bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













বদরুল আলম খানের “সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন”
বইটি পড়ার পর আমার অনুভূতি

নওরোজ খালিদ বর্ণী



কিছু দিন আগে শ্রদ্ধেয় বদরুল আলম খানের লেখা “সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন” বইটি পড়লাম। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমার আগ্রহ ছিল গোড়া থেকেই, কিন্তু এমন একটা বাংলা বই এর সন্ধান আমি আগে পাই নি। অনেক দিন কোন বই পড়িনা, প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে বই নিয়ে আর বসা হয় না। অথচ একটা সময় বইই ছিল আমার জীবনের চালিকা শক্তি। করোনা কালীন সময়ে, বইটি হাতে পাওয়ার পর, অনেক বছর পর খুব মন দিয়ে বইটা পড়লাম। বইটা পড়তে পড়তে আবার আমার নিজস্ব জগতটাকে যেন খুঁজে পেলাম।

“সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন” বইটি হাতে পেয়ে প্রথমেই যে প্রশ্নটি এসেছিল মনে, ‘সোভিয়েত রাশিয়া’ নামে তো কোন দেশ নাই ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ আছে, তাহলে নামটা এমন হোল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য তিনি বইটির শুরুতে মুখবন্ধেই উল্লেখ করেছেন, আর তাই তাঁর বই এর আলোচনা করতে গিয়ে আমিও আমার এই লেখায় “সোভিয়েত ইউনিয়ন” এর বদলে “সোভিয়েত রাশিয়া” লিখছি। বদরুল আলম খানের বইটি পড়ে অনেক অজানা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেলো। অনেক ভুল ধারনার সঠিক উত্তর খুঁজে পেলাম। বিপ্লব কেন্দ্রিক এই জটিল বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা সহজ কাজ নয়। বিনা রক্তপাতে কি করে একটা বিশাল সাম্রাজ্য ধ্বসে পড়তে পারে, সেই চিত্রটা তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁর মত বিচক্ষণ লেখকের বইয়ের তেমন কোন বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা করার সাহস আমার নাই, কিন্তু বইটি পড়ে খুব ভাল লেগেছে, অনেক কিছু জানতে পেরেছি, তাই নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ না করে পারলাম না।

“সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন” বইটি পড়তে গিয়ে বুঝতে পারলাম এটি কোন গতানুগতিক বই নয়, বিষয়টাও খুব সহজ নয়। দীর্ঘ এগারো বছর তিনি রাশিয়াতে ছিলেন, এই পুরো সময়টা জ্ঞান পিপাসু মানুষটি নিমগ্ন থেকেছেন বিশাল এই ভূমির ইতিহাস জানতে। সেই প্রসারিত জ্ঞানের অভিজ্ঞতা আলোকবর্তিকার মতো তাঁর প্রেরণার উৎস হয়েছে। তাঁর এই বইটি সেই প্রেরণারই গবেষণা মূলক প্রকাশ। রুশ বিপ্লবকে ঘিরে যে ট্রাজেডি তারই দমবন্ধ করা বর্ণনা এই বইটির পাতায় পাতায়। বইটি পড়তে পড়তে যত গভীরে প্রবেশ করেছি, বুঝতে পেরেছি, বইটিতে লেখক কতটা সময়, পরিশ্রম, মেধা, মনন, অভিমান, হতাশা, ক্রোধ, দুঃখ আর ভালবাসা মিশে আছে। রুশ বিপ্লবকে তিনি যেন নিজের মধ্যে ধারণ করে নিয়েছিলেন লেখার সময়।

সোভিয়েত রাশিয়া যখন ভেঙে যায় তখন আমি স্কুলে পড়তাম, টিভিতে যখন খবর দেখতাম, তখন গরভাচেভ, ইয়েলেতসিন, পুতিন এঁদের দেখতাম, কিন্তু রাশিয়ার রাজনৈতিক পটভূমি সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা ছিল না। এই বইটি পড়তে পড়তে দেখলাম, কি নেই এই বইটিতে! কিভাবে সমাজ গড়ে, কিভাবে ভাঙে, রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য, চিত্রকলা কিভাবে তাঁর উপর প্রভাব ফেলে, ব্যক্তিগত আক্রোশ – মতবিরোধ – ষড়যন্ত্র – সন্ত্রাস কিভাবে একটা সাম্রাজ্যকে ধসিয়ে দিতে পারে, অনেক রথী মহারথীদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে কৃষক - শ্রমিক সহ সাধারণ মানুষ কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সব কিছুই দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন। সোভিয়েত রাষ্ট্রের মত একটা বিশাল সাম্রাজ্য কিভাবে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যায় তারই বর্ণনা দিয়ে সাজানো এই বইটি। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন- ‘এই বিপ্লবের রঙ বেরঙের নানা চরিত্র- লেলিন, স্তালিন, ত্রতস্কি, বুখারিন, ত্রুশ্চেভ, ব্রেজনেভ, গরবাচেভ, ইয়েলেতসিন- সবার ভুলভ্রান্তি, ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ হলেও হতে পারে, তবে যে মাপেরই হোক, তাঁরাই এই ট্রাজেডির আসল হোতা ছিলেন। পরিমাণগত ভাবে ঐ ট্রাজেডি অনেক বেশি ভয়াবহ, এমন কি গ্রিক ট্রাজেডিকেও হার মানায়’। তিনি খুব সুচারু ভাবে বিশ্লেষণ করে বলেছেন- “সমাজতান্ত্রিক সমাজের ধ্বংসাবশেষ ওপর নবায়িত সভ্যতার এই চড়কগাছ যার খানিকটা সোভিয়েত, খানিকটা জারের রাশিয়া, খানিকটা পশ্চিমা ঘেঁষা সভ্যতার উপাদানে তৈরি, সেটি আজকের রাশিয়া।”

বইটির বিভিন্ন জায়গাতে আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রামময় ইতিহাসের সাথেও গভীর সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। সোভিয়েত রাশিয়া আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে শুধু সমর্থনই করেননি, অন্যতম চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করেছে। সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙন নিয়ে আলাপের মাঝে লক্ষ করেছি তাঁর নিজের স্বদেশ প্রীতি তাঁকে দারুণ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দিন থেকে যে ভাঙ্গা-গড়া চলছে তাতে তাঁর মাতৃভূমির আগামী দিনের নিরাপত্তার আশঙ্কা তাঁকে তাড়িত করেছে।

বইটিতে কঠিন এই বিষয়গুলি আলোচনা করতে করতে প্রাসঙ্গিক ভাবে লেখক যখন নিজের জীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন, রাশিয়ার জীবনযাপন- যাতায়াত, খাবার-দাবার সহ আরও অনেক ছোট খাট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তখন আমার কাছে বইটি আরও বেশি আকর্ষণীয় ও আন্তরিক হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বইটি পড়তে পড়তে এতটা মগ্ন হয়ে পড়েছিলাম যে মনে হচ্ছিল বইটা যেন শেষ হয়ে না যায়। বিষয়টাকে ভালভাবে অনুধাবন করার জন্য আমি একেকটি পাতা একাধিক বার পড়েছি। আমার মনে হয়েছে আমার মত সাধারণ পাঠক যারা এই বিষয়টা সম্পর্কে ভাল ভাবে জানে না তাদের এই বইটি অবশ্যই পড়া উচিত, কারণ এই বইটা রাশিয়ার রাজনৈতিক পটভূমির একটা ঐতিহাসিক দলিল। এই একটা বই পড়েই যত কিছু জানার সুযোগ আছে তা অবিস্মরণীয়। জানার তো কোন শেষ নাই, তাই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, যারা বিষয়টা ভালো জানেন তাঁরাও খুব আনন্দ পাবেন।

ভেবেছিলাম সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের মধ্য দিয়ে বইটি শেষ হবে, কিন্তু পড়ে দেখি যে না- তার পরের পর্বটিকেও তিনি অল্প কথায় সুন্দর করে তুলে ধরেছেন, যা বইটইকে আরও পরিপূর্ণ করেছে বলে আমার মনে হয়েছে। পাঠক হিসাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুব তৃপ্তি পেয়েছি। এত তথ্য বহুল গোছান আকর্ষণীয় উপস্থাপন, পড়তে পড়তে গা শিউরে উঠেছে অনেক বার! মনে হয়েছে যে একটা ঐতিহাসিক সিনেমা দেখছি। লেখকের চোখ দিয়ে, তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে গোটা রাশিয়াকে দেখে নিয়েছি, আমার মনে হয় এভাবেই একজন লেখক পাঠকের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন, এর থেকে বড় সার্থকতা আর কি হতে পারে!

আমি গভীর ভাবে অনুভব করেছি, এমন একটা সময় আসবে যখন এই বইটি ইংরেজি সহ আরও অন্য অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হবে তাতে অবাঙ্গালী পাঠক এবং প্রবাসী বাঙালি সমাজের নতুন প্রজন্ম যারা বাঙালি হয়েও বাংলা পড়তে পারে না, তারাও বইটি পড়ার সুযোগ পাবে এবং উপকৃত হবে, কারণ এই বিষয়ে গবেষণামূলক এত তথ্যবহুল, গোছানো, আকর্ষণীয় উপস্থাপন আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয় না।

যারা বই পড়তে ভালবাসেন, তাদের সবাইকে বদরুল আলম খানের ‘সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙল কেন’ বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। বইটি সিডনির ল্যাকেম্বাতে প্রশান্তিকা বইঘরে পাওয়া যাচ্ছে। প্রশান্তিকা বইঘর শনি ও রবি বার সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এবং সোম থেকে শুক্র বার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ফোন নাম্বার +61414170846, এছাড়া প্রশান্তিকার ফেসবুক পেইজেও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশে বইটি সব প্রথমা বুক শপে এবং প্রথমার অনলাইন বুক শপে পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনে, প্রথমা প্রকাশনীর সাথেও যোগাযোগের করা যেতে পারে, ফোন নাম্বার- +8801988337733, ওয়েবসাইট https://www.prothoma.com জেনে খুব ভাল লেগেছে যে বইটি প্রথমার ওয়েবসাইটে সর্বাধিক বিক্রিত বই হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। সিডনিতে বইমেলায় কখনো কোন বই এর মোড়ক উন্মোচনের সময় সংক্ষিপ্তভাবে সেই বই এর উপর দুটো কথা হয় বটে, কিন্তু একটা বই এর উপর পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ব্যাপী-আলোচনা সিডনিতে আগে কখনো হয়েছে বলে আমার জানা নাই। বদরুল আলম খানের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম উল্লেখ করতে চাই যেমন- ‘বিশ্বায়ন’, ‘ইতিহাস ও গতিধারা’, ‘গণতন্ত্রের বিশ্বরূপ ও বাংলাদেশ’, ‘সংঘাতময় বাংলাদেশ অতীত থেকে বর্তমান’, ‘মাও সে তুং’, ‘চীনের দুঃখ’, ‘পুঁজিবাদের সমাজতন্ত্র (সম্পাদিত)’, ‘সমাজতত্ত্ব’, ‘সংকট ও সম্ভাবনার দেড়শ বছর’, ‘দর্শনের সংকট’, ‘তৃতীয় বিশ্ব’, ‘ধর্ম ও সমাজ বিপ্লব’ প্রভৃতি।


তারিখ: ২৬/১১/২০২১





নওরোজ খালিদ বর্ণী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Nov-2021

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far