bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



গল্পকনিকা
দিলরুবা শাহানা




কুসুমের জন্য ঈদ এলোনা

রাত তিনটা। আগামীকাল ঈদ। কুসুম চার নম্বর সড়কের বাড়ীর বাইরে পা রাখলো। কামিজে পুঁতি-চুমকি বসানোর কাজ সারতেই রাত গভীর। সুফী ও আরজু এগিয়ে দিচ্ছে ওকে। কুসুম স্বামীকে বলেছিল রাত বারোটা বাজতে পারে। এতো রাত হওয়াতে ভয় পাচ্ছে। যদিও মানুষ ভাল স্বামী। সেলাইয়ের কাজ করতে করতেই তার চোখ যাওয়ার পথে। এখন কাজও বন্ধ। কুসুম প্রাণপণ খাটছে। আজকের রাতের উপার্জন দিয়ে স্বামীকে ভাল চোখের ডাক্তার দেখাতে পারবে। ভীষণ ক্লান্ত শ্রান্ত কুসুমকে এই ভাবনা একটু স্বস্তি দিল। বাড়ী পৌঁছে ঘণ্টা-খানেক ঘুমিয়ে নিয়ে উঠেই সিঁড়ি ধুয়ে ফেলবে। নামাজে যাওয়ার আগেই সিঁড়ি সাফসুতরা থাকা চাই মালকিনের নির্দেশ।

দুই বাচ্চাকে ঈদের গোসল করিয়ে নতুন জামা পরাবে। নতুন জুতা কিনতে পারে নি। কুসুম বছরে একদিনই মাংস রান্না করে। সে এই ঈদের দিনে। আদা-রশুন খালাম্মার কাছ থেকে চেয়ে আনবে।

এদিকে বড় বাড়ির গেটের কাছে খুপড়ি ঘরে ঘুমহীন স্বামী। রাত একটা পর্যন্ত কুসুমের জন্য বুক উথাল-পাথাল করেছে। তারপর এক ঘণ্টা দূর্ভাবনায় নির্জীব ছিল। বাচ্চা দুটোকে ঘুমন্ত রেখে কুসুমকে আনতে যাওয়ার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। শান্ত ভাল মানুষটির মাথা গরম হতে শুরু করলো। কু-চিন্তা রাগের মাঝে ঘি ঢাললো।

গেটে মৃদু খুটখাট শব্দ। রাগে জ্ঞানহীন স্বামী গেটতো খুললোই না উপরন্তু নীচু গলায় যে অশ্লীল শব্দাবলী উগরে দিল তাতে কুসুমের কালা হয়ে যেতে ইচ্ছা হল। কুসুমের ভালমানুষ স্বামী আজ পাগল হয়ে গেছে। কান্না জড়ানো গলায় বার বার কাকুতিমিনতি করলো।
-গেইটটা খুলোনা রনির বাবা! পায়ে ধরি; পায়ে ধরিগো তোমার!
-বিদায় হও, কুত্তি বদমাশ কোনহানের
-দেখ দেখ কত্ত টাকা! তোমার চোখ ভাল ডাক্তাররে দেহান যাবানে রনির বাপ!
-চুপ চুপ নষ্ট মাইয়াছাইলা; তোমার টাকায় আমি থুতু দেই; থুহ্ থুহ্
-চোখ ভাল হলি তুমিই কাজ করবানে; আমারে আর কাজে যাতি হবিনানে!
-তোমার টাকাও চাইনা তোমারেও চাইনা বুঝলা। তালাক দিলাম। তালাক তা....
-দোহাই তোমার রনির বাবা থাম থাম!

ওই ভোররাতে কুসুমের স্বামী থামেনি। তালাকের বজ্রাঘাতেও কুসুম মরেনি। ঈদের নামাজগামী মানুষ দেখলো ট্রাকের তলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দিয়েছে এক নারী।



পলাতক

নিউইয়র্ক শহরে সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ। ম্যানহাটনের ১১৬নং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এখান থেকে ৭২নং ম্যানহাটনে হোটেলে ফিরতে হবে। ট্যাক্সি করে ফিরবে ভাবছে। সাউথ আফ্রিকার ফর্সা এ্যালেন, কালো সারাফিনা ও দুধ মেশানো কফি-রঙ্গা অন্য আরেকজন। ট্যাক্সি দাড়াতেই ওরা উঠে পড়লো। কফি-রঙ্গা অন্যজন ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলো। কথা হল সামান্যই। সারাফিনারা মাঝপথেই নেমে যাবে।
‘তোমরা টুরিস্ট?’
‘আমরা বিদেশী; কনফারেন্সে এসেছি’
‘জানি এশিয়া-আফ্রিকা-আমেরিকা সব মহাদেশ থেকেই?’
‘কি করে জানলে?’
‘দু'দিন ধরে যাত্রী তুলছি এখানে তাই; তা তোমরা?’
‘আমরা সাউথ আফ্রিকা থেকে’
‘আমি এশিয়ার বাংলাদেশ থেকে’
‘বাংলাদেশ!’
উচ্চারণের সাথে সাথে বিস্মিত চালক তার দিকে চকিতে তাকালো।
‘কেন চেনো কাউকে?’
চালকের গলায় দ্বিধা।
‘ন্ নাহ্ ঠিক তা নয়’
চালকের দিকে অন্যজন ভাল করে তাকিয়েও দেখলো না। ট্যাক্সি থামলো। সারাফিনা ও এ্যালেন ওদের ভাগের যা ভাড়া সে পয়সা অন্যজনের হাতে দিয়ে নেমে গেল। ট্যাক্সি চলতে শুরু করলো। কিছুদূর গিয়েই হঠাৎ আবার ট্যাক্সি থামলো। চালক দ্রুত দরজা খুলে নামতে নামতে বললো, ‘Just a second, I’ll be back soon’

অপেক্ষা করতে করতে সে গাড়ীর ড্যাসবোর্ডে রাখা ছবিসহ চালকের পরিচিতি দেখতে পেল। ঝুঁকে পড়ে দেখলো। একে কোথাও দেখেছে কি? এবার আগ্রহ নিয়ে নামটা পড়লো।
ব্যথাহত মন নীরব আর্তনাদে ভেঙ্গে পড়লো,

‘আরে এতো সেই! আশ্চর্য কেন সে রইলো না আমাদের জীবনে? তার সাথে প্রথমদিন স্কুলে যাওয়া হতো, কলেজে ভর্তির ফর্ম তুলতে যেতাম। আরও আরও অনেক কিছু করা যেতো। মায়ের ছুটি মিলতো না সহজে তাই পাশের বাড়ীর পাতানো নানু ছিল আমার সাথী। একা একা কত কাজ করতে হয়েছে। মায়ের কাছে উধাও বাবার গল্প শুনেছি, ছবিই দেখেছি। কেন সে চলে গেল? কি করেছিলাম আমি? কষ্ট দিয়ে কিছু কি বলেছি কখনো? আমারতো কথাই ফুটেনি তখন! কষ্ট দেব কি...’
গাড়ীর জানলায় টোকা পড়লো। পুলিশ দাঁড়ানো। স্বগতঃ কথন থেমে গেল। কাচ নামালো।
‘এটা গাড়ী থামানোর জায়গা নয়, নেমে আস, গাড়ী টো করে নেবে’

তাড়তাড়ি গাড়ী থেকে নেমে এলো সে। ট্যাক্সি চালকের চলে যাওয়া পথের দিকে চেয়ে ভাবলো সে ফিরছে না কেন এখনো!



দিলরুবা শাহানা, মেলবোর্ন





Share on Facebook               Home Page             Published on: 26-Jun-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far