বুয়েট এলামনাই অস্ট্রেলিয়া বার্ষিক সাধারণ সভা ও গালা নাইট ২০১৮ মাহমুদা রুনু
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বুয়েট এলামনাই অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক সাধারণ সভা ও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনটা ছিল ১৭ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার।
একটু ফিরে দেখা যাক পেছনের দিকে : যাত্রা শুরু ২০০৯ উদ্দেশ্য শেকড়ের সন্ধান, বুয়েটের চার বছরের কঠিন যাঁতাকলে বাঁধা শিক্ষালয়ের এলামনাইদের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা, প্রবাসের সফলতা বিফলতা মিশিয়ে একসাথে মাঝে মধ্যে ভাবের আদান প্রদান ও পারষ্পরিক সহযোগিতা স্থাপন করা।
কয়েকজন বোদ্ধা সহযোদ্ধারা তাদের ঘরকে পর করে বিনোদনের আড্ডাকে বিসর্জন দিয়ে বিশাল এক দায়িত্ব নিয়ে নিল কাঁধে - আনন্দের সাথে, নিষ্ঠার সাথে। পরবাসের সকল দাপ্তরিক দায়িত্ব সংসারের সমস্ত লেনাদেনা চুকিয়ে রাত জেগে উইকএন্ড থেকে সময় চুরি করে ওনারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেলেন। বিনিময়ে পেলেন অঢেল মমতা স্নেহ শ্রদ্ধা ভালোবাসা সেই ১৯৬২ থেকে আজ পর্যন্ত বুয়েটিয়ানদের বন্ধনে। সে পাওয়া অমূল্য! নয় বছর আগে কোন এক স্বর্নালী সন্ধ্যায় যারা এই এলামনাই এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করলেন তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। ইতিহাসের পাতায় এদের নাম লেখা থাকাটা সময়ের প্রযোজ্য দাবী। যারা ছিলেন ড: আব্দুর রাজ্জাক, ড: মির্জা মনিরুল হাসান, জুলহাস ভুঁইয়া, হাসেন আলী, কেয়া আলী, ইউনুস রানা, তানভীর আহমেদ তমাল, ফজলুল হক, মনজুর রহমান, শাহীন প্লাবন, সারওয়ার কবির সঞ্চয়, মঈদ হাসান, সৈয়দ মাসুদ হোসেন ও মনসুরুল হক। আর যিনি এই স্বার্থত্যাগী বুয়েটিয়ানদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি হলেন মাহমুদা রুনু।
গত নয় বছরে বুয়েট এলামনাই অস্ট্রেলিয়া প্রতিবছরই দুই বা ততোধিক বার একত্রিত হবার প্রয়াস করেছে নৌবিহার, বনভোজন, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, বাংলাদেশের বিভিন্ন দুস্থ, অসুস্থ ও বন্যার্ত মানুষের জন্য চ্যারিটি ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে।
গত চার বছর থেকে কার্যক্রমের মাঝে যেটা যোগ হয়েছে তা হচ্ছে “professional workshop for engineers”. যেটা তুমুল জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে। এই প্রোগ্রামের রূপকার সানিয়া শারমিন, ফারহানা রিফাত, নুরে পাটোয়ারী, তানভীর আহমেদ তমাল, কাজি ফারুকী পিয়াস, নিশাত সিদ্দিক, কেয়া আলী - আর নেপথ্যে ছিলেন অনেকেই যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যারা বরাবর এই workshop এ অমূল্য বক্তব্য দিয়ে সফল করেন তারা সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে এক একজন তারকাখচিত বুয়েটিয়ান।
Biggest Morning Tea খুব জনপ্রিয় একটা চ্যারিটি প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে Cancer Council of Australia জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়। বুয়েট এলামনাই অস্ট্রেলিয়া এই মহতী কাজটির সাথে জড়িত। অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে অক্ষম অসুস্থ বুয়েটিয়ানদের পাশে দাঁড়নোর দায়িত্ব নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে বাৎসরিক সাধারণ সভা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে মূলত: বুয়েটিয়ান প্রজন্ম আর এলামনাইদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। প্রতিবছরই সেটা খুব মানসম্পন্ন হয়। নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে প্রতিটি অনুষ্ঠানই আগের যেটা করা হয়েছে তার চেয়ে গুনে মানে সমৃদ্ধ হয় যা এলামনাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে।
ফেরা যাক মুল প্রসঙ্গে। ১৭ নভেম্বর ঘটে গেল খুব জাঁকজমকপূর্ণ বাৎসরিক সাধারণ সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। অন্ত:ত চার মাসের পরিকল্পনা আর প্রায় ২৫ জনের যৌথ প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে কিন্তু সফলতা পেয়েছ প্রায় দুশ বুয়েটিয়ান পরিবারের অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানের শুরুটা হয়েছিল ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আসলে এই প্রবাসে সকলেরই এমন ঘর/বাইরের চাপ থাকে! তাই ভোটাভুটির ব্যাপারটা এখনও ঘটেনি। সাধারণত: অনুমতি ও পছন্দের ভিত্তিতে নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়ে থাকে। তাই হয়েছে এবারেও। Election Commissioner ছিলেন মীর হোসেন ও ফজলুল হক। বাৎসরিক সাধারণ সভা পরিচালনা করলেন বিদায়ী পরিষদের সভাপতি কেয়া আলী। তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি পুরনো পরিষদকে ধন্যবাদ প্রদানের মাধ্যমে বিদায় জানালেন আর নতুন পরিষদকে স্বাগত জানালেন।
বিদায়ী পরিষদে যারা কাজ করেছেন (২০১৬-২০১৮) তারা হলেনঃ কেয়া আলী, নিশাত সিদ্দিক, সানিয়া শারমিন, কবিতা চাকমা, কাজী ফারুকী, খন্দকার জিয়াউল হক, নুর পাটোয়ারী, ফারহানা রিফাত, রিফাত ফারজানা। উপদেষ্টাগণ: মির্জা মনিরুল হক, মাহমুদা রুনু, সৈয়দ মাসুদ হোসেন।
পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শাকিল আরমান চৌধুরী। শুরুটা ছিল বুয়েট প্রজন্মের ধামাকা! গান নাচ ফ্যাশন শো অনবদ্য পারদর্শিতা। ওরাই শুরু করেছে জাঁকজমকের চমক। অনবদ্য!
ভোজন-রসিক বুয়েটিয়ান পরিবার প্রায় ৪০০ জন একসাথে উপভোগ করলেন নৈশভোজ। এরপর ছবি তোলার পর্ব মনে হোল যেন সবাই পেরিয়ে এলো অন্তবিহীন পথ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। চোখ ভিজে আসার মতো আনন্দে। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ ছিলো বাংলাদেশ থেকে আগত স্বনামধন্য শিল্পী সামিনা নবীর একক সঙ্গীত। বরাবরই তিনি অনন্য অসাধারণ।
এবারে বাস্তবের কাছে ফিরে যাবার পালা। এমন মিলন-মেলা ছেড়ে যেতে কার মন চায়। চলল গল্প গাথা আরো অনেকটা সময়। বুয়েটের জন্য যে মানুষগুলো বুকে ধারণ করে রাখে অফুরন্ত ভালোবাসা তারা তো ধন্যবাদের জন্য পরোয়া করে না প্রতিদানের জন্য অপেক্ষা করে না। একটা বিশাল কাজ শেষ করে আবার শুরু করে দেয় নতুন ভাবনা নব উদ্যোগে।
নতুন নির্বাহী পরিষদের যারা কাজ করবেন ২০১৮ - ২০২০: (বাম থেকে) হাসিব শেখ (কোষাধ্যক্ষ), খন্দকার জিয়াউল করিম (যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ), রশিদ আপেল (সহ সভাপতি ১), পারভেজ এহসান (সাধারণ সম্পাদক), তানভীর আহমেদ তমাল (সভাপতি), সানিয়া শারমিন (সহ সভাপতি ২), সোমেন চক্রবর্তী (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), আসীফ হাসান (সদস্য সেবা সম্পাদক), আলভী আহমেদ (প্রচার সম্পাদক), শাকিল আরমান চৌধুরী (সাংস্কৃতিক সম্পাদক), মাশফিকার রহমান (প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পাদক)।
উপদেষ্টাগণ : মাহমুদা রুনু, কেয়া আলী, নিশাত সিদ্দিক, ফেরদৌস আহমেদ।
মাহমুদা রুনু, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|