bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

রমতা যোগীর পদাবলী (৫)
ডালিয়া নিলুফার


শুনেছি সাধুদের আশীর্বাদ এবং অভিশাপ দুটোই মারাত্মক। অন্তত: সাধারণ মানুষজন তাই মনে করে। সাধু শিক্ষিত হোক না হোক, ভালো হোক না হোক, বিদ্বান আর বুঝদার মানুষ তবু জ্ঞান বুদ্ধির জন্যে সাধুর শরণাপন্ন হয়। বিত্তবান হলেও তারা ভরসা করে সাধুর পরামর্শের উপর। ওদিকে সাধু সন্ন্যাসীদের যত অভাব আর যত কষ্টই থাক, কোন কিছুর জন্যেই সহজে তাদের সাধারণ মানুষের দ্বারস্থ হতে হয়না। পার্থক্য হলো এই।

বেশ ক’বছর আগের কথা। একবার এক আত্মীয়ার চাপে পড়ে যেতে হয়েছিল এক সাধুর আস্তানায়। কি বলব, যেতে যে চেয়েছি, তা না। দেখতেও চাইনি। কিন্তু দেখতে আমাকে হয়েছিল।
পুরনো শহরের অন্ধি সন্ধির মাঝখানে এক প্রাচীন দালান। সাতজন্মে খুঁজে পাওয়া যায়না। সেই দালান জড়িয়ে অদ্ভুতভাবে উঠে গেছে এক বটগাছ । শিকড় দিয়ে সে তার নিজের কোমরের সাথে প্রায় পেঁচিয়ে না ধরলে এই দালান কবে পড়ে ভেঙ্গে যেত কেজানে। সরু, খাড়া সিঁড়ি। তার উপর আধা অন্ধকার। ভয়ে ভয়ে উঠছি। উঠতে উঠতেই কিলবিল করে কানে ঢুকল বিস্তর গালিগালাজ। গলা চড়িয়ে কে যেন জীবন ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। কার, তা বোঝা গেলনা । গালাগালির মাঝখানে ঝনাৎ করে একটা কাঁসার বাটি না কি যেন আছড়ে পড়ল। সেই কানফাটা আওয়াজে বাচ্চা ছেলে চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল একটা। মনে হয় ভয়ে। আন্দাজ করলাম ততক্ষণে মারামারি নয়ত ঐরকমই কিছু একটা বেঁধে গেছে ভিতরে। কিছু না, শ্রোতার সহ্যের সীমা ছাড়ালে যা হয়। আর উঠতে ইচ্ছে করলনা। দেখি, প্রাইভেসিতো দূর, ভদ্রতাই অচল এখানে। সাধুর ডেরা এমন হবে কে জানত! অবশ্য সাধুরা যে দালানে থাকে সে কথাই কি জানতাম? এত চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সত্যি কথা কি আমার আর যেতেই ইচ্ছে করলনা। উল্টো হাটা দেব ভাবছি। আমার আত্মীয়াটি কি বুঝলেন জানিনা, চোখ দিয়ে ইশারা করলেন উপরে উঠে যেতে। না পেরে উঠলাম।

তিনতলায় এসে থেমেছি। সরু বারান্দা ঘেঁষে একটা ঘর। ঘরের মধ্যে সামান্য আলো, যা না থাকলেই ভালো হোত। কেননা সেই এক বিন্দু আলো ঘরের মধ্যে জড়ো করেছিল অখণ্ড অন্ধকার। পুরনো আস্তর খসে যাওয়া দেয়াল। তবু সেই দেয়াল বুকে আগলে রেখেছে কয়েকটা ছবি। মা কালীর একটা। গুরু নানকের একটা। এই দুজন ছাড়া বাকীদের সঠিক চিনতে পারলামনা। সবারই স্থির চোখ। গম্ভীর দৃষ্টি। কালচে কালচে, আধা অন্ধকার ঘরের মধ্যে কেমন যেন অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে তারা সবাই। একপাশে জ্বলছে ধুপ। সাধু মাটির উপর পাটি পেতে বসে। গায়ে কাপড় বলতেই কম। শুনেছি শিবের অনুসারী হলে সাধুরা গায়ে তেমন একটা কাপড় রাখেনা। যা পরে, তাও সেলাই ছাড়া। এই সাধু কি শিবের ভক্ত? তার মাথায় ঢাই করা শক্ত জটা নেই। সর্বাঙ্গে ছাই মাখা নেই। কিরকম সাধু তবে? শুকনো পাকানো দড়ির মত সাধুর গা। খরখরে চোখের মধ্যে অদ্ভুত চাহনি। তার সামনে রাখা জলচৌকিতে নানা সরঞ্জাম। ছোট ছোট মাটির খোরা। তেলের বোতল। পানির বোতল। গাছগাছড়া। মরা ডাল। এটা সেটা। সরঞ্জাম না ঠিক। এ হোল ‘উপায়’। ‘পড়া তেলটা, পানিটা - সবকিছুর মধ্যেই মিশে আছে সাধুর দেয়া অব্যর্থ উপায়। কারো কারো জন্যে শেষ চেষ্টা। অবাক হয়ে দেখছি। কখন এত গোছায়?
দেখলাম একজন মাঝবয়সী লোক সাধুর কাছে বসে আছে। দরকার মত এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। সাধুর দেখাশোনা যা করার বোধহয় সেই করে। একটু পর সেই মাঝবয়সী লোকটা থালায় করে কি কি যেন খাবার নিয়ে আসল। সাধু সেই থালা নিয়ে সোজা গেল দেয়ালে টানানো ছবিগুলির সামনে। আর প্রত্যেকের সামনে যেয়ে যেয়ে সেই খাবারের থালা ধরে বিনা জিজ্ঞাসায় খাবার সাধতে লাগল। দেখলাম কেউ দেয়াল থেকে নেমে আসলোনা। শব্দ করলোনা। এমনকি কেউ কিছু খেলওনা। খাবারের সেই থালা যেমন ছিল তেমনি থাকল। একটু পর থালা হাতে সাধু আবার নিজের জায়গায় এসে বসল। যেন তাদের সবার খাওয়া শেষ করেই তবে এসেছে। বিশ্বাস বিশ্বাসের জায়গায় থাকল। আর ঘর ভরা মানুষের সামনে নিঃশব্দে ঘটে গেল এক অদ্ভুত কল্প-চিত্র। যাহোক আশ্চর্য হতে আমার আরও বাকী ছিল। সেকথায় পরে আসছি।

মাঝারী ধরনের ঘরটার মধ্যে ভয়, ভক্তি, উদ্বেগ আর আশা নিয়ে ছুটে আসা মানুষের ভিড়। দেখে মনে হলো এদের মধ্যে মেয়েই বেশী। সকলেই প্রায় মধ্যবিত্ত ঘরের। গরীব মানুষজনও আছে। সাধারণ এবং উপায়হীন। এদের মধ্যে দু’একজন মাটিতে মাথা ঠুকে দিচ্ছে। উপায় চেয়ে। উদ্ধার চেয়ে। শুধু যে বিপদ মুক্তির জন্যে, তা নয়। কারো কারো আছে আবদার। পদন্নোতির। বিয়োগ এবং বিচ্ছেদের মত নিষ্ঠুর কিছুর। সাধু নিবিষ্ট মনে শুনছে। আবার ধমকে উঠছে। এরমধ্যে ভদ্র কাপড়চোপড় পরা দু ’একজন সাহেব ধরনের মানুষও দেখলাম। তারা বোধহয় বড় চাকুরে। বিত্তবান। আসলে বিপদগ্রস্ত মানুষের ধারাই এই। কি যে বিশ্বাস করবে, কাকে যে বিশ্বাস করবে আর কেনই বা করবে, বলা মুশকিল। কি বলব, বিশ্বাসের বেলায় শিক্ষিত অশিক্ষিতের কোন ফারাক নেই। টাকাওয়ালা, বড় চাকুরে, কিংবা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, সব কেমন জানি এক হয়ে যায়। উপায় পেতে তখন তারা করতে পারেনা এমন কাজ নেই।
একটু পরেই দেখি, দীর্ঘদেহী সেই সাহেব ধরনের মানুষটা সাধুর কাছে উঠে গেল। পুরনো বন্ধুর মত একেবারে সাধুর গা ঘেঁষে বসল। সাধু নরম করে হাসল। এমন করে তাকাল যেন কতকালের আপন! সাধুদের কি বন্ধু থাকে? প্রাণের মানুষ বলে থাকে কিছু ? কিজানি! সাধু হাতে একটা টুকরো কাগজ নিল। পুরনো। ময়লা। তার উপর দাগ কেটে কেটে কি কি যেন লিখল আর গলার স্বর নামিয়ে কি যেন বোঝাল এই সাহেব ধরনের মানুষটাকে। বোঝা গেলনা। তাদের নিচু স্বরের কথাবার্তা শোনাও গেলনা কিছু।

এতক্ষণ দেখিনি, এইবার দেখলাম সাহেব তার শার্টের ভিতর থেকে বের করে আনলো লম্বা রুপোর একটা চেইন। তাতে ঝুলানো বেশ বড়সড় মাপের একটা তাবিজ। তাবিজে টপ করে চুমুও খেলেন একটা। এর আগেও চেনা অচেনা মানুষের গলায় তাবিজ দেখেছি । তবে সত্যি কথা কি, ওরকম চুমু খেতে দেখিনি কাউকে। কি আছে ওর মধ্যে যে মানুষ অমন করে চুমু খায়? বিশ্বাস? নাকি তার চেয়ে বড় কিছু? লম্বা সরু চেইনে গাঁথা একটা রুপোলী রং এর তাবিজ। খাঁটি রুপোর হবে নিশ্চয়ই!! এদের কি আর যা তা জিনিস দেবে কেউ! এর মধ্যে যে কোন ক্ষমতা ভরা আছে কেজানে। কার উত্থান, কার পতন, কার সর্বনাশ লেখা হয়ে গেছে, সেইসব অন্যায্য ইতিহাস কি কেউ জানবে কোনদিন? মানুষ তার সাথে কত কি বয়ে বেড়ায়! দেখলাম ঝকঝকে পোশাকের এই সাহেব ধরনের মানুষটা কেমন যেন চিন্তায় পড়ে গেল। সাধুর বুদ্ধি পরামর্শ পেয়েও তার চিন্তা দুর হলোনা। খানিকক্ষণ হাতের আঙ্গুল নাড়াচাড়া করতে করতে একসময় ভার মুখে সে উঠে গেল।

হঠাৎ কি হলো জানিনা। দেখি, সাধু মাথা তুলে উপরের দিকে স্থির তাকিয়ে আছে। তাজা মাছের মত লাল লাল ফেটে বেরুনো চোখ। একটু পরই দুই হাত উপরে তুলে “এই যা, যাহ্----” বলে মাছি তাড়ানোর মত কি যেন একটা তাড়াতে লাগল সে। মনে হোল শূন্যের উপর কেউ একজন বসে আছে। হাত নেড়ে নেড়ে সেই অদৃশ্যের সাথে কি যেন বিড়বিড় করে বলেও গেল কতক্ষণ। কাকে দেখে যে সাধু অমন করল বুঝতে পারলাম না। কাউকে দেখাও গেলনা। একটু পরেই মনে হোল সাধুর সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে! সাধু তখনও ঠায় বসে। হাত মুঠি করা। চোখ বন্ধ। ঘর সুদ্ধ মানুষ ভয় পাওয়া চোখে এইসব দেখতে লাগল। ভয়ে আমারও মুখ শুকিয়ে গেল। কিসের লক্ষণ মাঝখান থেকে বুঝতেই পারলামনা। বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের মাঝখানে পড়ে গেলে যা হয়। উঠে যাব সেই সাহসও হোলনা। যা হয় হোক। একটু পর দেখলাম সেই অদৃশ্যের সাথে তার কথাবার্তা শেষ হয়ে গেল। কম্পনও। সাধুর ঠোঁটে তখন মোছা মোছা হাসি। চোখ তুলে বলল- ‘পাগলা বাবা। আমার গুরু। আমারে দেখতে আসে’। যেন কথাটা বলে ঘর সুদ্ধ লোককে আশ্বস্ত করতে চাইল সে। ‘সাঁই বাবা’, ‘পাগলা বাবা’, ‘ক্ষ্যাপা বাবা’- আহারে ভক্তি ভজনায় কত নামে যে তাদের সম্বোধন করে লোকে! মনে পড়ল একবার এক বাসের গায়ে লেখা দেখেছিলাম ‘লেংটা বাবা’। এরা কি সবাই এক জাতের? কেজানে! সাধুর উঁচু নিচু জাত নাই। তবে নাম, যশ নিয়ে পাল্লাপাল্লি সেখানেও আছে। সাধু হলেই যে খ্যাতির মোহ থাকবেনা, তা তো না। যাহোক, সেদিন কে কি বুঝেছিল জানিনা, আমার কেবল মনে হয়েছিল - এই জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে, মানুষের চোখে নিজেকে ক্ষমতাবান দেখাবার জন্যে কিংবা তাদেরকে নিজের আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে আসার জন্যে কতরকমের অভিনয় যে মানুষকে জানতে হয় ! মানুষের চোখে কতভাবে যে তাদের ধুলা ছিটাতে হয়!

চোখে পড়ল ছাদের এক কোনে পেতে রাখা মাকড়সার নিখুঁত জাল। আর তাতে আটকে যাওয়া নিরীহ পোকামাকড় । ক্ষুদ্র জীব। বিপদগ্রস্ত প্রাণ। হয়ত উপায় খুঁজছিল এই মানুষগুলির মতই । জগতে সবখানে কি একই বিধান? হয়ত।

- শেষ -








Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Dec-2014

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far