bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

রমতা যোগীর পদাবলী (১)
ডালিয়া নিলুফার


ঘর সংসারের মধ্যে থেকে সন্ন্যাসী হবার কথা ভাবলে খুব মুশকিল হয়। লোকজন খুব যে একটা ভালো চোখে দেখে, তাওনা। ঘর সংসার যথেষ্ট রকমের ভালো লাগার পরেও ““এ জীবনে সন্ন্যাসী কেন হলামনা?””- একথা প্রায়ই ঘুরে ফিরে আমার মনে হয়েছে। কারণ আমার নিজের কাছেও অস্পষ্ট। জানলে বলে ফেলতাম। সন্ন্যাসী আর যোগী কি এক? কোথায় যেন পড়েছিলাম ‘রমতা যোগী’? যোগী বা সন্ন্যাসী হবার চিন্তাটা আসলে পাশের বাড়ীর সেই লক্ষ্মীছাড়া মেয়ের মত, যে কিনা খামোখাই মানুষের জানলা দিয়ে উকি মেরে চলে যায়।
সাধু সন্ন্যাসীর প্রতি আমার আগ্রহ কোনদিনই বলার মত ছিলনা। দু’একবার সামনা সামনি যাও দেখেছি, সেটা দূর থেকে। তাদের মাথার জট দেখে আমার বরাবরই ভয় করত। কাছে যাব, সেই সাহসই হতোনা কোনদিন। এখনও মাঝেমাঝে পথে ঘাটে দু'একজন জটাধারী মানুষ দেখি। নারী । পুরুষ। তারা সবাই সাধু সন্ন্যাসী কিনা জানিনা। তবে তাদের মাথার উপর থেকে নেমে আসা গাছের শিকড়ের মত মোটা মোটা জট দেখে ভয়তো হয়ই, চিন্তাও লাগে। এই জট নিয়ে তারা যে কি করে ঘুমায় আর ধোয়ই বা কেমন করে, এইসব ভাবি। গান বাজনা করে এরকম মানুষের মাথায়ও এখন জট দেখি। বুঝিনা, এ জিনিষ কি চাইলেই তৈরি করা যায়? ।
সাধু সন্ন্যাসীর কিছু কিছু ক্ষমতার কথা লোকমুখে শুনতাম। গল্পের মত লাগত। এর বাইরে চোখে যতটুকু দেখেছি তার বেশীর ভাগই হয় সিনেমায়, নয় নাটকে। সত্যমিথ্যা না বুঝলে যা হয়। বিশ্বাস করতাম। ঐ পর্যন্তই। সেসব বেশীরভাগই ছোটবেলার কথা। এখন সেরকম মনেও নেই। তবে বড় হয়ে সাধু সন্ন্যাসীর প্রতি কিছু মানুষের আশ্চর্য রকমের উন্মাদনা, ভয়- ভক্তি এবং অবিশ্বাস্য ভালোবাসা দেখে বিস্মিত হয়েছি। সে এক অন্যরকম ইতিহাস। তাদের কেউ কেউ আমার আপনজন। কেউ নেহাতই জানাশোনা। এবং একথা ভাবতে বাধ্য হয়েছি যে জগতে আশ্চর্য কিসে কম? আমার চেনাজানা সেই মানুষগুলির অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা এবং তাদের কর্মকাণ্ডগুলি একটা সময় আমাকে সাধু সন্ন্যাসী সম্পর্কে সামান্য আগ্রহী করে তোলে। দৃষ্টির বাইরে থাকা পারিপাট্যহীন জীবনের সেই বিচিত্র ভাঁজ ভঙ্গী দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারিনি।
সাধু সন্ন্যাসী দেখলে মনে হবে পাপ তাপ শুষে খাওয়া এক শরীর। রোগ ব্যাধি বলতে নেই। টিকা ইনজেকশন লাগেনা । আহার নিদ্রায় আসক্তি নেই। সবটাতেই তাচ্ছিল্য। সবটাতেই উপেক্ষা। পাকা বাড়ী। ছেলের চাকরী। মেয়ের বিয়ে। কিসের কি! কোন জাগতিক দুশ্চিন্তাই এদের কাবু করেনা। এমনকি রুজি রোজগারও কোনরকম দুর্ভাবনায় ফেলেনা। কোন কিছু নিয়ে তাড়া নেই। উদ্বেগও না। মোটকথা বিনা উপকরণে বেঁচে থাকা কি, তা সাধু না দেখলে বোঝা যায়না। এরা যে কোন শক্তিতে চলে বোঝা মুশকিল। শুধু লজ্জা শরম একটু কম, এই যা।
সাধুদের ডেরা, আশ্রম, প্রসাদ ইত্যাদি নিয়ে কম কথা নেই। তাদের ক্ষুধা তৃষ্ণা নিয়েও আছে আজীবনের রহস্য। মনের জোর বলে একটা কথা আছে। কিন্তু তাই বা কতক্ষণ? পঞ্চ ইন্দ্রিয় কি সত্যিই ছেড়ে কথা কয় সবসময়? কেজানে!
ছোটবেলায় এক আত্মীয়ের বাড়ীতে যেতাম। পুরনো ঢাকার বংশালে। জমিদারী ঢংয়ের নকশা করা পুরনো হিন্দুবাড়ি। সেটা তারা দখলে নিয়েছিল। সেই বাড়ী দেখে আমার কাছে মনে হোত, মস্ত রাজার বাড়ী। এর আগে কোনদিন রাজার বাড়ী দেখিনি, সেইজন্য। ওরকম আরও বেশ কয়েকটা বাড়ী ছিল ঐ এলাকায়। যাহোক সেই বাড়ীর নীচতলার বারান্দায় বসে থাকত এক সাধু, পুরনো ছালার উপর আসন পেতে। সাধুর মাথা ভরা জট। মুখে লম্বা এলোমেলো দাড়ি। সারা গায়ে ছাই মাখানো। সাধুদের বয়স আন্দাজ করা যায়না। তারটাও যেতনা। গলায় যে কত বিচিত্র রকমের মালা ছিল তার! বড় বড় শুকনো ফলের দানার মত। সাধু গায়ে লালরঙের একটুকরো কাপড় পেঁচিয়ে রাখতেন। ব্যাস, ঐ। কি বলব, শুধু চা ছাড়া তাকে আর কোনদিন কিছু খেতেও দেখিনি। তার ছালার একপাশে একটা ঘণ্টি রাখা ছিল। পেতলের। যখন চায়ের নেশা হোত তখনই তিনি ঐ ঘণ্টি বাজাতেন। কিছুক্ষণ পরেই পাশের হোটেল থেকে চা চলে আসত।
প্রায়-দিন সাধু চোখ বন্ধ করে থাকতেন। খুব কম সময়ই তার চোখ খোলা দেখেছি। কথাও বলতেন না। সারাক্ষণ কেন যে একটা মানুষ চুপ করে থাকে, বুঝতামনা। দু’এক সময় কথা না ঠিক, বিড়বিড় করে কি যেন বলতেন। মন্ত্রের মত। বোঝা যেত না। কোন কোন দিন তাকে খুব মন দিয়ে দেখতাম। তার ছিল আশ্চর্য উজ্জ্বল দুই চোখ। চেয়ে থাকার মত। তবে গর্জন করে উঠবেন সেই ভয়ও ছিল। কোন কোন সাধুকে হঠাৎ গর্জন করে উঠতে দেখেছি। অবশ্য সামনাসামনি না। পর্দায়।
সেই বাড়ীর বারান্দা ঘেঁষেই ছিল রাস্তা। সর্বক্ষণ লোকজনের যাতায়াত। রিকশার চলাচল। ফেরিওয়ালার হাকাহাকি। অথচ সেই খোলা ধুলোবালির উপরেই ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকা একজন মানুষ বসে আছেন। কথা নেই। বার্তা নেই। ভারী অবাক হতাম। হওয়ারই কথা। সাধুরা লোকালয়ে থাকেনা। থাকে পাহাড়ের গুহা, নদীর পাড়ে। গাছতলাও তাদের বেশ পছন্দের জায়গা। যতটা পারে প্রকৃতির কাছ ঘেঁষে থাকে। মোটকথা নির্জনতাই খোঁজে তারা। পুরনো ঢাকার ওরকম হৈ হট্টগোলের মধ্যে কোন সাধু যে অমন ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকতে পারে, তাকে না দেখলে বুঝতামইনা। কাছেই ছিল শ্রী মাধবলাল মিষ্টিঘর। সেইখানে সারাদিন বাজত ““দমাদম মাস্ত কালান্দর, আলী শাহবাজ কালান্দার--- ও লাল মেরী পাত্-------!” সাধু বুঁদ হয়ে থাকতেন। শুনতেন কিনা জানিনা।

চলবে----------








Share on Facebook               Home Page             Published on: 24-Apr-2014

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot