পানি ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে বেনের আলোচনা সভা
New York, 15 August 2014
অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্তরিকতা এবং উদ্যম সহকারে কাজ করলে সরকারী সংস্থাসমূহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারে। নিউ ইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের মামুন টিউটোরিয়ালের সভাকক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) আয়োজিত “বাংলাদেশের পানি ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা – সমস্যা এবং সমাধান” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রকৌশলী তাকসীম খান এ কথা বলেন। বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার আনোয়ার কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বেনে’র বিশ্ব সমন্বয়কারী ডঃ নজরুল ইসলাম। সভা পরিচালনা করেন বেনে’র নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সী, ও কানেক্টিকাট রাজ্য শাখার সমন্বয়কারী সৈয়দ ফজলুর রহমান। ডঃ নজরুল ইসলাম তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন যে, এ যাবতকাল বাপা এবং বেন সরকার ও প্রশাসনের বাইরে থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিবেশ সমস্যাবলীর সমাধান প্রস্তাব এবং তার পেছনে জনমত গড়ে তুলেছে। এতে দেশে পরিবেশ সম্পর্কে জন সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এতে আরও প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রশাসনকে প্রভাবিত না করতে পারলে পরিবেশ সম্পর্কিত সঠিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও বাস্তবায়িত হয় না। সে প্রেক্ষিতে প্রকৌশলী তাকসীমের ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বেনের একজন নেতা এবং বাপার সহ-সভাপতি। এখন ঢাকা ওয়াসাতে তিনি মোড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন এবং পরিবেশ বান্ধব পানি ও নিষ্কাশনের লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ডঃ নজরুল আশা করেন যে, তাকসীম খানের মতো আরও অধিক সংখ্যক পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ও কর্মীরা প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন এবং সমগ্র বাংলাদেশের পরিবেশের ক্ষেত্রে একটা একটি মোড় পরিবর্তন নিয়ে আসবেন।
প্রকৌশলী তাকসীম খান পাওয়ার পয়েন্ট সহযোগে ঢাকা ওয়াসাতে তিনি কি কি ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন তার আকর্ষণীয় বিবরণ দেন। তিন অবহিত করেন যে, ১৯৯৬ সনে আইন অনুযায়ী গঠিত ঢাকা ওয়াসা একটি স্বশাসিত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বতন্ত্র উদ্যোগে বহু কাজ করা সম্ভব। কিন্তু ইতিপূর্বের প্রশাসকেরা ওয়াসা আইনের এসব সুযোগ ব্যবহার না করে সবকিছুতে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেন।
দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি “ঘুরে দাঁড়াও ওয়াসা!” স্লোগান ঘোষণা করেন এবং সে অনুযায়ী এক ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেন। এসব পরিবর্তনের ফলে এখন ওয়াসার পানি সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, আয় বেড়েছে, দুর্নীতি কমেছে, বস্তি এলাকার মানুষদের পানি দেয়া সম্ভব হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানি থেকে ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির উপর নির্ভরতা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, এবং আগামী ২০৫০ সনের প্রেক্ষিতে ঢাকার জন্য পানি সরবরাহ, পয়-নিষ্কাশন, এবং বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পৃথক পৃথক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান যে, কয়েক বছর আগেও যেখানে ঢাকা শহরে পানির সংকট ছিল, এখন সেখানে উদ্বৃত্ত সরবরাহে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ওয়াসার আয় ৩০০ কোটি টাকা থেকে ৯০০ কোটি টাকাতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। ওয়াসার “সিস্টেম লস,” অর্থাৎ বিল ছাড়া পানি সরবরাহের পরিমাণ ৪০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই বিল পরিশোধ করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা বর্তমানের প্রায় ৮০ শতাংশ থেকে ২০৫০ সন নাগাদ ৩০ শতাংশে কমানোর মতো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এসব ইতিবাচক পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল বিশ্বে ঢাকা ওয়াসা এখন একটি আদর্শ পানি ও নিষ্কাশন সংশ্লিষ্ট সংস্থা হিসেবে স্বীকৃত ও পুরস্কৃত হচ্ছে। ওয়াসার আর্থিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি দেখে বিদেশী সংস্থাসমূহ এখন ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ঋণ দিতে উৎসাহী হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে।
তিনি জানান যে, ওয়াসার মাধ্যমে তিনি দেশের নদ-নদীর প্রতি বর্তমানের ভ্রান্ত “অবরোধ পন্থা” পরিত্যাগ করে “উন্মুক্ত পন্থা” গ্রহণ ও সে লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সরকারকে উদ্বুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কেননা, তা না হলে ঢাকা শহরে একটি “বালতি”তে পরিণত হবে এবং জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করবে। বাপা এবং বেন বহু আগে থেকেই নদ-নদীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও পন্থার এই পরিবর্তনের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
উপসংহারে তিনি বলেন যে তাঁর অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, উদ্যোগ নেয়া হলে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেও বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। তিনি আশা করেন যে ভবিষ্যতে এ ধরণের উদ্যোগের সংখ্যা ও পরিধি বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের নদ-নদী ও পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব হবে।
প্রকৌশলী তাকসীমের উপস্থাপনার উপর সভায় প্রাণবন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন ডঃ দলিলুর রহমান, মামুন টিউটোরিয়ালের পরিচালক শেখ আল মামুন, সাংবাদিক শিহাবউদ্দিন কিসলু, আদনান সৈয়দ, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম, আওলাদ হোসেন খান, প্রমুখ। “নদী” শীর্ষক একটি কবিতা আবৃতি করেন মিজানুর রহমান বিপ্লব।
সভাস্থলে স্বীয় এলাকার নদী ও বিলের করুণ অবক্ষয়কে ধারণ করে ডঃ দলিলুর রহমানের আঁকা বিভিন্ন ছবির একটি চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে ডঃ দলিলুর তাঁর চিত্রসমূহ ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন।
খোরশেদুল ইসলাম তার বক্তব্যে প্রকৌশলী তাকসীম খানের বিরুদ্ধে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল এবং তাদের পত্র পত্রিকা ও মিডিয়ার আক্রমণের সমালোচনা করেন। এসব আক্রমণের বিরুদ্ধে তাকসীম খানকে সমর্থনের জন্য তিনি বাপা, বেন, ও পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় এই প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এছাড়া সভা সরকারের প্রতি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক নদ-নদী বিষয়ক জাতিসংঘের কনভেনশনে সাক্ষর করার আহ্বান জানায়।
সভাপতি কবীর আনোয়ার সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা সমাপ্ত করেন।
[For more details, please check http://ben-global.org/NewsletterArchives.html]
|