ঈদ পুনর্মিলনী বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস
হ্যাপি রহমানঃ রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে হাজার মাইল দূরত্বে রেখে একটু সুখানুভূতির আশায় প্রবাসীরা আয়োজন করে বিভিন্ন বিনোদনের। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘসময় প্রবাসে থাকল ও মন প্রাণ জুড়ে বাংলাদেশেই থাকে। প্রবাসে কর্মব্যস্ততা ও জীবনসংগ্রামে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-বিনোদন যেন সুখে থাকার অভিনয়! দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে আনন্দ আড্ডার আয়োজন করতে মোটেও কৃপণতা করেন না প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল সোসাইটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস গত ৩০ জুলাই আয়োজন করেছিল ঈদ পূর্নমিলনী অনুষ্ঠান। এধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে সবাই একত্রে আসার সুযোগ পায়। ঈদ আনন্দের আবহ ছিল পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের বিরালা সাবারবের জুব্লি হলে অনুষ্ঠিত হয় জাঁকজমকপূর্ণ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি। নৈশভোজের পর শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ডা. সাব্বির সিদ্দিক শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন। তিনি বলেন - এই বহুজাতিক সমাজে বাংলার কৃষ্টিও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতেই এই আয়োজন। আজকের মনোমুগ্ধকর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেয়া দ্বিতীয়/তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশীরা যেমন নিজেদের শেকড়ের সন্ধান পাচ্ছে, ঠিক তেমনি অন্যরাও বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছেন। আগামীতে এর পরিধি আরো বাড়ানো হবে।
অনুষ্ঠান জুড়ে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি সৌখিন শিল্পীদের নাচ-গান, ফ্যাশন শো, ছায়া-ছন্দ, মঞ্চনাটক প্রদর্শন আর বিভিন্ন কুইজ খেলায় উপস্থিত অতিথিরা আনন্দে আত্মহারা হন। কমিউনিটি সেন্টারের হলটি প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসক, তাঁদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের মিলন-মেলার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। কর্ম-ব্যস্ততার অবসরে চিকিৎসকদের এ মিলন-মেলা সিডনি শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের অফুরন্ত আনন্দ এনে দিয়েছিল।
এ ছাড়া সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ডা. রফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. রশিদ আহমেদ। ডা. রশিদ আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন_ দেশকে ভালোবাসার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নতুন কিছু করার স্পৃহা নিয়ে নব প্রজন্ম এগিয়ে আসুক। স্বদেশ বলতে সব সময়ই আমাদের প্রত্যেকের চেতন বা অবচেতন মনে প্রিয় বাংলাদেশটাই জেগে ওঠে। প্রবাসের মূল ধারায় বেড়ে ওঠা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিবে এসব সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে নিজেদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময়ে সহায়ক হয়। এসময় তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কয়েকজন নবীন চিকিৎসককে মঞ্চে আসার আমন্ত্রণ জানান। তাঁদের সাথে অনুষ্ঠানে আগত সকল অতিথিবৃন্দের পরিচয় করিয়ে দেন। বিদেশের মাটিতে সন্তানের সাফল্যে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত সকলে। সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিথি চিকিৎসকদের শুভেচ্ছা পুরস্কার দেওয়া হয়।
ডা. রফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন_ প্রবাসে পেশাগত নানা ব্যস্ততা থাকলেও দেশের জন্য কিছু করার মানসিক তাগিদ থেকে আমরা প্রতি বছর বিভিন্ন আয়োজন করে থাকি। বার্ষিক নৈশভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বার্ষিক সাধারণ সভা, সায়েন্টিফিক মিটিং ও বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সকল সদস্যদের অক্লান্ত শ্রমের মাধ্যমে আজকের এই মিলন মেলা। এরপর তিনি এবারের অনুষ্ঠানটির স্পন্সরদের নাম ঘোষণা করেন এবং তাঁদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
পেশাগত দক্ষতায় বাংলাদেশী ডাক্তারগণ এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। দেশ গঠনে প্রবাসী এ কৃতি সন্তানদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের জন্য প্রায় প্রত্যেকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন অর্থনীতিতে, চিকিৎসাক্ষেত্রে। নিউ সাউথ ওয়েলস-এ বসবাসরত সকল বাংলাদেশী ডাক্তারদের মাঝে সংযোগ থাকবার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব আয়োজন। যোগাযোগের যে ব্যবধান এতদিন ছিল তা ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করে আজ সবাইকে একই ছায়াতলে নিয়ে এসেছে।
সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির অন্যান্যরা হলেন সহসভাপতি ডা. মতিউর রহমান, ডা. শফিকুর রহমান ও ডা. শায়লা ইসলাম। যুগ্ম সম্পাদক ডা. মইনুল ইসলাম ও ডা. কাজী শাহরিয়ার, কোষাধ্যক্ষ ডা. জেসমিন শফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শামসুল আলম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. খালেদুর রহমান, শিক্ষা সম্পাদক ডা. নাজমুন নাহার। কার্যকরী সদস্য ডা. জেসি চৌধুরী, ডা. আয়াজ চৌধুরী, ডা. শরীফ উল্লাহ, ডা. রেজা আলী, ডা. আমীন মুতাসিম, ডা. ফাইজুর রেজা, ডা. কামাল আহমেদ, ডা. জান্নাতুল নাইম, ডা. মামুন চৌধুরী, ডা. মিরজাহান মিয়া, ডা. মেহেদী ফারহান ও ডা. জাকির হোসেইন পারভেজ। সহযোগী সদস্য ডা. নুরুল ইসলাম, ডা. ইফতেকার জোহা ও ডা. শফিকুল বারী চৌধুরী। উল্লেখ্য, নিউ সাউথ ওয়েলসে বসবাসকারী বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রায় প্রত্যেকেই বিভিন্নভাবে দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন এই সুদূর প্রবাসে থেকেও। আনুমানিক প্রায় চার’শ জন বাংলাদেশি চিকিৎসক বসবাস করছেন নিউ সাউথ ওয়েলস এ। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ২৫০ জনেরও বেশি।
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে র্যা ফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকলের যৌথ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় এই মিলন-মেলা সুন্দর ভাবে সমাপ্ত হয়।
হ্যাপি রহমান, সিডনি |