bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

রমতা যোগীর পদাবলী (৩)
ডালিয়া নিলুফার

‘সাধু’- যার আরেক নাম বাবা, তাদের নিখরচের জীবন । বিনা টিকিটে তারা যেমন নির্ভয়ে রেলে, বাসে উঠে পড়ে, তেমনি বেশ্যাদের নিঃসংকোচে মা ডেকে তাদের কাছ থেকে হাত পেতে খাবার নিতেও সাধু সন্ন্যাসীদের লজ্জাবোধ হয়না। সভ্য সাধারণ মানুষ যা পারেনা, তারা তাই-ই করে বিনা সঙ্কোচে।

সাদা, লাল আর গেরুয়া, পোশাকের বেলায় কেন জানি এই তিন রং নিয়েই সাধুরা সন্তুষ্ট থাকে। পোশাক বলতে চোলাপাত্তাক নয়ত কাঁধের উপর ফেলে রাখে একখানা উত্তরীয়। ব্যস। কেউ কেউ আবার কিছুই না পরে হাতে ঝোলায় কেবল পেতলের ‘কামান্দাল’। দীক্ষা নেবার পর আর কখনও চুল দাড়ি কাটা হয়না তাদের। তবে কৌমার্য রক্ষা হবে বলে যখন শুনি অনেক সাধুদের মধ্যে গোসলের রেওয়াজই থাকেনা, তখন বুঝতে কষ্ট হয়না, বিশ্বাসের সাথে সহ্যশক্তির সম্পর্কটা কিরকম।

ভবঘুরের জীবন বলে বর্ষা ছাড়া এক জায়গায় বেশীদিন থাকেওনা সাধুরা। তারা যেখানে থাকে তার নাম উপাশ্রয়। তেমন অসুবিধা না হলে উপাশ্রয়ের বাইরেও তারা থাকে, শুধু সাধনার ব্যাঘাত না ঘটলেই হলো। তবে রাত বিরেতে সাধুদের চলাচল বলতেই নিষেধ। তাই কাজ যা আছে, দিনে দিনেই সেরে ফেলে তারা।

রান্না মানেই কাটাকুটি আর আগুনের কারবার, গোচারী সাধুর চোখে যা সোজা কথা ভায়োলেন্স। অতএব রাধেনা তারা। খিদে পেলে খাবার আনতে সোজা চলে যায় গেরস্থের রান্নাঘরে। তাই বলে সেখান থেকে ইচ্ছেমত খাবার নিয়ে আসে, তাও না। খাবারের পরিমাণ দেখে তবেই সেখান থেকে সামান্য একটা অংশ তারা নিজের জন্য তুলে নেয়। গরু যেমন এ মাঠে, ও মাঠে চরে বেড়ায় আর মুঠি মুঠি ঘাস তুলে খায়, এরাও তেমনি এ বাড়ী ও বাড়ী ঘুরে নিজের আহারের বন্দবস্ত করে। তাদের ‘গোচারী’ নাম হবার কারণ এটাই। আশ্চর্য এই যে , শুনেছি জৈন অর্থাৎ গোচারী সাধুরা খাবার পেলেও খুশী, না পেলেও খুশী। খাবার পাওয়া, না পাওয়া তাদের কাছে দুইই সমান। খেয়ে, না খেয়ে থাকার এই অভ্যাস কেমন করে যেন রপ্ত করে ফেলে তারা। জলের ঘটিতে ফুটানো পানি, আর কাঠের পাত্র, সম্বল বলতে এই। হলেও, খাবার দাবার নিয়ে সাধু সন্ন্যাসীদের মধ্যে আছে বিস্তর নিয়মকানুন। খাবার কালে পাঁচ আর খাবার যোগাড় করতে মানে বিয়াল্লিশটি নিয়ম। ভাবি, তবে জীবন আর সহজ রইল কোথায়?

সাধু-সন্তদের খাবারের অভ্যাসও ভারী অন্যরকম। অনেকেই সূর্য ওঠার পর ছাড়া খাবেনা। আবার সূর্য ডুবে গেলে মুখে দেবেনা একফোঁটা পানিও । এদের মধ্যে যেমন আছে আমিষভোজী তেমনি আছে নিরামিষভোজীও। অবশ্য আহারের বেলায় সাধুদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্যও আছে। মদ, মাংস আর নেশায়তো চুর হয় বটেই, মূত্র-পান এমনকি মানুষের মাংস খেয়ে নির্দ্ধিধায় বেঁচে থেকে গা গুলিয়ে ওঠার মত ব্যাপারও তারা ঘটায়। অঘোরী সাধুদের ভয়াবহ দুঃসাহসের কথা কে না জানে! মরে যাওয়া মাত্রই সঙ্গীকে যেমন সোজা পানিতে ফেলে দিয়ে আসে তেমনি অনায়াসে পানি থেকে টেনেও তুলে আনে সেই মরা শরীর। আর দক্ষ কসাইয়ের মত কেটে খণ্ড খণ্ড করে নির্দ্বিধায় খেতে শুরু করে । সেখানে না থাকে শোক, না সন্তাপ। না সামান্যতম ঘৃণা। সন্ন্যাস জীবনের বহুকিছু অনুচ্চারিত থেকে যায়। যার উন্মোচন ঘটানো কোন সহজসাধ্য ব্যাপারও নয়। কি বলব, তারা যে গায়ে অমন ছাই মেখে বসে থাকে কেন, সেই সিম্পল ব্যাপারটাই এপর্যন্ত ভেবে বের করতে পারিনি। এত ছাইয়ের যোগানই বা আসে কোত্থেকে!!

তবে খাবার না হোক, কারো কারো শুনেছি গাঁজার উপরেই দিন চলে যায়। কেউ কেউ গাঁজা প্রায় নিঃশ্বাসের মত টানে। অবশ্য সত্যি কথা কি, তাদের মত অমন নিখুঁত করে আর কেউ কল্কে টানতেও পারেনা। আর এইভাবেই চলে দিনের পর দিন। না খাওয়া শরীরে এত দম যে কোত্থেকে আসে কে বলবে! অবশ্য সুস্থ সাধারণ মানুষও কি কম যায়? একটা দু’টো টান না দিলে কতজনেরই তো মাথা চলেনা, গলা খোলেনা অবস্থা।

ঠাঠা রোদ হোক আর কনকনে শীত হোক, একসময় যাতায়াতের জন্যে সাধুর পা জোড়াই ছিল ভরসা। না গাড়ী ঘোড়া, না উড়োজাহাজ, কোনটাই দরকার পড়তনা তাদের। যেখানেই যাক আর যতদূরেই যাক। জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়ে খালি পায়ে হেটে যাওয়ার মত দুঃসাহসের কাজও তারা করে। তবে এখন মেলা, পূজো নয়ত অন্য কোন উৎসবে দিব্যি হাতির পিঠে চড়তে দেখা যায় সাধুদের। তাদের ঘরের মধ্যেও পাওয়া যায় নানা রকম বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি। টেপরেকর্ডার। টেবিলঘড়ি। যা আধুনিক। যা মূল্যবান। শুনেছি এখনকার সাধুরা গ্রিন মারিজুয়ানাতেও বুঁদ হয়। নিজের মধ্যে অস্বাভাবিক শক্তি আনতে সাধুরা যখন দামী আর কড়া সাহেবি মদ গলায় না ঢেলে পূজোর আগুনে ঢালে তখনই বোঝা যায় ক্ষমতার লোভ তারাও করে কিনা।

উৎসবে,পার্বণে লম্বা চুল খুলে তারা যখন মাথার উপর আকাশ ধরে নেচে ওঠে আর উন্মত্ত সেই নাচের তালে মাটি কাঁপে, তখন চোখের সামনে দেখি সহস্র বছরের জলজ্যান্ত আদিম ইতিহাস। দেখি পৃথিবীতে মানুষ নামের এই প্রাচীনতম জীবদের কি অবিশ্বাস্য রহস্যময় আচরণ! তাদের নগ্ন শরীর জুড়ে কেবল ছাই। সমস্ত সাধুদের শরীরের তখন একটাই রং। ধুসর। সেই ধুসর মলিন পায়ের উপরই চেতনাহীন লুটিয়ে পড়ে সভ্য, বিদ্বান মানুষেরা। উদগ্রীব হয়ে তাদের স্পর্শ করে। চুম্বন করে। কে মানে জাত ধর্ম তখন?

চলবে--------






Share on Facebook               Home Page             Published on: 6-Jul-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far