bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

‘কুড়ি বছর পরে...’
দিলরুবা শাহানা


(নোবেলবিজয়ী ভি এস নাইপল বলেছিলেন আগামীর সাহিত্য লিখিত হবে গে আর লেসবিয়ানদের নিয়ে, কথাটা কিছুটা হলেও সত্য, তাই বোধহয় গে, লেসবিয়ান না হয়েও এর শরাঘাত সহ্য করতে হয় অনেক কে। এই গল্পের সব চরিত্র কাল্পনিক, কেউ মিল খুঁজে পেলে তা কাকতালীয়)


কুড়ি বছর পর। হ্যাঁ কুড়ি বছর পর আমি এই শহরে ফিরে এসেছি। এই আমার শহর যে আমাকে শৈশবে জড়িয়েছিল আদরে। বাল্যের বিস্ময় আমার এই শহর। ছোট্ট সে বয়সে বাবা-মা’র সাথে এই শহরের যেখানেই গেছি মুগ্ধ হয়েছি। তবে কিশোরকালেই এই শহর আমাকে ক্লান্ত করলো। অন্য কিছু দেখতে ইচ্ছা করলো, নতুন জায়গায় যেতে মন চাইলো। এমন ইচ্ছা কারো কারো হয়। হয় নাকি?

এইখানে নিরাপত্তা ছিল, স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, সবচেয়ে বেশী যা ছিল তা হল স্নেহভালোবাসা। তবুও মন নতুন কিছু দেখতে, নতুন কিছু জানতে চাইলো। বাবা-মা তাদের একমাত্র সন্তানকে কাছ ছাড়া করতে কষ্ট পাচ্ছিলেন। এতো ছোটবেলা একা একা পারবে না বলে ভালবাসার জালে আমাকে একুশ বছর জড়িয়ে রাখলেন। আমি বাইরে অস্থিরতা দেখাইনি। তবে ভিতরে ভিতরে দূরের বাঁশী শুনেছি অনবরত।

বিশ বছর পার হল। আমি দূর দেশের বিদ্যাপীঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। মাথায় মেধার অভাব ছিল না। সহজেই নামকরা প্রতিষ্ঠানে ডাক পেলাম। চোখের পানিতে অবিরল আশিষ ঝরিয়ে মা-বাবা আমার বিদায়ের আয়োজন করলেন।

যেদিন যাব সেদিনটি ছিল আমার একুশ-তম জন্মদিন। এমনিতে আমি ভোরের পাখী। আমার বাবা বলতেন আমি কবি নজরুলের সকালবেলার পাখী। তবে জ্ঞান-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে জন্মদিনে ঘুম ভাঙ্গলেও আমি ঘাপটি মেরে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকি। কিছু মিষ্টি মধুর চমকের অপেক্ষায় প্রহর কাটে। মা এসে আমার কপালে চুমু দিয়ে তারপর হাতের তর্জনী দিয়ে কিছু ঐ কপালেই লিখে দেন। হয়তো হৃদয় নিংড়ানো কোন আশির্বানী। মজার ব্যাপার হল বাবা খুব ভুলো মনা। আর যেহেতু লোক দেখানোর জন্য কোন কিছুই আমাদের ধাতে সয়না তাই বাবার ভুলো মনা অভ্যাস রাখঢাকেরও অহেতুক চেষ্টা নেই। তবুও মা’র মনে করিয়ে দেওয়ার কারণে বাবা কিছু না কিছু উপহার আগে ভাগেই কিনে রাখেন। বই, কলম, পোষ্টার কতকিছু। একবার জন্মদিনে বাবা আমাকে To Kill A Mocking Bird বইটি উপহার দিয়েছিলেন। পরে কোন এক বছর কিনে আনলেন ঐ বই নিয়ে তৈরি সিনেমার ডিভিডি। তবে বাবার কাছ থেকে জন্মদিনে পাওয়া আমার সবচেয়ে প্রিয় উপহার হল ক্যানভাসে আঁকা রবিঠাকুর ও চে গুয়েভারার মুখ । তবে এ নিয়ে মজার ঘটনা ঘটেছিল। পোষ্টার দুটো যেবার কিনে আনেন সেবার কিনে এনে কোথায় যে রেখেছেন তা ভুলে গেলেন বাবা। নাস্তার টেবিলে দুঃখিত স্বরে শুধু বার বার বলছিলেন -

‘তোমার জন্য খুব সুন্দর জিনিস এনেছি তবে কোথায় যে রেখেছি ভুলে গেছি’

আমি আর মা খুব হেসেছিলাম। মা বলেছিলেন

‘ভুলে দোকানেই ফেলে আসনি তো?’

বাবাও বিব্রত হাসি হাসছিলেন। একমাস পর পুরানো কাগজ ফেলতে গিয়ে মা পোষ্টার দুটো খুঁজে পান। আমি হারানো মানিক খুঁজে পাওয়ার মত আনন্দে ভেসেছিলাম। আরেকবার কিছু একটা কিনে ভুলে কোথায় যেন ফেলে এসেছিলেন তা আর কখনোই পাওয়া যায়নি। ঐবার বাবা সকালেই বাগান থেকে এক থোকা চন্দ্রমল্লিকা তুলে এনে আমার নাস্তার প্লেটের পাশে রেখে লাজুক হাসি হেসেছিলেন।

একুশ বছরের জন্মদিন ছিল বিষণ্ণ। মা আগের মতোই আমার কপালে ঠেঁট ছোঁয়ালেন, নতুন চমক ছিল সেই সাথে। তার চোখ থেকে টপ টপ করে উষ্ণ দুই ফোঁটা পানিও পড়লো আমার কপালে। ঐদিনও মা তর্জনী দিয়ে অনেকটা সময় নিয়ে বেশ বড়সড় কোন শুভেচ্ছা অথবা দোয়া আমার কপালে লিখলেন। অনেক দিন বা অনেক বছর পর সন্তান বিচ্ছেদের নিখাদ বেদনায় সৃজিত মায়ের ঐ চোখের পানির সারমর্ম ধরতে পারি কবির কথাগুলো পড়ে 'The hardest substance of the purest pain' । কবি টেড হিউর স্ত্রী কবি সিলভিয়া প্লাথ ২৯বছর বয়সে আত্মহত্যা করে মারা যাওয়ার পর তাদের তিনবছরের ছেলের চোখে পানি দেখে টেড হিউ এটি লিখেছিলেন।

ঐদিন আরও এক বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। বাবা জন্মদিনের উপহার কোন কিছুই কিনে আনেন নি। ভেবে নিয়েছি মা বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন নি। সকালে নাস্তার টেবিলে আমার মাথায় হাত রেখে বাবা শুধু বললেন -

‘বড় হও, মহৎ হও’

অন্যদিন হলে মা হয়তো বা ঠাট্টার ছলে বাবাকে অপ্রস্তুত করে মজা করতেন। আজ তার কিছুই ঘটলো না।

আমাদের সকালেই রওয়ানা হতে হবে কারণ সকালের ফ্লাইট আমার। বিষাদের বিষয় হল এমনি এক দিনে আমার মা-বাবা এই দুইজন মানুষ আমাকে দারুণ খুশীতে এই পৃথিবীতে বরন করেছিলেন আর আজ এমনি দিনে তারা গভীর ব্যথা বুকে চেপে আমাকে বিদায় জানাতে চলেছেন।

যাওয়ার জন্য বাইরের দরজা খুলেই অবাক। বেশ বড় এক ফুলের তোড়া তার সাথে লাগানো এক কার্ড। একুশ-তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে নামহীন কেউ। আমি বাবার দিকে তাকালাম। বাবার চোখেও বিস্ময়। আমাদের তাড়া ছিল তাই তোড়া রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা বাদ দিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। গাড়ীতে বসার পর মা সবকিছু ঠিকমত তোলা হয়েছে কি না দেখলেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন -

‘ব্যাগ খুলে দেখ টিকেট, পাসপোর্ট, ট্রাভেলার্স চেক, নগদ টাকা সব ঠিক মত রেখেছ কি না?’

মায়ের কথা শুনে আমি লক্ষীর মত এক এক করে সব দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বললাম -

‘সব ঠিকঠাক মত আছে মা’

মা বাবাকে বললেন -

‘এবার তা হলে চল’।

গাড়ী চলতে শুরু করলো। আমি ফুলের তোড়ায় আটকানো কার্ডটা নিয়ে এসেছি। ওটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছি। হাতে লেখা নয়। ফুলের দোকানের নিজস্ব কার্ড। ওদেরই ছাপানো তবে শৈল্পিক কায়দায় লিখিত ক’টি কথা।

আমি কার্ড থেকে চোখ তুলে বাবার দিকে তাকালাম। বাবার গম্ভীর বিষণ্ণ অবয়ব। চোখদুটি রাস্তায় নিবদ্ধ। গাড়ীর ভিতরের কঠিন নৈশব্দ ভেঙ্গে আমি বলে উঠলাম -

‘বাবা তুমি এটা করেছ তাই না?’

আমাদের বিস্মিত করে বাবা কঠিন গলায় বললেন -

‘না’।

হঠাৎ করে মা আমাকে বললেন -

‘তুমি আন্দাজ করতে পার না কে পাঠাতে পারে?’

‘আমি জানি না মা, তুমি বলতো কে হতে পারে?’

‘মাথায় আসছে না।’

এরপর আর এ নিয়ে কথা হলনা। তবে আমি নিশ্চিত ভেবে নিলাম বাবাই একাজ করেছেন। মা আমাকে পরে বলেছেন যে ঐ মুহূর্তে উনিও ভেবেছিলেন যে আমি জানি কে পাঠিয়েছে বা পাঠাতে পারে।

দূরদেশ যাত্রায় আমি উৎসাহী, উদগ্রীব। বাবা-মা ব্যথিত হলেও পরবর্তীতে আমার সাফল্যে কিছুটা হলেও গর্বিত তাঁরা দু'জনে।

তারপরের ইতিহাস সুখ-সাফল্য ও আনন্দ-বিষাদে মিশানো। পড়াশুনা সাফল্যের সাথে এগিয়েছে। মা-বাবা আমাকে নানা বিষয়ে সতর্ক করেছেন, উপদেশ দিয়েছেন আবার উৎসাহ দিতেও কার্পণ্য করেন নি। ছুটিছাটাতে বাবা-মা মহাসাগর পার হয়ে আমার কাছে যেতেন। তাদের নিয়ে ইউরোপের অনেক দেশ ঘুরেছি, অনেক নতুন নতুন জিনিস দেখেছি। আমার উচ্চশিক্ষার শেষে ভাল চাকরী পেলাম, অর্থ, সম্মান দুইই ধরা দিল। যা পেলাম না তা হল বাবা-মার সান্নিধ্য। তারা তাদের নিজস্ব জায়গা, সখের আবাস ছেড়ে আসতে চাইলেন না। আমার নানা লোভনীয় প্রস্তাবও তাদের টলাতে পারলোনা। বেড়াতে এসেছেন মাত্র। তারা দু’জনেই আমাকে ঘরসংসার নিয়ে গুছিয়ে বসার জন্য উৎসাহিত করছিলেন। আমি হাসির ছলে বলতাম -

‘জান মা আমার জন্য কেউ আগ্রহী নয়, আমার অপেক্ষায় কেউ নেই’

‘কে বললো নেই! প্রতি বছর জন্মদিনে তবে ফুল কেন পাঠায়?’

আমি দুষ্টামি করে হেসে বলেছিলাম -

‘তুমি তো জান কে ফুল পাঠায়’

মা অসহায় ভাবে বলেছিলেন -

‘সত্যিই জানি না, তবে আমার মনে হয় তুমি জান, তাইনা?’

মায়ের জিজ্ঞাসু অথচ ব্যথিত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি উত্তর দিতে গিয়েও থেমে গেলাম।
আমার মনে হয় ফুল পাঠানোর এই খেলাটা বাবা খেলছে আর মায়ের ধারনা আমি জানি কে ফুল পাঠাচ্ছে।

আরেকবার বেড়াতে এসে মা অনেক দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে বললেন -

‘এবার বিয়ে-টিয়ে কর; মানুষের নানা কথা আর সহ্য হয়না’

‘মা আমিতো খারাপ কিছু করিনি; করছিও না শুধু বিয়েটাই এখনও হয়নি তবুও মানুষ আজেবাজে কথা বলে!’

‘হ্যাঁ বলে, অনেক কথা বলে, কেউ কেউ বলে তোমার ওরিয়েণ্টেশন নাকি ভিন্ন।’

‘ ওরিয়েণ্টেশন!’

আমি স্তব্ধ। ব্যথিত ও বাক্হীন রইলাম। আমার মা-বাবাকে আমার ওরিয়েণ্টেশন নিয়ে মনগড়া বিশ্রী কথা শুনাতেও ছাড়েনা কেউ কেউ। মা লজ্জায় আমাকে বলতে পারেন নি যে তারা আমাকে গে বা লেসবিয়ান বলে তকমা এঁটে দিয়েছে। এই সব কিম্ভুত কথা শুনে-টুনে আমার ফেলে আসা নিজের শহরে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছাটাও ধীরে ধীরে কোন এক সময়ে মরে গেল। কোনদিন কাউকে বলা হয়নি যে একটি হৃদয়ের উচ্ছ্বাস যে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে ছিল উদগ্রীব সে নদীই ছিল বেপথু।

আজ কুড়ি বছর পরে ফিরেছি এখানে। তবে সখ করে নয়। খুব অল্পদিনের ব্যবধানে আমার মা বাবা চলে গেলেন। এমন দেশে গেলেন যেখান থেকে আর ফেরা যায়না। মা গিয়েছেন মাত্র দিন চারেক আগে। মায়ের নিথর প্রাণহীন অবয়ব দেখার জন্য আমার ভাগ্য আমাকে এখানে ফিরিয়ে এনেছে। গতকাল মায়ের জন্য আমার এখানে দোয়া প্রার্থনা হল। মায়ের পরিচিত বন্ধুবান্ধবরাই সব করলেন। এই ক’দিন সকালবিকাল কেউ না কেউ এসেছেন। আজ আমি একা। গতকাল প্রায় সবাই বলে গেছেন প্রয়োজন হলে তাদের যেন ডাকি। আজকের দিনটি উজ্জ্বল। এমন ঝকঝকে সোনালী দিনে আমি একা বসে বসে ভাবছি। আমাকে এখানকার ঘরদুয়ার, বিষয়সম্পত্তি বিলিব্যবস্থা করে যেতে হবে। বসে থাকলে চলবে না। তৈরি হয়ে বাইরে পা রাখতেই বিস্ময়ে অভিভূত হলাম। দরজার বাইরে ফুলের তোড়া তাতে আটকানো কার্ডে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। মনে পড়লো আজ আমার জন্মদিন।

ভয় লাগলো। খুব ভয়। বাবাতো বেঁচে নেই কে তবে এই লুকোচুরি খেলছে? আমি সবসময় ভেবেছি এটা বাবাই করছে। রহস্য ভাঙ্গার জন্য ফুলের দোকানে রওয়ানা হলাম। কার্ডটাতে ঠিকানা রয়েছে। দোকানে গিয়ে এইটুকুই জানলাম যে ফুলের দামটা ব্যাংক থেকে দোকানের ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। বহু বছর ধরে এমন নির্দেশনা পেয়ে ওরা ফুল পাঠিয়ে যাচ্ছে। অনেক অনুনয়বিনয় করে ব্যাংকের ঠিকানা জোগাড় করে ব্যাংকে পৌঁছলাম। আমার ভাগ্য সদয় ছিল বলেই হয়তো ঐ ব্যাংকের ম্যানেজার একসময়ে ছিল আমার সহপাঠী বন্ধু। আমার অদ্ভুত রহস্যময় গল্প শুনে সে এ্যাকাউণ্ট হোল্ডারের নাম, ঠিকানা সব দিয়েই সাহায্য করলো। বিস্মিত হলাম জেনে যে একাজ বাবার নয়। যে পাঠাচ্ছে সে হচ্ছে আমার অনেক প্রত্যাশার ধন সেই বেপথু নদী। ব্যাংক ম্যানেজার আরেক তথ্য দিয়ে খটকা লাগলো মনে। গত দশ এগারো বছরের মাঝে এই এ্যাকাউণ্ট থেকে এইদিনে ফুলের দোকানে টাকা শোধ ছাড়া অন্য কোন লেনদেন কখনোই আর হয়নি। গল্পের শেষ শুনতে বা রহস্যের জাল ভাঙ্গতে ব্যাংক ম্যানেজার বন্ধু আমাকে তাগাদা দিল -

‘যাও তাড়াতাড়ি, দেখ এর সঙ্গেই তোমার জীবন শেষ পর্যন্ত বাঁধা পড়ে কিনা!’

ব্যাংক থেকে বের হয়ে দেখি হাল্কা মেঘ সূর্যকে ঢেকে দিয়েছে। দিন কেমন নিষ্প্রভ হয়ে আসছে। আমার কাঁধে ঝুলছে ব্যাগ আর একহাতে ফুলের তোড়া, অন্য হাতে বড় কাগজে ব্যাংক ম্যানেজারের নিজ হাতে লিখে দেওয়া নাম, ঠিকানা এমন কি এ্যাকাউণ্ট নম্বরটাও। ট্যাক্সি নিয়ে ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য ছুটলাম। ট্যাক্সিতে বসে ফুলগুলোর দিকে নজর পড়লো। দিনটা আরও মেঘলা করেছে সাথে সাথে ফুলগুলোও কেমন নেতিয়ে যাচ্ছে। ট্যাক্সিচালক বললো -

‘ঐ জায়গাটাতে অনেক বছর পরে যাচ্ছি’

‘কেন?’

মনে হল যেন দ্বিধা নিয়ে বললো -

‘কেন তা বলতে পারবো না।’

আমি আকাশে তাকালাম। কি আশ্চর্য ছেড়া ছেড়া কালোমেঘ একসাথে দলা বাঁধছে। রোদালো দিন কি তাড়াতাড়ি মেঘের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেল। ট্যাক্সি থামার ঝাঁকুনিতে চেতন ফিরলো। দেখি এটা একটা সেমিট্রি। কি বিশাল তার গেট।

জানতে চাইলাম -

‘এখানে কেন?’

‘এটাইতো সেই জায়গা, বলেছিলাম না বহুবছর এদিকে আসা হয়নি। আসিনি বলেই জানতাম না আবাসিক এলাকা গুড়িয়ে কবে সেমিট্রি তৈরি হয়েছে!’

চালকের কণ্ঠেও বিস্ময়।

‘এখানে যারা থাকতো তারা সব গেল কই?’

‘সেমিট্রির কেয়ারটেকারদের গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারা যাবে।’

আমি ট্যাক্সি থেকে নামতেই দেখি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমার সুতির জ্যাকেটটির হুডি ছিল। হুডি তুলে মাথা ঢাকলাম। তবে বৃষ্টি খুব হালকা। দ্রুত গেট পার হয়ে দূরে সাদা একতলা দালানবাড়ির দিকে পা চালালাম। মনে হল বৃষ্টি থেমে গেছে। হুডিটা কাগজধরা হাতটা দিয়েই মাথা থেকে নামালাম। সেকেন্ডও লাগেনি। তখনি দেখি কেউ একজন বা দিকের কবরের সারির মাঝ দিয়ে হেঁটে এসে আমার সামনের রাস্তায় উঠলো। ওমা এ দেখি আমার দিকেই আসছে। দৃষ্টির সীমানায় যখন আসলো খেয়াল করে দেখি দেখি মাথায় হ্যাট ও পোশাক তার জরাজীর্ণ , বয়স তার সুঠাম দেহ-ভঙ্গিমাকে শাসন করে জবুথুবু করে দিয়েছে। ছাইরঙা প্যান্ট ও চেক চেক ঢলঢলা কোটের ভিতর রোগা পাতলা শরীরটা নিতান্ত কষ্টে যেন আগাচ্ছে। আমি আগ বাড়িয়ে ভয় তাড়ানোর জন্য কথা শুরু করলাম -

‘এখানে যারা আগে ছিল তারা কোথায়?’

লোকটি তার কোঠরে বসা তবে ভীষণ চকচকে গোলগোল চোখে চেয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো -

‘কার কথা বলছো কি নাম তার?’

আমি কাগজ দেখে নামটা বলতে যেই যাব অমনি সে আমার হাত থেকে ওটা নিয়ে পড়েই বললো

‘ঐ যে বা দিকের রাস্তায় নেমে বা দিকের তিন নম্বর কবরটা এর’

আমি কাগজটা নিয়ে ভূতগ্রস্তের মতো হেঁটে বাঁদিকের দুইসারি কবরের মাঝে সরু রাস্তায় পা রাখলাম। একটু থমকালাম। এখান থেকেই লোকটি সদর রাস্তায় উঠেছিল কি? পিছন ফিরে লোকটিকে দেখতে চাইলাম। কেউ নেই। এতো তাড়াতাড়ি গেটের বাইরে চলে গেল কিভাবে? আমি তিন নম্বর কবর দেখতে পাচ্ছি। কোন নাম লেখা নাই। ব্যাংক এ্যাকাউণ্ট নম্বরের শেষ তিনটা সংখ্যা বাঁধানো কবরের এক কোনায় লেখা। কবরের মাথার দিকে শ্বেত মর্মর পাথরে খোদাই করে লেখা 'After twenty years…' ।

'দখিনা প্রয়াস ২০১৪ তে প্রকাশিত






Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Sep-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far