বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার একটি অনুপম সন্ধ্যা
 পরমেশ ভট্টাচার্য: গত ১২ই মার্চ ২০২২ শনিবার, অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার একটি অনুপম সন্ধ্যা ও নৈশ ভোজ অনুষ্ঠিত হলো সিডনির উপ-শহর, রকডেল এর রেড রোজ ফাংশন সেন্টারে। “বিএইউ অ্যালামনাই নাইট” শীর্ষক অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার সহ আমন্ত্রিত অতিথিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে হলটি। সকলের মাঝেই ছিল এক অনাবিল আনন্দ আর উৎসবের আমেজ।
করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ দিন গৃহবন্দী জীবনের পর এই উন্মুক্ত পরিবেশে সবাই যেন তাঁদের প্রাণের স্পন্দন অনুভব করেন। অনেকেই উদ্বেলিত মনে অতীতের মধুর সুখ স্মৃতি রোমন্থনে আবেগী হয়ে পড়েন। ডিজিটাল পর্দায় বিশ্ববিদ্যালয় এর ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। সবাই সোনালি অতীতের স্মৃতির মধুময় ছবিগুলো দেখে হয়েছে আবেগে আপ্লুত। কিছুক্ষণের জন্য হলেও সবাই ফিরে গেছে তাঁদের অতীতে। প্রিয় ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে, ঘুরে ফিরে দেখছে তাঁদের ফেলে আসা বিদ্যাপীঠকে। হলের বাইরে এবং ভেতর ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেছ বাবুল এবং সভাপতি ডঃ আনোয়ারুল ইসলাম বকসী এর স্বাগত বক্তব্য এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সঞ্চালনায় ছিলেন বাকৃবি এর প্রিয় মুখ ডাঃ লাভলী রহমান এবং উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক, তারুণ্যে উজ্জীবিত ডঃ আসাদুজ্জামান সেলিম।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারে নিহত সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লক্ষ ভাই-বোন এবং প্রয়াত কৃতি অ্যালামোনাইদের আত্মার শান্তি কামনার্থে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর শুরু হয় প্রাণপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কৃতি অগ্রজ ও অনুজ সতীর্থদের স্মৃতিচারণ। অনুষ্ঠিত হয় সম্প্রতি প্রয়াত কৃষিবিদ, কৃষিবিদদের সবার প্রিয় মুখ কৃতি অ্যালামোনাই, মরহুম মোতাহার হোসেন এর স্মৃতিচারণ। কৃষিবিদ কমিউনিটির প্রতি তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা হিসেবে একটি সুন্দর ক্রেস্ট তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দ্বয়। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর একমাত্র কন্যা মুশফেকা আহমেদ মুমু তার প্রয়াত বাবাকে গভীর ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় স্মরণ করার জন্য অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এর সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এই সময় পিন পতন নীরবতায় উপস্থিত হল-ভর্তি অ্যালামোনাই সহ অতিথিবৃন্দ ছিলেন আবেগে আপ্লুত।
 তারপর শুরু হয় কৃষিবিদ দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ব্যাডমিন্টন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সকল অংশ গ্রহণকারী সহ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ পর্ব। পর্বটি পরিচালনা করেন কৃতি অ্যালামোনাই ও এসোসিয়েশন এর ক্রীড়া সম্পাদক, কবীর চৌধুরী রুবেল। মুনশিয়ানার সাথে আর এক সতীর্থ এর জীবনসঙ্গী, যুঁথি সাহা কে সহযোগী হিসেবে নিয়ে অত্যন্ত মজা আর আনন্দের সাথে পরিচালনা করেন বহু কাঙ্ক্ষিত র্যা ফেল ড্র অনুষ্ঠানটি যা দর্শকদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। যারা বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অক্লান্ত শ্রম ও মেধা দিয়ে এই মহতী অনুষ্ঠানটিকে সার্থক করেছেন আদের সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অ্যালামনাই এসোসিয়েশন সভাপতি। অনুষ্ঠান উপলক্ষে 'ব্রহ্মপুত্র' নামে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।
এর পরপরই অ্যালামোনাই নুরুন্নাহার সুস্মিতা, জ্যাকি খন্দকার ও আশরাফীর সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর মাঝেই বাংলাদেশ থেকে মাননীয় কৃষি মন্ত্রী, ডঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি মহোদয় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখার জন্য ফোনের মাধ্যমে যুক্ত হন। মাননীয় কৃষি মন্ত্রী মহোদয় এর শুভেচ্ছা বক্তব্যের পরপরই আবার সবাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফিরে যায়।
অ্যালামোনাই পরিবারের সদস্য সদস্যা এবং শিশু শিল্পীদের সমন্বয়ে আবৃত্তি, নাচ, ফ্যাশন শো ও গানের মালঞ্চ দিয়ে সাজানো হয় সাংস্কৃতিক পর্বটি। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুভ সূচনায় অ্যালামোনাই এসোসিয়েশন এর সদস্যবৃন্দ সমবেত কণ্ঠে “পুরানো সেই দিনের কথা” কবি গুরুর এই গানটি পরিবেশন করে সবাইকে করেছে স্মৃতি-কাতর। তারপর একের পর এক চলে গান, আবৃত্তি, নাচ, আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা এবং ফ্যাশন শো ইত্যাদি নিয়ে এক অপূর্ব পাঁচ মিশেল পরিবেশনা। সাথে ছিল স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে গঠিত 'ভবের হাট' নামক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর একক সংগীত পরিবেশনা। তাঁরা সবাই তাঁদের সুরের মূর্ছনায় উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন।
এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সম্প্রতি প্রয়াত উপ-মহাদেশের তিন সঙ্গীত তারকা, লতা মঙ্গেশকর, গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর বাপ্পী লাহিড়ী'র প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন কৃতি অ্যালামোনাই, ডঃ কাইউম পারভেজ। সবাই শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাঁদের স্মরণ করেন। পাশাপাশি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শ্রদ্ধেয়া লতা মঙ্গেশকর এর অসামান্য অবদানের কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি লতা ও সন্ধ্যাজি'র স্মৃতির উদ্দেশ্যে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের পরপর দুটি গান গেয়ে শোনান।
অনুষ্ঠানে বৈকালিক খাবার এবং নৈশ ভোজ পরিবেশন করা হয়। পরিশেষে, উন্মুক্ত নাচ আর গানের মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটে বিএইউ অ্যালামনাই সন্ধ্যার।

|