bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













চোরাবালি / দীলতাজ রহমান



আগের অংশ


সহসা পেঁচানো সুতোর ঘুড়ির মতো মনে কার দমকা বাতাস হয়ে আসার সাধ লাগে। সেদিন যার সব গ্লানি ধুয়ে দিতে পারিনি, তারই টানে বাতাস এসে দরজা-জানলার পর্দায় ফরফর শব্দ তুলে কী এক মিশ্র আবহ তৈরি করে। আমি মনের এ বিভ্রমকে আজ আর কোনো যুক্তি দিয়ে ঢেকে রাখতে চাইনি। শুরুতে পারিনি নিজের কোনো একটি ইচ্ছেকেও প্রাধান্য দিতে। আজ ভূমিকার গৌণ অধ্যায়টি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চেয়েছি। সেদিন যে দূরদর্শিতা দিয়ে আমার প্রতি ঘটা নিরন্তর নীরব এই নিগ্রহকে আঁচ করতে পেরেছিলো। প্রাণপণ চেষ্টায় উদ্ধারও করতে চেয়েছিলো, আমি সেই তার সাথে সারাজীবন এতটুকু যোগাযোগও না করে, তাকে বিচ্ছিন্ন রেখে দিয়েছি কার ভয়ে?

এহসান ভাই সরাসরি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে হয়তো তার সঙ্গে আমি চলে যেতাম না। নাকি যেতাম? জানি না গেলে সে জীবন কেমন হতো? তবে অনেকেই তো জানে, কেন এহসান এ বড়িতে আসে না। আমারও কেন মুশফিকের সব বন্ধুর বড়ি যাওয়া নিষেধ!

যা ঘটেনি, ভরা দুপুরে একার উদ্বেলিত সময়ে তারই পরিণতি দেখতে চেয়ে মুশফিকের সবগুলো ডায়রি খুলে এলোমেলোভাবে একটি নাম্বার আমি খুঁজতে থাকি। পেয়ে যাবোই এমন উত্তেজনায় দম আটকে আসার উপক্রম হলো। তাই পেলাম যখন, লম্বা করে আবার দম টেনে নিলাম। আঁচলে মুছে নিলাম কপালজর্জরিত উষ্ণ ঘাম। বাইরে ঝাঁ ঝাঁ রোদ। তার ঝাপটা দেয়ালেও গড়াচ্ছে। আর সবকিছু ছাপিয়ে টের পাচ্ছি, প্রবল ডানায় নেমে আসছে আমার আরেকটি পৃথিবী। উত্তেজনায় দরদর করে ঘামছি আমি। বহুদিনের নীরব আচ্ছন্নতা সহসা আমাকে কেমন মুখর করে তুললো। মনে মনে সব রঙের শাড়িতে আমি বারবার নিজেকে সাজাই। কোন রঙটি তার প্রিয় ভেবে। যেন এক্ষুনি জানা হয়ে যাবে, সেইদিন সে কোন রঙের শাড়ি পরতে বলেছিলো। মনে হচ্ছে, বহু পথ পাড়ি দিয়ে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, যেন সবুজ পাহাড় থেকে ঝর্না ছুটে আসছে আমার দিকে। তৃষ্ণার্ত আমি মুগ্ধ সে নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। আমি ইচ্ছে করলেই ডুব দিতে পারি পাহাড়ের পাদদেশের বিশাল সরোবরে। আবার ভেসে উঠতে পারি উন্মুক্ত আকাশের দিকে। নিরুদ্দেশ থেকে ছুটে আসা প্রখর জলকে আমি দু’হাতে ছিটাতে পরি অন্যবাড়ির সার্সিতে। তারপর প্রিয় আস্তিনে মুছে নিতে পারি আমার ভেজা করতল। মুখ...

পৃথিবীর সব সুন্দরতায় আজ আমার দর্পিত অধিকার...। কাতর চোখে যে আমার মেরুনরঙা টেলিফোন সেটটির বাটনে উঁকি মারছে, আমি তার দৃষ্টি বেয়ে মনের ঘরের চালে তুমুল বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারি। তার নির্জনতাকে লণ্ডভণ্ড করে, ব্যস্ততাকে অবিন্যস্ত করে তাকে নিয়ে মেতে উঠতে পারি এখন ঘূর্ণি হাওয়ার মতো।

মুশফিকের লেখা, ডায়রির নাম্বারের সঙ্গে মিলিয়ে একটা একটা করে বাটন টিপে বরফের মতো জমতে থাকি। টেলিফোন বাজছে। থেমে যাওয়ার ঠিক আগে এসে যে ধরলো, তার কণ্ঠস্বর আমার চেনা। তবে বাড়তি গাম্ভীর্যটুকুও শ্রুতি এড়ালো না। কিন্তু আমি ঢেলে পড়া উচ্ছ্বাসে বললাম, আমি! আমি মৌলি বলছি! আপনি ভালো আছেন?

-হ্যাঁ ভালো আছি! তুমি?

কণ্ঠে কোনো বিস্ময় নেই, বেদনা নেই! হঠাৎ আসা বৃষ্টির ঝাপটার জানালা দরজার কপাটের মতো তুমুল দরদরে হওয়া দূরে থাক, কণ্ঠে নেই ওর এতটুকু শিশিরে আর্দ্রতার আভাসও। কিন্তু আমার কণ্ঠনালী চেপে রাখে একটিমাত্র অস্ফুট প্রশ্ন- কেন তুমি ভালো আছো? কেন ভালো তুমি, আমাকে ভালো থাকতে না দিয়ে? এত বছর পর এইমাত্র বুঝলাম, এহসানকে আমার বলার মতো কোনো বিষয়ই ছিলো না।

ওপাশ থেকে একের পর এক আমি ওর নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু বুঝতে পারছি ওরও বলার আর কোনো কথা নেই। কিন্তু এ নীরবতা অসহ্য। অথবা অসহ্য প্রশান্তির! তাই অনন্তকাল আমি এভাবে রিসিভারটি ধরে রাখতে চাই। অপূর্ণতার এ জেরটুকু ছাড়া জীবন বড় ঠুনকো! সমস্ত চেতনা লুপ্ত হয়ে এলেও পূর্ণতার এটুকু পিপাসাই শুধু সতর্ক চাতকের মতো আরো গাঢ় হতে থাকে বুকের গহনে।

কিন্তু মহাকাল বিশাল ঈগলের মতো তার দু’টি ডানা দু’দিকে বিস্তৃত করে ক্রমশ বুঝি দু’জনকে দুটি প্রান্তে টেনে সরিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত বুক শূন্য করে, সমস্ত পৃথিবীতে একা হয়ে যেতেই বুঝি এ লগ্ন এমন ঘোরতর হয়ে উঠেছিলো!

ঘড়ির কাঁটায় মিনিট পনেরো এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমি পিছনে ছুটছি, সুরভিত স্মৃতির দিনগুলো নিয়ে আমি এফোঁড় ওফোঁড় হচ্ছি। ও কি টের পাচ্ছে আমার ভো-কাট্টা ছুট? আমার ক্ষত বিক্ষত হওয়া? আমাদের দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে বিমূর্ত বিভাজন যা, তা তো ওরই এঁকে দেয়া! ও কেন সেদিন এ বিয়ে ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব রাখতে এসেছিলো...।

-‘রাখি কেমন! ভালো থেকো।’ মুহূর্তে তীরের মতো তীক্ষ্ণ ক’টা ক্ষিপ্র শব্দ এসে হৃৎপিণ্ড থেকে ছিন্ন করে দিলো কল্পনার সবকিছু। চোরাবালিতে আটকে পড়ার মতো আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তবু তাতেই ঠাঁই খোঁজার মতো এহসানকে বলতে ইচ্ছে করে, তোমার কঠিন পরিমিতিবোধটুকু অন্তত একবার ভুলে যাও। একবার অন্তত জানতে চাও, আমি কেমন আছি!



আগের অংশ





Share on Facebook               Home Page             Published on: 31-Oct-2020

Coming Events:



Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far