ক্যান্সার রোগীর সাথে বসবাস (২) ড. নজরুল ইসলাম
আগের পর্ব পরের পর্ব
২০০৫ সালের জুন মাসে চাকরি নিয়ে চলে গেলাম পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। আমাদের জীবনের আরেকটা অধ্যায়ের শুরু। বড় মেয়ে তখন ক্যানবেরায় ফেডারেল সরকারের চাকরি করছে। ছোট মেয়ে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে মেডিসিন পড়াশুনা শুরু করেছে। আমরা মেয়েদের থেকে দূরে চলে গেলাম। জীবিকা যেখানে নিয়ে যায় সেখানে তো যেতেই হবে। তবে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি নিয়ে আসার বাড়তি আকর্ষণ ছিল ভারত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলোর চেয়ে আলাদা। এখানে দেখার মতো কত কিছু আছে যা এখানে না আসলে দেখা হতো না। আমরা মেয়েদের থেকে দূরে চলে গেলেও আমাদের পারিবারিক বন্ধন আরো মজবুত হতে থাকে। বছরে দু’বার মেয়েরা ছুটি কাটাতে আসতে থাকে। ওদের সঙ্গে নিয়ে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া দেখতে বেরিয়ে পড়ি। আমার মনে হয়, পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ছুটি কাটানো পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। অন্তত আমাদের বেলায় তাই হয়েছিল।
ইউনিভার্সিটিতে কাজ করার একটা সুবিধা হলো বছরে অন্তত একবার ইউনিভার্সিটির খরচে কনফারেন্সে যোগ দিতে বিদেশ যাওয়া যায়। এই সুযোগটা প্রতি বছরই কাজে লাগিয়েছি। যখনি কোথাও গেছি হাসুকে সঙ্গে নিয়ে গেছি। প্রসঙ্গত, হাসুর সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৭২ সালে। আমরা দু'জনেই স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিলাম বুলগেরিয়ায়। পরিচয় থেকে প্রেম, তিন বছর পর বিয়ে। ৫০ বছরের প্রবাস জীবনে যেখানেই গেছি, যা করিয়াছি, সব হাসুকে নিয়েই। সত্যিকার অর্থে সে আমার “জীবন-সঙ্গিনী”। প্রথম বছর কনফারেন্সে গেলাম ইতালি। কনফারেন্স ছিল টুরিন শহরে যেখানে সম্প্রতি ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা হয়ে গেলো। সেখানে দেখা সবচেয়ে স্মরণীয় হলো মিশরীয় জাদুঘর, ইতালীয় ভাষায় যার নাম Museo Egizio; ১৮২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের প্রাচীনতম মিশরীয় যাদুঘর। ট্রেনে টুরিন থেকে মিলান এক ঘণ্টার পথ। সেখানে দেখার সুযোগ হলো লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা 'দ্যা লাস্ট সাপার' দেয়ালচিত্রটার। মোনালিসার পর এই ছবিটাকেই দা ভিঞ্চির সেরা কীর্তি হিসেবে মনে করা হয়। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা! একটা কনভেন্টের ডাইনিং হলের দেয়ালে আঁকা ছবিটার সৌন্দর্য উপভোগ হলে কয়েক মাস আগে টিকিট বুক করতে হয়। ডাইনিং হলে ঢোকার আগে সবাইকে একটা চেম্বারে বাতাস ছড়িয়ে আর্দ্রতা এবং ধুলো মুক্ত করা হয় যাতে ছবিটার কোনো ক্ষতি না হয়। দেখার সময় মাত্র ১৫ মিনিট। ছবিটার গভীরতা আমার নজর কেড়ে নিয়েছিল। দেয়ালে আঁকা ছবিটা দেখলে মনে হয় অনেকটা দেয়ালে ঢুকে গেছে যা সামনাসামনি না দেখলে বোঝা যায় না। কনফারেন্সের পর ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহর ভেনিসে দু’দিন ঘুরে গেলাম। এরকম যখনি কনফারেন্সে গেছি আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছি।
হাসুর ক্যান্সারের কথা অনেকটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ব্যস্ত জীবন কাটালে যা হয়। দ্বিতীয় ক্যান্সার অপারেশনের ন’বছর পর (২০১০) আবার হাসুর স্বাস্থ্য সমস্যা। বেশ কয়েকদিন ধরে সে পেটে বেল্ট লাইনের কাছে হালকা ব্যথা অনুভব করছিল। একদিন হঠাৎ মাঝ রাতে ঘুম থেকে জেগে দেখি হাসু পাশে নেই। পরে ওকে অন্য বেডরুমে খুঁজে পেলাম। প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছে। ব্যথায় কাউকে এতো কষ্ট পেতে এর আগে কখনো দেখিনি। আমার ঘুম ভেঙে যাবে বলে ও অন্য বেডরুমে চলে গিয়েছিলো। পরদিন সকালে আমার একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, তাই আমাকে জাগাতে চাইনি। অনেক ব্যথানাশক ওষুধ খেয়েও ব্যথা কমলো না। ভোরে হাসুকে রয়্যাল পার্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলাম। জরুরি বিভাগের নার্স সাথে সাথে হাসুকে ভর্তি করে নিলো। অস্ট্রেলিয়ায় এটাই সুবিধা, রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছাতে পারলেই হলো। এরপর সব দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নেবে। আমি বাইরে ব্রেকফাস্ট সেরে সরাসরি কনফারেন্সে চলে গেলাম। দুপুরের খাবার বিরতির সময় হাসপাতালে খবর নিয়ে জানলাম, হাসুর ব্যথার কারণ ‘বাউল অবস্ট্রাকশন’। অর্থাৎ হজম হওয়া খাবার স্বাভাবিকভাবে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেতে পারছেনা। রক্ষণশীল চিকিৎসা (কনজারভেটিভ ট্রিটমেন্ট) চলছে। কিছু খাওয়া বা পান করা নিষিদ্ধ (নিল বাই মাউথ)। তার সঙ্গে নাসোগ্যাস্ট্রিক টিউবের মাধ্যমে পাকস্থলী নিষ্কাশন, ইন্ট্রাভেনাস ড্রিপ এবং ক্লিনিকাল পর্যবেক্ষণ। হাসুর ব্যথা কমেছে। সে তখন ঘুমাচ্ছে। বাউল অবস্ট্রাকশন একটা গুরুতর সমস্যা; অনেক সময় অপারেশন করতে হয়। হাসুর ভাগ্য ভালো, রক্ষণশীল চিকিৎসায় কাজ হয়েছিল, অপারেশন করতে হয় নি।
সেবার সপ্তাহ খানেক হাসুকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। ডাক্তাররা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্টের মাধ্যমে বাউল অবস্ট্রাকশনের কারণ জানার চেষ্টা করছিলেন। তাদের ধারণা আগের অপারেশনের কারণে পেটের ভিতরের দাগগুলো অন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোকে টানতে, বাঁকতে বা সংকুচিত করতে দিচ্ছে না। প্রসঙ্গত, এর আগে হাসুর দুটো ক্যান্সার অপারেশন ছাড়াও দুটো সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছিল। তবে বাউল অবস্ট্রাকশন অন্ত্রের ক্যান্সারের কারণেও হতে পারে। বাসায় আসার পর ডাক্তারদের ইনভেস্টিগেশন অব্যাহত থাকে। সাত মিটার লম্বা ক্ষুদ্রান্ত্রের কোথায় ক্যান্সার লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। ডাক্তাররা ‘ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি’ করার কথা ভাবছিলেন। ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি এমন একটা ডায়াগনস্টিক টেস্ট যাতে রুগীকে একটা ভিটামিন আকারের ক্যাপসুল খেতে হয়। এই ক্যাপসুলের ভিতরে একটা ছোট ক্যামেরা থাকে যা অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতি সেকেন্ডে দুটি করে ছবি তুলতে পারে। ছবিগুলো (আনুমানিক ৫০ হাজার ছবি) রুগীর বেল্টের সঙ্গে সংযুক্ত একটা রেকর্ডারে ধারণ করা হয়। এসব ছবি বিশ্লেষণ করে ডাক্তাররা তাদের সিদ্ধান্তে নেন। ডাক্তারদের দ্বিধা হলো, ক্যাপসুলটা যদি ক্ষুদ্রান্ত্রে আটকে যায় তাহলে অপারেশন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। শেষমেশ তারা ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাদের যুক্তি ক্যান্সার যদি থেকে থাকে তাহলে অপারেশন এমনিতেই করতে হবে। তাই ক্যাপসুল আটকে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে তারা প্রস্তুত। কোনো জটিলতা ছাড়াই ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি হয়ে গেলো কিন্তু ক্যান্সার ধরা পড়লো না। এরপর ডাক্তাররা ‘ডাবল বেলুন এন্টারোস্কোপি’ নামে আরেকটা ডায়াগনস্টিক টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ২০০১ সালে উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি ডায়াগনস্টিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির ক্ষেত্রে অভিনব কারণ এর মাধ্যমে পুরো ক্ষুদ্রান্ত্র সরাসরি দেখা যায়। প্রয়োজনে ক্ষুদ্রান্ত্রের পলিপগুলো কেটে ফেলা যায় এবং বায়োপসি নেয়া যায়। অনেকটা কোলনোস্কোপির মতো যা বৃহদান্ত্র দেখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ডাবল বেলুন এন্টারোস্কোপি করা কোলনোস্কোপির চেয়ে অনেক কঠিন কারণ ক্ষুদ্রান্ত্র বৃহদান্ত্রের চেয়ে প্রায় পাঁচ গুন লম্বা, অনেক পেঁচানো এবং হজম হওয়া খাদ্য স্থানান্তর করার জন্য সর্বক্ষণ সঙ্কুচিত এবং প্রসারিত হতে থাকে। ডাবল বেলুন এন্টারোস্কোপির সঙ্গে ছিল 'এমআরআই এন্টেরোক্লেসিস' নামে আরেকটা ইমেজিং টেস্ট। এই পরীক্ষাটা একটা চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে ক্ষুদ্রান্ত্রের বিস্তারিত ছবি তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। পরীক্ষার আগে, ক্ষুদ্রান্ত্র হাইলাইট করার জন্য নাসোগ্যাস্ট্রিক টিউবের মাধ্যমে সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্রে এবং ইন্ট্রাভেনাস ড্রিপের মাধ্যমে শিরায় কনট্রাস্ট রং দেওয়া হয়। এই দুটো টেস্টের মাধ্যমে হাসুর ক্যান্সার ধরা পড়ে যা পরে বায়োপসি ফলাফল দ্বারা নিশ্চিত করা হয়। এবার স্মল ইনটেস্টাইন ক্যান্সার (ক্ষুদ্রান্ত্রের ক্যান্সার), জায়গাটা ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদান্ত্রের সংযোগস্থলের কাছাকাছি।
কোলোরেক্টাল সার্জন অবিলম্বে অপারেশন করার পরামর্শ দিলেন। অপারেশন হবে ১৫ জুন, রয়্যাল পার্থ হাসপাতালে। অপারেশন করবেন ডা. হুল এবং তাঁর সার্জিক্যাল টিম। বেশ বড় অপারেশন। আমাদের সাহস জোগানোর জন্য বড় মেয়ে আসলো ক্যানবেরা থেকে। আল্লাহর রহমতে অপারেশন ঠিকমতো হয়ে গেলো। দুর্ভাগ্যবশত, দেরিতে নির্ণয়ের কারণে এবার ক্যান্সার লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই ডাক্তাররা কেমোথেরাপি নেয়ার পরামর্শ দিলেন। হাসুর শরীর তখনো খুব দুর্বল। এই দুর্বল শরীরে কেমোথেরাপির ধকল সামলাতে পারবে কিনা তাই নিয়ে চিন্তা। ডাক্তাররা বলেছেন, কেমোথেরাপি অপারেশনের দুই মাসের মধ্যে শুরু করতে হবে। হাতে সময় খুব কম। ডাক্তাররা ‘ওরাল কেমোথেরাপি’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ওরাল কেমোথেরাপির সুবিধা হলো, অন্যান্য ওষুধের মতো বড়ি বা ক্যাপসুল বাসাতেই খাওয়া যায়, ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপির মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালে বসে থাকতে হয় না। হাসুকে তিন সপ্তাহব্যাপী ১২ চক্রের কেমোথেরাপি নিতে হবে। প্রথম দুই সপ্তাহ ওষুধ খাওয়ার পর এক সপ্তাহ বিশ্রাম। পরবর্তী চক্র শুরু করার আগে রক্ত পরীক্ষা এবং চেকআপ। কেমোথেরাপির ওষুধ শুরু করার দু'দিন পর থেকেই হাসুর শরীর খারাপ হতে থেকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গেলো যে রয়্যাল পার্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হলো। আবার হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তাররা জানালেন, হাসুর অসুস্থতার কারণ কেমোথেরাপির প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া (এডভার্স রিঅ্যাকশন)। অবিলম্বে কেমোথেরাপি বন্ধ করে দিলেন। ডাক্তারদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দিনদিন হাসুর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার জীবন নিয়ে আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। বাসায় আমি একা। মেয়েরা কাছে থাকলে ভালো হতো। বড় মেয়ে ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহ থেকে গেছে। কাজ রেখে তার আবার আসা সম্ভব না। ছোট মেয়ে তখন মেডিসিনের শেষ বর্ষের ছাত্রী। ওদের পাঠ্যক্রমের অংশ হিসাবে দুই মাস জিপি ক্লিনিকে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। সেই ট্রেনিং সে পার্থের একটা ক্লিনিকে করার অনুমোদন পেয়েছিলো। ও কাছে থাকাতে খুব সুবিধা হয়েছিল। সকলে আমার দুজন যার যার কাজে বেরিয়ে পড়তাম। কাজ শেষে হাসপাতালে হাসুকে দেখে বাড়ি ফিরতাম। হাসুর শরীর খুব দুর্বল। কিছুই খেতে পারছেনা। ডাক্তাররা বুকে সেন্ট্রাল লাইন বসিয়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা করলেন। চিকিৎসা পরিভাষায় যার নাম ‘টোটাল পারেনটেরাল নিউট্রেশন’, সংক্ষেপে টিপিএন। এতে কাজ হলো। আস্তে আস্তে হাসুর অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। হাসপাতালে মাস খানেক থাকার পর হাসুকে বাসায় নিয়ে এলাম। হাসপাতালে থাকতেই আবার কেমোথেরাপি শুরু হয়ে গেছে। এবার ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি। আগের মতোই তিন সপ্তাহের চক্র। চক্রের শুরুতে হাসপাতালে চার ঘণ্টা কেমোথেরাপি নিতে হবে। পরে বাড়িতে একটা পোর্টেবল পাম্পের মাধ্যমে দুদিন কেমোথেরাপি চলবে। তারপর পাম্পটা খুলে ফেলার জন্য হাসপাতালে ফিরে যেতে হবে। কয়েক চক্র কেমোথেরাপি নেয়ার পর আবার নতুন সমস্যা। এবার ভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া - হাতের এবং পায়ের আঙ্গুলে অসাড়তা বোধ। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মাঝেই কেমোথেরাপি অব্যাহত থাকে। ডাক্তারদের মতামত, কেমোথেরাপি শেষ হওয়ার পর আস্তে আস্তে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলো চলে যাবে।
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি মেলবোর্নে ছোট মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান। হাসুর খুব ইচ্ছা সে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। তখনো তার কেমোথেরাপি চলছে। বুকে সেন্ট্রাল লাইন লাগানো। সেন্ট্রাল লাইন নিয়ে ঘোরাঘুরি না করাই ভালো। কেননা ইনফেকশনের ভয় থাকে। অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অনুধাবন করে ডাক্তাররা যাওয়ার অনুমতি দিলেন। আমরা পুরো পরিবার আবার একত্রিত হলাম। আমাদের সবাইকে কাছে পেয়ে ছোট মেয়ে খুব খুশি। হাসুও খুব খুশি কেননা মেয়েদের একজন মায়ের পেশা বেছে নিয়েছে। হাসুর মুখ দেখে বুঝতে পারলাম জীবনে দুঃখ কষ্ট যতই থাকুক না কেন, তার মাঝেও আনন্দ থাকতে পারে। আর এজন্যই জীবন এতো সুন্দর! (চলবে)
আমাদের পারিবারিক ছবি
আগের পর্ব পরের পর্ব
ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া
|