জয়তু অর্ক দাশ! ডালিয়া নিলুফার
গত কয়েকদিন ধরে পত্রিকা খুলে এক অসাধারণ তরুণের মস্ত সাফল্যের কথা শুনছি। কেন জানি মনে হলো, এ ঠিক সাফল্য না, খ্যাতিও না। এ হলো বাঙ্গালীর জন্যে এক অমরত্বের বর। এই তরুণ সিডনী প্রবাসী, অভিনেতা অর্ক দাশ। ছোট, বড় সব পর্দাতেই যার সমান সুখ্যাতি।
অর্কদের বাড়ী ছিল চট্টগ্রামে। লাভ লেনের সেই বাড়ীটাতে মা, বাবা আর দিদাকে জড়িয়ে তার ছিল এক সরল শৈশব। এমন যে, হাতে একখানা বেলা বিস্কুট পেলেই সে খুশী থাকত। তবে ভয়ও তার কম ছিলনা। সেই ছোটবেলায় বাবা মায়ের সাথে যখন অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসে তখনও তার ভয় ছিল। অচেনা দেশ। অজানা ভাষা। হঠাৎ একলা হওয়া। তখন মানুষ না বরং গাছপালা জড়িয়ে ধরে আর চোখের পানি ফেলেই তার দিন কেটেছে। কিন্তু আশ্চর্য হলো এই যে, সংলাপতো দূর, ভাষা না জানার জন্যে যার বুকের মধ্যে ছিল এক গলা ভয়, সেই কিনা এনে দিল এমন অবিশ্বাস্য সুনাম! যা তরঙ্গায়িত হতে হতে চলে গেল সেই হলিউড পর্যন্ত! আর অনায়াসে দেখিয়ে দিল অভিনয়ের মত একটা ভারী শক্ত কাজ কত সহজে করা যায়! আসলে সম্ভাবনা এমন এক সূর্য, পৃথিবীর যেখানেই থাকুক আলো সে ছড়াবেই। সেই কারণে কিনা কেজানে, স্কুল জীবনে সে বেছে নিয়েছিল অভিনয়কে। আর সেই সাথে পড়াশোনা, চর্চা এবং পেশাগত দক্ষতা এই তিনটিকে সে গেঁথে নিয়েছিল এক গ্রন্থিতে। তার বিশ্বাস ছিল, যে কোন ভালো কিছুর পিছনে থাকতে হয় নিষ্ঠা, যত্ন আর একাগ্রতা। ফলে তার কাজগুলি উত্তরোত্তর প্রশংসিত হয়েছিল। দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছিল । থিয়েটার, ছোট ছবি ‘জগদীশ জী’, জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ‘দ্য কোড’ আর অনুপম শর্মার ছবি ’আনইন্ডিয়ান’ এভাবেই একের পর এক অর্ককে সামনে এনে দিয়েছে। সেইসাথে নিকোল কিডম্যান, দেব প্যাটেল, সুপ্রিয়া পাঠক আর টারা মরিসের মত দুর্দান্ত অভিনেতাদের সাথে একসাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার সৌভাগ্যও তার হয়েছে।
সন্তানকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই বোধহয় বাবা মায়ের সবচেয়ে বড় কারিগরি দিক। আর মধ্যবিত্তের জীবনে সম্পদ বলতেই তার সন্তান। অথচ সংসারে বাবা মা হয়ে, সন্তানের জন্যে কেবল বুকভরা উদ্বেল স্নেহ আর সামান্য যত্নটুকু ছাড়া কীইবা দেই, দিতে পারি? সেই তারাই যখন দু’ হাত ভরে তাদের অসাধারণ সব কৃতিত্বকে আমাদের সামনে এনে হাজির করে, তখন কি যে বিস্ময়বোধ তৈরি হয় ভিতরে! কি যে অপার্থিব আনন্দ হয় দেখে!
জীবন ভর আমাদের যত ভুলই হোক, যত ব্যর্থতাই থাক, হাতের তালু ভরে ভাগ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা অতৃপ্তির সেই মস্ত বড় গর্তগুলি কখন যেন এক আশ্চর্য উর্বর মাটিতে রাতারাতি ভরাট হয়ে ওঠে সন্তানের এমনতর সাফল্যে। যেন এক শুদ্ধ আলো। যেন সুবাতাস। যেন অমর এক প্রাণশক্তি! মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্যে এই-ই যথেষ্ট হয়। আমার বিশ্বাস, শুধু অর্কের বাবা কলাম লেখক শ্রদ্ধেয় অজয় দাশগুপ্ত এবং মা দীপা দাশগুপ্ত কেন, প্রাণভরে সেই সুবাতাস টেনে নিয়েছে অসংখ্য বাঙ্গালী। আর মনে মনে বলেছে, আহা! এইতো আমাদের সন্তান! এইতো আমাদের গর্ব। বহুদূর থেকে এই স্নেহানুজকে কেবল দু’কলম লিখে অভিনন্দন জানালাম। সৃষ্টিকর্তার অপার স্নেহে সে বেড়ে উঠুক । মানুষের আশীর্বাদই হোক তার মাথার উপর চিরকালের ছায়া।
ডালিয়া নিলুফার, ঢাকা থেকে
|