bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













অস্ট্রেলিয়ার ক্যান্সার সেবা
ড. নজরুল ইসলাম



ক্যান্সার অস্ট্রেলিয়ায় মৃত্যু এবং অসুস্থতার একটা বড় কারণ। মৃত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং সমস্ত রোগের ১৯ শতাংশ ক্যান্সারের কারণে ঘটে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৪০০ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার বদৌলতে, ১০ লাখেরও বেশি নাগরিক আজ বেঁচে আছেন যারা আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কনকর্ড-৩ গ্লোবাল নজরদারি অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের বেঁচে থাকার হার বিশ্বে সর্বাধিকদের অন্যতম। ১৯৮৭-১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কমপক্ষে ৫ বছর বেঁচে থাকার হার ছিল ৫১ শতাংশ। ২০১২-২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৬৯ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা “মেডিকেয়ার” এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কোনও কোনও দেশে অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসা থাকতে পারে। তবে অস্ট্রেলিয়ার অর্জন হলো সরকার সাধারণ জনগণের জন্য বিনামূল্যে উচ্চমানের ক্যান্সার চিকিৎসা সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রসঙ্গত ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের কারণে এই ব্যয় দিন দিন বেড়ে চলেছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের লক্ষণ সনাক্তকরণের জন্য স্ক্রিনিং অন্যতম কার্যকর উপায়। লক্ষণগুলো বিকাশের আগে স্ক্রিনিং অনেক ধরণের ক্যান্সার সনাক্ত করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ায় তিন ধরণের জনসংখ্যা-ভিত্তিক ক্যান্সার স্ক্রিনিং হয়ে থাকে। প্রথমত, ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং - এই প্রকল্পের আওতায় ৫০ থেকে ৭৪ বছর বয়সের মহিলাদের প্রতি দু বছর অন্তর বিনামূল্যে স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রামের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। দ্বিতীয়ত, জাতীয় বাউল ক্যান্সার স্ক্রিনিং - রোগের প্রারম্ভিক লক্ষণগুলো সনাক্ত করে বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারজনিত মৃত্যু কমানো এই স্ক্রিনিংয়ের লক্ষ্য। এই প্রকল্পের আওতায় ৫০ থেকে ৭৪ বছর বয়সের অস্ট্রেলিয়ানদের বিনামূল্যে একটা পরীক্ষা কিট পাঠানো হয় যা ঘরে বসে করা যায়। তৃতীয়ত, সারভিক্যাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং - এই প্রকল্পের আওতায় ২৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সের মহিলাদের প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিনামূল্যে জরায়ুর স্ক্রিনিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। জনসংখ্যা-ভিত্তিক স্ক্রিনিংয়ের ফলাফলগুলো জাতীয় ক্যান্সার স্ক্রিনিং রেজিস্টারে সংরক্ষণ করা হয়, যা গবেষণায় কাজে লাগে এবং পরবর্তী স্ক্রিনিংয়ের সময় মনে করিয়ে দিতে সাহায্য করে। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন ক্যান্সারের স্বতন্ত্র স্ক্রিনিং করা হয় তার মধ্যে রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং ত্বকের ক্যান্সার। যাদের ক্যান্সার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ত্রুটিযুক্ত জিনের জন্য হয়ে থাকে, তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জেনেটিক টেস্টিংয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা নিরূপণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার এবং অন্যান্য। অস্ট্রেলিয়ানদের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করার জন্য জাতীয় টিকাদান কর্মসূচী রয়েছে। যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়, যা জরায়ুর ক্যান্সার, মলদ্বারের ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্ক্রিনিং এবং টিকাদান কর্মসূচির ফলস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া ২০৩৫ সালের মধ্যে জরায়ুর ক্যান্সার দূরীকরণের পথে এগিয়ে চলেছে।

আজকাল ক্যান্সার চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত তিনটি পদ্ধতি হলো - সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি। এছাড়া আছে অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি – ইমিউনোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, ক্রিওব্লেশন, রেডিও-ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন এবং লেজার থেরাপি। অধুনা ইমিউনোথেরাপির উপর বেশ জোর দেওয়া হচ্ছে। এই চিকিত্সা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার জন্য রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। ফুসফুসের ক্যান্সার এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সার চিকিত্সায় ইমিউনোথেরাপি ভাল ফলাফল দেখিয়েছে। টার্গেটেড ড্রাগ থেরাপি হলো একটা চিকিৎসা যা ওষুধ ব্যবহার করে, ক্যান্সারের বৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং ক্যান্সারের প্রসারে জড়িত নির্দিষ্ট অণুগুলোতে হস্তক্ষেপ করে ক্যান্সারের বৃদ্ধি ও বিস্তারকে বাধা দেয়। ওষুধগুলো কেবল ক্যান্সারের কোষগুলোকেই প্রভাবিত করে, কেমোথেরাপির মতো স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর কোষগুলোর কোনও ক্ষতি করে না। মূত্রাশয়ের ক্যান্সার, মস্তিষ্কের ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সারের নতুন ওষুধ ও চিকিত্সা আবিষ্কারের লক্ষ্য নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। এই সব গবেষণার অংশ হিসাবে অনেক ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়ে থাকে। যখন প্রচলিত চিকিৎসা কাজ না করে তখন পরীক্ষামূলক চিকিৎসা কিছু আশা জোগাতে পারে। অনেক সময় ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।

অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সার চিকিৎসা প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রতিটি রাজ্যের বড় হাসপাতালগুলোর সাথে ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার সংযুক্ত রয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো বিশ্বমানের মানের ক্যান্সার চিকিৎসা সরবরাহ করে। টপ মাস্টারর্স ইন হেলথ কেয়ার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ওয়েবসাইট দ্বারা মনোনীত বিশ্বের ৩০ টা প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত ক্যান্সার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৭ টা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। তবে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলো। মেডিকেয়ারের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ান সরকার, নাগরিক এবং স্থায়ী বাসিন্দাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে সকল চিকিত্সা সেবা সরবরাহ করে। কাজেই ক্যান্সার চিকিৎসাও সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিখরচায় পাওয়া যায়। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি আছে বেসরকারি হাসপাতাল। বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ মেডিকেয়ার প্রদান করে। বাকিটা আসে স্বাস্থ্য বীমা এবং জনগণের পকেট থেকে। চিকিত্সার মানের দিক দিয়ে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। বরঞ্চ অত্যাধুনিক চিকিত্সার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলো আরও ভাল কেননা সরকারি হাসপাতালগুলো অনেক বড় বড় গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকে। ৭০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মেলবোর্নের পিটার ম্যাককালাম ক্যান্সার সেন্টার (সংক্ষেপে পিটার ম্যাক) অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল। এটি ক্যান্সার চিকিত্সা, গবেষণা এবং শিক্ষায় নিবেদিত অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সরকারি হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সাত শতাধিক ল্যাবরেটরি এবং ক্লিনিকাল গবেষক সহ তিন হাজার দুইশতর বেশি কর্মী উন্নততর চিকিত্সা, আরও ভাল সেবা এবং ক্যান্সারের সম্ভাব্য নিরাময়ের জন্য কাজ করছেন।

ক্যান্সার চিকিত্সার লক্ষ্য হল রুগী কে ভালো করে তোলা যাতে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সেই সব রুগীদের জন্য, ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখে জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই চিকিত্সার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই ধরণের চিকিত্সা প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা প্রশমনমূলক সেবা নামে পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার ক্যান্সার চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ প্যালিয়েটিভ কেয়ারের রোগীরা তাদের নিজের বাড়িতে কমিউনিটি প্যালিয়েটিভ কেয়ার টিমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। এই দলে ডাক্তার, নার্স এবং রুগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য পেশার কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেমন ডায়েটিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, চ্যাপেলিন, সাইকোলজিস্ট এবং সমাজকর্মীরা। সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকে একজন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমিউনিটি নার্সের উপর। তিনি নিয়মিত রোগীর বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নেন এবং রোগী দিনের যে কোনও সময় সাহায্যের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

ক্যান্সার ব্যক্তি এবং পরিবারের উপর বিশাল সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলে। ক্যান্সার চিকিৎসার খরচ মেটাতে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হতে বসে। বিনামূল্যে প্রদত্ত অস্ট্রেলিয়ার উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসা, রোগী এবং তাদের পরিবারের জন্য আশার আলো বয়ে আনে। ফলাফল যাই হোক না কেন, পরিবারের জন্য সান্ত্বনা এই যে তাদের প্রিয়জন সর্বোত্তম চিকিত্সা পেয়েছেন।




ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া






Share on Facebook               Home Page             Published on: 26-Jul-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far