ক্যান্সার রোগীর সাথে বসবাস (১) ড. নজরুল ইসলাম
পরের পর্ব
১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাস। ইস্টার উপলক্ষে চার দিন ছুটি। মেয়েদের আবদার ছুটিতে লং ড্রাইভে যাবে। মেয়েরা তখন সপ্তম এবং দশম শ্রেণীর ছাত্রী। মেয়েদের এরকমের আবদার উপেক্ষা করা যেকোনো বাবার পক্ষেই কঠিন। আমরা তখন থাকতাম উলুনগং শহরে। আশেপাশের সবকিছু দেখা হয়ে গেছে। পারিবারিক বৈঠকের পর ঠিক হলো এবার ছুটিতে ব্লু মাউন্টেইন যাওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন দিনের জন্য মোটেল বুক করলাম। ব্লু মাউন্টেইন আমাদের বাসা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার ড্রাইভ। প্রথম দিনের কর্মসূচি ছিল ব্লু মাউন্টেইন এলাকার প্রধান শহর কাটুম্বার আশেপাশের পর্যটন আকর্ষণগুলো ঘুরে দেখে। এর মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় হলো ইকো পয়েন্ট থেকে দেখা থ্রি সিস্টার্স নামে পরিচিত শিলা গঠন, যা দেখতে অনেকটা ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গের মতো। পরদিনের কর্মসূচি ছিল জেনোলান কেভ পরিদর্শন। জেনোলান কেভ অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম, সবচেয়ে দর্শনীয় এবং সবচেয়ে বিখ্যাত গুহা। কাটুম্বা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার ড্রাইভ। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। জেনোলান কেভ-এ ঢুকতে হয় একটা গ্র্যান্ড আর্চের ভিতর দিয়ে। গুহার ভেতরে আর এক জগত! অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক মায়াবী পরিবেশ। ঘুরে দেখার জন্য অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই আছে। আমরা চার জন একসঙ্গে হাঁটছিলাম। লক্ষ্য করলাম আমার জীবনসঙ্গিনী হাসু আমাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম - তুমি ঠিক আছো তো? ও বললো - একটু ক্লান্ত লাগছে। তোমরা যাও আমি আস্তে আস্তে আসছি। মা সঙ্গে না থাকায় মেয়েরা মন খারাপ করলো। আমাদের গুহা দেখা শেষে হাসুকে গুহার ভিতরে খুঁজে পেলাম না। পরে বাইরে এসে দেখি সে একটা বড় পাথরের উপর বসে আছে। সে জানালো গুহার ভিতরে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো। আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কেননা হাসু একজন সুস্থ সবল মহিলা। তার শ্বাসকষ্টের কারণ খুঁজে পেলাম না। মোটেলে ফিরে গেলাম। তৃতীয় দিন বিশ্বের সবচেয়ে খাড়া রেলপথ কাটুম্বা সিনিক রেলওয়ে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই কর্মসূচি বাতিল করতে হলো। সারাদিন মোটেলে রিল্যাক্স করলাম।
বাসায় ফেরার পরদিন হাসুকে নিয়ে গেলাম আমাদের জিপি ডা. খানের কাছে। উনি কিছু প্যাথলজি টেস্ট করতে দিলেন। এর মাঝে হাসু পুরোপুরি সুস্থ। সে কাজে ফিরে গেছে। তখন সে উলুনগং হাসপাতালে কর্মরত ছিল। দুদিন পর হাসপাতাল থেকে হাসুর ফোন। তার ইভনিং শিফট চলছিল। সে জানলো ডা. খান ফোনে জানিয়েছেন, প্যাথলজি টেস্টের রেজাল্ট এসে গেছে। অবিলম্বে দেখা করতে হবে। হাসুকে নিয়ে গেলাম ডা. খানের কাছে। তিনি জানালেন হাসুর রক্তে হিমোগ্লোবিন খুবই কম, যা থাকার কথা তার প্রায় অর্ধেক। অবাক হলেন এতো কম হিমোগ্লোবিন নিয়ে সে কীভাবে কাজ করছে। বললেন এখনই বাসায় চলে যাও। অবিলম্বে ব্লাড ট্রান্সফিউশন এবং ইনভেস্টিগেশনের ব্যবস্থা করলেন। ব্লাড ট্রান্সফিউশন হলো উলুনগং হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন সেন্টারে। শরীর একটু চাঙ্গা হওয়ার পর ইনভেস্টিগেশনের জন্য ভর্তি হলো হাসপাতালে।
সেদিন ছিল মা দিবস। তবে সে বছর অস্ট্রেলিয়ায় মা দিবস উদযাপনটা ছিল নিষ্প্রভ। সারা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বিরাজ করছিলো একটা থমথমে ভাব। তার কারণ, সপ্তাহ দুই আগে তাসমানিয়ার পোর্ট আর্থার শহরে একটা ম্যাসাকার ঘটে গেছে যাতে ৩৫ নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছিল। হাসু তখন হাসপাতালে ভর্তি। সকালে আমরা তিন জন গেছি হাসপাতালে হাসুকে দেখতে। মেয়েরা মা দিবসের উপহার হিসাবে একটা সুন্দর ড্রেসিং গাউন কিনেছে। মেয়েদের পীড়াপীড়িতে হাসুকে সেই ড্রেসিং গাউন তখনি পরতে হলো। আমরা বসে গল্প করছি তখন ডাক্তার রাউন্ডে এলেন। আমাদের দেখে বললেন - ভালোই হলো তোমার পরিবারের সবাইকে এক সঙ্গে পেয়ে। আমরা তোমার অসুস্থতার কারণ ধরতে পেরেছি। তোমার বাউল ক্যান্সার (বৃহৎ অন্ত্রের ক্যান্সার) হয়েছে। “ক্যান্সার” শব্দটা শোনার সাথে সাথে অসাড় বোধ করছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না হাসু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। কেননা ওকে কথনো অসুস্থ হতে দেখিনি। আমাদের সান্ত্বনা দেবার জন্য ডাক্তার বললেন, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই; ইট ইজ কিউরেবল। আজকের রাতটা হাসপাতালে থেকে যাও। আমি কোলোরেক্টাল সার্জনের কাছে রেফার করে দিচ্ছি। তুমি উনার সঙ্গে পরামর্শ করো। পরদিন হাসুকে বাসায় নিয়ে এলাম। সেই থেকে ক্যান্সার রুগীর সঙ্গে আমার বসবাসের শুরু।
আমাদের সৌভাগ্য, উলুনগং-এর মতো ছোট জায়গায় ডা. টিন্ডালের মতন একজন অভিজ্ঞ সার্জন পেয়ে গেলাম। ডা. টিন্ডাল ছিলেন অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কোলোরেক্টাল সার্জিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি অবিলম্বে অপারেশন করার পরামর্শ দিলেন। অপারেশন হবে ৬ জুন শেলহারবার হাসপাতালে। ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সকাল আমরা হাসপাতালে পোঁছে গেলাম। বড় মেয়ে পরীক্ষার জন্য আসতে পারলো না। হাসপাতালে ভর্তি এবং আনুষঙ্গিক চেকআপ করতে করতে ৮টা বেজে গেলো। অপারেশন থিয়েটারের দরোজায় পর্যন্ত গিয়ে হাসুকে বিদায় জানালাম। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। সেই দৃশ্যটা আজও মনে পড়ে। হাসপাতাল থেকে কার পার্কে যাওয়ার সময়ে আমার বারো বছরের মেয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে - চিন্তা করো না, মা ভালো হয়ে যাবে। ২৪ বছর প্রবাসে বসবাসের পর, সেই প্রথমবারের মতো অনুভব করলাম প্রবাসে কি নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছি।
সারাদিন বাসায় বসে আছি। মেয়েরা স্কুলে। ৩টা নাগাদ খবর এলো অপারেশন সফল হয়েছে। সন্ধ্যায় আমরা হাসুকে দেখতে গেলাম। অপারেশনের পর হাসুকে ১০ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। এখনকার দিনে হলে হয়তো এতদিন থাকতে হতো না। গত ২৬ বছরে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পেশেন্ট-কন্ট্রোলড অ্যানালজেসিয়া (পিসিএ) নামের একটা মেশিন হাসুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে খুব সাহায্য করেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় মরফিন জাতীয় ব্যথার ইনজেকশন দেওয়ার জন্য দুজন রেজিস্টার্ড নার্সের প্রয়োজন হয়। নার্সরা খুব ব্যস্ত। দুজন নার্সকে একত্রিত করতে বেশ সময় লেগে যায়। ইতিমধ্যে রুগী ব্যথায় কষ্ট পেতে থেকে। পিসিএ-এর সাহায্যে রুগী তার ব্যথার ইনজেকশন নিজেই নিতে পারে। রুগী যাতে অনুমোদিত ডোজের বেশি ওষুধ না নিতে পারে তার জন্য সেফটি মেকানিজম থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় তখনো পিসিএ-এর ব্যবহার তেমন শুরু হয়নি। সৌভাগ্যক্রমে হাসু এই মেশিনটা ব্যবহার করার সুবিধা পেয়েছিলো। হাসুর ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধারা পড়েছিল। তাই কেমোথেরাপির নিতে হলো না। বাসায় আসার পর ছিল ছয় সপ্তাহের বিশ্রাম।
যদিও হাসুর ক্যান্সার আমাদের পরিবারের জন্য ছিল একটা বিরাট শক, ক্যান্সার আমাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি। বরং ক্যান্সার আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে আরো মজবুত করেছিল। আমরা একে অপরকে বেশি সময় দিতে শুরু করলাম। আমাদের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেলো। অনুভব করলাম জীবন কতটা অনিশ্চিত এবং ক্ষণস্থায়ী। এই অল্প সময়ের মধ্যে জীবন উপভোগ করতে হবে। কয়েক সপ্তাহ পর মেয়েদের স্কুল ছুটি। আমরা বেরিয়ে পড়লাম অস্ট্রেলিয়া দেখতে। গন্তব্যস্থান অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত ফিলিপ আইল্যান্ড। যাওয়া আসা মিলিয়ে ২ হাজার কিলোমিটারের পথ। যাওয়ার সময় ধরলাম সিনিক রুট, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ঘেঁসে চলে যাওয়া প্রিন্সেস হাইওয়ে। ফিলিপ আইল্যান্ডের প্রধান আকর্ষণ ছিল পেঙ্গুইন দেখা। সূর্যাস্তের সময় ছোট পেঙ্গুইনরা সমুদ্রে মাছ ধরা শেষে দলে দলে উপকূলে আসে। রাতের অন্ধকারে যে যার বাসা খুঁজে নেয়। না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না! ফিরলাম হিউম হাইওয়ে ধরে। ডিসেম্বর মাসে মেয়েদের লম্বা ছুটি। এবার গন্তব্যস্থান কুইন্সল্যান্ডের উপকূলে অবস্থিত বান্ডাবার্গ শহর। সেখান থেকে নৌকোয় লেডি মাসগ্রেভ আইল্যান্ড। লেডি মাসগ্রেভ আইল্যান্ড হলো অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের দ্বিতীয় দক্ষিণতম প্রবাল দ্বীপ। এই ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ দেখা। যাওয়া আসা মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারের পথ। পথে দেখার অনেক কিছু ছিল: কফস হারবারের 'বিগ ব্যানানা', ওয়াম্বাই-এর ‘বিগ পাইন এপেল’, ব্যালিনার 'বিগ প্রন' এবং হার্ভি বে থেকে ফ্রেজার আইল্যান্ডে ডে ট্রিপ। এছাড়া ছিল গোল্ড কোস্টের বিনোদন পার্কগুলো: সি ওয়ার্ল্ড, মুভি ওয়ার্ল্ড এবং ওয়াটার ওয়ার্ল্ড। এখন মনে হয় মেয়েদের সাথে নিয়ে জায়গাগুলো তখন না দেখলে সবাই মিলে মজা করে আর দেখা হতো না।
জীবন তার আপন গতিতে এগিয়ে চলছে। মেয়েরা বড় হচ্ছে। দুজনই তখন উলুনগং উনিভার্সিটির ছাত্রী। পাঁচ বছর পর (২০০১) আবার হাসুর স্বাস্থ্য সমস্যা। গাইনোকোলজিস্ট 'টোটাল হিস্টেক্টমি' করার পরামর্শ দিলেন। অপারেশন হবে ২৪ ডিসেম্বর সিডনির সেন্ট জর্জ হাসপাতালে। অপারেশন করবেন অভিজ্ঞ গাইনোকোলজিকাল অনকোলজিস্ট ডা. রবার্টসন। সেদিনের সার্জারি লিস্টে হাসুর নাম ছিল না। জরুরি ভিত্তিতে তাকে 'ফিট-ইন' করা হয়েছিল। কেননা এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার আগে সেটাই ছিল ডা. রবার্টসনের শেষ কর্ম দিবস। আমাদের বাসা থেকে সেন্ট জর্জ হাসপাতাল এক ঘণ্টার ড্রাইভ। আমরা সকালে রওনা দিলাম। এবারো সঙ্গে শুধু ছোট মেয়ে। বড় মেয়ে উনিভার্সিটিতে পড়ার ফাঁকে একটা ক্যামেরার দোকানে কাজ করতো। খ্রীষ্টমাসের সময়ে কাজের চাপ খুব বেশি। তাই সে আসতে পারলো না। হাসুকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাইরে এসে ভাবছি কি করবো - সিডনিতে থেকে যাবো না বাসায় চলে যাবো। ছোট মেয়ে বললো - অপারেশন কখন হবে জানিনা। তাই সিডনিতে ঘোরাঘুরি না করে চলো আমরা বাসায় চলে যাই। ওর পরামর্শে বাসায় চলে এলাম। এই পরামর্শটা খুব কাজে দিয়েছিলো। সেদিন বুশ ফায়ার-এর জন্য সিডনি থেকে উলুনগং যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বাসায় ফিরে না আসলে আমার সিডনিতে আটক পড়ে যেতাম। সারাদিন অপেক্ষার পর হাসুর অপারেশনের খবর এলো সন্ধ্যার পর। সবকিছু ঠিকমতো হয়েছে। অপারেশনের আগের ঘটনা হাসুর কাছে শোনা। হাসু অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকটা সময় চলে গাছে। সে ভাবছে আজ তার অপারেশন হবে তো। কেনান সেই দিনটা ছিল খ্রীষ্টমাস ইভ, সবাই বাসায় ফেরার জন্য উদগ্রীব। হাসু তার উৎকণ্ঠার কথা নার্সকে জানালো। কিছুক্ষণ পর ডা. রবার্টসন এসে বললেন - চিন্তা করোনা, তোমার অপারেশন না করে আমি বাড়ি যাচ্ছি না। হয়েও ছিলো তাই। হাসু ছিল সেদিনের লাস্ট পেশেন্ট। দিন তিনেক পর হাসুকে বাসায় নিয়ে এলাম।
সাইটোলজি রিপোর্টে জানা গেলো হাসুর এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার (জরায়ুর আস্তরণের ক্যান্সার) হয়েছিল। সময়মতো অপারেশন না করলে মারাত্মক হতে পারতো। ভাল খবর হলো ক্যান্সার অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েনি। তাই এবারো কেমোথেরাপি নিতে হলোনা। পরপর দুই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় সেন্ট জর্জ হাসপাতালের ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের ডাক্তাররা আরো ইনভেষ্টিগেশন করার সিদ্ধান্ত নিলেন। হাসুর বাবা ৪২ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তখন সঠিক রোগ নির্ণয় না হলেও এখন ধারণা করা হয় তিনি বাউল ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। হাসুর ক্যান্সারের কারণ বংশগত কিনা জানার জেনেটিক টেস্টিং করা হলো। তাতে হাসুর রোগের মূল কারণ ধরা পড়লো। চিকিৎসা পরিভাষায় এই রোগটাকে বলা হয় 'লিঞ্চ সিনড্রোম', যা বংশগত ত্রুটিপূর্ণ জিনের কারণে হয়ে থাকে। লিঞ্চ সিনড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের দু’ধরণের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়: বাউল এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার। তাদের জীবনে এই দু’ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। ইতিমধ্যে এই দুটোতেই হাসু আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া লিঞ্চ সিনড্রোম একজন ব্যক্তির অন্যান্য ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায় (আজীবন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫ থেকে ১০ শতাংশ), যার মধ্যে রয়েছে: ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, মূত্রাশয় ক্যান্সার সহ মূত্রনালীর ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক (পাকস্থলী) ক্যান্সার, স্মল ইনটেস্টাইন (ছোট অন্ত্র) ক্যান্সার, হেপাটোবিলিয়ারি ক্যান্সার (যকৃতের ক্যান্সার, পিত্তের ক্যান্সার এবং পিত্তনালীর ক্যান্সার), কিডনি ক্যান্সার, মস্তিষ্কের ক্যান্সার এবং ত্বকের ক্যান্সার। এই ঝুঁকি নিয়েই হাসুকে বাঁচতে হবে। লিঞ্চ সিন্ড্রোমের কোন চিকিৎসা নেই। স্ক্রীনিং-এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্তকরণই একমাত্র ভরসা।
পরবর্তী ২১ বছরে হাসু আরো চার ধরনের ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়েছে। মহান আল্লাহর কৃপায়, ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজও সে বেঁচে আছে। একজন ক্যান্সার রোগীর সাথে আমার বসবাসের বাকি কাহিনী আগামী পর্বে।
আমাদের পারিবারিক ছবি
পরের পর্ব
ড. নজরুল ইসলাম, কার্টিন ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া
|