bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...
রে'জ ‘পাতের পানচালী’
দিলরুবা শাহানা

আমার বাসস্থান থেকে এই সাবার্বের লাইব্রেরীটা খুব কাছে। উন্নত দেশ গুলোর এই একটি সাধারন বৈশিষ্ট খুব ভাল লাগে। প্রায় সব লোকালয় একই রকম। যেমন প্রায় সব পাড়াতে (অন্তত আমার দেখা দেশগুলোর বড় শহরে) একটি পাঠাগার বা লাইব্রেরী, ঔষধালয় বা কেমিস্ট শপ, পোস্টঅফিস ও নিত্য প্রয়োজন মিটাবে এমন কিছু দোকানপাট থাকবেই। এগুলো নিয়েই সাবআর্ব স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আমাদের পাড়া বা সাবার্বটা বেশী বড়ও নয়, পুরানো নয়। এর লাইব্রেরীটাও নতুন ঝক্ঝকে। পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন, বই তো পাওয়া যায়ই আর রয়েছে ক্লাসিক মুভির বেশ ভাল সংগ্রহ, নানা ভাষার ম্যাগাজিনও আছে। গ্রীক, ইতালিয়ান, ক্যাণ্টোনিজ ভাষায় অনেক কিছু পাওয়া যায়। এই পাঠাগারে বাংলাভাষায় বই চোখে পড়েনি।

একদিন দেখি বিখ্যাত পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার বেশকিছু মুভি ডিসপ্লে শেল্ফে। তার আগের সপ্তাহে টিভিতে একটি পুরানো ক্লাসিক মুভির উপর আলোচনা শুনেছিলাম। যে মুভির কথা আমার সহপাঠি আইনজীবী তৌফিকভাই নিউইয়র্ক থেকে টেলিফোনেও একবার বলেছিলেন। সিনেমাটা জাপানি। কুরোসাওয়ার দুটো ডিভিডি নিয়ে ডেস্কে বসা মেয়েটির কাছে গেলাম। চেহারা দেখেই মনে হল একে জিজ্ঞেস করা যায়।
-‘টোকিও স্টোরি’ সিনেমাটা কি আছে তোমাদের কাছে?
কুরোসাওয়া হাতে আর জানতে চাইছি আরেক জাপানী সিনেমার খবর। মেয়েটির মুখ নম্র হাসিতে উজ্জল হল। পরিচালক ওজো (Yasujiro Ozu) ১৯৫৩তে ‘টোকিও স্টোরি’ সিনেমা তৈরী করেন যার বিষয়বস্তু এমন যে এখনও এটি ক্লাসিক সিনেমা হিসেবে আলোচিত হয়। মেয়েটি মহা উৎসাহে ওজোর দুটি সিনেমাও আমাকে খুঁজে এনে দিল। তারপর সে আমাকে হঠাৎই প্রশ্ন করলো
-বাই এনি চান্স তুমি কি বেঙ্গালের
-হ্যা আমি বাঙ্গালী
কুরোসাওয়ার ‘সেভেন সামুরাই’ হাতে নিয়ে বললো
-এর সাথে বেঙ্গালী রে’র খুব বন্ধুত্ব ছিল
-ইয়েস আই নো (হ্যা আমি জানি), তবে সত্যজিৎ রায়ের কোন মুভিতো তোমাদের এখানে দেখছি না
-ইয়েস উই হ্যাভ (হ্যা আমাদের আছে)
বলেই একছুটে গিয়ে ‘পথের পাঁচালী’র ডিভিডি নিয়ে আসলো। আমি অবাক। আনন্দ হল ভীষণ। ‘পথের পাঁচালী’ খুঁজছিলাম তবে ভাল প্রিণ্ট পাই নি। সবচেয়ে ভাল যা, তা হল লাইব্রেরীর সংগ্রহে যে মুভিগুলো থাকে সেগুলোর প্রিণ্ট খুব ভাল হয়ে থাকে।
-রে'জ ‘পাতের পানচালী’ আমার যে কোন সময় বসে দেখতে ভাল লাগে, কুরোসাওয়া বলেছেন পৃথিবীতে বাস করে সত্যজিৎ রায়কে না দেখা চন্দ্রসূর্য না দেখার সামিল!
-হ্যা, আর কুরোসাওয়া সম্পর্কে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলেন কেউ যদি একটা এশিয়ার সিনেমাও দেখে তার ‘সেভেন সামুরাই’ দেখা উচিত।
-আমি জাপানি
-বাহ্ খুব ভাল লাগছে তোমার সাথে পরিচয় হয়ে।

ইয়োশকা আমাদের পাড়ার পাঠাগারের একজন কর্মী। ওর বুকে নেমকার্ডে যদিও ইংরেজীতে লেখা রয়েছে Yasuka তবে দেখলাম সবাই ওকে ডাকছে ইয়োশকা বলে।
ওর সিনেমা সম্পর্কে তথ্যভান্ডার খুব সমৃদ্ধ। ওর সাহায্যে অসাধারণ সব সিনেমা দেখার সুযোগ হল। ইতালীতে বসবাসকারী ইরানিয়ান ছবি পরিচালক আব্বাস কিয়োরস্তামীর (উচ্চ প্রশংসিত ‘টেইস্ট অব চেরী’র নির্মাতা) ‘সার্টিফাইড কপি’ দেখে স্তব্ধ হয়ে একা একা বসে ভাবতে হবে।
‘টোকিও স্টোরি’ অনিন্দ্য সুন্দর একটি সিনেমা যার আবেদন সার্বজনীন, চিরায়ত। ছবিতে বিবৃত বাস্তবতা মানুষকে ব্যথিত করে। ব্যস্ত আধুনিক শহর টোকিওর জীবন। অল্পদিনের জন্য দূর থেকে বেড়াতে আসা মা-বাবাকে আন্তরিক আতিথ্যে গ্রহণ করার সময় হয়না সন্তানদের। ব্যতিক্রম শুধু ঐ দম্পতির যুদ্ধে নিহত পুত্রের বিধবা বউটি।

ইয়োশকার মত স্নিগ্ধ রুচি, উদার চোখে অন্যের ভাল গুণ পর্যবেক্ষণ করার মত মন খুব কম মানুষের আছে। সবচেয়ে বড় কথা ও নিজের কাজকে খুব ভালবাসে, মানুষ যখন ভাললাগা নিয়ে কাজ করে তখন তাতে আলাদা এক মাধুর্য্য যোগ হয়। আমাদের পাড়ার লাইব্রেরীতে ইয়োশকা আছে বলেই ওর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের কারণে জানলাম মেলবোর্ন শহরের কোন লাইব্রেরীতে বাংলা বই আছে আর কোন লাইব্রেরীতে সত্যজিৎ রায়ের সমস্ত মুভির সংগ্রহ রয়েছে। অনেক বই, সিনেমা অন্য লাইব্রেরী থেকেও ইয়োশকা আনিয়ে দিয়েছে। ও সত্যজিতের সিনেমা, পাবলো নেরুদার কবিতা পছন্দ করে। সত্যজিৎ রায়, আকিরা কুরোসাওয়া ও পাবলো নেরুদার মত মানুষেরাই দেশ-জাতি ও রাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে বহু বহু দূরে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাই মেলবোর্নের ছোট্ট এক পাড়ার পাঠাগারের জাপানী কর্মী বাংলাভাষী একজনকে উৎসাহ নিয়ে তাদের কথা বলে ও নিজেও তাদের গল্প শোনে সমান আগ্রহ নিয়ে। চমৎকার সব মানুষের জন্যই আশ্চর্য ঐশ্বর্যময় এইসব ব্যক্তিত্ত্বরা তাদের সৃজনশীলতার সাঁঝি নিয়ে অপেক্ষায়।

আমাদের মত সীমিত সম্পদের দেশেও সুপরিকল্পনা থাকলে ছোটখাটো পাড়াভিত্তিক পাঠাগার গড়া যেতো। বাচ্চাদের জন্য এখানকার পাঠাগারের ‘স্টোরী টাইমের’ মত তাতে ‘এসো বস গল্প শুন’ কর্মসূচী চালু করা যেতো নয় কি? বাংলাদেশে অবশ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ্ আবু সায়ীদ তাঁর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ঢাকা শহরের (আমার দেখা অনুযায়ী) অনেক স্কুলে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরীতে বই পাঠিয়ে বাচ্চাদের বই পড়ার মত আনন্দময় কাজে উৎসাহিত করে আলোকিত হতে উদ্দীপ্ত করছেন।





Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Jan-2014

Coming Events:



Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far