bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



পার্থের চিঠি (৮ম পর্ব)
বোরহান উদ্দিন আহমদ

আগের অংশ পরের অংশ




পয়েন্ট ওয়াল্টার দর্শনঃ

১০ মে রবিবার। আজ মিতির হসপিটালে ছুটি। আনিসার চাইল্ড কেয়ারেও ছুটি। তানভীর ভোর সকালেই অফিসে গেছে। মিতি দুপুরের আগ পর্যন্ত পড়াশোনা করল। পরে বিকেলে ও রাতে পড়ল। আমি আর বাবলী আনিসাকে তার প্র্যামে নিয়ে এই আঙ্গিনায় মানে কমপ্লেক্সের ভিতরে হাঁটলাম। সন্ধ্যার আগে মিতিকে পড়াশোনার সুযোগ দেয়ার জন্য আনিসাকে নিয়ে তানভীর আমাকে আর বাবলীকে নিয়ে বেড়াতে বের হল। কারণ বাসায় থাকলে আর মিতির পড়ার রুমে দরজা বন্ধ দেখলে আনিসা বন্ধ দরজার সামনে যেয়ে করুন সুরে কান্না শুরু করে। তার কান্না শুনে মিতির দরজা খুলতে হয়। আর পড়ালেখার বারোটা বাজে। তাই সারাদিন অফিসে কাজ করে ফিরে জামাই তানভীর আনিসাকে নিয়ে আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে বের হয়। মিতির জন্য তানভীরের এই কষ্ট স্বীকার অসাধারণ।

গাড়ীতে আমাদের বাসা থেকে যাত্রা করে ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আমরা পয়েন্ট ওয়াল্টার নামে সোয়ানের পারে ও ভিতরে এক আশ্চর্যজনক জায়গায় পৌঁছে গেলাম। পয়েন্ট ওয়াল্টার অনন্য নদী সোয়ানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটা যেন একটা উপদ্বীপ। পুরো এলাকা এখানে সোয়ান নদীর ভিতরে চলে গেছে অনেকখানি। ভারত মহাসাগরে মিলিত হবার আগে ৩০ মাইল দূরে পার্থে সোয়ান নদী এখানে বিশাল খাড়ির রূপ ধারণ করেছে। শহরের বিভিন্ন অংশ এই খাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছে। নদীর এই বাঁকের এক অংশ অন্য অংশের চেয়ে আধা মাইল এক মাইল দূরে।আর একটা অংশ মানে মূল পয়েন্ট ওয়েল্টারে তো লেজের মত বা আমেরিকার ফ্লোরিডা কী'র (Key) মত সিকি মাইল চলে গেছে নদীর ভিতরে। বিস্ময়কর এই প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। একটা সরু চরের মত দেখায়। সেখানে যেয়ে কাছাকাছি এক জায়গায় জুতো খুলে রাখলাম সবাই। পরে খালি পায়ে হেঁটে সেই সরু নদীর পারের সাথে সংযুক্ত চরের মতো জায়গায় গেলাম। দুই পাশে পানিতে মৃদু মৃদু ঢেউ। পা ভিজে যায় ঢেউয়ে।আনিসাকে নিয়ে তার বাবা পানিতে দাড় করিয়ে দিল। বেলা পড়ে এসেছিল। সন্ধ্যা হয় হয়।আমরা সেই সরু চর বেয়ে বেশ অনেকখানি আগালাম। তবে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গেলাম না। শেষ প্রান্তে চরের প্রান্ত আরো সরু হয়ে গেছে। এক ফুট বা দেড় ফিট চওড়া হবে।আমরা শেষ প্রান্ত থেকে ৫০/৬০ ফিট আগে থেকে ফিরে এলাম। ফিরে এসে তানভীর আর বাবলী আনিসাকে নিয়ে নদীর উপরে কাঠের তৈরি জেটির দিকে গেল। আমি ঘাসের মত জায়গায় ঘাসের উপরে খোলা আকাশের নিচে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে তানভীর বাবলী কাউকে পেলাম না। তানভীরের নাম ধরে ডাকলাম। উত্তর পেলাম না। পরে চিন্তিত হয়ে আমাদের গাড়ীর কাছে গেলাম। তাদেরকে গাড়ীতেও পেলাম না। গাড়ীর কাছে দাড়িয়ে রইলাম। তখন তানভীরের দেখা পেলাম। বাবলী টয়লেটে গেছিল। সে জন্য আমাকে রেখে এখানে এসেছিল। এদেশ আমেরিকার মত খুবই ট্যুরিষ্টবান্ধব। সব জায়গায় পর্যটকদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা আছে।আমার আর তানভীরের টয়লেট শেষ সবাই মিলে হেঁটে হেঁটে কাছাকাছি এক জায়গায় আসলাম। সেখানে বাচ্চাদের জন্য সি-স (See Saw) ও পিচ্ছিল প্লাস্টিকের ঢালসহ কিছু খেলার ব্যবস্থা ছিল। ঢালের উপরের দিকে আনিসাকে বসিয়ে দিলে আনিসা নিজে নেমে আসতে পারে। আনিসাকে সেখানে কিছুক্ষণ খেললো। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা গাড়ীতে চড়লাম। পয়েন্ট ওয়াল্টার যাবার রাস্তা খুব নিরিবিলি এলাকা দিয়ে। জন মানুষের এলাকায় আসবার পর আমরা একটা ম্যাকদোনাল্ডের মত রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। সেখানে রঙ চা ব্ল্যাক টি খেলাম। সঙ্গে এপল পাই। চা খেতে খুব ভাল লাগল। নাস্তা সেরে ফিরলাম বাসায় আজ পার্থের তথা সোয়ান নদীর এক অনন্য সৌন্দর্য দেখে অনেক আনন্দিত মনে।


পার্থের মেডিক্যাল সেন্টারেঃ

বাবলী পার্থে আসবার কয়েকদিন আগে ঢাকার বাসায় তার কাপড় রট আয়রনের সোফা সেটের কোনায় আটকে যেয়ে সে হঠাৎ মেঝেতে পড়ে যেয়ে গুরুতর-ভাবে ব্যথা পায়। সি এম এইচে তাকে নিয়ে গেলাম।ডাক্তার দেখে বললেন হাড় ভাঙ্গেনি, মাংসপেশি বা রগও ছিড়েনি। হাড় মচকে গেছে। এমন কি ডাক্তার এক্সরে করার প্রয়োজনও বোধ করেননি। আমরা দুজনে স্বস্তি অনুভব করলাম। কারণ পার্থের উদ্দেশ্যে যাত্রার আর মাত্র কয়েকদিন বাকী ছিল। জার্নিতেও কোন অসুবিধা হয়নি।ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক বাংলাদেশে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করেছে সে।তবে হাঁটাহাঁটি বন্ধ করেনি। করবার উপায়ও ছিল না। কোন অসুবিধা হত না কেবল হাঁটুতে মৃদু টোকা লাগলেও প্রবল ব্যথায় সে ককিয়ে উঠত।কিন্তু এখানে আসবার দিন সাতেক পরে সে হাঁটুতে পুঁজ জমলে যেমন পিল পিল করা অনুভূতি হয় তেমন অনুভব করল। সে কথা মেয়ে মিতিমনি ও জামাই তানভীরকে জানালে তারা তাকে এখানে ডাক্তারখানায় মানে এদের ভাষায় মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।

১১ মে সোমবার বিকেলে মিতি তখনও তার হসপিটাল থেকে ফেরেনি। আমরা সবাই বাবলীকে নিয়ে যাত্রা করলাম এখানকার মানে মিতিদের নির্দিষ্ট মেডিক্যাল সেন্টার পাশের মোরলি সিটির মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল সেন্টারের উদ্দেশ্যে। মিতির জন্য ভাত তরকারী সঙ্গে করে নিয়ে গেলাম।প্রথমে মিতিকে তার হসপিটাল থেকে গাড়িতে উঠাতে বা পিক আপ করতে হবে। আমরা পার্থের সাউথ ডিসট্রিক্টের দিকে আগালাম। প্রথমে কিছু অংশ ট্রেন লাইনের পাশাপাশি চললাম। শহরের ১০০ বছরের চেয়ে পুরনো একটা অংশ পার হলে মিতির পার্থ সাউথ ডিসট্রিক্ট হসপিটালের কাছে পৌঁছলাম। মিতি বাস স্ট্যান্ডে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তাকে গাড়ীতে উঠিয়ে আমরা মেডিক্যাল সেন্টারে পৌঁছলাম। আমরা গাড়ীতে বসে রইলাম। জামাই তানভীর সেন্টারের ভিতরে যেয়ে বাবলীর নাম ডাক্তারের কাছে দেখানোর জন্য তালিকাভুক্ত করল। মহিলা ডাক্তারের কাছে। ইতিমধ্যে ক্ষুধার্ত মিতি গাড়ীতে ভাত খেয়ে নিল। সে আমাকে মজাদার কাষ্টার্ড উপহার দিয়েছিল গাড়ীতে উঠেই। যাহোক, দেখা গেল ডাক্তারের কাছে বাবলীর টার্ন আসতে আসতে দেড় ঘণ্টা লাগবে। কাজেই ঠিক হলো আমরা কাছাকাছি মিতির স্কুল ও কলেজ জীবনের বান্ধবী আবিদার বাসায় অপেক্ষা করবো। মিনিট দশেক আগে এখানে চলে আসব আবার আবিদাদের বাসা থেকে।আবিদাদের বাসায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম।

প্রথমে আবিদা ছিল। পরে মনোয়ার আসলো অফিস থেকে ফিরে। ওই বাসায় মাগরিবের নামাজ পড়লাম। তারা আঙ্গুর, কমলা আপেল এ সব ফল, বিস্কুট আর চা দিয়ে আপ্যায়িত করল। এর মধ্যে মনোয়ারের বন্ধু রনী আসলো। রনী আর আরেক বন্ধু এ বাসায় তাদের সাথে থাকে। আসলে মনোয়ারের বিয়ের আগে এই তিন বন্ধু এই বাসায় এক সাথে ছিল। আবিদা তাদের বাসায় অনেক লোকজন নিয়ে ছিল। তাই একা বিরাট বাসায় তার খারাপ লাগবে। তাই দুই বন্ধু নিয়ে মনোয়ার সস্ত্রীক এই বাসায় আছে শান্তিতে ও আনন্দে। রনীর স্ত্রী বাংলাদেশী মেয়ে আমেরিকায় থাকে। সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে রনী আমেরিকা যাবে স্ত্রীর সাথে কিছু সময় কাটাতে। তৃতীয় বন্ধুর সাথে পরে আরেক দিন এ বাসায় দেখা হয়েছে। সে কথা যথাসময়ে বলা যাবে।আজও দেখলাম আনিসাকে মনোয়ার আবিদা অনেক আদর করল।আর মনোয়ারের সাথে তার কোলে আনিসা খুব আনন্দের সাথে থাকে।দেখে খুব ভাল লাগে।

আমরা মনোয়ার আবিদাদের বাসায় ঘণ্টা খানেকের বেশী থেকে যথাসময়ে আবার মেডিক্যাল সেন্টারে ফিরে এলাম। সেখানে ঢুকলাম ফটোসেনসেটিভ দরজা পেরিয়ে। আমরা কাছে যেতেই যাদুর মত দরজা খুলে গেল। দেখলাম বিরাট হল ঘরের মত সেই রিসেপশন ও ওয়েটিং রুম। সামনের দিকে লম্বা টাইলসের টেবিলের সামনে চেয়ারে রিসেপশনের ভদ্রমহিলা বসে আছেন। তার সামনে দরজা থেকে শুরু ওয়েটিং রুমের সুন্দর চেয়ার পাতা। গদি আটা। ব্যাক রেস্ট দেয়া সুন্দর সব চেয়ার পাশাপাশি। হল ঘরে খুব সুন্দর পরিষ্কার ঝকঝকে তকতকে পরিবেশ। সামনের দেয়ালে সুন্দর সব পেইন্টিং। তা ছাড়া মেডিক্যাল সেন্টারের স্থির আর মুভির ছবি সম্বলিত অ্যাড। ডাক্তাররা মাঝে মাঝে এসে রোগীর নাম ডাকছেন মৃদু স্বরে। রোগী রেস পণ্ড করছেন। রোগীকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তার তার রুমে প্রবেশ করছেন। এটা বাংলাদেশের তুলনায় একটা মহান ব্যতিক্রম। সেখানে অ্যাট্যান্ড্যান্ট এসে রোগীর নাম ডাকেন। ডাক্তার মহারাজার মত তার চেম্বারের বসে থাকেন। রোগী একা একা ডাক্তারের রুমে ডাক্তারের কাছে যান। এখানকার সিস্টেমে রোগীর প্রতি ডাক্তারের সম্মান ও ডাক্তারের বিনয় এবং সিটিজেন হিসাবে রোগীর মর্যাদা প্রকাশ পায়। এ পদ্ধতিতে ডাক্তারের সাথে রোগীর একটা পারসোনাল টাচ থাকে বলে আমার মনে হয়। পুরো পদ্ধতিটা আমার খুব ভাল লেগেছে।আমার মন ছুঁয়েছে।

ডাক্তারের একজন আফ্রিকান অস্ট্রেলিয়ান। তাকে মনোয়ার তানভীর নেলসন মেন্ডেলা বলে রসিকতা করে। তাকে দেখলাম মাঝে মাঝে এসে রোগীদের নাম ডেকে রোগীদের সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে এক মহিলা আফ্রিকান অস্ট্রেলিয়ান ডাক্তারকে দেখলাম। বাবলীকে উনিই দেখবেন। আমি তাকে রসিকতা করে নাম দিলাম নেলসন মেন্ডেলার বোন। ডাক্তারের কাছে বাবলীর টার্নের জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমি এ কয়দিনের সোয়ান নদীর অভিজ্ঞতার উপর আমার অনুভূতি নিয়ে কবিতা লিখলাম "পার্থের সোয়ান নদী" যা পরে বন্ধনে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছি।

যথাসময়ে বাবলীর টার্ন আসল। নেলসন মেন্ডেলার বোন এসে বাবলীর নাম সাদেকা ডেকে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেল। বাবলীর সঙ্গে মিতি আর তানভীর গেল ডাক্তারকে ভাল করে বাবলীর অবস্থা বুঝিয়ে বলতে। পরে শুনলাম ডাক্তার যত্ন সহকারে বাবলীকে দেখেছেন। উনি বলেছেন কোন অপারেশন করার বা এক্সরের দরকার নেই। ঔষধ প্রেসক্রাইব করেছেন। ৫ দিন ঔষধ খেতে হবে। হাঁটুতে ঐ পিল পিল করা ভাব ঔষধে দূর হবে। এতে কাজ না হলে পরে এমআরআই করার দরকার হতে পারে। তবে এখন হাটাহাটি বন্ধ করতে হবে। ডাক্তার পেইন কিলার ঔষধও প্রেসক্রাইব করেছেন। মেডিক্যাল সেন্টারের সংলগ্ন কেমিস্ট সপ বা ঔষধের দোকান থেকে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ঔষধ কেনা হল।দেখলাম তানভীর আমার আর বাবলীর জন্য এখানে মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স করেছে। সে জন্য তানভীরকে অনেক ধন্যবাদ। এই ডাক্তারের চিকিৎসায় বাবলী আরোগ্য লাভ করে। তবে হাঁটাহাঁটি ৪/৫ দিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। সেদিন এখানকার মেডিক্যাল সেন্টার ও ডাক্তারের সুন্দর অভিজ্ঞতা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।(চলবে)



আগের অংশ পরের অংশ



বোরহান উদ্দিন আহমদ, পার্থ থেকে




Share on Facebook               Home Page             Published on: 15-Oct-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far