“আমাকে কেন?” দিলরুবা শাহানা
এমন ঘটেই থাকে। টেলিফোনে মেসেজ সবার কাছেই আসে। অনেক মেসেজ হয়তো পড়া হয়না, চোখ এড়িয়ে যায়। তবে আমি যে মেসেজটার কথা বলছি তা হয়তো আমার মতো অনেকেই পেয়েছেন। না পড়ে থাকলে এক অসাধারণ উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত হতে হবে, হয়তো অনেক অপ্রাপ্তির মালিন্যও মুছে যেতে পারে, প্রাপ্তিগুলো বেশী করে সমাদৃত হতে পারে। এই বার্তা মানুষের বোধের জগতকে ঝাঁকুনি অবশ্যই দেবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
বার্তাটি হল আর্থার এ্যাশের। প্রশ্ন আসবে কে আর্থার এ্যাশ? তার কথা কি এমন গুরুত্বপূর্ণ? কেনই বা কথাগুলো শুনতে হবে?
আর্থার এ্যাশ যেনতেন মানুষ নন। স্বনামধন্য টেনিস খেলোয়াড়। আর্থারই প্রথম আফ্রো-আমেরিকান যে উইমবলডন কাপসহ অন্যান্য গ্রান্ডস্ল্যামও জিতেছিলেন। এখন যেমন সেরেনা উইলিয়াম ও ভেনাস উইলিয়াম টেনিসের মাঠ তুমুল দাপটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তখন দেশ-কাল-সামাজিক পরিবেশ আফ্রো-আমেরিকান মানুষের অনুকূলে ছিলনা। মাত্র নয় বছর বয়সে মাকে হারান আর্থার। তারপরও তার বাবা সমস্ত প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে আর্থারকে টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে গড়ে তুলেন। আর্থার ১৯৮০ সাল থেকে খেলাতে সক্রিয় ছিলেন না। সে সময় থেকেই অসুস্থতা গ্রাস করে। হৃদযন্ত্রে দু’দুবার অপারেশন করাতে হয়। অপারেশনের সময়ে ১৯৮৩তে আর্থারকে যে রক্ত দেওয়া হয় তা থেকেই তার এইচআইভি সংক্রমণ হয়।
আর্থার এ্যাশ এই অদ্ভুত অসুখের কারণে ম্রিয়মাণ ও অস্বস্তিতে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার দেশ তাকে সম্মানিত করে। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আমেরিকার সর্ব্বোচ্চ সম্মাননা প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম প্রদান করেন। জাতিসংঘে ভাষণ দেন। জাতিসংঘের হয়ে মানুষকে সচেতন করে এই বার্তা ছড়িয়ে দেন যে এইডস শুধুমাত্র যথেচ্ছা জীবন যাপনের কারণেই হয় তা নয়।
সুহৃদ ভক্তরা অনেকেই চিঠি লিখতো আর্থার এ্যাশকে। তেমনি এক ভক্ত চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘কেন স্রষ্টা এই বাজে অসুখটি দেওয়ার জন্য তোমাকে নির্বাচিত করলেন?’
উত্তরে আর্থার লিখলেন:
“৫০ মিলিয়ন শিশু টেনিস খেলতে শুরু করে। ৫ মিলিয়ন টেনিস খেলার প্রশিক্ষণ পায়। ৫০০,০০০ পেশাদার খেলোয়াড় হওয়ার প্রশিক্ষণ পায়। ৫০,০০০ পেশাদার বৃত্তে আসে। ৫০০০ গ্রান্ডস্ল্যাম পর্যন্ত আসে। ৫০জন উইমবলডন পর্যন্ত পৌঁছায়। ৪জন পৌঁছায় সেমিফাইনালে। ২জন পৌঁছায় ফাইনালে। সেই ২জনের মাঝে আমিই উইমবলডন কাপ জিতে হাতে নিলাম। তখনতো আমি স্রষ্টার কাছে জানতে চাইনি আমাকে কেন? তো আজ যখন আমি অসুস্থ, ব্যথায় জর্জরিত আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি আমাকে কেন?
সুখ আমাদের মাধুর্যময় করে। ঘাত-সংঘাত করে সবল-শক্তিমান। দুঃখ-বেদনা আমাদের মানবিক করে গড়ে। ব্যর্থতা আমাদের নম্র-বিনয়ী করে তুলে। সাফল্য আমাদের উজ্জ্বল করে। কিন্তু একমাত্র বিশ্বাসই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়। কখনো কখনো তুমি তোমার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট নও তখনও পৃথিবীর বহুলোক তোমার মত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখে। খামারে দাঁড়ানো শিশু মাথার উপর উড়ে যাওয়া বিমানে চড়ার স্বপ্নে বিভোর আর বিমানচালক খামার দেখে ঘরে ফেরার স্বপ্নে ব্যাকুল হয়। এইই হচ্ছে জীবন! তোমার জীবন উপভোগ কর... যদি সম্পদই সুখের রহস্য হতো তবেতো ধনীদের রাস্তায় নৃত্য করা উচিত কিন্তু শুধুমাত্র গরীব শিশুরাই তা করে। যদি ক্ষমতাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো তবেতো ক্ষমতাবানদের প্রহরী বা বডি-গার্ড ছাড়া ঘোরাফেরা করার কথা। কিন্তু যাদের জীবনযাপন সাধারণ তারাই শান্তিতে ঘুমায়। যদি সৌন্দর্য আর খ্যাতি নিবির-গভীর আদর্শ সম্পর্কের চাবিকাঠি হত তবে সেলিব্রেটিদের বিয়ে হতো শ্রেষ্ঠ বিয়ে। সাধারণ জীবনযাপন কর, সুখী থাক! বিনম্র হয়ে চল, ভালবাসো খাঁটি হৃদয়ে।”
দিলরুবা শাহানা, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
|