বা যখন পাবনা জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন ওসমান গনি সাহেব ছিলেন হেডমাস্টার। পরবর্তীতে আব্বা যখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে মাস্টার ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে আসেন (সম্ভবত ১৯৪৮ সালে) তখন ওসমান গনি সাহেবের অনুপ্রেরণাতেই তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যোগদান করেন। তখন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ক্যাম্পাস ছিল আরমানিটোলা। অনেক প্রতিভাবান শিক্ষাবিদ সেখানে কাজ করতেন। এই আরমানিটোলা ক্যাম্পাসেই আমাদের ল্যাবরেটরি স্কুলের নীল নকশা প্রণীত হয়েছিল।

১৯৫৫ সালে আব্বা উচ্চ শিক্ষার্থে গিয়েছিলেন কার্বনডেলে অবস্থিত সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটিতে। এই ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ এডুকেশনের সঙ্গে আছে পুরনো একটা স্কুল। যার নাম ল্যাবরেটরি স্কুল। এরকম একটা ভাবনা থেকেই গড়ে উঠেছিলো আমাদের ল্যাবরেটরি স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল এখানে নতুন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, সেই সঙ্গে চলবে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এক কথায় এটা হবে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ল্যাবরেটরি। পরবর্তীতে জেনেছি আমেরিকায় কলেজ অফ এডুকেশনের সঙ্গে ল্যাবরেটরি স্কুল আরও আছে। ১৯৬৩ সালে আব্বা উচ্চ শিক্ষার্থে গিয়েছিলেন গ্রিলি কলোরাডো তে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ কালরাডো তে। এই ইউনিভার্সিটির সঙ্গে ছিল ১০০ বছরের পুরনো একটা স্কুল, যার নামও ল্যাবরেটরি স্কুল। আমার জানা মতে এই স্কুলটি ২০০০ সালে বন্ধ হয়ে গ্যাছে।

গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের যাত্রা শুরু ১৯৬১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। স্কুল উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন জনশিক্ষা পরিচালক শামসুল হক সাহেব। ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৫৭ জন। শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। সালেক স্যার ছিলেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর সহকারী ছিলেন মফিজউদ্দিন আহমেদ স্যার। ক্লাস ছিল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। আমি ভর্তি হই তৃতীয় শ্রেণীতে। প্রথম দিনের কথা আমার আজও মনে আছে। নতুন একটা ক্লাস রুমে আমরা ২০ জন বসে আছি । কেউ কাউকে চিনি না। আমাদের ক্লাস টিচার (নাম ভুলে গেছি) সবাইকে কবিতা আবৃতি করতে বলেছিলেন। আমি রবীন্দ্রনাথের বধূ কবিতা আবৃতি করেছিলাম – “বেলা যে পড়ে এলো জলকে চল .... “। তখনকার দিনে ঢাকা টিচার্স কলজে বাৎসরিক বিচিত্রা অনুষ্ঠান হতো। আমি সেই সব অনুষ্ঠানে আবৃতি করে অভ্যস্ত ছিলাম। জানিনা আমার আবৃতির জোরেই কিনা, প্রথম দিনেই ক্লাস ক্যাপ্টেন হয়ে গেলাম। এই দায়িত্ব স্কুল শেষ করা পর্যন্ত পালন করে গেছি। প্রথম দিন টিফিনের কোনো ব্যবস্থা ছিলোনা। ক্যান্টিন থেকে বিস্কুট কিনে খেয়েছিলাম। টিফিন চালু হয় কিছু দিন পর। আমাদের টিফিন অন্যান্য স্কুল থেকে ছিল উন্নত মানের। টিফিন ফী ছিল ৫ টাকা। সিদ্ধ ডিম, সবজি লুচি, গোশত পরাটা, মিষ্টি, ইত্যাদি অনেক কিছুই থাকতো, এমনকি বিরিয়ানিও কোনো কোনো সময়। সঙ্গে মৌসুমি ফল - কমলা লেবু, কলা, আম, ইত্যাদি। টিফিন ইন-চার্জ ছিলেন ওয়ালিউল্লাহ স্যার। ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসাবে বিতরণের ভার ছিল আমার উপর। আমরা সবাই টিফিনের জন্য অপেক্ষা করতাম।

প্রথম প্রথম ল্যাবরেটরি স্কুলের নাম তেমন কেওই জানতো না। বরঞ্চ ল্যাবরেটরি স্কুল নাম শুনে অনেকে ভাবতো এটা আবার কি ধরণের নাম। ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্ররা এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম অংশ নেয় ১৯৬৪ সালে। সে বছর দিলীপ ভাই মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থান পেয়েছিলেন। পাশের হার ছিল ১০০%। তখন থেকে সবাই ল্যাবরেটরি স্কুলকে চিনতে শুরু করে। এরপর, পর পর চার বছর প্রথম স্থান অধিকার করে চমক লাগিয়ে দেয় ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্ররা। ১৯৬৫ সালে বাদল ভাই এবং শফিক ভাই যুগ্ম ভাবে, ১৯৬৬ সালে মাহমুদ ভাই, ১৯৬৭ সালে শিবলী ভাই এবং ১৯৬৮ সালে মোত্তালেব ভাই। শিবলী ভাই আর্টসের ছাত্র হয়েও সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছিলেন। এই ভাল রেজাল্টের বদৌলতে ল্যাবরেটরি স্কুলের নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সবচে ভাল রেজাল্ট হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মেধা তালিকায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন ছিল ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ছাত্র। আমি শুরু থেকে এমন একটা আইকনিক প্রতিষ্ঠানের অংশ হতে পেরে গৌরবান্বিত বোধ করছি। (চলবে)


পরের পর্ব



ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া






Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Sep-2021

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot