bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



ভোজনানন্দ ও এশার ঈদ
দিলরুবা শাহানা



ভোজনানন্দ শব্দটি দেখে কেউ ভুল করেও যেন ভাববেন না যে এটি কোন ব্যক্তির নাম। কেউ যদি মনে করেন যে ভোজনানন্দ হয়তো কবি জীবনানন্দ বা স্বামী বিবেকানন্দের কোন ঘনিষ্ঠজন তাও মহা ভুল। তবে সবার মাঝেই এই অনুভূতি কমবেশি আছে বা সময় বিশেষে ভোজনানন্দ হয়। ভুখা মানুষ যখন সামান্য নুন-ভাতও কাঁচামরিচ দিয়ে খেতে পায় তখন তার আত্মা দুলে উঠে ভোজনানন্দে, চেহারায় ধরা দেয় স্বর্গীয় তৃপ্তি। এই আনন্দ পেটুকের রসনা-তৃপ্তির আনন্দ নয়, এ এক অন্যরকম আনন্দ। সারাদিনের রোজার শেষে রোজাদার ব্যক্তি যখন শীতল পানি বা মিষ্টি শরবত সহযোগে পরিমিত ইফতার গ্রহণ করেন তার অন্তর তখন ভরে উঠে অনির্বচনীয় সুখে ও উপবাস-ক্লিষ্ট ক্লান্ত চেহারায় তার আভা ছড়ায় বেহেস্তী প্রশান্তি।

এশা ভুখা-দরিদ্রও না, রোজাদারও নয়। খাদ্যানন্দ যে মানুষকে স্বর্গীয় তৃপ্তি দেয় বা ভোজনানন্দ বেহেস্তী প্রশান্তি আনে এমন অনুভূতির সাথে তার পরিচয়ই ঘটে নি। খাদ্যের অভাব কাকে বলে এটা এশা জানে না। সময়ের খাবার সময়ে গ্রহণ করার সুযোগ আছে বলে ক্ষুধিত হওয়ার সুযোগই ঘটেনি কখনও। তবে বিদেশে আসার পর ভোজনানন্দ বা খাদ্যানন্দে বিভোর লোকজন দেখে সে বিস্মিত হয়েছে, তার উপর খাদ্যাসক্তি থেকে কেউ কেউ এমন বিশাল অবয়ব ধারণ করেছে যে তাদের দেখে রীতিমত ভীত এশা।

যে কোন অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে থাকে খানাপিনার বিশাল আয়োজন। খাবার দেখে ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড় প্রায়। কোন তরিকা অনুসৃত হয় না খাদ্যসম্ভার উপস্থাপনে। বিরিয়ানি থেকে শুটকি সব পদের সমাহার থাকে। কাবাব, রোষ্ট, কালিয়ার পাশাপাশি মাছের দোপেয়াজা, আস্ত গ্রিল্ড ফিশ এবং শাক-শুটকি, ভর্তা-ভাজি কোনটাই বাদ যায় না। খাবারের প্রাচুর্যের মতই পরিবেশও থাকে মানুষে মানুষে জনাকীর্ণ। একবার খাদ্যসম্ভারের পাশে যেতে পারলে ভোজনবিলাসী যারা তারা সবকিছু একপাতেই নিতে চেষ্টা করেন। এশাকে একবার দাওয়াতে একজন কাবাব কালিয়ার সাথে শুটকি ভুনাও তুলে দিতে যাচ্ছিলেন সে আঁতকে উঠে প্লেট সরিয়ে নিলে উনি বললেন,

‘সবাই নিয়েছে মনে হচ্ছে। শুটকি মজা হয়েছে, নিয়ে নিন’
এশা নম্র কণ্ঠে বলেছিল, ‘মাংসের সাথে নেব না, এগুলোই শেষ করতে পারবো কিনা জানি না, যদি পারি পরে এসে নেব’
উনি ভিড়ের দিকে ইঙ্গিত করে নিচু স্বরে বললেন, ‘মনে হয়না খাবার টেবিলের কাছে দ্বিতীয়বার আসতে পারবেন!’

তখন এশার একটা বিষয় বোধগম্য হল যে কেন মানুষ দাওয়াতে গেলে প্রথামত ও রুচি মত ভাতমাছ ও শাক সবজী শুটকি নেবার পর পোলাও-কোর্মা ও কালিয়া-কাবাব পাতে নিতে পারে না। যারা ভোজনাসক্ত নন তারা চোখের লোভে সব ধরনের খাবার এক পাতে নেন না। ভোজন রসিকরা খাদ্যানন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকায় সবই একসাথে নিয়ে উপভোগ করেন। এশা মনে মনে ভাবে যারা পছন্দমত দু'এক পদ দিয়ে খেয়েছে তারা তৃপ্ত বেশী নাকি যারা বিরিয়ানি থেকে ভর্তা সবই গোগ্রাসে উদরস্থ করেছে তারা বেশী তৃপ্ত? সুখ, তৃপ্তি, খাদ্যানন্দ সবই আইনস্টাইনের থিওরি মোতাবেকই আপেক্ষিক।

এশা বাংলাদেশের এমন এক অঞ্চল থেকে এসেছে যেখানে মাছের প্রাচুর্য রয়েছে তাই শুটকির কোন প্রয়োজনই হয় না। মাছ শুকিয়ে শুটকি বানিয়ে খাওয়ার রেওয়াজ ওদের এলাকায় তেমন নেই। বিদেশে এসে অবাক হয়ে দেখলো অনেক জাতির মানুষই শুটকি খায় এবং তাদের শুটকিরও গন্ধ রয়েছে। এক বন্ধুর কাছে একদিন বলেছিল, ‘জান আমার ধারনাই ছিল না যে বিদেশীরাও শুটকি খায় এবং তাদের শুটকিতেও গন্ধ আছে!’ বন্ধু বলেছিল, ‘আরে শুটকিতে গন্ধ থাকবেই স্বদেশী বিদেশী বলে কোন কথা নেই। শুটকির উপকারিতা আছে জানতো’
‘এমন অদ্ভুত গন্ধওয়ালা বস্তু উপকারী! তা কি উপকার হয় শুনি?’
‘আমাদের দেশে মানুষ প্রচুর শুটকি খায় জানতো, রোদে শুকানো জিনিসের খাদ্যগুণ বেড়ে যায় তা শুনেছো নিশ্চয়? এই কারণে আমাদের লোকজনের হাড় মজবুত, গ্রামেও হাত-পা ভাঙ্গা বয়স্ক মানুষ কম দেখা যায়।’

এশা কথাটা বিশ্বাস করবে কিনা ভাবছিল। সে দ্বিধান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা শুটকির উপকারিতা নিয়ে কোন গবেষণা হয়েছে কি?’

‘আরে নিজের চোখে দেখে বলছি বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি? গ্রামে দেখবে দুষ্টামি-বাঁদরামি করে ছোট বাচ্চাদের হাত-পা প্রায়ই ভাঙ্গে আর বুড়োবুড়িদের হাড় ভাঙ্গাভাঙ্গি কমই হয় শুটকি খাওয়ার কারণে। এদেশে দেখ হসপিটালে অনেক বয়স্করা এই হিপ সার্জারি করে ঘরে ফিরে যাচ্ছে আবার নী ইনজুরি নিয়ে ফিরে আসছে।’ এশা ভাবলো হয়তো কথাটা সত্যি তবে শুটকিকে সালাম।

এশা ঈদে রান্না করবে। ইন্টারনেট ঘেঁটে যতো রেসিপি পেল কোনটাই পছন্দ হল না তার। একজনকে ফোন করে ছানার মিষ্টির রেসিপি চাইলো কারণ উনার নিজের হাতে বানানো মিষ্টি খেয়ে খুব ভাল লেগেছিল। ভদ্রমহিলা অদ্ভুত। রেসিপি তো উনি দিলেনই না তবে উপদেশ দিলেন অনেক। বললেন, ‘দেখ চারদিকে প্রায় শুনা যায় রক্তে মিষ্টি বেড়ে গেছে আর মিষ্টি খাইয়ে মানুষকে মারার ফন্দি কর না। টক-ঝাল-নুন্তা কর এতেই হবে।’
‘টক-ঝাল না হয় বুঝলাম কিন্তু নুন্তা নিয়েই যতো চিন্তা’
‘কেন ডালপুরি-সিঙ্গারা এসব কর’
‘আচ্ছা দেখি।’
এশা বাজারের কেনা জিনিস খাওয়াবে না ঠিক করলো। যদিও সে রান্নার ‘র’ও জানেনা। অনেক চিন্তাভাবনা করলো। সব চিন্তা শেষে নিজের রেসিপি মতো শুধু সবজী দিয়ে ভেজেটেব্ল লাজানিয়া আভেনে বেক করলো। ছানার পুর দিয়ে পুলিপিঠা বানিয়ে তা তেলে না ভেজে ভাপে করলো।

এশার ভেজেটেব্ল লাজানিয়া স্যান্ডউইচ ব্রেডের সাথে খেয়ে সবাই খুব তৃপ্ত হল। অনেকেই বললো ওর লাজানিয়া খুব সুস্বাদু একটি ভেজেটেব্ল ডিশ। যিনি মিষ্টির রেসিপি দিতে চান নি তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে এশার কাছে ভেজেটেব্ল লাজানিয়ার রেসিপি চাইলেন। এশা আন্তরিক ভাবে বললো
‘আমি রেসিপি লিখে রাখিনি যে; যদি চান তবে তা মুখে বলবো আপনাকে একদিন।’

এশার আনন্দ হল ভেবে যে ঈদের রান্না তার ভালই হয়েছে তাইতো লোকজন খেয়ে রেসিপি পর্যন্ত চাইছে। দু’দিন পর আবার ছানার মিষ্টি তৈরি করনেওলীর ফোন। ভেজেটেব্ল লাজানিয়ার রেসিপি নিতে চান। এশা বললো
‘বলছি শুনুন’
‘সবুর কর, কাগজ কলম হাতে নেই আমার কিছু মনে থাকে না। লিখে রাখতে হবে’
‘লিখুন তবে, দু’টো মাঝারি আকৃতির তাজা বেগুন লাগবে, তার সাথে আলু দু’তিনটা, আট দশটা বাটন মাশরুম, কয়েকটা কাঁচামরিচ সামান্য পিয়াজ পাতা যাকে এখানে বলে স্প্রিং অনিয়ন, আরও লাগবে সামান্য মোজারেলা চীজ’
‘আচ্ছা পড়ছি শুন
এশা অবাক হয়ে বলে উঠলো
‘এটাতো টেলিফোন নম্বর না!’
‘রাখ তো মেয়ে মুরুব্বীদের সাথে এতো কঠিন হবে না; লিখার অভ্যাস নাই তো ভুলভাল লিখলাম কিনা তাই দেখ একবার’
পড়ে শুনানোর পর নিজেই বললেন, ‘ধুয়ে নিয়ে আলু-বেগুন আধ সেন্টিমিটার মাপে গোল গোল চাক্তি করে কেটেছ দেখলাম?’
‘আগে আলু ছিলে অল্প পানিতে লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে নেবেন যাতে না ভাঙ্গে তারপর কাটতে হবে, এবার...’
টেলিফোনের অপারে মহিলা চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘আস্তে থেমে থেমে বল তাড়াতাড়ি লিখতে পারি না, বোঝ না’
এশা ঈষৎ বিরক্ত হল। উনি তাড়াতাড়ি লিখতে পারেন না এটা ও জানবে কি করে!
‘এবার সামান্য তেলে বেগুনের চাকগুলো এপিঠ ওপিঠ পাঁচ মিনিট ফ্রাই প্যানে ভেজে নামান, ঢাকনা দিতে পারেন তবে ঢাকনায় জমা পানি যেন ফ্রাই প্যানে না পড়ে’
‘এই মেয়ে শুন তুমি করেছ আভেন বেক আর আমাকে বলছো পানিতে আলু সিদ্ধ করতে, তেলে বেগুন ভাজতে, কেন?’
মহিলার গলাটা অভিমানী শুনালো। এশা দরদ মাখা কণ্ঠে বললো
‘আহা শুনুন তো আগে, এবার বেকিং ডিশে অলিভ অয়েল মাখিয়ে এক একটা আইটেম পরত পরত করে সাজান। প্রতি পরতে কাঁচামরিচ ও স্প্রিং অনিয়ন কুচি ছিটিয়ে তার উপর সামান্য মোজারেলা চীজ ছড়িয়ে দিন। এভাবে আলু-বেগুন-মাশরুমের স্তরে স্তরে চীজ, কুচানো কাঁচা মরিচ পিয়াজ পাতা দিয়ে সাজিয়ে আভেনে ২৫/৩০ মিনিট বেক করে নিলেই হবে।’
‘ঠিক লিখেছি কি না শুন’
এশা মন দিয়ে শুনে বললো
‘ঠিকই লিখেছেন; এবার আপনার মিষ্টির রেসিপিটা বলুন দেখি’
‘কিসের রেসিপি?’
‘সেই আপনার তৈরি ছানার বরফি’
মহিলা হেসে নিলেন একচোট। তারপর বললেন, ‘তোমাকে শিখাচ্ছি তবে তুমি কাউকে বলবে না কেমন। দোকানের ছানার মিষ্টি বেলুন দিয়ে আস্তে চেপে পাতলা করে নিয়ে কেটে-ছেঁটে বরফি আকৃতি কর তার উপর কিসমিস ঘিয়ে ভেজে পছন্দমত নকশা করে বরফির টুকরায় চাপ দিয়ে গেঁথে দাও, ব্যাস হয়ে গেল।
এশা বললো, ‘দারুণ বুদ্ধি!’
‘বুঝেছো এসব হচ্ছে বিদেশে অর্জিত বুদ্ধি।’
এশার খুব ভাল লাগলো মহিলার সরলতা। ওর ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ হল একজন মানুষের সৎ ও সরল স্বীকারোক্তি শুনে। ঘটনা এখানেই শেষ হলো না। মহিলা আরও একদিন এশাকে ফোন করে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, ‘জান সেই তোমার শেখানো ভেজেটেবল লাজানিয়ার ডিশ আমার স্বদেশী বিদেশী সব মেহমানরা খুব পছন্দ করেছে। তবে আমার মনে হল মোজারেলা চিজ একটু বেশী রিচ হয়ে গেছে; অন্য চিজ দিয়ে করলে কেমন হয় বল তো?
‘লো ফ্যাট ফেটা চিজ পাতলা করে কেটে সবজির পরতে পরতে দিয়ে উপরে সামান্য মোজারেলা চিজ ছড়িয়ে দিয়ে করা যায়।’
‘ভাল বুদ্ধি দিয়েছো তো! এই খাবারটা ঠাণ্ডা খাওয়া যায় তাই অফিস বা স্কুলে স্যান্ডউইচে দিয়ে নেওয়ার জন্য খুব সুবিধা’
‘আপনি তৈরি করে আমাকে ছবি তুলে পাঠাতে ভুলবেন না’
‘আমিতো এবার বানাবো দু’জনের আন্দাজে’
‘ভালই তো এবার আন্দাজ শেখা হবে আমার।’
কথাটা বলে এশা খুব হাসলো। কারণ আসলেই ও আন্দাজ কথাটার মাথামুণ্ডু বোঝে না। বললে হয় দু’জনের জন্য বানাতে একটা আলু, আধখানা বেগুন, দু’তিনটে মাশরুম ইত্যাদি ইত্যাদি। সন্ধ্যার পর পর টেলিফোনে ছবি হাজির।



এশা ছবিগুলো দেখে মহিলার বুদ্ধির তারিফ না করে পারলো না। এই বেচারির শেখার ক্ষমতা দারুণ। তার বিদেশে অর্জিত বুদ্ধিও চমৎকার।





দিলরুবা শাহানা, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 4-Jun-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far