bangla-sydney













আইন ও সমাজ প্রেক্ষিতে পরিবেশ-দূষণ ও ছোটরা / দিলরুবা শাহানা



আগের অংশ


দোকান বাজারে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যাগে পণ্য ঢুকিয়ে দেওয়া হয় না। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই, কুটীর শিল্পের পণ্য তো আছেই এমন কি ময়ূরীর মত দোকানেও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগে দেওয়া হয় না। দরিদ্র ভ্যানওয়ালা কিশোর যেমন বড়ই বা ঝালমুড়ি কাগজের ঠোঙ্গায় দিচ্ছে তেমনি দামী ফল আপেল, আঙ্গুর, কমলা লেবুর দোকানীও সেই কাগজের ঠোঙ্গায়ই ফল ভর্তি করে দিচ্ছে।

স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছোটদের অধিকার ও পরিবেশ বাঁচাতে ছোটদের ভূমিকা
আজ প্রায় সবার জানা এবং যা উপরের আলোচনায় তথ্যসহ উপস্থাপিত যে ক্লাইমেট চেঞ্জ বা জলবায়ু পরিবর্তন শিশুদের নানা ভাবে বিপদগ্রস্ত করে যাচ্ছে। এমন কোন উপায় বা হাতিয়ার আছে কি যা শিশুদের শক্তিশালী করবে? আছে একটি উপায়। সে হাতিয়ার হচ্ছে যে কোন কাজকর্ম যা ছোটদের উপর প্রভাব ফেলে সে বিষয়ে তাদের মতামত শোনার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনি নির্দেশনা। ‘Article 12 of the UN convention on the rights of the child -most widely ratified of all international conventions- states that children have a right to say in decisions that will affect them’.
তিন দশক সময়েরও বেশী আগে ১৯৮৯এ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ একটি ঐতিহাসিক দলিল প্রণয়ন করে যা শিশুদের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে পরিচিত। এ পর্যন্ত যত কনভেনশন জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে সে গুলোর মাঝে সর্বাধিক রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত ও গৃহীত আন্তর্জাতিক আইনগত দলিল হচ্ছে এই কনভেনশন। এই কনভেনশন আপামর বিশ্ব শিশুদের সুযোগ দিয়েছে তার অধিকার বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার ও সকল সদস্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছে কোন রকম পক্ষপাতিত্ব ছাড়া রাষ্ট্রের আওতায় বসবাস করা শিশুদের অধিকার রক্ষা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। দাঙ্গা হাঙ্গামা, নানা খণ্ড যুদ্ধ তো রয়েছেই তার উপর পরিবেশে বিপর্যয়ে শিশুরা সব চেয়ে অসহায় ও ভয়াবহতার শিকার। এই আন্তর্জাতিক দলিল শিশুদের কণ্ঠ তোলার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এবং জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্র গুলোকে সে কণ্ঠ শোনার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে।

ছোটদের নিয়ে, ছোটদের জড়িত করে কাজ করলে তাদের চিন্তা ভাবনা জানা, তাদের কণ্ঠস্বর শোনার সুযোগ হয়। শিশু কিশোরদের সচেতনতা গুরুত্ব পূর্ণ ফলাফল বহন করে। তারই প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেসকো বাচ্চাদের পরিবেশ সচেতন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। এ বিষয়ে বক্তব্য ও দিক নির্দেশনা দিয়েছে। কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে ২০১৭তে ৯ম ওয়ার্ল্ড এ্যানভায়রনমেন্টাল এডুকেশন কংগ্রেসে এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়। (সূত্র:www.iberdrola.com/environment/enviromental-education-for-kids)
ইউনেসকো শিশুদের পরিবেশ শিক্ষার পিছনে চারটি কারণ তুলে ধরেছে

১। ছোটদের পরিবেশ সমস্যা বিষয়ে সচেতন ও বিবেকবান করে তোলা
২। পরিবেশের যত্ন ও মঙ্গলের জন্য ছোটদের আগ্রহ ও ইচ্ছাকে উৎসাহিত করা
৩। পারিপাশ্বির্কতা বা চারপাশের পরিবেশকে জানার ও বোঝার জন্য তাদের সক্ষম করে তোলা বা তাদের ক্ষমতাকে প্রসারিত করা
৪। প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্য, বন্যপ্রাণী, জল-বায়ু-শক্তি বিষয়ে তাদের ইকোলজিক্যাল(পরিবেশের ও প্রাণীকুলের সম্পর্ক) জ্ঞান প্রসার করা

শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় পরিবারে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দু’টি প্রতিষ্ঠানই তার মূল্যবোধ তৈরির পাশাপাশি অভ্যাস ও আচরণের ভিত গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ও রেখে যাচ্ছে। তাই ইউনেসকো পরিবেশ শিক্ষায় ছোটদের জড়িত করার বিষয়টি তুলে এনেছে। তাছাড়া মোট জনসংখ্যায় ছোটদের বা কমবয়সীদের প্রতিনিধিত্ব কম নয়। বাংলাদেশের জনসংখ্যায় ২০১১ সালে ৩২% ছিল ১৪ বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা, তারপর ২০২০ ২৬.৭৫% হচ্ছে ১৪ বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা। (সূত্র:Share of children in total population, Statista.com-stastistices-Bangladesh)।
জনসংখ্যার পঁচিশ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করছে ছোটরা তাদের বাদ দিয়ে নয় বরং তাদের জড়িত করেই পরিবেশ সুস্থ রাখার কাজ শুরু করতে হবে। প্রাথমিক স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ময়লা ফেলার ঝুড়ি বা বিন রেখে বলা হচ্ছে বা বলা হোক কোন ঝুড়িতে চিপস বা বিস্কুট খেয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট ফেলতে হবে আর কোন ঝুড়িতে কলার খোসা ফেলতে হবে। এখানেই শুরু হল তার পরিবেশ শিক্ষা। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ যেখানে সেখানে ফেলা পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনে। নদী নালা শুধু নয় সমুদ্রের পানিতে পলিথিন ও প্লাস্টিক ফেলার কারণে সমুদ্রের ছোটবড় সব প্রাণীর জীবন বিপন্ন আজ। হউক সে প্রাণী বিশাল তিমি বা ছোট্ট হাঁস।
পরিবেশ বিষয়ে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা অর্জন নয় এই শিক্ষাকে নিত্যদিনের কাজে প্রয়োগ করে পরিবেশকে যত্ন করতে শিখতে হবে। পলিথিন-প্লাস্টিক যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট ঝুড়ি বা বিনে ফেলাও হচ্ছে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়া। এই সামান্য তথ্যটি শিশুমনে গেঁথে দিতে পারাটা হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

ছোটদের মাঝে কোন তথ্য, কোন জ্ঞান, কোন নির্দেশনা সঠিকভাবে পৌঁছানো গেলে তার ফল হয় ইতিবাচক। এ বিষয়ে একটি ঘটনা বা কেস স্টাডি উল্লেখ করছি। ব্র্যাক নন-ফর্মাল প্রাইমারী এডুকেশন (এন.এফ.পি.ই) যখন বরিশালে শুরু হয় তারপর কিছুটা সময় পার হলে ওই অঞ্চলে একটি জরীপ চালানো হয়। এটি সংস্থার আভ্যন্তরীণ জরীপ। ব্র্যাকের নানা প্রোগ্রামের উপর এ ধরনের জরীপ ব্র্যাকের মনিটরিং ও ইভাল্যুয়েশন সেল সব সময়ই করে যেতো।। এন.এফ.পি.ইর এই জরীপের মাঝে একটি বিষয় তখন সবার নজরে পড়ে তা হল ডায়রিয়া পীড়িত ওই এলাকায় শিক্ষা কর্মসূচী চালু হওয়ার পর ডায়রিয়ার প্রকোপ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল এন.এফ.পি.ই. কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ওই অঞ্চলে ছোটদের মাঝে নখ কাটার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। নখের ময়লা কলেরা বা ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়ায় সহজে। নখ কাটার সামান্য অভ্যাস নদী-কূলবর্তী জনপদে রোগের প্রকোপও কমিয়ে দিয়েছিল। এমন কি পত্রপত্রিকায়ও সেই সময়ে সে এলাকায় ডায়রিয়ার ব্যাপক বিস্তারের খবর কম দেখা গেছে। উল্লেখ্য যে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচীতে পুঁথিগত বিদ্যা ছাড়াও আচার-আচরণ, শিষ্টতা বিষয়ে প্রতিদিনই কিছু না কিছু বলা হতো।
শিশুরা ও কম বয়সীরা সন্দিহান হয় খুব কম। শিশুরা অপার বিস্ময় নিয়ে ধরাকে ধরতে চায় তাই শিশুকেই দিতে হবে বিশ্বের সুন্দর জিনিসের অধিকার ও তা লালনপালনের সামান্য ভার। তা হতে পারে নিম গাছে হলুদ পাখি, বয়ে যাওয়া নালার মত পানির ধারা।
তাকে যদি বোঝানো যায় ওই নিমগাছ শুধু ছায়া দেবে তা নয় গাছ দেবে অক্সিজেন, আর পাখিটা পোকামাকড় খেয়ে, পোকার কামড় থেকে আমাদের বাঁচাবে। পাখিও থাকবে গাছের উপর, গাছ হবে পাখির আবাসস্থল আর গাছের ছায়া হবে মানুষের বিশ্রাম-স্থল ।
নদীর মত নালাকেও বাঁচাতে হবে। ময়লা ফেলে নালার গতিপথ বন্ধ করা যাবে না। নালার পানি খাওয়া যায় না তবে নালার পানির সাহায্যে তার দু’পাশে ছোট ছোট ঝোপঝাড় গজাবে তা থেকে অক্সিজেন যেমন পাওয়া যাবে তেমনি চারপাশ হবে সবুজ ও স্বস্তিদায়ক।
কম বয়সে কৌতূহল বেশী থাকে এবং চারপাশের নানান বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে অপরিসীম। কারণ বড়দের মত বিশেষ কোন একটা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ(স্পেশালিষ্ট, এক্সপার্ট) হওয়ার জন্য ছোটদের মন তৈরি নয়। এটাই যথার্থ সময় তাদের মনকে পরিবেশ বিষয়ে কৌতূহলী করা, পরিবেশের ভালমন্দ নিয়ে আগ্রহ জাগানো।

নদী বাঁচানোর আন্দোলনের কথা সবাই জানে। তবে নালা নর্দমা রক্ষাও জরুরী এবং তাতে পাড়ার ছোট সোনামণিরা ভূমিকা নেবে। যদি হাজার হাজার শিশুদের নানা মাধ্যমে(স্কুল, টিভি, বিলবোর্ড) যত্রতত্র পলিথিন, প্লাস্টিক ও ময়লা ফেলার ভয়াবহ পরিণাম জানানো হয় তার ফল একদিন না একদিন ধরা দেবে। কোন একদিন এক ছেলেকে মা যখন ময়লার পলিথিন ব্যাগটি বাড়ীর সামনের নর্দমায় ফেলে দিয়ে আসতে বলবেন (যে কাজ প্রায়ই করা হয়) তখনই ঘটবে পরিবেশ সচেতনতার ফলাফল? ছেলেটি বললো বা বলবে ‘না, তা করা যাবে না’। কেন যাবেনা কারণ ওই পলিথিন পানিতে ভাসতে ভাসতে নদী বা সমুদ্রে গিয়ে পড়বে তাতে নদীতে মাছ আর সমুদ্রে মারা যেতে পারে তিমি। হয়তো সব ছোটরা সচেতন ভাবে এই কাজ করবে না। তবে কেউ কেউ তো করবে। পরিবেশ বিষয়ে অতি সাধারণ শিক্ষা সে নিজ জীবনে ও নিজ বাড়ীতে অভ্যাসে পরিণত করবে। এই অভ্যাস করার জন্য তার আলাদা কোন প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে না। এটাই হচ্ছে পরিবেশের প্রতি যত্ন ও ভালবাসা।

ওই ছোট্টদের ছোট্ট পদক্ষেপের ফলাফল আরও কিছু ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। বাচ্চাদের মায়েরা বাড়ীর ময়লা কোথায় ফেলতে পারেন? এটাও চিন্তার বিষয়। মায়েরা তখন সব এক জোট হয়ে সরকারী দপ্তর মিউনিসিপালিটিতে গিয়ে লিখিত দাবী জানাতে পারেন তাদের পাড়ায় ময়লা ফেলার ব্যবস্থা করার জন্য। । হয় কর্তৃপক্ষ ময়লার ডাস্টবিন বানিয়ে দিক যাতে তারা নিত্যদিনের ময়লা ফেলতে পারবে যা সপ্তাহ শেষে মিউনিসিপালিটির গাড়ী এসে সংগ্রহ করবে। বা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ময়লার গাড়ি এসে বাড়ীর সামনে থেকে ময়লা তুলে নিয়ে যাবে। বাড়ীর সামনের নর্দমায় ময়লা ফেলা যাবে না এরকম একটি ঘটনা বাংলাদেশের মফস্বলের শিশুর কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল।
কথা হল কোন বাচ্চাদের পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করা জরুরী। দরিদ্র নাকি ধনী? গ্রামের নাকি শহরের? সব বাচ্চারই পরিবেশ বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার থাকা উচিত। তবে গ্রামের বাচ্চারা প্রকৃতির কোলে বা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকে বলে গাছ পালার মমতা, পানির মায়া তাদের বেশী টানবে। এ বিষয়ে তাদের সহজে

সচেতন করে পরিবেশ রক্ষায় জড়িত করা যায় বা যাবে। শহুরে, বিত্তশালী বাচ্চারা প্রাচুর্যের মাঝে মানুষ হয় বলে সামান্য রাস্তা যেতেও গাড়ী ছাড়া পায়ে হাটতে নারাজ। গাড়ীর তেলের ধূয়া থেকে পরিবেশ বাঁচাতে চাইলে যতদূর সম্ভব পায়ে হাঁটা বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করতে উৎসাহিত করতে হবে। বৈদ্যুতিক বাতি ও যন্ত্রপাতি প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ রাখা। এমন কি মোবাইল ফোনও যতটুকু দরকার ততটুকু সময় চার্জে রাখা।

আরও একটি বিষয় শহর এবং গ্রাম দুই অঞ্চলের বাচ্চাদেরই যে তথ্য জানালে ও অভ্যাস করালে পরিবেশের সুস্থতায় কাজে লাগবে তা হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন। শাকসবজি উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব অন্যদিকে মাংসের সরবরাহকারী পশু-খামার পরিবেশের জন্য মঙ্গল আনে না। বায়ু মিথেন গ্যাস ছড়ায় বাণিজ্যিক ভাবে পরিচালিত বিশাল, বিশাল পশু খামার। (WALL STREET JOURNAL August 8 2019)। সুতরাং মাংসের চেয়ে শাকসবজি খাওয়ার দিকে ঝুঁকলে বা খাওয়ার অভ্যাস করলে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও কমবে।
স্কুলের খেলার মাঠে বা স্কুল সংলগ্ন পার্কে ছোটদের পরিবেশ বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে এবং তার যত্ন করার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার কথাও নানা সংস্থা ও সংগঠন বলে যাচ্ছে। ঘরের বাইরে গেলেই গাছপালা চোখে পড়ে। সে গাছ অক্সিজেন দেয়। অক্সিজেন না হলে কোন প্রাণীই বাঁচে না। গাছ পালা বাঁচানো, অরণ্য জংগল রক্ষা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরী। ছোটদের যদি এটা সঠিক ভাবে বোঝানো যায় তবেই প্রকৃতির তথা মানুষের তথা পরিবেশের উপকার হবে।
যখন গাছের তথা অরণ্যের দেওয়া অক্সিজেনের প্রয়োজন ও উপকারিতার কথা বলা হবে তখনি তাকে গাছ কিভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নিয়ে বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখে তা বলা যাবে। কার্বন এমিসন কি তা বোঝানো যাবে। কি ভাবে কার্বন বাড়ছে তা জানাতে হবে। কলকারখানা, প্লেন, গাড়ী, পশু-খামার সবাই কোন না কোন ভাবে পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখছে। কি ভাবে কার্বন এমিসন কমানো যায় বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে চেষ্টা করছেন। বাচ্চারাও ভাবুক এটা নিয়ে। স্কুলের মাঠের কিনারে বীজ লাগিয়ে গাছের জন্য অপেক্ষা করুক। সে গাছটা বা গাছ গুলো হবে তাদের নিজের গাছ। যে তাদের ছায়া দেবে, অক্সিজেন দেবে এবং তারা যে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রশ্বাসের সময় ছাড়ে গাছ তা টেনে নিয়ে পরিবেশ সুস্থ রাখবে।
কোন গাছ পরিবেশের জন্য ভাল সে তথ্যও তাদের জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হউক।

জাম্বিয়াতে ছোটদের সম্পৃক্ত করে ২০০৮ সালের আগে ইউনিসেফের একটি কার্যক্রম চালানো হয়। Unite4Climate Zambia, UK Unicef Programme থেকে শোনা দু’জন শিশুর কণ্ঠ
‘The fight against climate change requires people to share information and learn from one another’
Luyandao, Youth Climate Ambassador, Zambia

জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর লড়াই বা যুদ্ধে তথ্য বিনিময় ও পরস্পরের কাছ থেকে শেখা একটি উপায় বা পন্থা। আরেকজন জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো বা থামানোর প্রতিনিধির কথা
‘If we know about climate change and we know how to preserve our environment, then as we grow, as we become the leaders of tomorrow, it will be much easier to find lasting solution’
Tendai, Youth Climate Ambassador, Zambia
সতর্ক পর্যবেক্ষণে একটি চমকপ্রদ বিষয় চোখে পড়লো। বিষয়টা হল যে বক্তব্য ২০০৮ এ জাম্বিয়ার কনিষ্ঠ একজন জলবায়ু প্রতিনিধি টেন্ডাই যা বলেছে তাই কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে ২০১৭তে ইউনেসকোর ৯ম ওয়ার্ল্ড এ্যানভায়রনমেন্টাল এডুকেশন কংগ্রেসে গুরুত্বসহ উচ্চারণ করা হয়েছে। ছোটরা সহজ কথা অকপটে বলে ফেলতে পারে। বড়রা বলে গুরু গম্ভীর স্বরে।
বড়রা টেকসই পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে মূল্যবান কথা তো বলছেনই তবে তা সহজ সরল ভাবে বোধগম্য ভাষায় ছোটবড় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো জরুরী। তাই একজন কনিষ্ঠ জলবায়ু প্রতিনিধি সঠিক বলছে যে মানুষের দরকার ‘share information and learn from one another’।
জলবায়ু দূষণ বা পরিবেশ ক্ষতির বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ও এটি প্রতিরোধে সে জ্ঞান প্রয়োগ করায় জড়িত ছোটদের উপরে অন্য আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে জানা গেছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ২০১৭ সালে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক স্কুল থেকে উচ্চ বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বাচ্চাদের নিয়ে করা সমীক্ষা পর্যালোচনা করে। ১৯৯৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অন্যান্য সংস্থা বিষয়টির উপর যত বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা প্রকাশ করেছে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি তার এক শ’টির বেশী সমীক্ষা জরীপ করে দেখে যে এতে বাচ্চাদের ইকোলজিক্যাল আচরণে শতকরা ৮৩ভাগ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং সাথে সাথে সে বাচ্চারা অংক এবং বিজ্ঞানে শতকরা ৯৮ ভাগ উন্নতি করেছে।

এই প্রবন্ধে যে বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে তা সংক্ষেপে বলা যায় পরিবেশ-দূষণ বা জলবায়ুর উষ্ণায়ন, সমাজের সবাই এই পরিবেশ দূষণে বিপন্ন ছোটরাও এর বাইরে নয়। দূষণের জন্য মানুষের পরিচালিত কাজকর্মই দায়ী। মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে তা সংশোধনের জন্য, পরিবেশকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর করার জন্য। ছোটদের মতামত বা কণ্ঠ শোনার বিষয়টিও জরুরী। প্রশ্ন তোলা হয়েছে দূষণ বিষয়ে যা সবার জীবনকেই নানা ভাবে বিপন্ন করছে। প্রস্তাবনা হচ্ছে সবাইকে নিয়ে পরিবেশ রক্ষার কাজে এগিয়ে যেতে হবে। ছোটরা রাষ্ট্রের নায়ক নয়, তারা বিশাল বিশাল কলকারখানার পরিচালকও নয় যে কার্বন এ্যামিসন কমাতে নির্দেশ দেবে। তবে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়াতে ছোটরা ভূমিকা রাখতে পারে।
কিছু কিছু পদক্ষেপ ছোটরা নিজেরা নিতে পারে কিছু পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সমবেত আবেদন করা ও চাপ সৃষ্টি করা

-বায়ু-দূষণ কমানোর লক্ষ্যে গাড়ীর বদলে সাইকেলে যাওয়া, হাটার দূরত্বে গাড়ী না চড়া।
-যত কম বর্জ্য নিক্ষেপ করা যায় তাতে মনোনিবেশ করা বিশেষ করে প্লাস্টিক জাতীয় উচ্ছিষ্ট বা ময়লা
-অক্সিজেন-দায়িনী গাছ লাগানো ও গাছপালার যত্ন করা।
-খাদ্যাভ্যাস বদলালেও বায়ুমণ্ডলে গ্যাসের মাত্রা কমবে তাই মাংসের বদলে শাক-সবজী খাওয়াকে প্রাধান্য দেয়া।
-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশ বাঁচানোর তথ্য সম্বলিত দেয়াল লিখন টাঙ্গানোর চেষ্টা।
-শিক্ষা উপকরণে পরিবেশ শিক্ষা, পরিবেশ রক্ষা বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবী তোলা।
-বায়ুমণ্ডলে কার্বন ও অন্যান্য গ্যাস উদগীরণ কমানোর জন্য ক্যাম্পেইন করা, সব দেশের শিশুদের সম্মিলিত ভাবে স্বাক্ষর সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়া ও স্বাক্ষর-সম্বলিত আবেদন রাষ্ট্র নায়কদের ও জাতিসংঘ বরাবরে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া।

এই প্রবন্ধে কোন তথ্য সংগ্রহে প্রাইমারী ডাটা ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। মূলত: বইপত্র ও ইন্টারনেট সূত্রে এই সময়ে প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য ও জলবায়ুর সাথে সম্পর্কিত বাস্তব জীবনে পর্যবেক্ষিত ঘটনাবলীই উপর এর ভিত্তি।


BIBLIOGRAPHY

1.United Nations Convention on the Rights of the Children, 1989

2.A History of Climate Activities by John W.Zillman, 2009

3.From Stockholm to Kyoto: A Brief History of Climate Change by Peter Jackson,Chief Editor of the Yearbook Unit of the UN department of Public Information, 2018

4.More than 90% of the world’s children breathe toxic air everyday, WHO News release, 29 October 2018, Geneva)

5.COP25, World leaders answer young activists’ cry with a whisper by Andrea Barolini 2019

6.https://www.iberdrola.com/environment/enviromental-education-for-kids

7.https://www.statista.com-statistices-Bangladesh

8.National Geographic Magazine, March, 2019
9.Climate Kids is produced by the Earth Science Communications Team NASA’s Jet Propulsion Laboratory/California Institute of Technology


আগের অংশ







Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Jul-2023

Coming Events: