bangla-sydney












বিলাইসিম: ন্যাচারাল এ্যান্টি ওয়ারফেয়ার
দিলরুবা শাহানা



বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার এই কথাটা কমবেশি সবারই মোটামুটি জানা। এটি একটি যুদ্ধাস্ত্র এবং ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র। তবে এখানকার ঘটনা অন্য। এটাও ওয়ারফেয়ার নিয়েই তবে এটি প্রকৃতিজাত এবং জানতে পারলাম এর ব্যবহার হবে অন্য খাতে। শোনা যাক ঘটনাটা কি।

ছেলেটির বয়স বেশী নয়। সে একটি বিশেষ স্কুলে যায়। যে স্কুলে শুধুমাত্র গিফ্টেড বা অসাধারণ মেধাবী বাচ্চারা যেতে পারে। এই কাহিনীর ছেলেটিও অসাধারণ মেধাবী। মা-বাবা নাম রেখেছে আদান।ওর স্কুলের নিয়মকানুন অন্যসব স্কুলের মতো নয়। এগার কি বারোতে পা দেওয়া ছেলেটিকে প্রতিদিন স্কুলেও যেতে হয় না। স্কুলের কাজকর্ম অর্থাৎ লেখাপড়া শেষ করতে তার সময় বেশী লাগে না। তার স্কুলে শিক্ষকরাও বাঁধাধরা নিয়মে আসেন না। তারা কেউ বিশেষ স্কুলের সার্বক্ষণিক শিক্ষক নন। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে মেধাবী ও গুণীজনেরা আদানদের মতো বাচ্চাদের সাথে গালগল্প করে, মত বিনিময় করে নিজেদের জন্য নতুন কিছু ভাবার উপাদান নিয়ে যান যেমন, তেমনি বাচ্চাদের মাঝেও নতুন নতুন চিন্তা উসকে দিয়ে যান। এই বাচ্চাদের মাথায় অসাধারণ সব বিষয় ধরা দেয়। পৃথিবীর জ্ঞানী, গুণীরা ওই সব ভাবনা বা সৃজনশীল চিন্তা নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন।

আদান গতকাল স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে সেই যে কি চিন্তায় ডুবে আছে কেউ জানে না। রাতে মা এসে মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিয়ে গিয়েছিল বলেই তার পেটে কিছু পড়েছিল। তারপর তার আর কিছু খাওয়াও হয়নি, ঘুমও আসেনি। রাত কেটে নতুন দিনের শুরু তবু ওর কোন নড়াচড়া নেই। মা একবার সকালে এসে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করেছিল
-কি ব্যাপার, নড়বে না আজকে? নাশতা পানি কিছু খাবে না?
আদান হাত ইশারায় মাকে চলে যেতে বললো। আবার বিকাল চারটার দিকে মা এসে যখন দরজা খুলবে বলে হাত ছুঁইয়েছে দরজায় অমনি মনে হল আপনা আপনি খুলে গেল দরজাটা। দরজায় আদান দাঁড়ানো। গোল মুখ, চোখে মোটা কাচের গোল চশমা। কদম ফুলের মত মাথার চুল নিয়ে মনে হচ্ছে সে কিছু জানার জন্য দাড়িয়ে আছে।
মা জানতে চাইলো
-খাবে না? ক্ষুধা পায়নি?
-খাবো, ক্ষুধাও পেয়েছে। তবে আগে কিছু জানতে চাই।
-আচ্ছা খেতে খেতেও কথাগুলো বলতে পার ঠিক আছে।
টেবিলে বসে খাওয়া শুরুর আগেই আদানের প্রশ্ন
-আচ্ছা মা তুমি বলেছিলে তোমাদের দেশে নাহ মানে আমাদের দেশে বিলাইসিম নামে একটা জিনিস গাছে ধরে
-ওটাতো খাওয়ার জিনিস না
-তাতো তুমি বলেছো। ওটা গায়ে লাগলে গা চুলকাতে থাকে তাই না
-হ্যাঁ, তো এখন বিলাইসিম দিয়ে কি হবে?
-বলছি পরে। আরেকটা কথা শোন গতকাল একটা খবর পড়েছো?
-কি খবর? যুদ্ধের?
-না ঠিক তা নয় তবে এটাকে যুদ্ধের কাজে লাগানো যাবে মনে হয়। খবরে জানলাম ফ্রান্সে ছারপোকা ছেয়ে গেছে। বাড়িঘর, বিছানা-বালিশে তো আছেই এছাড়াও অফিস, আদালত, ট্রাম, বাস এমন কি সিনেমা হলের সিটেও ছারপোকা। মানুষ ছারপোকার কামড়ে অস্থির।
-ইয়া আল্লাহ এতো ছারপোকা কোথা থেকে ফ্রান্সে আসলো!
-খবরে বলেছে ফরাসীরা ভাবছে গত টুরিস্ট সিজনে কয়েক লক্ষ টুরিস্ট গিয়েছিল ওই দেশে বেড়াতে তাদের সুটকেস-ব্যাগ সবকিছুতে করে ছারপোকারাও গিয়ে হাজির। ফরাসীরা ছারপোকা শেষ করতে ফ্রান্স বিরাট বিশাল এক লড়াইয়ে নেমেছে
-তুমি বিলাইসিম ছারপোকা এসব নিয়ে কথা বলছো, বিষয়টা বুঝিয়ে বলতো।
ছেলেকে নিয়ে সব সময়ই একটু চিন্তায় থাকে রায়া। যতসব আজগুবি আর উদ্ভট সব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে কখনো কখনো। ভাবেও কিছু অদ্ভুত বিষয় নিয়ে। কবে কখন বিলাইসিমের গল্প ছেলেকে শুনিয়েছিল রায়ার নিজেরই মনে নেই। এই জিনিস গাছে ধরে। দেখতে সিমের মত তবে লোমশ। গায়ে নরম হুল আছে। শুকিয়ে গেলে ভেতরের বিচি বা দানাগুলো ভেঙ্গে গুড়া গুড়া পাউডারের মত পাওয়া যায়। ওই গুড়া পাউডার হাতে, পায়ে, গায়ে লাগলে আর রক্ষা নাই। এমন চুলকানো শুরু হয় যে হাতদু’টো অনবরত ব্যস্ত থাকে চুলকানোতে। কিছুক্ষণের জন্য জীবনের সব কাজ বাদ দিয়ে চুলকানোতে পাগলপারা অবস্থা হয় মানুষের। আর ছারপোকা যদি বালিশ-বিছানায় বাসা বাধে তবে সেও এক অন্তহীন দুর্গতি। রায়ার নিজের দেশে ছারপোকা তাড়ানোর জন্য ঘরদুয়ার বিছানা-বালিশ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। লেপ-কাঁথা রোদে দিতে হয়। তারপরও ছারপোকা যাতে না হয় গদি ও তোষকের নীচে পাতাসহ নিমের ডাল রাখা হয় এবং চাদরের তলায় ন্যাপথলিন, বালিশের কভারের ভিতর ন্যাপথলিন দিয়ে রাখলে ছারপোকার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। ফরাসীরা এতো কিছুর খবর কি জানে? নিমপাতার ব্যবহার ওরা জানবে কি করে এটাতে রায়ার দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থেকে পাওয়া যা একান্তই ট্র্যাডিশনাল ইন্ডেজিনিয়াস নলেজ। ফরাসীরা তো অতশত জানেনা ওরা কীটনাশক কেমিক্যাল স্প্রে করে ছারপোকা মারবে তাতে পরিবেশের ক্ষতি, মানুষের স্বাস্থ্যেরও কত ক্ষতি হতে পারে কে জানে।
-আচ্ছা মা
ছেলের কথায় বাস্তবে ফিরলো রায়া।
-হ্যাঁ কি বলছো শুনি?
-ভাবছি কি বিলাইসিম আর ছারপোকাকে যুদ্ধের কাজে লাগানো যায় কিনা?
আতংক নিয়ে রায়া বললো
-শোন যুদ্ধ করার জন্য হাইড্রোজেন বোমা, এ্যাটম বোমা, কেমিক্যাল বোমা কত কিছু আছে আর নতুন করে কোন যুদ্ধাস্ত্র বানানোর কোন দরকার হবে না বাবা।
- নাহ মা যুদ্ধ বাড়ানোর জন্য নয়, যুদ্ধ থামানোর জন্য, কমানোর জন্য এই প্রাকৃতিক জিনিসগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে।
বলেই কি এক গভীর চিন্তায় তলিয়ে গেল আদান।

সেই অতি বুদ্ধিমান আদান আমাকে ফোন করলো। ওর জিজ্ঞাসা বিলাইসিম বিষয়ে আমি ওকে কি কি জানাতে পারি। আমি একটু বুঝি কম। তবে বুদ্ধিমান মানুষের কথাবার্তা শুনতে বরাবর ভালবাসি। যেমন আদান তাদের একজন। আমি জানি আদান খুব বুদ্ধি রাখে। যদিও সে বয়সে খুব ছোট। তবে এইটুকু বয়সে সূর্য শক্তি মানে সোলার পাওয়ার ধরে বা কব্জা করে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করেছে। ওর বাবা এই মুহূর্তে মিশর নাকি সিরিয়াতে কাজে আছেন। ওখানে এখন যুদ্ধ চলছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনদের মধ্যেও চলছে ভয়াবহ যুদ্ধ। আদানের বাবা ভদ্রলোক টেকনোক্র্যাট, কারিগরি বিদ্যায় দক্ষ যাকে বলে। কি কাজে ওখানে কে জানে। মা ওর স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষিকা। ছেলেটির কল্পনার শক্তি ও ব্যাপ্তি অসাধারণ যা শুনতে আমি খুব আগ্রহী। আসলে আমি গল্প শুনতে খুব পছন্দ করি। আমি জীবনে কখনো বিলাইসিম দেখিনি। তবে বিলাইসিমের গল্প শুনেছি। মজার সব দুষ্টামির গল্প এগুলো। এই অসাধারণ বুদ্ধিমান, নম্র, ভদ্র ছেলেটি বিলাইসিম দিয়ে কি করবে ভাবছি, ভেবেই যাচ্ছি। তবে মনে মনে ঠিক করলাম আমি ওর জন্য বিলাইসিম বিষয়ে খোঁজখবর নেব, তথ্য জোগাড় করবো। কেন তথ্য জোগাড় করবো জানি না। তবে আমি যুদ্ধ পছন্দ করিনা এবং আমার গভীর প্রত্যয় বেশীর ভাগ মানুষ যুদ্ধ পছন্দ করে না। আমার আগ্রহ শুধু জানার আদান বিলাইসিম দিয়ে কি করে যেন যুদ্ধ থামাতে বা কমাতে চায়।

বিলাইসিম নিয়ে যখন তথ্য জোগাড়ে উদ্যোগী হলাম, তখন বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ শুরু করলাম দেখলাম বেশীর ভাগ পরিচিত বন্ধুজন ও আত্মীয়স্বজন এমন নাম কখনো শোনেননি। একজন বললেন
-বিলাই নামটা মনে হয় বিল্লি বা বিড়াল থেকে এসেছে তাইনা? তুমি বলছো গাছে ধরে, আমার তো মনে হয় এটা কোন প্রাণী থেকে এসেছে
-আমার ধারনা সিম জিনিসটা তো গাছে ধরে; মনে হয় গাছ থেকেই আসতে পারে।

তথ্য জোগাড়ের চেষ্টায় কত ইমেইল, কত টেলিফোন করা হল তার কোন হিসাব নাই। একজন মাত্র খুব কম সময়ে ইন্টারনেট ঘেটে তথ্য পাঠালেন। তা থেকে যা জানা গেল তা হল বিলাইসিম আসলে গাছে ধরে। সিমের মত দেখতে জিনিসটা। পোশাকি নাম আলকুশি তবে একে বিলাই খামচিও বলা হয়। অবশ্যই এতে হুল আছে এবং মানুষের চামড়ায় লাগলে ভয়াবহ চুলকানি শুরু হয়। এই সিমকে ইংরেজিতে বলে ভেলভেট বীন।

তথ্য পেয়ে আদানদের বাড়ী যাই। ছবিসহ ওকে বিলাইসিম বা বিলাই খামচি সম্বন্ধে সব খবর বিস্তারিত বলি। খুব মনোযোগ দিয়ে সব সে শুনলো। তারপর গভীর এক শ্বাস ফেলে আদান বললো
-নাহ মনে হয় ছারপোকা নিয়ে ন্যাচারাল ওয়ারফেয়ার বানানোর চেয়ে বিলাইসিম নিয়েই আমি কাজ শুরু করবো, এটা অনেক কাজে লাগবে।
আমি আর আদানের মা একসঙ্গে বলে উঠলাম
-কি কাজ করবে তুমি বিলাই খামচি বা বিলাইসিম দিয়ে?
-যুদ্ধের সময়েই এটা কাজে লাগাতে হবে
-দেখ যুদ্ধ পৃথিবীকে টালমাটাল করে দিয়েছে, অনেক মানুষ মরছে, বাচ্চারাও রেহাই পাচ্ছে না, প্রচুর সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, অগুনতি মানুষ গৃহহীন হয়ে দেশ ছাড়া আবারও কেন যুদ্ধাস্ত্র বানানোর কথা বলছো?
-এটা যুদ্ধের গতি থমকে দেবে কোভিড যেমন পৃথিবীকে ঘর-বন্দী করে ফেলেছিল
-কোভিডে অনেক অনেক মানুষ মারাও গিয়েছিল
-আর ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রচুর মুনাফা বানিয়েছিল। আমার এই ন্যাচারাল ওয়ারফেয়ার যুদ্ধকে নির্মূল করতে পারবে না হয়তো তবে যুদ্ধের গতি থমকে দেবে।
-কোন পক্ষ এই ওয়ারফেয়ার কাজে লাগাবে?
-কোন পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে এটা কাজে লাগাতে পারবে বলে তৈরি হচ্ছে না। এটা তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে শান্তি চায়।
-এই ন্যাচারাল ওয়ারফেয়ার ব্যবহারের জন্য মানুষ মানে সৈন্যসামন্ত লাগবে তো, নাকি? তা তুমি পাবে কোথায় বলতো?
-এখন টেকনোলজি এতো এগিয়ে গেছে মানুষ ছাড়াই এই অস্ত্র কাজে লাগানো যাবে।
আমরা শুনে হতভম্ব। পরে ওর মা জানালো আদান খুব শক্তিশালী ছোট ছোট ড্রোন বানিয়েছে। যেগুলো মৌমাছির সমান, এই মৌমাছি সোলার পাওয়ার বা সৌরশক্তিতে চলে। আমি অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম আদান হয়তো ওর বানানো ড্রোন দিয়ে ওর ওয়ারফেয়ার ব্যবহার করবে।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম
-আচ্ছা আদান তোমার মৌমাছি ড্রোন কিভাবে বুঝবে কার গায়ে বিলাইসিম ছিটাতে হবে?
ও আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলো
-তুমি সত্যজিৎ রায়ের কম্পিউটার বা রোবট মানব অনুকুলের গল্পটা পড়েছো নিশ্চয়।
আমার উত্তর
-হ্যাঁ পড়েছি, দারুণ মজার গল্প!
-ওই গল্পে অনুকুল নখ দিয়ে বৈদ্যুতিক শক করে একজনকে মেরে ফেলেছিল তার মনিবের সম্পত্তির অধিকার রক্ষার জন্য। অনুকুলের মনিব ওকে এটা করতে বলেনি, শিখিয়েও দেয়নি। ও নিজে নিজেই অনুভব করেছিল ওই কাজ করলে তার মনিবের স্বার্থ রক্ষা হবে। আমার মৌমাছি ড্রোন সেন্স করতে পারবে কাকে বিলাইসিম দিয়ে আক্রমণ করলে যুদ্ধের গতি থমকে যাবে বুঝলে।

আদান যে গল্পের কথা বললো তা কিছুটা মনে পড়লো। রোবটের গল্প। শহরের দোকানে মানুষের মত অবিকল রোবট বিক্রি হচ্ছে ও ভাড়া দেওয়া হচ্ছে শুনে নিকুঞ্জ বাবু রোবটটি ভাড়া করে আনলেন তার ঘরের কাজকর্ম করানোর জন্য। অবিবাহিত নিকুঞ্জ বাবুর সংসারে কাজই তেমন কি। একটি আঠারো কি কুড়ি বছর বয়সী ছেলের মত দেখতে রোবটটি শান্ত, ভদ্র, খাওয়া, ঘুম কোন কিছুই তার লাগে না। তবে ওকে খেপালে সে আঙ্গুলের নখ দিয়ে হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দিতে পারে। বিক্রেতা এই বলে সাবধান করে দিয়েছিল।
ভাবছি বহুবছর আগে সত্যজিৎ রায় রোবট সৃষ্টি করলেন গৃহকর্ম করানোর জন্য আর বর্তমানের বুদ্ধিমান আদান মৌমাছি আকৃতি ড্রোন বানাতে পেরেছে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে স্বস্তি পেলাম শুনে যে ওর মৌমাছি ড্রোনগুলোকে গৃহকর্মের চেয়ে আরও বড় মঙ্গলজনক কোন কাজে ব্যবহার করা হবে।
রায়া আর আমি কল্পনায় দেখলাম যুদ্ধের ট্যাংক ছুটে যাচ্ছে হঠাৎ বেলুন বা পেটে লুকানো বিলাইসিম নিয়ে ছোট্ট মৌমাছি ড্রোন ট্যাংক চালকের কপালে ঠুস করে পড়লো।
তাতেই কম্মকাবার। বিলাই খামচি চালকের কপালে, চোখে ও সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। তার শুরু হলো মারাত্মক চুলকানি। শত্রুকে মারা, তাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার কথা মাথায় উঠলো। গা চুলকানোতে ব্যস্ত হয়ে রইলো ট্যাংক চালক। সেনা ছাউনিতে হঠাৎ করে অসংখ্য মৌমাছি উড়তে উড়তে হাজির। তারপরই শুরু হল অদ্ভুত ঘটনা। সৈন্যরা যুদ্ধে যাবে কি তারা সৈনিকের উর্দি খুলে ছুড়ে ফেলে দিল শরীর চুলকানোর জন্য। বৈমানিক যুদ্ধ বিমানে উঠতে যাচ্ছে তক্ষুনি কোত্থেকে মৌমাছি উড়ে এসে তার কপালে, চোখে বসলো। তাতে বৈমানিকের বাপের নাম ভুলে যাওয়ার অবস্থা।
আবার এমনও হতে পারে যুদ্ধবাজ বড় বড় নেতারা আরও কিভাবে যুদ্ধকে জিইয়ে রাখা যায় ও অস্ত্র বেচার জন্য যুদ্ধ কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। মৌমাছি ছোট্ট যন্ত্র তার পিঠে বয়ে বা তার পেটে নিয়ে বিলাইসিম ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল নেতাদের উপর। নেতারা চুলকানোর যন্ত্রণায় অস্থির। ভুলে গেলেন কি নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। যুদ্ধ এভাবেও কিছু সময়ের জন্য হলেও থমকে যাবে। যেতেই পারে।
তখন হয়তো পৃথিবী জুড়ে চুলকানোর কারণ ও উৎস খুঁজতে নেতারা সব ঝাঁপিয়ে পড়বে। মৌমাছি মারার জন্য সবাই ছুটবে। অবাক কাণ্ড মৌমাছি তো মরছে না! মরবে কি করে ওরা তো প্রাণী নয়। যার প্রাণ নেই তার প্রাণ সংহার করা যাবে কি করে। তারপর যা হয় দেখা যাবে। আমাদের কল্পনার দৌড় এইটুকুই।

আদান কি ভাবে বিলাইসিম বা বিলাই খামচিকে যুদ্ধের গতিরোধে কাজে লাগায় তার অপেক্ষায় রইলাম।



* ধন্যবাদ তপুর প্রাপ্য যে নিউইয়র্কে বসে মিনিট কয়েকের মাঝে বিলাইসিম বা বিলাই খামচির ছবিসহ তথ্য জোগাড় করেছে।



দিলরুবা শাহানা, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 18-May-2024

Coming Events: