bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



নুসরাত ও কতিপয় তথাকথিত ধার্মিক
দিলরুবা শাহানা



নুসরাত বাংলাদেশের ফেনী এলাকার সোনাগাজীর মেয়ে। সে ওখানেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছিল। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ দাড়ি-টুপি ও সফেদ জোব্বায় সজ্জিত সিরাজউদ্দৌলা নুসরাতকে কুপ্রস্তাব দেন। প্রস্তাব অনুযায়ী সিরাজের ইচ্ছায় নিজেকে সমর্পণ করলে নুসরাত পরীক্ষার প্রশ্ন আগেভাগেই পাবে বলে সিরাজউদ্দৌলা প্রতিশ্রুতি দেন। পিয়ন দিয়ে নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডাকিয়ে নিয়ে শুধু প্রস্তাব দেওয়া নয় তার শরীর স্পর্শ করতেও বাদ রাখেন নি নুরানি দাড়িধারী নোংরা সিরাজউদ্দৌলা। নুসরাতের পরিবার থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করে। এর ফলে ক্ষিপ্ত সিরাজউদ্দৌলা তার নুন-নিমক খাওয়া চেলাচামুণ্ডা ও আত্মীয়-বান্ধবীদের দিয়ে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন বা পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। যে আগুনে নুসরাতের শরীরের ৭৫%দগ্ধ হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার সুচিকিৎসা শুরু হলেও নুসরাতকে বাঁচানো গেল না।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মানেই আল্লাহওয়ালা একজন সুফি মানুষ হওয়ার কথা নয় কি? সিরাজ দাড়ি রেখে দাড়িকে অপমান করেছেন। ধিক ধিক সিরাজউদ্দৌলা। তার বংশধরগণ কিভাবে পাপী সিরাজউদ্দৌলার গ্লানির বোঝা থেকে বাঁচবেন? তারা বোধহয় হাতজোড় করে কেঁদেকেটে আল্লাহকে সওয়াল করছেন যে হে পরোয়ারদেগার কি কারণে এমন ইবলিশ শয়তানকে আমাদের পরিবারে পাঠালেন?
সব ধর্মেই সিরাজউদ্দৌলার মত নরাধমেরা আছে। তারা অতি চালাক, ধুরন্ধর। তারা জানে ধর্মের জোব্বা গায়ে দিয়ে অকাজ-কুকাজ করা বেশ সুবিধাজনক। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ সমীহ করে ওই সব ধর্মের লেবাসধারীদের। আল্লাহ-ঈশ্বর-গডের প্রতি অনুগত মানুষজন সরল মনে এদের শ্রদ্ধা করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এমন নুরানি জোব্বাধারী, লেবাসধারী ব্যক্তিরা কোন অন্যায় করতে পারে এটা সাধারণ মানুষ ভাবতেই তারা পারে না।
মাদ্রাসা-মক্তব ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গুলো ধর্মীয় পবিত্রতার আবহে আচ্ছাদিত বলেই মানুষের বিশ্বাস। এসব জায়গায় নোংরা কাজ হতে পারে এমনটা মানুষ ভাবতে পারে না। সাহস নিয়ে নুসরাত যখন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার কুকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো, অভিযোগ করলো তখন মাদ্রাসা নামের তথাকথিত পবিত্র প্রতিষ্ঠানের কুৎসিত চেহারা মানুষ দেখতে পেল।
সিরাজউদ্দৌলা একজন ধর্মের লেবাসধারী ধুরন্ধর ছাড়া আর কিছুই নয়। ভুলে গেলে হবে না যে সব ধর্মেই এমন লেবাসধারী আছে। একজন নয় বহু বহুজন অমন মানুষ দেখেছেন এবং বলছেন যে ধর্মের লেবাস ধারণ করলে ওই সব লোকদের সমাজে-সংসারে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। তখন মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা মিশ্রিত সুনজরে থেকে এরা অবলীলায় কুকর্ম চালিয়ে যায়। যে বিষয়টি ভয়ংকর তা হল এদের অনুগামীরা ভাবে এরা যে কাজ করে বা করেছে তা কোনমতেই অন্যায় নয়।

অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথলিক বিশপ কার্ডিনাল জর্জ পেল তেমনি একজন লেবাসধারী ধার্মিক ধুরন্ধর। ভ্যাটিকানের তিন নম্বর শক্তিধর ক্যাথলিক নেতা ও ট্রেজারার ছিলেন জর্জ । তার ধর্মের লেবাসের সাথে বিনয়ী আচার-আচরণের কারণে তিনি ছিলেন জনপ্রিয় ধর্ম যাজক। অস্ট্রেলিয়ার এক সময়ের প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড চারিত্রিক সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। মানুষের চোখে তার চরিত্র ছিল এমনি নিষ্পাপ আর পবিত্র। তবে জর্জ পেল নারী শিকারি ছিলেন না, ছিলেন শিশুশিকারি। ধর্মের জোব্বা পরে তার লালসা মিটিয়েছেন শিশুদের দিয়ে। সব শিশুরাই অসহায়। তাই শিশুরা ভীত বিনীত থাকতো এইসব বক ধার্মিক পাদ্রী-পুরোহিতদের সামনে। শিশুদের কথা কেই বা শুনতে চায় আর শুনলেও বিশ্বাস কেউ করবে কি?
তার কৃত অপরাধের জন্য মেলবোর্নের আদালতে ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯এ ৭৭বছর বয়সে জর্জ পেল ৬বছরের কারাদণ্ড দণ্ডিত হয়েছেন।
কি অবাক কাণ্ড ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিরাজউদ্দৌলা ও জর্জ পেল দুজনের কারোও চেহারায় কোন গ্লানিবোধ নেই।
তারপর যে ধুরন্ধর ধার্মিকের কাহিনী জানলাম সে হরিয়ানার এক আশ্রমের গুরু। মানুষ ভক্তিতে বিগলিত হয়ে তাকে প্রণাম করে, মাথায় তুলে রাখে। সেই আশ্রমের কুমারী মেয়ে বৈশাখী কাউর, যার কথা কবিতায় বর্ণিত হয়েছে, ধর্মগুরু আশ্রমের শ্রদ্ধেয় বাবার ভালবাসার মরণকামড়ে অসহ্য হয়ে আত্মহত্যা করেছিল। চিঠি লিখেছিল বৈশাখী কাউর। গোটা সমাজ আশ্রমের সাধ্বী কুমারীদের পূজা করে। বাবা, কাকা, ভাই শুদ্ধ সব্বাই বৈশাখীর মত কুমারীদের পূজা করে। বৈশাখী জানে সে কুমারী নয়, সে সাধ্বী নয়। প্রতি ২৪দিন পর পর একরাতে বাবার ঘরে ডাক পরে বৈশাখীর। কাকে বলবে, কাকে জানাবে বৈশাখী তার অপমান, তার কুমারিত্ব হরণের লাঞ্ছনার কাহিনী। কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না। মাকে বলতে চেয়েছে। একবার নয় দুই, তিনবার করে। মা থামিয়ে দিয়েছে। বিশ্বাস করেনি। তারপর মার বলেছিল -
“মানিয়ে নে।
যেভাবে শিউলি গাছ মানিয়ে নেয়
শুঁয়োপোকার সঙ্গে।” *

মেনে নেওয়া ও মানিয়ে নেওয়া এ দু’টো কাজই হচ্ছে মেয়েদের প্রধান কর্তব্য।
যদি কোন মেয়ে মানতে না চায়, তখন মানিয়ে নেওয়া হয় কোন কোন মেয়ের পক্ষে মৃত্যুর সামিল।
ধার্মিক ধুরন্ধররা সবচেয়ে অসহায় যারা তাদের ছোবল দেওয়ার জন্য তক্কে তক্কে থাকে। এসব ক্ষেত্রে মেয়েরা আর শিশুরা অসহায়, নিরুপায়।
সমাজ-সংসার, রাষ্ট্র যন্ত্র সবাই যার যার সুবিধা মত মুখ খুলে, পদক্ষেপ নেয়।
বৈশাখী কাউর বলে -
“লোকটাকে যে আপনি বাঁচিয়ে রেখেছেন
আপনি তার ৫ কোটি ভক্তকে
চটাবেন না জানি
ওটা আপনার ভোট।
আপনারা এভিএম মেশিন বানিয়েছেন
সেটা কে চালায়, গণতন্ত্র?
সেটা চালায় রিভলভার
সেটা চালায় আশ্রম
সেটা চালায় বাবা।” *


* সুবোধ সরকারের কবিতার বই “বৈশাখী ও বব ডিলান” থেকে উদ্ধৃত




দিলরুবা শাহানা, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 19-Apr-2019

Coming Events: