মাতৃভাষা মাতৃভাষা তারই জন্য ভালবাসা দিলরুবা শাহানা
২১শে ফেব্রুয়ারি শোক শুধু নয় জয়েরও দিন। শহীদদিবস আজ বিশ্ব জুড়ে মাতৃভাষার জয় গাইছে। ইউনেস্কো ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯এ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে পৃথিবীর সব সব ভাষাকে সম্মান ও গুরুত্ব দিয়েছে। আমরা গর্বে আপ্লুত যে শহীদের আত্মদান বৃথা যায়নি।
শুরু থেকে বাংলাদেশের বাংলাভাষীরা পৃথিবীর যেখানেই বসবাস করছেন না কেন ভাষা দিবসের কথা, ভাষা শহীদদের কথা ভুলেননি। আমাদের চেতনায় রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার ও আরও অনেক নাম না জানা ভাষা-শহীদরা শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় লালিত। আরও একজন কানাডা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামও শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ পাবেন ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণায় উদ্যমী ভূমিকা রাখার জন্য। বাংলাভাষীদের উদ্যোগে পৃথিবীর অনেক শহরে শহীদমিনারও নির্মিত হয়েছে। জাপানের টোকিও তেমনি একটি শহর।
অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পরিষদও মাতৃভাষা দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে, তবে এই ঘোষণার পিছনেও বাংলাদেশীদের রয়েছে উদ্যমে ও ভূমিকা। তাদেরও প্রাপ্য ধন্যবাদ।
মাতৃভাষা সে যে ভাষাই হউক তা প্রচার, প্রসার উন্নতির জন্য সেমিনার-সিমপোজিয়াম, বক্তৃতা- বিবৃতি দিলে কাজ হবে, ভাষার ভিত মজবুত বা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে এমন নয়। জরুরী বিষয় বা কৌশল হল ভাষার প্রয়োগ যত বেশী হবে ভাষা তত বহমান ও জীবন্ত থাকবে।
কোন এক সময়ে বাংলাভাষীরা যারা ইংরেজি জানতেন না ইংল্যান্ড বা বিলাতে গিয়ে রাস্তার নাম, দোকানের সাইনবোর্ড পড়তে পারতেন না। অনেক ঝামেলা ও কষ্ট তাদের করতে হয়েছে। তবে সে সময়েও বাঙ্গালীরা ওই দেশে বাংলায় পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। সময়টা ছিল ১৯১৬, আজ থেকে শতবর্ষ আগে!
ভাষা জানা না থাকায় ব্যাংককের বজ্জাত ড্রাইভারের পাল্লায় পড়ে আমার মতো অনেকেই অর্থ গচ্চা দিয়েছেন জানি। বিশ ভাতের (থাই মুদ্রা) রাস্তা একশ' বিশ ভাত আদায় করে নিয়েছে। যে কোন দেশে গেলে সে দেশের ভাষা একটুখানি হলেও শিখে গেলে ওই রকম খেসারত দিতে হবেনা হয়তো।
তবে বাংলাভাষীরা করেছে আরও মজার কাণ্ড। তারা শুধু বিদেশী ভাষাই রপ্ত করেনি বিদেশের মাটিতে নিজের মাতৃভাষাকেও শক্তপোক্ত করে বসিয়েছে। লন্ডনের ইষ্ট লন্ডন অঞ্চলে দোকানপাটের নামতো বাংলায় লেখা পাবেনই, অবাক কাণ্ড সরকারী রাস্তার নামও বাংলায় লেখা রয়েছে।
একসময়ে যারা ইট রেখে নাকি রাস্তার চিহ্ন রাখতো ইংরেজি না জানার কারণে। আজকের চিত্র ভিন্ন। লন্ডন পাতাল রেলেও আছে বাংলাভাষায় লেখা নির্দেশিকা।
দিলরুবা শাহানা, মেলবোর্ন
|