গল্প জোছনার স্রোতে দীলতাজ রহমান
বাড়ি বদল করে চামেলীবাগের বহুতল বাড়ির পাঁচতলার এই ফ্ল্যাটটিতে আসার পর থেকে আমার ছোটমা’কে দেখি কাজের ফাঁক গলিয়ে প্রায়ই রান্নাঘরের জানালায় তাকিয়ে থাকে। ছোটমা আমারই সমবয়সী, যেটুকু বড় তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। তবু তাকে মা বলে ডাকতে হবে বলে তার কাছে এতদিন সহজ হতে পারিনি এবং কোনো সম্বোধনও করিনি। ছোটমা মায়ের ভূমিকা ফলাতে আসলেই ভাবতাম, অভাবী সব মানুষেরাই এতটা লাজ-লজ্জাহীন হয় নাকি? পারে কী করে উপযাচকের মতো এতটা মুরব্বিয়ানা ফলাতে!
পাকা গিন্নির মতো কোনো কাজে ফাঁকি নেই। এমনকি গভীর রাতে এক গ্লাস দুধ আমার শুয়ে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে হাতে ধরিয়ে দিতেও সে ভোলে না। আমার মায়ের মতো অকৃত্রিম এক করুণ দৃষ্টি তখন ঝরতে দেখি তার দৃষ্টিতে। তার এই অস্বাভাবিকত্বটাই আমি মানতে পারি না। কেন তার সবকিছু এতটা নিখুঁত হয়। আমার ছোটভাই ফেরদৌস অযথা তখন বিগড়ায়, ছোট মা তাতে কখনো চটে না। সন্তান পেটে না ধরেও লালন না করেও শুধু দেখা আচরণে কী করে সে মা হয়ে উঠলো? অথচ জন্ম দিয়েও তো মা হতে পারে না কতজন। ও কি সবাইকে সুখী রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঢুকেছে এ সংসারে! কিন্তু ও নিজের সুখের কথা কেন ভাবে না?
লুকিয়ে ছোটমা কাকে এভাবে দেখে। একবার পা টিপে টিপে পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভাবলাম, ধরা পড়ে কেমন জব্দ হবে। কিন্তু না, সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়লো না। দৃষ্টির সীমানায় যতগুলো বাড়ি আছে তার কোনো জানালা দরজায় অথবা কোনো বারান্দায় কোনো যুবক দূরের কথা কোনো শিশুটিও নজরেও পড়লো না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শুনলাম কেমন উদাস কণ্ঠে ছোট মা বলছে, দেখ পারুল ঐ যে, কোনো বাড়ির ছাদে বোধহয় পানি জমে আছে। দেখে মনে হয় ওটা যেন গভীর কোনো পুকুর। তাইতো ওটা দেখে আমার এত ভালো লাগে। জানিস ওটা দেখলে আমার আমাদের গ্রামের কথা মনে পড়ে। আমাদের বাড়ির চারপাশে যে কত যে পুকুর। ছোটবেলায় দল বেঁধে যখন তখন ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একটা রেখে আরেকটায়। বড় হয়ে উঠলে অবশ্য আর তা পারিনি। তবু সে সব কথা মনে পড়ে এত ভালো লাগে... কথাগুলো বলে শেষ না হতেই ছোটমা আমার দিকে ফিরে দাঁড়ালো। আর তাতে আমার মুখখানা অপরাধ বোধে রক্তশূন্য হয়ে আসছে। কী যা-তা ভাবছিলাম আমি। থতমত খেয়ে শুকনো কণ্ঠে বলতে লাগলাম, ওটা বোধহয় পুকুরই। ‘দূর বোকা মেয়ে’ এত উপর থেকে এতে বড় বড় সব বাড়ি ছাপিয়ে নিচে পড়ে থাকা অতো দূরের কোনো পুকুর বুঝি এভাবে দেখা যেত?’ ছোটমার চোখে পলক পড়ে না দৃষ্টি আরো বিস্ফোরিত হয়ে থাকে সেদিকে।
যাই হোক, পুকুর কেন সমুদ্রও আমাকে অত টানে না। ব্যবসায়ী মানুষ আমার বাবা। সারা জীবন দেখলাম নেশা বলতে শুধু তার টাকার পরিমাণ বাড়ানো। মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আমার মা দু’হাতে সেই টাকা ভাঙার স্বাধীনতা আর আমাদের দু’টি ভাইবোনকে নিয়ে মেতে ছিলেন। সুখের সবটুকু আমেজ নিয়ে তবু মা অকালে গত হলেন, বিনা নোটিশে একরকম বলা যায়। এমনতর পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা কোনো মানুষের কাছে যে কোনো নন্দনতত্ত্বের চর্চা বাহুল্য মনে হবে বৈকি। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ববান, স্বল্পভাষী মানুষ বাবা অন্যের বাড়িতে এসে পড়ে থাকা মানুষের অভিভাবকত্ব বেশিদিন বরদাস্ত করতে পারলেন না বলে, কটু শোনাবে জেনেও স্ত্রীর মৃত্যুর দু’মাস না যেতে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবং কদিন না যেতেই হৈ হৈ করে বিভিন্নজন বিভিন্ন ধরনের পাত্রীর সন্ধানও আনতে লেগেছিলেন। পঞ্চাশোর্ধ জামাইয়ের এমন নিষ্ঠুর-হ্যাংলা আচরণ দেখে আমার নানী শঙ্কিত হলেন। তবু দূরদর্শীর মতো তিনি এগিয়েও যাচ্ছিলেন তার চল্লিশের কাছাকাছি বয়সের এক বিধবা ভাগ্নে বৌয়ের জন্য। বাবারও অমত ছিল না তাতে। কিন্তু আমার বাবার বড় বোন অর্থাৎ আমাদের বড় ফুপু তার শ্বশুর বাড়ির কাছের বিশ-একুশ বছরের একটি মেয়ের ছবি দেখিয়ে এবং মেয়েটির সৌন্দর্য বর্ণনা করে বাবাকে মুগ্ধ করে পাকা কথা নিয়ে তবেই সেদিন গিয়েছিলেন, শিগগিরই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি রেখে।
বড় ফুপু-আম্মা করিৎকর্মা মানুষ। কথাও বলেন সব কাজের কাজের। কিন্তু সে সব কথার সঙ্গে এমন সত্যগুলো প্রকাশ করে ফেলেন যে, তাতে তার নিজের অথবা যাকে নিয়ে বলছেন তার একান্ত গলদটুকুও শ্রোতা-দর্শকদের কাছে প্রকটিত হয়ে ওঠে।
আমার বাবার সঙ্গে ছোটমায়ের বিয়ের আগেই আমাদের জানা হয়ে গেছে গরিব ঘর হলেও বড় বাড়ি। শিক্ষা-দীক্ষা আছে। শিল্প-সাহিত্যের চর্চাও হয় ও বাড়িতে। চাচাতো মামাতো ভাইদের মধ্যে কেউ কেউ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-বড় সাংবাদিক। ছোটমায়ের ভাইগুলোও মেধাবী। স্কুল-কলেজে পড়ছে সবাই। ছোটমা এসএসসি পাস করেছে। কিন্তু যাওয়া-আসার খরচ দিয়ে দূরের কলেজে মেয়েকে পড়ানোর সঙ্গতি তার বাবার ছিলো না।
শিল্প-সাহিত্যের চর্চা যে বাড়িতে হয়, সে বাড়িতে ভিড় করে আরো বহু ধরনের মেধাবী সব তরুণ। আমার এই ছোটমা’র কিশোরী মনেও সেই সুকুমার বৃত্তির স্রোত এসে লেগেছিলো। অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেরা গান গাইতো, কবিতা আবৃত্তি করতো। নাটকের রোমাঞ্চকর সব সংলাপের প্রতিধ্বনিতে ভরে যেত চারদিক। অন্দরে অধীর হয়ে জেগে থাকা সেদিনে কিশোরী এই ছোটমায়ের দুটি কানেও তার রেশ গিয়ে পৌঁছত। ঘরে হারমোনিয়াম পেলে বাজিয়ে এক-আধটু গাইতো সে। তারপর এক এক করে অনেক রাত পালিয়ে মিশে গিয়েছিলো ছেলেদের সেই আড্ডায়। আর সেটাই হয়েছিলো তার জন্য চরম কাল।
‘ছেলে দেখলে লিকলিক করে ওঠে ও মেয়ে! এতগুলো ছেলে একসঙ্গে দেখে আমরা হলে লজ্জায় দম আটকে মরতাম।’ এমনতর বহু ধরনের অপবাদ দিতে পক্ষপাতী শুধু ও বাড়ির মেয়েমহলই নয়, পুরুষগণও কম ছিলো না তাতে। তার উপর বাপ যদি হয় বিচার-বুদ্ধিহীন, হিংস্র। মা’রও যদি না থাকে সন্তানদের মনস্তত্ত্ব বোঝার সংবেদনশীল অনুভূতি। দরিদ্র পিতার ঘরে এমন অভিশপ্ত জীবন! মরতে চেয়েছিলো ছোট মা। মৃত্যু তাকে গ্রহণ করেনি। কিন্তু ছোট মাকে একজন তো ভালোবাসতো! তবু কেন সে মরতে যাচ্ছিলো। নাকি বিশ্বাসে জোর পাচ্ছিলো না। দারিদ্র কি এমন কিছু যার দহনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় অঙ্কুরিত স্বপ্নের কুঁড়িটিও?
আমার বাবা স্বাস্থ্য, চেহারায় সুপুরুষ। কিন্তু স্বভাবে কাঠখোট্টা। বরাবরই এমনটি দেখেছি। আমার মায়ের সঙ্গে তার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো, তাও বহুদিনের অভ্যাসের ফসল। ছোটমায়ের সঙ্গে তাকে শুধু খাবার টেবিলে ব্যস্ত হাতে খেতে খেতে রকমারি ব্যঞ্জনের স্বাদের রকমফের আলোচনা ছাড়া আর কোনো কথা বলতে শুনিনি। ইদানীং ছোটমা প্রায়ই আমার পাশে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি ভাবি, বাবা এসে নিশ্চয় কোনো অজুহাতে তাকে ডেকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমার জানা মতে তেমনটি ঘটেনি কোনোদিন। তাতে আমার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না দেখে স্বস্তি পাই।
আমি আর ফেরদৌস পাঁচ বছরের ছোটবড়। আঠারো এবং তেরো বছরের এমন দুটি ছেলেমেয়ে আমার বাবার আছে, সেই পাঁচ বছর আগের অচেনা কেউ ঘরে এসে না দেখলে বিশ্বাস করতো না। ছোট মায়ের গার্জিয়ান নিশ্চয়ই সব বিষয় হিসাব মিলিয়ে তবেই এ বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন।
কিন্তু ছোট মা যে আর কোনোদিনও তার বাবার বাড়ি গেলো না! বাবা কতবার সকালে অফিসে যাওয়ার আগে তাকে বলে গেছেন ‘তোমার বাবা একা যেন ফিরে না যান। তুমি যেও। কদিন থেকে এসো। বাড়ির সবাই নিশ্চয় তোমাকে এবারো না দেখতে পেলে মন খারাপ করবে।’
বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বাবা তার সমান বয়সী, অর্ধ-শিক্ষিত শ্বশুরের প্রতি ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি গোছের বিনয় ও অস্বস্তি মেশা একটুকরো হাসি ছুঁড়ে দিয়ে দুপুরে ফিরে এসে দেখেছেন জোয়ানমর্দ শ্বশুর সাহেব চলে গেছেন। আর তরুণী বধূটি তার স্বামীর জন্য টেবিলে খাবার সাজাতে শশব্যস্ত।
‘কেন যাওনি তুমি? ওদের ওপর তোমার কীসের এত রাগ? কিসের অভিযোগ তোমার? কে তোমাকে এত শক্তি যোগায় এতটা অটল থাকতে?’ এমন দু-চারটি অভিযোগের মৃদু ভারও ছোটমাকে যে চাপানোর সাহস বাবা রাখেন না, তা এতদিনে আর কাউকে বলে দেয়ার অপেক্ষা রাখে না। সারাক্ষণ এমনই এক অসহ্য কাঠিন্য ছোটমা ধারণ করে রাখে তার কোমল দ্যুতিতে।
কদিন মাত্র আগে আমার বিছানায় কোণাকুণি হয়ে শুয়ে ছিলাম। ছোটমাকে আমার মাথার কাছে বসতে হলে তার জন্য আমাকে একটু সরতে হয়। কিন্তু তাকে সেটুকু অধিকার ছাড়তে আমি নারাজ। ফেরদৌসও। তবে মহিলার সেবা নিতে মন্দ লাগেনি। উহ! মা মারা যাবার পর দেখছি না, বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করতো। আমাদের প্রতি অভিভাবকত্ব দেখাতে এসে নিজেরা নিজেরা প্রায় হাতাহাতিও লেগে যেত। অথচ সময়মতো চারটে ভাত কেউ দিতে পারতো না। বাবা বিয়ে করে আনার পর আমার নানীও কম তক্কে তক্কে থাকেননি। ছোট মার নিষ্ঠার কাছে পরাস্ত হয়ে ফিরে গেছেন তিনিও।
ছোটমা তবু কষ্ট করে আমার মাথার কাছে বসলো। বুঝলাম, ভয়ে ভয়েই আমার কপালে একখানা হাত রাখলো। তার জ্যাঠামিতে আমার সংকোচ হচ্ছিলো। তবু দায়িত্বের সুরে বললো, ‘তুমি কার সঙ্গে টেলিফোনে এতসব কথা বলো?
-মহিলার স্পর্ধা দেখে জ্বলে উঠলাম, ‘তা জেনে তোমার কী হবে’
-যে ছেলেটি এসে অনেকক্ষণ তোমার সঙ্গে গল্প করে, যার সঙ্গে বেড়াতে যাও তাকে আমার ভালো লাগে না।
-ভালো-মন্দ বোঝ তুমি?
-হয়তো না!
-তাহলে?
-একসঙ্গে বসবাস করতে গেলে পরস্পরের প্রতি এমনি দায়বদ্ধতা জন্মে। তাছাড়া তোমার সঙ্গে আমার যে সম্পর্কটি... সময়ও তো কম হলো না! প্রতিদিন পায়ে পায়ে তুমি সর্বনাশের পথে এগিয়ে যাচ্ছো! জানো, তোমার পাশে ওকে মানায় না। তুমি কিছু বোঝ না। তোমাদের জীবন তো সরলরেখার মতো। হোঁচট খেতে হয় না। তাই জীবনের কদর্য দিকটা অজানাই থেকে যাচ্ছে তোমাদের কাছে।
-জীবনের তুমিই বা কতটুকু দেখেছো?
-বাজিয়ে তো দেখতে চাইনি কিছু! সেও আরেক ধরনের বিলাসিতা। আমরা যেখানে জন্মেছি সেখানে তা মানায় না। সাহসের কথা না হয় বাদই দিলাম।
-শোভনের সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। এতে আমি কারো আপত্তি মানবো না।
-তোমার বাবা জানেন?
-না, তবে আমার পছন্দকে তিনি অস্বীকার করবেন না। করলেও আমি তা মানবো না। পারলে বলে দিও।
-তোমার বাবা যে ওকে মেনে নেবেন, কী কী যোগ্যতা ওর আছে?
-ও এমএ পাশ করতে পারেনি। তা হোক, ওদের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আছে।
-ও নিজে কী করে?
-এখনো কিছু করে না। প্রয়োজনীয় টাকা চাইলে তো ওর বাবার কাছে পায়।
-কিন্তু যার সঙ্গে তোমার বিয়ে হবে ভাবছো, তার সঙ্গে এত গল্প করতে নেই। এত সময় একসঙ্গে কাটাতে নেই। এতে তোমার আবেদন ওর কাছে নষ্ট হয়ে যাবে। ওতো তোমার বন্ধু নয়, প্রেমিক। যতটা পারো ওকে আড়াল করে থাকবে বিয়েটা না হওয়া পর্যন্ত।
এতক্ষণ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর মুখের দিকে। একটা গেঁয়ো ভূত যাকে ভেবেছিলাম। শুধু একটু আশ্রয় ও খাদ্যের জন্যে আমাদের বাড়ি পড়ে আছে ভেবে অবহেলা ছাড়া সম্ভ্রম দূরে থাক, প্রাণভরে করুণাও যাকে করিনি এতদিন, আজ সে-ই যেচে এসে আমার গভীরতম অন্ধকার দুর্বল বোধে এভাবে ছড়িয়ে দিলো আপনালোর রশ্মি!
-পাঁচ বছর হলো এই প্রথম মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো ছোটমা। তাও মা নয়, ছোটমা। বললাম, ছোটমা তুমি এতসব জানো, বোঝ?
-তোমার মতো বিষয়টি আমার নিজের হলে আমি বুঝতাম না। তোমার বলে বুঝতে পারছি। গা ঘেঁষে বসি ছোটমার। অধিকার পেয়ে ছোটমা বলে যায়, তুমি যে বললে তোমার বাবা ওকে মেনে নেবেন, কিন্তু ওই ছেলে শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না?
-ও-ই তো আমাকে রাজি করিয়েছে। আমি তো ধরাই দিতে চাইনি!
-কিন্তু ওকে দেখে আমার কী মনে হয় জানো? আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকি ছোটমা’র তীক্ষ্ণ দু’টি চোখের দিকে। খুব ধারালো স্বরে ‘আদর্শহীন’ শব্দটি উচ্চারণ করে ছোটমা তা ছুরির মতো গেঁথে দিলো আমার বুকে। আমি ফালাফালা হতে থাকি আর ছিন্নভিন্ন হতে থাকে আমার বিশ্বাস।
ছোটমার কথাগুলো মানতে চেষ্টা করি। শোভনের সঙ্গে আর যেচে কথা বলি না। লুকিয়ে দেখাও করি না। যোগাযোগ কমিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞাটি পোক্ত হতে না হতেই জানতে পারলাম অন্যত্র ওর বিয়ের আয়োজন চলছে। প্রতিবাদ করতে ওর মুখোমুখি হতে চাইলাম। টেনে ধরলো ছোটমা। বললো নিজে হাটে হাঁড়ি ভাঙার মতো ওইটুকু কাজ অন্তত আর করতে যেয়ো না। এতে তোমারই ভালো হলো। কান্না দমাতে না পেরে ছোটমার বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম, ছোটমা আমি ঠকেছি!
পরের অংশ
|