সিডনির বৌদ্ধ সমাজে “কঠিন চীবর দান” পালিত
সুতপা বড়ুয়াঃ গত ৩১ শে অক্টোবর বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া বুদ্ধিস্ট সোসাইটির উদ্যোগে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয় সিডনির দক্ষিণাঞ্চলীয় সাবার্ব মিন্টো তে সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয়ে। করোনার কারণে মাত্র ১৯ জন সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্যরা অনলাইনে সবার সাথে যুক্ত হন।
বৌদ্ধ সমাজে কঠিন চীবর দান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আচার। এই চীবর দানের প্রথা শুরু হওয়ার আগে ভিক্ষুগণ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া টুকরো কাপড় নিজেরা সেলাই করে তাদের পরিধেয় তৈরি করতেন। তবে বর্ষা বাসের তিন মাস যেহেতু তাঁদেরকে এক জায়গাতেই থাকতে হত, তারা সেটাও করতে পারতেন না, যার ফলে তাদের পরিধেয় কাপড় খুবই মলিন এবং ছিন্ন হয়ে পড়ত। একবার কয়েকজন ভিক্ষু মহাকারুণিক বুদ্ধের সঙ্গে বর্ষা বাসের পর দেখা করতে এলে, তিনি তাদের চীবরের মলিন অবস্থা দেখে এই চীবর দানের প্রথার প্রবর্তন করেন। ভিক্ষুদের বর্ষা বাস শেষ হওয়ার পর এক মাস পর্যন্ত গৃহী দায়ক দায়িকরা ভিক্ষুদের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতে এই কঠিন চীবর দান এবং কেউ কেউ এর সঙ্গে অষ্টপরিষ্কার দান ও করে থাকেন। এই সময় একটি কল্পতরুতে শ্রদ্ধা দান হিসেবে দায়ক দায়িকরা টাকা ঝুলিয়েও দান করে থাকেন। এই চীবর দান যে কেউ করতে পারলেও একমাত্র বর্ষা বাস সম্পূর্ণ করা ভিক্ষুরাই এটা গ্রহণ করতে পারেন।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি বর্ষা কালে চলা ফেরা করার সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে ফসল বা পোকা মাকড়ের ক্ষতি যাতে না হয়, সেজন্যই মহামতি বুদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য এই বর্ষা বাসের নিয়ম করেন, আর চীবর তৈরি করার জন্য যে কাঠের তাঁত ব্যবহার হত, তাকেই পালি ভাষায় 'কঠিন' বলা হত। অবশ্য আগেরকার দিনে এক দিনের ভেতর যেভাবে সুতো কেটে, তাঁতে কাপড় বুনে, হাতে সেলাই করে এই চীবর তৈরি হত, সেই প্রক্রিয়াও যথেষ্ট কঠিন ছিল বৈকি। পরের কারণটাই বেশি প্রচলিত, যদিও আজ আর সেভাবে সুতো কেটে, তাঁতে বুনে খুব কমই চীবর তৈরি করা হয়। ব্যতিক্রম পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধরা। তাদের মধ্যে এই প্রচলন আজও আছে।
|