bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



পার্থের চিঠি (১ম পর্ব)
বোরহান উদ্দিন আহমদ

পরের অংশ


৩ মে ২০১৫ রবিবার। দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট। স্নিগ্ধ দুপুর। আমাদের মালয়েশিয়ান এয়ার লাইনসের বিমান তার ফ্লাইট এম এইচ ১২৫'এ আমাদেরকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ নগরীতে অবতরণ করলো। ৩য় বারের মতো অস্ট্রেলিয়াতে আমাদের ভালবাসার সফর শুরু করলাম।

প্রথম বার ছেলে ইমনের ভালবাসার আহবানে তার বিয়ে উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়াতে এসেছি। এখানে সংক্ষিপ্ত সফরের পর তাকে আর ভাবী কনে ক্রিস্টিনকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে চলে গিয়েছিলাম। যেখানে ক্রাইস্ট চার্চে তাদের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি। মেয়ে তখনও এখানে আসেনি। দ্বিতীয় বার মেয়ে মিতিমনি ও ছেলে ইমনের ভালবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে এসেছিলাম। মূল উপলক্ষ আসন্নপ্রসবা মিতির প্রথম সন্তানের জন্মের সময় ও পরে তাকে সঙ্গ ও সাহায্য সহায়তা দেয়া। সেবার আমাদের প্রথম নাতনী আনিসা মিতির কোল জুড়ে আসে। আমরা তার সাথে সাত মাস কাটিয়েছি।

এবারও মেয়ে মিতি ও জামাই তানভীর এবং ছেলে ইমনের ভালবাসার আহবানে এসেছি অস্ট্রেলিয়াতে। তবে একটি বিশেষ কারণও আছে। মেয়ে মিতিমনি (ডাঃ ফাতেমা শবনম) পার্থের হাসপাতালে অবৈতনিক অবজারভার হিসাবে সকালে কাজে যায়। জামাই তানভীরও বরাবরের মতো কাজে যায়। তানভীর বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে সিডনী থেকে বদলী হয়ে এসে এখানে তার কোম্পানি ক্রিপসী ক্রিম'এর ডোনাটের (Doughnut) নতুন ফ্যাক্টরি ও শাখা খুলেছে। ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়াতে সে-ই কোম্পানির প্রধান ব্যক্তি। মিতি কিংবা তানভীর সকালে আনিসাকে বেবি সিটারের কাছে দিয়ে যায়। বিকেলে কাজ থেকে ফিরবার পথে তানভীর প্রথমে আনিসাকে বেবি সিটারের কাছ থেকে পিক আপ করে। পরে মিতিকে তার হসপিটাল থেকে পিক আর করে বাসায় ফিরে।

ফিরে এসে মিতিকে এখানকার নিয়ম অনুসারে অস্ট্রেলিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের কোয়ালিফাইং পরীক্ষার ফাইনাল পার্টের জন্য পড়াশোনা করতে হয়। আনিসাকে দেখা শোনা করে মিতি তার পড়াশোনার উপযুক্ত অবকাশ আর তানভীর তেমন বিশ্রাম পায় না। এই অবস্থায় মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে মিতির তার সাহায্যে তার মাকে ও আমাকে তার কাছে আসবার জরুরী তলব পাঠায়। নাতনী আনিসাকে আবার দেখতে পাবো। তার আর মেয়ে মিতি ও জামাই তানভীরের সাথে থাকতে পারবো কিছুদিন। আমাদের জন্য এর চেয়ে আনন্দের ব্যাপার আর কি হতে পারে? তাই মাত্র এক মাসের সংক্ষিপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে আমরা ছুটে এলাম এবার অস্ট্রেলিয়াতে।

ছেলে ইমন আর বউমা ক্রিস্টিন এখানে পার্থে আমাদের সাথে দেখা করতে আসবে ইমনের জন্মদিন আগে। তার জন্মদিন এখানে উদযাপন করবে। পরে হয়তো সংক্ষিপ্ত সফরে আমরা দুজনে সিডনীতে বেড়াতে যাব।


মিতিদের বাসায়ঃ

আমরা বাংলাদেশ থেকে যাত্রা করেছি খর বৈশাখে। বাংলাদেশে রীতিমতো গরম পড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণ গোলার্ধে এখানে অস্ট্রেলিয়ায় এখন অটাম বা হেমন্তের শেষ মাস। শীতের পূর্বাভাষ হবার কথা। আমরা পার্থে যখন অবতরণ করলাম বিমানের পাইলট জানালেন বাইরে তাপমাত্রা ২২ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদেশের তুলনায় খুবই আরামদায়ক তাপমাত্রা। বাংলাদেশের বৈশাখের খরদাহের তুলনায় তো যেন এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা। খুবই আরামদায়ক সন্দেহ নেই।

বিমান থেকে নেমে আমি আর আমার স্ত্রী, বাবলী ভাবী, সবার সাথে আগালাম ইমিগ্রেশন চেক-আপ'এর জন্য। সংশ্লিষ্ট লোকজন আমাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিল। বিশাল লম্বা লাইন। স্টিলের স্ট্যান্ড আর মোটা সাদা ফিতে দিয়ে পাশাপাশি চিহ্নিত করা। কিন্তু লাইন দ্রুত এগিয়ে গেল। লাইনের শেষে ইমিগ্রেশনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটা কাউন্টার। সেখানে চটপট চেকিং সারছেন অত্যন্ত দক্ষ হাতে ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন পরিদর্শকগন। এদের দক্ষতায় ও সেবার মনোভাবে মুগ্ধ হলাম। আমাদের চেকিংও দ্রুত সম্পন্ন হল। পরে আমাদের ইমিগ্রেশন পরিদর্শক তার একজন সহকর্মীকে ডেকে আমাদের দুজনের পাসপোর্ট তাকে দিয়ে কি যেন বললেন। ঐ সহকর্মী চটপট বাবলীর মুখের আর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে তার কাজ শেষ করলেন।

এবার আমরা একটু এগিয়ে এস্কেলেটর দিয়ে এক তলায় নেমে আসলাম। কনভেয়ার বেল্টে আমাদের লাগেজ সহজেই আবিষ্কার করলাম। এরপর আবার কাস্টমস চেকিংয়ের জন্য আগের মতো বিশাল লম্বা লাইন। কিন্তু কাস্টমস ইন্সপেক্টরদের তেমন ধরপাকড়ের মনোভাব নেই। তাই সহজেই কাস্টমস চেকিং শেষ হলো। ইবোলার জন্য প্লেনে যে বিশেষ ফরম পূরণ করতে দিয়েছিলো কাষ্টমসয়ের ফরমের সাথে সে সব জমা রাখলো। প্রথম দেখায় পার্থ তার টুরিস্ট বান্ধব মনোভাব দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করলো।

ইতিমধ্যে বিকেল চারটা বেজে গেছে। বাইরে দুপুরের ঝকঝকে রোদ নরম হয়ে গেছে। আমরা কিছুদূর আগাতেই দেখি মেয়ে মিতি, জামাই তানভীর আর আমাদের পরম আদরের নাতনী আনিসা আমাদেরকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। মিতির পরম মমতায় আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ওরা আমাদেরকে অত্যন্ত ভালবাসার সাথে উষ্ণ ভাবে রিসিভ করলো। আনিসাকে কোলে নিতে চাইলাম। সে অনেক দিন পরে আমাদেরকে দেখায় প্রথমে কোলে আসলো না। কৌতূহলী চোখে চেয়ে আমাদের দুজনকে দেখল। দীর্ঘ ১৩ মাস পরে তাদেরকে কাছে পেয়ে আমাদের মন আনন্দে কানায় কানায় ভরে উঠলো।

মিতি তানভীরদের বাসা বিমান বন্দরের কাছেই। তানভীরের গাড়ীতে ১৫ মিনিটের মধ্যেই আমরা ইষ্ট পার্থের মেল্যান্ডস এলাকায় পেনিনসুলা রোডে তাদের বাসায় পৌঁছে গেলাম। ওদের ১৫৭ নং পেনিনসুলা রোড কমপ্লেক্সের লোহার গেট। তাদের বাসা ২নং ইউনিটে। গাড়ীর রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে যাদুর মত গেট খুলে গেলো। এই কমপ্লেক্সে সব বাসাই এক তলা। গেটের কাছাকাছি ওদের বাসা।

অস্ট্রেলিয়ার সর্বপশ্চিমের ও ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়া নামের বৃহত্তম প্রদেশ বা ষ্টেটের রাজধানী এই পার্থ নগরী। লোকসংখ্যা মাত্র ১০ লাখ। সিডনীর তুলনায় অনেক কম। রাস্তায় তেমন কোন গাড়ীর ভিড় দেখিনি। যানজটের তো প্রশ্নই উঠে না। রাস্তাঘাট ঝকঝকে তকতকে ও সিডনীর মতোই উন্নত মানের। আমরা মালপত্র বাসায় তুলে প্রথমে ড্রইং রুমে বসলাম। বাসায় ঢুকতেই এই ড্রইং রুম। সংলগ্ন ডাইনিং স্পেস আর কিচেন মিলে বেশ বড়সড়। পরে মালপত্র একটা রুমে প্রথমে রাখা হলো। এটা মিতির পড়বার রুম। ড্রইং রুম সংলগ্ন পশ্চিমে একটা করিডোরের দুপাশে সব কিছু। একপাশে টয়লেট, বাথরুম, মিতিদের মেইন বেডরুম। তারপরে শেষের রুমই আমাদের দুজনের নতুন নীড়। করিডোরের অন্য পাশে মিতির সেই পড়বার রুম।

আমরা ড্রইং রুমে কিছুক্ষণ গল্প করে আমাদের নির্দিষ্ট রুমে গেলাম ও পোশাক পালটে সহজ হলাম। হেমন্তের দিন। পৌনে ছয়টা নাগাদ সন্ধ্যা নেমে এলো। মাগরিবের নামাজের একটু পরেই আমরা ডিনার সারলাম। পোলাও, সবজী, চিকেন আর বীফ দিয়ে খুব সুস্বাদু ডিনার হলো। ডিনারের পরে মিতি আমাদের সাথে গল্প করার জন্য আমাদের রুমে আসলো। আনিসাও মায়ের সঙ্গে এলো। সে আনন্দে আমাদের বিছানায় এমন লাফালাফি শুরু করলো যে তা দেখে আমাদের মন আনন্দে ভরে গেলো। মনে হলো আমাদের গত এক মাস ধরে এখানে আসবার খাটাখাটি আর তুমুল হুলস্থূল কর্মকাণ্ড সার্থক হয়েছে। লেপ গায়ে এক লম্বা ঘুমে পার্থের প্রথম রাত শেষ হলো।

(চলবে)



পরের অংশ



বোরহান উদ্দিন আহমদ, পার্থ থেকে






Share on Facebook               Home Page             Published on: 20-Aug-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far